উপন্যাস : বেপরোয়া ভালবাসা
লেখিকা : মনা হোসাইন
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
লেখিকা মনা হোসাইনের “বেপরোয়া ভালবাসা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ঠিক কবে নাগাদ লেখা শুরু করেছেন তা এখনাব্দি জানা যায়নি। তবে তা জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
![]() |
বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন |
৪৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন (৫০ এবং শেষ পর্ব)
আদিবার শরীর ভয়ঙ্কর খারাপ করেছে। রক্তে সুগার ওঠানামা করছে। হার্টবিট মিস করছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরার কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না. মনে হচ্ছে যেন পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে।
অসুস্থ মস্তিষ্ক স্বপ্নহীন হয় তাই জ্ঞান হারালে আমরা স্বপ্ন দেখিনা। কিন্তু আদিবা দেখছে, ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন। আদি জোর করে তাকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করিয়ে নিচ্ছে অথচ সে সাইন করতে চায় না। আদিবা চিৎকার করে বলছে আমি সঁই করব না কিন্তু কেউ তার কথা শোনছে না। আদিবার দম আটকে আসছে, কষ্ট হচ্ছে সে কাঁদছে কিন্তু কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছেনা।
তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে আদিবা জেগে উঠল আর বাচ্চামেয়েদের মতো চেঁচিয়ে বলল,
-"ভাইয়া কই? আমি ভাইয়ার কাছে যাব।
নার্স-ডাক্তার ছুটে এল। বাসার সবাইকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়া হল আদিকেও ভিতরে আসতে বলা হল। বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে আদিবা হাতে স্যালাইন লাগানো। সাবার সাথে আদি এগিয়ে এসে বেডের পাশে দাঁড়াল। মুখে কোন কথা নেই। ডাক্তার আদিবার হার্টবিট পরীক্ষা করে বিদায় নিলেন। আদি এখনো মুখ কালো করে ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিবা এবার প্রশ্ন করল,
-"ক ক কিছু কি হয়েছে ভাইয়া..? আপনি এমন মুখ কালো করে রেখেছন কেন?
আদি মুখ তুলে তাকাল চোখ দুটি লাল হয়ে আছে তার চোখে মুখে হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে...আদিবা হতভম্ব হল সাথে সাথে আদি চেঁচিয়ে উঠল,
-"কাকিমণি তোমার মেয়েকে চুপচাপ থাকতে বলো তানাহলে আমি ওকে খু*ন করে ফেলব। ইচ্ছে তো করছে এখনী করে ফেলি বলে আদি এগিয়ে গেল আদিবা অবাক হওয়ার সাথে ভয়ও পেল তাই একটু পিছিয়ে গেল।
-"শান্ত হ আদি ও হয়ত বুঝতে পারেনি।
বললেন আদিবার মা...সাথে সাথে আদি আবারো চেঁচিয়ে উঠল,
-"বুঝতে পারেনি মানে? ও কী ছোট বাচ্চা যে বুঝবে না? আদিবা তোর এত সাহস হল কী করে? আমার এত বড় ক্ষতি করতে কলিজা কাঁপল না?
-'ক ক কী করেছি আমি..?
-"আবার প্রশ্ন করছিস? ওই কে ম*রেছিল যে তুই একদম নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে চেয়েছিলি? বাচ্চার কথা নাইবা ভাবলি নিজের কথা তো একটাবার ভাবা উচিত ছিল। এটা জানার পর যে আমি তোকে মা*রতে মা*রতে হাড় হাড্ডি সব গুড়া করে দিব জানতি না?
-"ব ব বাচ্চা...? কিসের বাচ্চা?
-"মুরগীর বাচ্চা..এমন একটা ভাব নিচ্ছিস যেন তুই কিছুই জানতি না? কিরে তুই মা হতে যাচ্ছিস জানার পরেও প্রতিদিন পেইন কিলার সাথে আবার ঘুমের ট্যাবলেট কী করে খেলি? জবাব দে...বাচ্চা পেটে পেইন কিলার খাওয়া যায় না জানিস না? বাচ্চার কত ক্ষতি হয়েছে জানিস ?
আদিবা কিছু বলতে পারল না সে এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই আদির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-"মুখ টা দেখো যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। একটা কথা কান খোলে শোনে নে আদিবা আমার বাচ্চার যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়ব না।
-"আ আপনি এসব কি বলছেন তারমানে আমি মা হতে চলেছি..?
-'নাহ আমি বাবা হতে চলেছি। ওই বাচ্চা শুধু আমার। কথা ছিল তোকে আমি মুক্তি দিব বাচ্চা দেয়ার কথা তো ছিল না তাই বাচ্চা শুধুই আমার। তাছাড়া যে মা দুই মাসেই বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারেনা সে সারাজীবনের দায়িত্ব কি করে নিবে..?
বলে হন হন করে বেরিয়ে গেল আদি।আদিবা এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-"মা উনি এসব কি বলে গেলেন?
সাথে সাথে শাহানা বেগম উত্তর দিলেন,
-"ডাক্তার বলেছে তুই শারীরিক ভাবে বাচ্চার জন্য ফিট না। নিয়মিত খাবার না খাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছিস তাছাড়া তোর রক্তে পেইন কিলার পাওয়া গিয়েছে যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর সেটা শোনেই আদি ক্ষেপে গিয়েছে। আমাদের সবাইকেও অনেক কথা শোনিয়েছে কেন তোকে ডাক্তার দেখাইনি ওকে কেন জানাইনি...
-"কিন্তু বাচ্চা...?
-"কোথা থেকে এসেছে বুঝতে পারছিস না তো? আমি বলে দিচ্ছি উড়ে উড়ে এসেছে তোর পেটে বাচ্চা উড়ে এসেছে তাই তুই বুঝতে পারিস নি।
আদির কথায় আদিবা বিরক্ত চোখে দরজার দিকে তাকাল আদি আবারো এসে তার পাশে দাঁড়াল সাথে সাথে আদিবা বলল,
-"আপনি কী ভাল করে কথা বলতে পারেন না? সবসময় ত্যাড়া ব্যাকা কথা বলেন কেন? তাছাড়া বাচ্চা নিয়ে এত মাতামাতি করছেন কেন? এই বাচ্চা তো পৃথিবীতে আসবে না।
আদি জ্বলন্ত কন্ঠে বলল,
-"মানে..?কী বললি তুই?
-"খবরদার গায়ে হাত তুলবেন না। যাকে ডিভোর্স দিচ্ছেন তার কাছে বাচ্চা আশা করেন কিভাবে..?
-"ওহ তাই নাকি?
-"হ্যা তাই।
-" পেটে যদি বাচ্চা না থাকত এই কথাটার জন্য তোর কি অবস্থা করতাম শুধু উপড়ওয়ালা জানে.. যাইহোক তোকে ডিভোর্স দিব বলেছিলাম বাচ্চাকে দিব বলিনি তাই বাচ্চা আমার...
-"বাচ্চা যেহেতু আমার পেটে তখন তার উপড় সম্পূর্ন অধিকারো আমার।
-"সেই হিসেব করতে গেলে তো আরও অনেক কিছু হিসেব করতে হবে। কে কতটা পরিশ্রম করেছে সে হিসেব মিলালেই কার ভূমিকা কতটা বুঝা যাবে..
-"চুপ করবেন আপনি! সবার সামনে কিসব বলছেন?
-"আমি শুরু করেছি নাকি তুই?
-"অসভ্য ছেলে একটা...
-"ওই...
আদি,আদিবার কথা শোনে মুচকি হাসলেন আদির বাবা আর বললেন,
-"আদিবা তো এখন সুস্থ আছে চলো সবাই আমরা যাই।
-"কিন্তু ভাইজান...
-"আহ আদিবার মা মেয়ে, মেয়ে জামাইকে একটু একা থাকতে দাও চলো...
সবাই হাসতে হাসতে বিদায় নিল।আদিবা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই বের হতেই আদি আদিবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল আদিবা ভ্রু কুচকাল,
-"ক ক ক কী ব্যাপার আপনি হাসছেন কেন?
-"ভাবছি...
-"কি ভাবছেন..?
-"উপড়ওয়ালা তোর কপালে সুখ লিখে নাই. আমার হাত থেকে তোর মুক্তি নেই সেটাই ভাবছি এই আর কী?
-"মানে?
-"খুব তো মুক্তি চেয়েছিলি এবার কী করবি?
-"বাচ্চা থাকলে বন্দী থাকব কে বলল? বরং আমাকে আর একা একা থাকতে হবে না কেউ একজন অন্তত পাশে থাকবে...
-"কিন্তু বাচ্চা তো আমার সে তোর সাথে থাকবে কেন?
-"আমার পেটে বাচ্চা, তাহলে আপনার হল কি করে? শোনোন আপনার মত বজ্জাতের সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখব না তাই বাচ্চার কথা ভুলে যান।
-"দরকার হলে আমি কেস ফাইল করব তবুও বাচ্চাকে ছাড়ব না।
-"তাহলে আপনার বাচ্চা আপনি নিয়ে যান আমি আপনার বাচ্চা পেটে ধরব না।
-"তবে রে....দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
-"খবরদার বলছি কাছে আসবেন না।
আদি আদিবার চেঁচামেচি শোনে ডাক্তার ছুটে আসল,
-"কী হচ্ছে কী আপনারা এসব কি করছেন..?
-"ওহ ম্যাডাম আপনি আসছেন ভালই হয়েছে আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন বাচ্চার উপড় মায়ের অধিকার বেশি নাকি আমার মানে বাবার অধিকার বেশি...?
-"এটা কেমন প্রশ্ন? বাচ্চার উপড় দুজনের অধিকারেই সমান।
-"কিন্তু আমার বাচ্চার মা সেটা মানতে নারাজ এখন আমার কি করা উচিত?
-"আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
-"বুঝবেনও না ম্যাডাম এই সা*ইকোর কথা কেউই বুঝে না আপনিও বুঝবেন না। যাইহোক আপনি আমার কথা শোনোন আসলে ইনি মানে আমার বাচ্চার বাবা আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ছেড়ে দিতে চায় কিন্তু বাচ্চাকে ধরে রাখতে চায় তাই আমি বলেছি আমি বাচ্চা জন্ম দিব না এই নিয়ে ঝামেলা।
-"আজব তো আপনিই বলুন ম্যাডাম এটা কেমন বিচার ওর আমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ছেড়ে দিক তাইবলে আমার বাচ্চা দিয়ে যাবেনা? দশটা না পাঁচটা একটামাত্র বাচ্চা আমার প্রথম বাচ্চা... এমনিতেই আজেবাজে ওষুধ খেয়ে অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে।
আদি আর আদিবার কথা শোনে ডাক্তার হেসে ফেলল,
-"আচ্ছা আপনি বাইরে যান আমি আমার স্ত্রীয়ের সাথে একটু কথা বলি।
-"তা বলুন কিন্তু ও আমার স্ত্রী না জোর করে বিয়ে করেছিলাম তাই স্ত্রী বলবেন না বলুন আমার বাচ্চার মা।
-"আচ্ছা আপনার বাচ্চার মায়ের সাথেই একটু কথা বলি..
-"বলুন আমি যাচ্ছি।
বলে আদি চলে গেল। ডাক্তার ম্যাম এসে আদিবার পাশে বসল,
-"এবার বলতো কি সমস্যা?
-"আসলে....কিভাবে যে বলব, উনি আমাকে একটুও ভালবাসে না শুধু বাচ্চার জন্য আমাকে ব্যবহার করতে চাইছে তাই আমি এবরশন করে ফেলব মানে ওকে বলব বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি তারপর অনেক দূরে চলে যাব। সেখানে গিয়ে বাচ্চা নিয়ে থাকব।উনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবার উনার পালা।
-"কিন্তু উনার কথায় তো তা বুঝা যাচ্ছে না বরং মনে হচ্ছে বাচ্চার খবরে খুব খুশি হয়েছেন।
-"তাত হবেই বাচ্চাকে তো ভালবাসবেই কিন্তু আমাকে বাসে না জানেন দুমাস আমার সাথে কোন কথা বলেনি।
-"আপনাকে ভালবাসে না কে বলল?যে ছেলে সন্তানকে ভালবাসে সে অবশ্যই তার স্ত্রীকে ভালবাসে।
আদিবা এবার কিছু বলল না তাকিয়ে আছে ডাক্তারের মুখের দিকে।
-"বোকা মেয়ে দূরে গিয়ে কষ্ট দিতে হবে কেন? বরং তুমি চাইলে এই বাচ্চার দোহাই দিয়ে তোমার বরকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নিতে পারো। তাছাড়া বাবা মায়ের আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয়তা আছে একার পক্ষে সেই প্রয়োজনীয়তা মিটানো সম্ভব না।আপনি উনার সাথে থাকুন বাচ্চা পৃথিবীতে আসুক তারপর যা সিধান্ত নেয়ার নিবেন তাছাড়া এই অবস্থায় ডিভোর্স হবে না।
-"এভাবে তো ভাবিনি..? আপনি ঠিকি বলেছেন আমি এতদিন যা যা করতে পারিনি এই বাচ্চাকে দিয়ে তো সব করাতে পারব।
-"এই তো বুদ্ধিমতির মত কথা...আমি এবার আসি তাহলে কিছুক্ষন পর তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
-'অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ডাক্তার মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল আর বারান্দায় আদির সাথে দেখা হল। আদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল তাকে দেখে ডাক্তার বলল,
-"আপনার স্ত্রী, ও না সরি স্ত্রী না আপনার বাচ্চার মায়ের দিকে খেয়াল রাখবেন উনি কিন্তু বাচ্চার জন্য ফিট না। কোনমতেই মেন্টাল প্রেসার দিবেন না। হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
আদি মাথা নাড়ল। সন্ধ্যায় আদিবাকে বাসায় নিয়ে আসা হল আদি তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেল।
-"এই রুমে নিয়ে আসলেন কেন? আমি আমার রুমে যাব।
-"যান তবে বাচ্চাকে আমার ঘরে রেখে যান। আমি আমার বাচ্চার সাথে ঘুমাব।
-"আজব তো বাচ্চাকে রেখে যাব কি করে?
-"সেটা আমি কি করে বলন সেটা তো আপনি জানেন।
-"আপনার সাথে আমি পারব না জানি। কিন্তু মিস্টার বাচ্চার বাবা কান খোলে শোনে নিন আমার সাথে একদম উচ্চস্বরে কথা বলবেন না ডাক্তার বলেছে এমন করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।
-"ঠিক আছে বলব না। আমার বাচ্চার জন্য আমি সব বদঅভ্যাস বদলাতে পারি।
-"আমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা এমনভাবে বলছেন যেন আপনার একার বাচ্চা।
-"আমার একার বাচ্চাই...
-"আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বললেন..?আহ পেটে ব্যাথা হচ্ছে আর মনে হয় বাঁচব না।
-"ঢংগি মেয়ে কোথাকার (মনে মনে)
আমি তো জোরে কথা বলিনি।
-"বলেছেন, এখনী ক্ষমা চান না হলে ব্যাথা কমবে না।
-"বুঝেছি আমার কপালে দুঃখ লিখা হয়ে গিয়েছে যাইহোক সরি বাচ্চাটাকে প্রেসার এভাবে দিয়েন না...
-"এভাবে বললে হবে না কান ধরে বলুন।
-"মানে কী..?
-"বলবেন না তাই তো..? দেখেছো বাবু তোমার বাবা তোমাকে একটুও ভালবাসে না তুমি ব্যাথা পাচ্ছ জেনেও ক্ষমা চাইবে না।
-"হয়েছে হয়েছে বাচ্চার কাছে আমাকে অপরাধী বানাতে হবে না এই যে কান ধরছি।
আদি কানে ধরতেই আদিবা খিল খিল করে হেসে উঠল নিস্তব্ধ রাতে সেই হাসি বড্ড মিষ্টি শুনাল। হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে আদিবা তার হাসি পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। আদিবার হাসির শব্দে মুচকি হাসলেন আদির বাবা।
-"যাক ডাক্তার ম্যামকে যেভাবে বলেছিলাম ওদের সেভাবেই বুঝিয়েছেন।
আদির মা ভ্রু কুচকে বলল,
-"মানে? কি বলেছো তুমি ডাক্তারকে?
-"ওদের ব্যাপারে সবি বলেছি আর বলেছি দুজনকে যেন একসাথে থাকার পরামর্শ দেন।
বাচ্চা হতে হতে একসাথে থাকতে থাকতে ওদের সম্পর্কটা যদি একটু স্বাভাবিক হয়।
এদিকে আদিবা হাসছে তো হাসছেই আদি সেই ফাঁকে উঠে গিয়ে আবার ফিরে আসল এসেই আদিবার হাত টেনে ধরল,সাথে সাথে আদিবার হাসি থেমে গেল কিছুটা ভয়ও পেল ভাবল আদি হয়ত বরাবরের মত রেগে গিয়েছে তাই ভয়ে ভয়ে বলল,
-"ক ক কী করছেন।
আদি আদিবার হাত টেনে একটা বালা পরিয়ে দিল।আদিবা অবাক হয়ে বলল,
-"এটা..?
-"বাচ্চা হলে গিফট দিতে হয় এটাই নিয়ম।
-"এই নিয়ম আবিষ্কার করেছে কে?
-"অবশ্যই আদিত্য চৌধুরী।
আদিবা আবারো হাসল।
-"বালাটা সুন্দর সে যাইহোক এসবে আমাকে ভোলানো যাবে না। মাথা ধরেছে টিপে দিন ঘুমাব।
-"কী আমি তোর মাথা টিপে দিব..?
-"আমার বাচ্চার বাবা যেন কে..?বেশি কথা বললে পাও টিপাব।
-"বুঝেছি বুঝেছি কী আর করা যাবে দিচ্ছি আপনি শুয়ে পড়ুন আসছি...
আদি দরজা লক করে এসে আদিবার মাথায় হাত বুলিতে শুরু করেছে আদিবা সাথে সাথে বলে উঠল
-"উফফ হচ্ছে না সুন্দর করে দিন।
দিচ্ছি বলেই আদি অসম্ভব এক কান্ড ঘটিয়ে বসল আদির কান্ডে আদিবা পুরো জমে গেল। গাঁয়ে কাঁটা দিল। আদি একটানে আদিবার শাড়িটা সরিয়ে তার পেটে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে।
-"কী করছেন এসব? কি ধরনের অসভ্যতা এটা?
-"অসভ্যতা হতে যাবে কেন আমি আমার বাচ্চাকে আদর করছি এতে কারো কিছু বলার নেই। আমার যতক্ষন ইচ্ছে ততক্ষন আদর করব। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আদর করব বলে আদি আবার নিজের কাজে মনযোগ দিল।
-"ভ ভ ভাইয়া এমন করবেন না আমার কেম যেন লাগছে...
-"ভাইয়া...? কে কার ভাইয়া?
-"ফালতু প্রশ্ন আর ফালতু কাজ দুটোই বন্ধ করুন
আদিবার কথা আদির কানে ঢুকল না সে আবারো নিজের কাজে মন দিল।এবার শুধু পেটে না আদিবার সারা শরীরময় বিচরন করছে সে। আদিবা চাপা কন্ঠে বলল,
-"কী করছেন..?ছাড়ুন।
আদি বাঁকা হেসে উত্তর দিল,
-"বাচ্চা যখন আমার বাচ্চার মাও আমার। আমার বাচ্চার মাকে আমি আদর করব তাতে তুই আদিবা বাঁধা দেয়ার কে?
আদিবা উত্তর দিল না কিন্তু তার ফুঁপানো কান্না আদির চোখ এড়াতে পারল না। আদি উঠে এসে সযত্নে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
-"দেখি তাকা আমার দিকে,কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
আদিবা চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে মুখ করে আছে।চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
-"এত অভিমান আমার উপড়..?
-"আ আ আ আপনি আমায় একটুও ভালবাসেন না।আজ যদি বাচ্চা না আসত আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিতেন।
-"তোর তাই মনে হয়?
-"ডিভোর্স পেপারো তো নিয়ে এসেছেন তাই না?
-"তাই নাকি..? তুই পেপার টা ভাল করে দেখেছিলি?
আদিবা চোখ খুলল,
-"মানে..?
-"ওটা ডিভোর্স পেপার ছিল না। ওটা আমার প্রত্যয়ন পত্র ছিল যার মানে আমি আর কখনো বিদেশে যাব না এখন থেকে এখানেই থাকব। আর এই সিধান্ত আমি দুমাস আগেই নিয়েছিলাম।
আদিবা অবাক চোখে তাকাল আদির দিকে আদি হাসল,
-"বিয়ের দিন বলেছিলাম আমি বেঁচে থাকতে কোনদিন তোকে ডিভোর্স দিব না। দরকার হলে আরও তিনটা বিয়ে করব তবুও তোকে ছাড়ব না মনে আছে কথাটা?
-'কিন্তু এই দুমাস..?
-"তোকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না। সব কাগজ পত্র আর অফিস গোছাতে আমার একটু সময় লাগত সেজন্যেই তোকে রেখে গিয়েছিলাম। মিথ্যা বলব না আসলে তুই যে আমায় ভালবাসিস সেটা বুঝানোর জন্যই এভাবে রেখে গিয়েছিলাম তবে বিশ্বাস কর তুই প্রেগনেন্ট জানলে এমন করতাম না। আমি ভেবেছিলাম আমাকে হারিয়ে তুই আমার প্রতি ভালবাসাটা বুঝবি তুই এত কষ্ট পাবি বুঝতে পারিনি রে। আমাকে তুই ক্ষমা করে দে আদিবা।
-"আ আ আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন?
-"যাকে ভালবাসি তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না? আমি তোর জন্য কি কি পারি আজও বুঝলি না পা*গলি? সারা পৃথিবী যদি এক পাশে আর তুই অন্য পাশে থাকিস আমি আদি তোকেই বেঁচে নিব। তোর মত করে কেউ কখনো আমার মন ছুঁতে পারেনি। জানিস তো একজনে আসক্ত ভালবাসা সবসময় সুন্দর হয়। আমি জন্ম জন্মান্তর এই আদিবাতেই আসক্ত থাকতে চাই। তুই ছিলি আছিস আর শুধু তুইই থাকবি।
-"এত ভালবাসেন আমায়..?
-"সন্দেহ আছে..?
-'উহু.. আমার উপড় আপনার কোন রাগ নেই?
-"যাকে ভালবাসা যায় তার উপড় রাগ করা যায় না। আলী (রাঃ) বলেছেন যদি কাউকে সারাজীবনের জন্য বন্ধু বানাতে চাও তবে মনের মাঝে একটা কবর খুঁড়ে নাও যেখানে তার করা ভুলগুলো করব দিতে পারবে। কারন মানুষ মাত্রই ভুল করবে। আমি সেই কবরটা ছয় বছর আগেই খুঁড়ে ফেলেছি যদিও তুই কখনো ভুল করিস না। আচ্ছা আদিবা তোর মনে আমাকে একটা কবর খুঁড়ার জায়গা দিবি প্লিজ? যেখানে আমার ভুল গুলোকে ছুড়ে ফেলতে পারব।
আদিবা উত্তর দিতে পারল না আবারো কেঁদে ফেলল।
-"উম একদম কাঁদবি না বলে দিলাম। কাঁদলে কিন্তু ওয়াশরুমে আটকে রাখব।
আদিবা চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিল,
-"আমি তো আটকেই থাকতে চাই।আদির বেপরোয়া ভালবাসার মায়ার জন্ম জন্মান্তর আটকে থাকতে চাই। রচনা করতে চাই বেপরোয়া ভালবাসার নতুন অধ্যায়...দিবেন সেই সুযোগ আমায়?
সমাপ্ত
লেখক সংক্ষেপ :
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
L am sorry., I can't 😚 see the option for Bengali script.
উত্তরমুছুনSo I am forced to write in English. In my opinion , the author is highly successful in maintaining the ambience of horror till the finishing line while forcing the reader to focus on the narration of the text that is pure entertainment even though in some way the pleasure is sadistic vis-a-vis masochist in character. It deserves high rating for a very credible composition well knit within a tight frame work.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন