উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

২০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২১)

আরাফ নবনিকে বেডে নিয়ে শুয়ে দিল।তারপর ওযু করে এসে নবনির মুখে পানির ছিটা দিলো।নবনি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো।তার কিছুই মনে নেই।আরাফ ও কিছুই বললো না।
আরাফঃউঠো পাখি।নামায পরবে না?আযান দিয়েছে।
নবনিঃআমার খুব খারাপ লাগছে আরাফ।সারা গা ব্যাথা করছে।আপনি পরে নেন। আজকে পরতে পারবো না।
আরাফঃএটা কেমন কথা?নামায তো পরতেই হবে।উঠো পাখি আমি আছি তো। আসো।
নবনি আস্তে আস্তে করে উঠে বসে। আরাফ খেয়াল করে নবনির ঘাড়ে হাতে খামচি আর মারের দাগ স্পষ্ট।আরাফ এর চোখে পানি এসে পরে।নবনি দেখার আগেই চোখ মুছে ফেলে।
নবনিঃআরাফ খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি পারবো না।আজকে মাফ করে দেন।
আরাফঃআমি মাফ করলেও আল্লাহ যে মাফ করবে না।
আরাফ নবনিকে কোলে তুলে নেয়। ওয়াশরুমে নিয়ে যেয়ে নামায়।তারপর নিজেই হাত পা ধুয়ে ওযু করিয়ে দেয়।তারপর কোলে করে এনে জায়নামাজ যেখানে সেই স্থানে নামায়।
আরাফঃনবনি পাখি।তুমি বসেই নামায পরো।আস্তে আস্তে পরো আমি আছি।
নবনিঃআপনি মসজিদে যাবেন না?
আরাফঃনা আজকে বাসায় পরবো।আসো শুরু করি। 
আরাফ নামাজে দোয়া করে~
আল্লাহ জানি না কোন বিপদ আমাদের পিছু নিয়েছে।তুমিই ভালো জানো।আমার বউ সারাটাজীবন কষ্ট করে কাটিয়েছে।তুমি তাকে আর কষ্ট দিও না। আল্লাহ। তুমি তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করো।ওর ভাগের সব কষ্ট আমার নামে লিখে দাও।তাও তাকে তোমার আরশের ছায়াতলে ঢেকে নাও।
আল্লাহ আমীন।
নবনি নামাজ শেষে আরাফের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।আরাফ হাত ধরে কোলে করে নিয়ে বিছানায় নামায়।
নবনিঃআরাফ আপনার গলায় দাগ কেন!ব্যাথা পেয়েছেন কীভাবে? 
আরাফঃআরে দাগ না এলার্জি। কালকে বেগুন খেয়েছিলামতো এলার্জির দাগ।
আরাফ নবনি গলা চেপে ধরার কথাটা খুব কৌশলে আড়াল করলো।
নবনিঃআমাকে বললেই আমি অন্য কিছু বানিয়ে দিতাম।


আরাফঃথাক বাদ দাও।চোখ বন্ধ করো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নবনির শরির ক্লান্ত লাগছিল।তাই শুয়ে পরে।নবনি ঘুমিয়ে পরতেই আরাফ বের হয়ে যায়।আরাফ এখান থেকে দেশের নামকরা মাওলানার কাছে যায়।তার থেকে আরাফ কোরআন শিখেছিল ছোটকালে।উনার নাম মাওলানা আবু তোহা।আবু তোহা লোকটা খুব স্বল্পভাষী। আরাফ ছোট থাকতে একদিন তাকে জীন এর সাথে কথা বলতে দেখেছিল।তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন তিনি জীন পালেন।কিন্তু এটা কাউকে বলতে নিষেধ করেন।আরাফ কথাটা একদিন খেলার ছলে তার মাকে বলে দেয়।বলায় তিনি আর আরাফকে তার কাছে পরতে পাঠাননি।কিন্তু আরাফ তাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে মায়ের অগোচরে উনার সাথে যোগাযোগ রাখে।আজকে এই যোগাযোগ রাখার সিদ্ধান্তই আরাফকে এই কঠিন বিপদে সাহায্য করছে।
আরাফঃআসসালামু আলাইকুম হুজুর। 
মাওলানাঃঅলাইকুম আসসালাম। আরাফাত।কেমন আছো তুমি?
আরাফঃভালো নেই।হুজুর।আমার স্ত্রীকে খারাপ কিছু আকর্ষন করেছে।
মাওলানাঃকি হয়েছে সবটা বলো।
আরাফ উনাকে সবটা বলে।
মাওলানাঃআমাকে কিছুটা সময় দাও।আমি বিষয়টা দেখছি।
আরাফঃনবনির অবস্থা একদিনেই খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে।আপনি যা করার একটু তাড়াতাড়ি করেন প্লিজ।
মাওলানাঃঠিক আসে তুমি আপাদত একটা কাজ করবা।
তিন কুল~সূরা নাস,সূরা ইখলাস,সূরা ফালাক পরে তোমার ঘরের চার দেয়ালে ফু দিবে।এতে জিনিসটা ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
আর এই পানিটা নিয়ে যাও।এটা দিয়ে নবনিকে গোসল করাবা।এতে ওর ব্যাথা কিছুটা কমবে।আর ওই খারাপ জিনিস নবনির শরির থেকে বের হয়ে যাবে।
আরাফ এখান থেকে অফিস যায়।সেখানে কাজ এর চাপে মাওলানার বলা কথাগুলো বেমালুম ভুলে গেলো।
আরাফ এর ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল।১২ টা বাজতে ৫ মিনিট আছে।আরাফ বাসায় প্রবেশ করলো।সে নবনির রুমে যেয়ে দেখলো নবনি ঘুমিয়ে আছে।আরাফ এক কাপ কফি নিয়ে অফিসের কাজ করতে বসলো।কিছুক্ষন পর মনে হলো আরাফের বাম দিকে গা ঘেষে কেউ বসে আছে।আরাফ বাম দিকে তাকিয়ে কাউকে পেলো না।
আরাফ আবার কাজে মন দিলো।এইবার ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে।আরাফ নবনির দিকে তাকিয়ে দেখলো নবনি বিছানায় নাই।আরাফ ভয় পেয়ে গেল।আরাফ চারদিকে খুজতে লাগলো।নবনি কোথাও নেই। বাথরুমে শাওয়ার ছাড়া। আরাফ সেখানে দৌড়ে গেল।সেখানে গিয়ে আরাফ এর ভিতর আত্না কেপে উঠলো।নবনির বাথরুমের ভেন্টিলেটর খোলা।নবনির বাসা থেকে কিছু দূরে কবরস্থান আছে।তাই ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর সবসময় লাগানো থাকে।আজকে এটা খোলা। আর ওয়াশরুম ও পুরোটা রক্তে মেখে আসে।আরাফ রক্তের দাগ গুলোর পিছু পিছু গেল।রক্ত দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছু টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আরাফ ভাবছে নবনি ঠিক আছে তো!রক্তের দাগ ছাদ পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে।আরাফ ছাদে গিয়ে দেখলো নবনি ছাদের রেলিং এর উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।পরনে সেই সাদা জামা।চুল গুলো খোলা।আগের মতোই সুগন্ধি  ছড়িয়ে আছে চারপাশে।কিন্তু এইবার সুগন্ধির সাথে পচা দমবন্ধকর গন্ধ আসছে। আরাফ হাত দিয়ে নাক চেপে সামনের দিকে আগালো।আরাফ এখনও নবনির মুখ দেখে নেই।নবনি কি জানি খাচ্ছে।নবনির চিবানোর আওয়াজটা বিকট শোনাচ্ছে।আরাফ ধীরে ধীরে নবনির কাছে গেল।নবনির সেদিকে খেয়াল নেই সে মন দিয়ে কি জানি খেয়ে যাচ্ছে।যেন এর থেকে সুস্বাদু খাবার আর নেই।সামনে যেয়ে আরাফ যা দেখলো তা দেখার পর যেকেউ জ্ঞান হারাবে।আরাফ দেখলো নবনি একটা আস্ত মানুষের চোখ খুবলে খাচ্ছে।লাশটার গন্ধই এতোক্ষন আরাফ পাচ্ছিলো।নবনির মুখ রক্তে মেখে আছে।চোখগুলো অসম্ভব লাল।


আরাফঃনবনি।নবনিইইইই।
নবনি আরাফের দিকে বিরক্তিকর চাহনিতে তাকালো।
নবনিঃআমাকে জ্বালাবিনা না।যা এখান থেকে যা বলছি।যায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
আরাফ কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে।হঠাৎ আরাফ এর মাওলানার দেয়া পানির কথা মনে পরলো।আরাফ দৌড়ে মাওলানার দেয়া পানিটা নিয়ে আসলো। 
এতক্ষনে নবনি লাশটাকে অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছে।
আরাফ নবনির গায়ে ছিটা দিতেই নবনি ছিটকে পরে। আরাফ নবনির হাত ধরে ফেলে।একটুর জন্য নবনি রেলিং থেকে নিচে পরে যেত।আরাফ নবনির হাত টেনে উপরে আনে।
নবনির জ্ঞান নেই।আরাফ নবনিকে রুমে নিয়ে যায়।নবনির জ্ঞান ফেরার আগে সব রক্তের দাগ মুছে ফেলে।তারপর নবনিকে গোসল করায় মাওলানার দেয়া পানি দিয়ে।গোসল করানের পর নবনির জ্ঞান ফিরে।
নবনিঃআরাফ এসে পরেছেন।আমি আপনার কত অপেক্ষা করছিলাম।এত দেরী করেছেন কেন।আমি রাগ করেছি।
আরাফঃএকটু কাজে ছিলাম পাখি।
নবনিঃআপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।আদরও করেন না।
আরাফঃতাই বুঝি।আসো তোমাকে আদর করি।
নবনি আরাফের কাছে যেতেই আরাফের ফোন বেজে উঠলো।আরাফ ফোনটা হাতে নিতে উঠে যায়।আর নবনির শরীরে ঠান্ডা শিহরন বয়ে গেলো।আরাফ দেখলো মাওলানার ফোন।কিন্তু নবনি সেটা রিসিভ করতে দিলো না।সে আরাফকে টেনে নিয়ে গেল।ফোনটা হাত থেকে পরে যায়।নবনি আরাফকে কাছে টেনে নিলো।আরাফ নবনির ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারেনি।আরাফ ফোনের কথা ভুলে গিয়ে নবনির মাঝে ডুবে গেলো।
আরাফ জানে না তার এই আদরই আরাফ নবনির জীবনে  কাল হয়ে দাঁড়াবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


২২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন