কবিতা : ওয়াক থু
কবি : শিমুল চৌধুরী ধ্রুব
গ্রন্থ : নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকাল : বইমেলা ২০২০
রচনাকাল : ২১ অক্টোবর, ২০১৮
বহুল পরিচিত কবি ও সাংবাদিক শিমুল চৌধুরী ধ্রুব “ওয়াক থু” শিরোনামের এই কবিতাটি তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে লিখেছেন। তার এই কবিতায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে রাস্ট্রীয় মূর্খতার বিরুদ্ধে ঘেন্না এবং তীব্র প্রতিবাদ। অনবদ্য এ কবিতাটি তার প্রকাশিত কব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপি থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি এ কবিতাটি ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর খুব সকালে ঢাকা কেরানিগঞ্জের সাড়িঘাটে বসে লিখেছেন।
![]() |
ওয়াক থু || শিমুল চৌধুরী ধ্রুব |
ওয়াক থু || শিমুল চৌধুরী ধ্রুব
দু গাল ফুলে যাচ্ছে
মুখ ভরে যাচ্ছে স্যালাইভায়
ওয়াক থু!! করে ছুড়ে ফেলার মিছিলে
উৎসব করছে সবাই। সব্বাই।।
মানবিক দেয়াল ঢেকে আছে
হরেক রকমের দলা দলা স্যালাইভায়।
মিছিল বড় হচ্ছে লাশের!
নানান রঙের, ঢঙের লাশ
হাত কাটা, ছিন্ন মস্তক
ধর্ষিত যোনিতে কাটা গাছের লাশ।
পতাকা ওড়ানো পোশাকগুলো
পারফিউম ছেড়ে লাশ চাইছে
গোনার জন্য সংখ্যা চাইছে।
মাফিয়ারা পড়াচ্ছে মানবিকতার পাঠ
প্রহসনকারী আওড়াচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলার বাণী
টিভি পর্দায় গণনা হচ্ছে সংখ্যা
কটা হলো!
সংখ্যা বাড়ছে, রক্ত বাড়ছে, লাশ বাড়ছে।
সবাই এখন সুগন্ধির বদলে রক্ত চায়।
স্বাদ নয় ঘ্রাণ চায়।
দু-গাল ফুলে যাচ্ছে
মুখ ভরে যাচ্ছে স্যালাইভায়
ওয়াক থু! করে ছুড়ে ফেলার মিছিলে
উৎসব করছে সবাই। সব্বাই।
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে উড়ছে হাওয়ার টাকা
যে কটা ছোয়া যায়, তাও অদৃশ্য কালো
কালিতে ছেয়ে আছে পিতার মুখ।
বার্ধক্যে প্রতিবন্ধী মন্ত্রী মৃত কাতল মাছের মত
পিতার মৃত্যু উৎসবের বাজেট নিয়ে ক্লান্ত।
সে আয়োজনে সমাজপতি সন্তানেরা গর্ব নিয়ে বলে
আমরা নেচে গেয়ে উদযাপন করছি তোমার শোক।
হাজার কোটি টাকা দিয়ে ফুর্তি জায়েজ করেছি
তোমার নামে।
দু-গাল ফুলে যাচ্ছে
মুখ ভরে যাচ্ছে স্যালাইভায়
ওয়াক থু! করে ছুঁড়ে ফেলার মিছিলে
উৎসব করছে সবাই। সব্বাই।
আদর্শ লিপির গায়ে দলায় দলায় স্যালাইভা
ছাত্র-শিক্ষক সবাই ছুড়ছে, সব্বাই।
নৈতিকতা, ন্যায় পরায়নতার জানাজা শেষে
কালো টুপিতে মাথা বেধে থু থু ছেটাচ্ছে
মগজহীন গ্রাজুয়েট।
তারা পিতার পুচ্ছে কামড়ে দিতে ওস্তাদ।
আমার দু-গাল ক্রমশ ফুলে যাচ্ছে
একদলা থুথু ফেলবো।
রাষ্টের ধর'এ অবাঞ্চিত সন্তানের মুণ্ডটা ঢেকে দেব
একদলা স্যালাইভায়।
২১-১০-১৮
সকাল ০৬-২৩
সাড়িঘাট, কেরানিগঞ্জ, ঢাকা।
লেখক সংক্ষেপ :
কবি শিমুল চৌধুরী ধ্রুব তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে' নিজের পরিচিতি সম্পর্কে লিখেছেন ❝নাম, ধাম, বয়স, জন্ম, সময়-বিবিধের বেড়াজালে আমি কোনোদিন হারাতে চাইনি এবং ভবিষ্যতেও চাইনা। বইয়ের শেষ পৃষ্টা উল্টিয়ে কবি'র পরিচয় পাওয়া কি আদৌ সম্ভব! কবি যুবক নাকি বৃদ্ধ, ধনী নাকি দরিদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিনা, এসব আমার কাছে বরাবরই অপ্রাসঙ্গিক। কবির পরিচয় নিহিত থাকে মূলত তার সন্তানসম কবিতায়।আমার পরিচয়ের কথা যদি বলতেই হয়, সেক্ষেত্রে আমি অতি সাধারণ এবং নগন্য এক মানুষ। এর বাইরে দেবার মতো পরিচয় আমার নেই।❞
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন