মুক্তমত : অশ্লীল কবিতা নিয়ে কিছু কথা
লেখক : আশিক সরকার শুভ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
তরুণ সমালোচক আশিক সরকার শুভ “অশ্লীল কবিতা নিয়ে কিছু কথা” শিরোনামের এই মুক্তমতটি কবিয়ালের ইমেইলে পাঠিয়েছেন। তিনি এই লেখায় কতিপয় কবিদের কবিতা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার এই লেখার সঙ্গে সকলে একমত নাও হতে পারেন। এমনকি এই লেখার বক্তব্যের সঙ্গে কবিয়াল'ও পুরোপুরি একমত নয়। কিন্তু কবিয়াল বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
![]() |
অশ্লীল কবিতা নিয়ে কিছু কথা || আশিক সরকার শুভ |
অশ্লীল কবিতা নিয়ে কিছু কথা || আশিক সরকার শুভ
একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি...
কলেজে পড়ি তখন। আমাদের এক স্যার ম্যাথ ক্লাস নিতেন। খুবই পড়াশোনা করতেন, স্টুডেন্টদের চাইতেও তিনি পড়াশোনা করতেন বেশী। এতটাই পড়ুয়া ছিলেন যে কলেজের অন্যান্য স্যারেরা তাকে স্টিফেন হকিং বলে ডাকতেন...। পড়াতেনও যথেষ্ট ভালো।
তো একদিন তিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন। কি যেন একটা জ্যামিতি বোঝাচ্ছিলেন। সেখানে চতুর্ভূজের একটি ব্যাপারও ছিল। উনি লেকচার দেয়ার সময় এক প্রসঙ্গে বলছিলেন “তোমরা ছোটবেলা থেকেই জানো, চারটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে চতুর্ভূজ বলে”। তো সেটি শুনে আমি দাঁড়িয়ে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম "স্যার, চারটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ হলেই হবে?" স্যার বললেন "হ্যাঁ হবে"।
তখন আমি বললাম "স্যার, আমার একটি জিনিস নিয়ে কিছুটা কনফিউশন রয়েছে"। স্যার বললেন "কি কনফিউশন?"। তখন আমি ব্লাকবোর্ডের কাছে গেলাম। গিয়ে চক দিয়ে নতুন এক ডিজাইনের চারটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ এক ক্ষেত্রকে আঁকলাম। আপনারা নিচের ছবিতে যেটি দেখতে পাচ্ছেন
সুন্দরমত এঁকে দিয়ে তারপর বললাম "স্যার, এটা কি চতুর্ভূজ হবে?"। স্যার আমার আঁকা ছবিটি নিয়ে ব্যাপক টেনশনে পড়ে গেলেন। "চারটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র"র এমন ডিজাইন হতে পারে তিনি বোধহয় ভাবেন নি। অনেক্ষন ভেবে চিন্তে তিনি বললেন "না, এটা কোন চতুর্ভূজ হয়নি। চারটি বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ হবার পাশা পাশি তার বীপরিত কোনদ্বয়ের সমষ্টি দুই সমকোন বা ১৮০ ডিগ্রী এর সমান হতে হবে"।
আমি বললাম "স্যার, যতদূর মনে পড়ে সেটি শুধুমাত্র বৃত্তস্থ চতুর্ভূজের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কোন চতুর্ভূজের যদি একটি পরিবৃত্ত আঁকা যায়, তবে শুধুমাত্র সে ক্ষেত্রে দুই সমকোনের এই ব্যাপারটি প্রযোজ্য। সব চতুর্ভূজের বেলায় তো নয়"। স্যার বললেন "এই থিওরী কোথায় পেয়েছো তুমি?"। আমি বললাম "সেটি নাইন টেনের গণিত বইয়ের ৪১ নম্বর উপপাদ্যে সম্ভবত পাবেন স্যার"। স্যার বললেন "যেখানেই পড়েছো, সেটি ভুল। আমি যা বলছি তা শোনো"।
আমিও অত সহজে ছেড়ে দেবার মত ছাত্র নই। এবার আমি ব্লাকবোর্ডে একটি রম্বস আঁকলাম (নিচের ছবি লক্ষ্য করুন)। রম্বসের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর যে দুটি বিপরীত কোনের সমষ্টি কখনোই দুই সমকোনের সমান হবেনা (কেউ চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন)।
তো আঁকা শেষে বললাম "স্যার, এটার বিপরীত কোনদ্বয়ের সমষ্টিও কিন্তু দুই সমকোনের সমান নয়। তাহলে এটাও কি চতুর্ভূজ নয়?"। স্যার আমাকে এবার একটি ধমক দিলেন "তুমি একটা সিলি ব্যাপার নিয়ে ক্লাসের সময় নষ্ট করছ। যাও গিয়ে বসো। আমি যেটা বলছি সেটা না জেনে বলছিনা।"
আমি আর কি করব? রনে ভঙ্গ দিলাম.. স্যার চতুর্ভুজ বোঝাতে গিয়ে চতুর্ভুজের সংজ্ঞাই যেখানে পাল্টে ফেলেছেন সেখানে আমি আর কি বলবো...
এবার মূল কথায় আসি..
যারা কবিতা লিখেন, তাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন আমার এই স্যারের ক্যাটাগরীর। আমার স্যার চতুর্ভূজের সংজ্ঞা পাল্টেছেন, আর উনারা সংজ্ঞা পাল্টেছেন অশ্লীলতার। তাদের দৃষ্টিতে সাহিত্য কবিতায় অশ্লীলতা বলে কিছু নেই। যে জিনিসটি আমরা সবাই অশ্লীল হিসেবে জানি, সেটিকে তারা পবিত্র ও শালীন বলে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর।
এদের কবিতাগুলোও হয় সেরকমই, তারা যেভাবে ভেবে অভ্যস্থ আরকি। তারা কবিতা লিখেন নারীর যেকোন একটি অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে। কোন মেয়ের স্ত**ন কেমন, স্ত**নের সাইজ কতটুকু হলে কেমন লাগে এসব নিয়ে বিচ্ছিরি সব লাইন তারা ছন্দে ছন্দে মেলান।
নারীর নিতম্বের সাথে তারা জঙ্গলের মিষ্টি কুমড়ারও নাকি সাদৃশ্য খুজে পান শুনেছি। অনেকে আবার নারীর নিতম্বকে আকাশেও উঠিয়ে ছেড়েছেন। এটা কোন জাতের শালীন কবিতা হলো তা আমার বোধগম্য নয়।
আমি একজন কবির সেরকম একটি কবিতা নিচে তুলে দিচ্ছি.. নামটা নাহয় উল্লেখ নাইবা করি..
কাঠঠোকরাগাছের যৌনাঙ্গ থেকে ঠিকরে পড়া রোদ্দুরের মতো শাদা শাদাঅনুভূতির প্রচ্ছন্ন আভায় পৃথিবী লেপ্টে আছে।সমস্ত অনুভূতিই তবে শুদ্ধ সঙ্গীত। আর খচ্চরের পায়ু পথ দিয়েযে ধ্বনি নির্গত হয় কখনও কখনও তাও কারও কারও মর্মে পশে যেতে পারে ব’লে মনে হচ্ছে।দ্যাখো, একটি নারী আকাশের দিকে নিতম্ব দিয়ে শিশ্ন গর্জনের মতোধেয়ে আসা সৌরঝড় প্রতিহত করছে।এবং এইসব অশ্লীল ঘটনার মোকাবিলা করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছেসূর্যের আয়ুষ্কাল। তবু একজন কাঠঠোকরা জীবনে কতো কিউবিক কাঠঠোকরায় তা হিসেবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
আরেকটি কবিতা দিচ্ছি এবার। এই কবিতার কবিকে আপনারা একনামে চেনেন। তার নামও আমি উল্লেখ করছিনা। শুধু এটুকুই বলি, তার কবিতাটা পড়ে আপনার মনে হতে পারে এটি কোন চটি বই থেকে সংগৃহীত।
ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্, এইখানে, প্রিয়!'ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্, এইখানে, প্রিয়! এইখানে রাখোজিভদেব! আ-হ্! ম'রে যাচ্ছি! চোষো, একটুকু ধীরে,আ-হ্! ডান চাঁদে ঠোঁট রেখে চিরকাল থাকো,পান করো, খাও, গেলো, শুষে নাও, ভেঙে, ফেড়ে, ছিঁড়ে।''ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্, এইখানে, প্রিয়!''আমার মুঠোতে দাও রাজদন্ড! দাও! ধরি! বন্য দেবতাএতো দৃঢ়! পেশল! শক্তিমান! উচ্চশির! দাও তারে মুখগহ্বরে!কী প্রচন্ড! আ-হ্! কন্ঠের ভেতর শুনি পৌরাণিক অপরূপ কথা,দম বন্ধ হয়ে আসে! ভেঙে পড়ছি আশ্বিনের ঝড়ে!''ঈ-শ! ঈ-শ! এ-ই, আ-হ্, এইখানে, প্রিয়!'
পরের লাইনগুলো আরো ভয়াবহ। তাই দিচ্ছিনা আর..
আমি আরো ভয়াবহ কিছু কবিতা পড়েছি। এমনো কবিতা পড়েছিলাম (নামটা খেয়াল নেই) যেটার আগাগোড়া নারী যৌনাঙ্গের এনালাইসিসের ফলাফল ছাড়া আর কিছু নয়। বুঝলামনা দুনিয়ায় কি কবিতা লিখার জন্য টপিকের দুর্ভিক্ষ লাগলো নাকি যে নারী যৌনাঙ্গ নিয়ে পড়ে থাকতে হবে !?
স্ত**নের ব্যবচ্ছেদই হোক, নারী নিতম্বকে আকাশে তোলাই হোক, কিংবা নারী যৌ**নাঙ্গ নিয়ে গবেষনা করা সহ যাই হোকনা কেন, তাদের কবিতাকে অশ্লীল বললেই দেখবেন তারা তা মানতে নারাজ! তাদের সে ঐতিহ্যবাহী ডায়লগই তাদের কাছ থেকে শুনবেন "সাহিত্য কবিতায় অশ্লীলতা বলতে কিছু নেই"। তারা যখন এ ডায়লগ দেয় তখন বলারও কিছু থাকেনা..
কারন চতুর্ভূজের সংজ্ঞা পালটে ফেললে যেমন কিছু বলার থাকেনা, তেমনি অশ্লীলতার সংজ্ঞা পালটে ফেললেও বলার উপায় নেই...
কিন্তু কথা হচ্ছে চতুর্ভূজ চতুর্ভূজই থাকবে, অশ্লীলতা অশ্লীলতাই থাকবে। এখন আমরা মানি, কিংবা না মানি। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এই যে অশ্লীলতাকে শালীন হিসেবে তারা প্রচার করছেন, বা আমাদের মাঝে সেটি প্রতিষ্ঠিত করছেন, এর প্রভাবটি ভয়াবহ। খুব সোজা ভাষায় বলতে গেলে খুব অপবিত্র এবং নষ্ট একটা বিষয়কে তারা অত্যন্ত সুকৌশলে পাঠকসমাজে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন যা কোনভাবে কোন যুক্তিতেই সমর্থযোগ্য নয়।
একজন যখন বাথরুমে গোছল করবে তখন হয়তো "নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়" বাক্যটি প্রযোজ্য।
কিন্তু বাইরে যদি নগ্ন হয়ে বের হয় তাহলে তো সমস্যা! নগ্নতাকে কবিতার আকার দিলে তো অবস্থা আরো ভয়াবহ!
যাক.. কিছু আর না বলি... শেষে যা বললাম সেটির একটি তাৎপর্য রয়েছে.. খোলাশা করে বললাম না... যা কিছুই তাদের বলা হোক না কেন, সেসকল কবিদের কখনো বোধদয় হবেনা.... এটি মোটামোটি নিশ্চিত....।
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ সমালোচক আশিক সরকার শুভর ডাক নাম আবীর। তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি ছেলেটির সাথে আমার নামের কোন মিল নেই। এমনকি আমার লিখার সাথেও নেই। আমি আমার মত। আমার লিখারা তাদের মত।”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন