উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১০)
গাড়ি থেকে নেমে নিজের শো-রুমের দিকে এক পা এগিয়েই থেমে যায় অনল। আপনা-আপনিই কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। তার শো-রুমে সামনের পুরো রাস্তা ফুল দিয়ে সাজানো। তার শো-রুমের স্বচ্ছ কাচের দরজায়ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে, তাতে ডিজাইন করে লেখা -
”কংগ্রেচুলেশন”
আজকে না তার শো-রুমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আর না আজকে তার সাথে স্পেশাল কিছু হয়েছে। তাহলে তাকে কে কংগ্রেচুলেশন জানিয়েছে এবং কেন? ভাবতে ভাবতে কাচের দরজা ঠেলে শো-রুমের ভিতরে ঢুকে সে। ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে চারিদিকে তাকায় সে। পুরো শো-রুম ফুল, বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। শো-রুমের মাঝখানে একটা টেবিল। টেবিলের উপর তার ফেভারিট ভেনিলা কেক। যার উপর লাল রঙের ক্রিম দিয়ে লেখা -
"কংগ্রেচুলেশন"
চারপাশ থেকে শো-রুমের কর্মচারীরা একসাথে বললো
- কংগ্রেচুলেশন ম্যাম।
অনল ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিসের কংগ্রেচুলেশন জানাচ্ছো তোমরা?
তখন কেউ অনলের পিছনে দাঁড়িয়ে তার কানের কাছে ক্ষীণ সরে উত্তর দিল
- বউ আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। তাই সবাই তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
অনল ছিটকে দু'পা সামনে গিয়ে, ঘুরে পিছনে তাকায়। তার পিছনে গাঢ় নীল রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে, মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রবাহ। অনল বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আপনি এখানে কি করছেন?
প্রবাহ অবাক হওয়ার ভাণ করে উত্তর দিল
- বউ আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গিয়েছে। এতো খুশির খবর শোনার পরও কি করে আমি বউয়ের থেকে দূরে থাকতে পারি।
অলন বাঁকা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- কেন? আমি রাজী না হলে কি বিয়েটা করতেন না?
প্রবাহ অনলের দিকে এক পা এগিয়ে বললো
- অবশ্যই জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম। আমার বউকে আমি ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে করবে, তা তো হতে পারে না। তবে এতে একটু খারাপ লাগতো। বউয়ের অমতে বিয়ে।
অনল রাগী কন্ঠে বললো
- আপনি একটা চরম বিরক্তিকর লোক।
প্রবাহ অনলের কাছে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে, ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- এভাবে বলে না বউ, বুকে ব্যথা করে।
অনল কপাল কুঁচকে প্রবাহের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- আপনি না এ.এ কোম্পানির ম্যানেজার। তাহলে আপনি অফিস আওয়ারে এখানে কেন?
প্রবাহ মিষ্টি হেসে উত্তর দিল
- ছুটি নিয়ে এসেছি। আমাদের বস আবার খুব বউ ভক্ত। তাই বউয়ের সাথে দেখা করতে আসবো বলতেই ছুটে দিয়ে দিল।
অনল সন্দেহের চোখে প্রবাহের দিকে তাকালো। প্রবাহের বলা কথাটা তার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু তাও তা নিয়ে আর প্রশ্ন করল না। এর সাথে কথা বলে আর মাথা গরম করতে চায় না সে। শান্ত কন্ঠে বললো
- কিন্তু আমার ছুটি নেই। আমাকে শো-রুম ওপেন হবে আপনি আসতে পারেন।
প্রবাহ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
- চল তাহলে কেকটা কেটে খেয়ে নেই।
অনল রাগী কন্ঠে বললো
- আপনার মতো এসব ফালতু কাজ করার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই আমার নেই।
প্রবাহ দৃঢ় কন্ঠে বললো
- তুমি যতক্ষন না কেন কেটে খাচ্ছা, ততক্ষন আমি যাবো না। এখন তুমি ভেবে দেখ, ভালো করে চুপচাপ কেক কেটে খেয়ে আমাকে বিদেয় করবে। নাকি আমাকে তোমার পাশে সারাদিনের জন্য রেখে দিবো। আমার অবশ্য সেকেন্ড অপশনটাই বেশি পছন্দ।
কথাটা বলেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো সে। রাগে অনলের গা জ্বলে যাচ্ছে। সে আর কথা বাড়ায় না। কেকের কাছে গিয়ে ছুড়ি হাতে নিয়ে কেক কাটতে থাকে। তবে কেক এমন ভাবে কাটছে যে দেখে মনে হচ্ছে, কোন কশাই চাপাতি দিয়ে মাংশ কাটছে।
রুমে ঢুকার দরজা খুলতেই সামনের পুরো দেয়ালের যায়গায় থাই গ্লাস। যার ওপারে একটি অর্ধবৃত্ত আকারের বারান্দা। থাই গ্লাসে ঝুলছে হালকা গোলাপি রঙের পর্দা। রুমে ঢুকার দরজার দেয়ালে পর পর আরো দুটো দরজা। প্রথমটা চেঞ্জিং রুমের আর দ্বিতীয়টা ওয়াসরুমের। রুমে ঢুকার দরজার ডানপাশের দেয়াল জুড়ে ডিজাইন করে থাক বানানো। ঠিক মাঝখানে বড় সাইজের থাকে স্মার্ট টিভি। আর আসেপাশের ছোট ছোট থাকে সোপিজ, ট্রফি রাখা। আর বামপাশের দেয়ালের মাঝ বরাবর উপরে এসি। তার নিচে খুব সুন্দর বড় ফ্রেমে বিন্দু ছবি। বড় ফ্রেমের ছবিটার পাশে আছে ছোট ছোট ফ্রেমের আরও বেশ কিছু বিন্দুর ছবি। কোনটা তার বাবা-মা'য়ের সাথে, কোনটা অনলের সাথে, কোনটা একা। বড় ফটো ফ্রেমটার ঠিক নিচ বরাবর একটা কুইন সাইজের বেড। আর বেডের সামনে একটা ডিভান। রুমের পুরো ফ্লোরে সাদা আর হালকা গোলাপি রঙের কার্পেট বিছানো। সিলিংয়ের ঠিক মাঝে বড় একটা ঝাড়বাতি আর কর্ণারে ছোট ছোট লাইট লাগানো। বিশাল বড় এই বেড রুমের বেডে ঘুমাচ্ছে বিন্দু। তখনি বালিসের পাশে রাখা ফোনটা ট্রিং ট্রিং শব্দ করে বেজে উঠলো। বিন্দু চোখ বন্ধ অবস্থায় বালিসের পাশে হাতরে, ফোনটা নিয়ে এলার্মটা বন্ধ করল। তারপর চোখ বন্ধ রেখেই উঠে বসলো। হাই দিতে দিতে চোখ খুলতেই, চোখ যায় সামনের ডিভানের উপর রাখা লাল রেপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্সটার দিকে। গিফট বক্সটা দেখেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। দোতলা থেকে দৌড়ে বাগান চলে যায়। বাগানের পাতানো চেয়ার টেবিলের একটা চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলেন আর পেপার পড়ছিনেল মিষ্টার সাইম। বিন্দু দৌড়ে এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে বললো
- পাপা।
মিষ্টার সাইম চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমার মা'টা কেমন আছে?
বিন্দু মিষ্টার সাইমের গলা ছেড়ে দিয়ে, পাশের চেয়ার বসে মিষ্টি হেসে বললো
- খুব ভালো। পাপা কেমন আছে?
মিষ্টার সাইম পেপারটা ভাঁজ করে, টেবিলের উপর রাখে। তার মেয়ে এসেছে। এখন সে আর পেপার পড়বে না। এখন সে মেয়ের সাথে গল্প করবে। কিন্তু চা'টা খাবে। চা'য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেয়ের সাথে গল্প করতে তার বেশ ভালো লাগে। তাই চায়ের কাপটা পুনরায় হাতে তুলতে তুলতে, মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- মা'য়ের কাছে এসে খুব ভালো আছে।
বিন্দু হাসলো। তারপর শান্ত কন্ঠে বললো
- পাপা তোমাকে কিছু বলার আছে।
মিষ্টার সাইম চায়ের চুমুক দিতে দিতে বললো
- কি কথা মা, বল।
বিন্দু মাথা নিচু করে, লাজুক কন্ঠে বললো
- পাপা আমি তোমার মেয়ে জামাই পছন্দ করিছি।
মিষ্টার সাইম দেশের বাহিরে থাললেও, মেয়ে কখন কি করে তার খোঁজ খবর ঠিকই রাখে। তার মেয়ে যে তার হসপিটালের এক ডাক্তারের পিছন পরে আছে, তা সে জানে। সে ছেলেটার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছে। সব শুনে ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়েছে। তাই মিষ্টি হেসে মেয়েকে বললো
- এতো খুশির খবর।
যদিও বিন্দু জানতো তার বাবা তাকে না করবে না। তবুও তার একটা ভয় ছিল। যদি বাবা রাজী না হয়। বাবার কথা শুনে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। মিষ্টার সাইম জিজ্ঞেস করল
- তা আমার সাথে তার কবে দেখা করাবে?
বিন্দু বাবার দিকে তাকিয়ে খুশি মুখে, লাজুক কন্ঠে বললো
- তুমি তাকে চিন।
মিষ্টার সাইম অবাক হওয়ার ভাণ করে। সে চায়না তার মেয়ে জানুক যে, সে সব কিছু জানে। সে তার মেয়ের সেফটির জন্যই, মেয়েকে না জানিয়ে মেয়ের জন্য দুজন বডিগার্ড রেখেছে। বাবা তো তিনি, চিন্তা হয় মেয়ের জন্য খুব। তাছাড়া মেয়ে এতো উৎসাহ নিয়ে বলছে তা তিনি নষ্ট করতে চায় না। তাই তিনি জিজ্ঞেস করল
- আমি চিনি কে?
- তোমার হসপিটালের ডাক্তার। ডাক্তার অর্থ মাহবুব।
- ডাক্তার অর্থ মাহবুব! আই ডাক্তার?
- হুম্ম।
- ও তো খুব বিলিয়ান্ড ছেলে। আমি জানতাম আমার মেয়ের পছন্দ সবার সেরা।
বাবার কথা শুনে বিন্দু খুশি হয়। পরক্ষণেই আবার মুখটা মলিন করে বললো
- কিন্তু একটা প্রবলেম আছে বাবা।
- কি প্রবলেম মা?
- অর্থ আমাকে পছন্দ করে না।
- কি! আমি আজই ওর সাথে কথা বলছি।
- ওনার সাথে কথা বলে লাভ কিছু হবে না বাবা।
মিষ্টার সাইম কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে?
বিন্দু বাঁকা হেসে বললো
- এই শুক্রবার তো অলক ভাইয়ার বিয়ে আর তার পরে অনলের। ওদের বিয়েটা হোক। তারপর তার ব্যবস্থা করছি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন