উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
১৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২০)
নবনিঃ আরাফ।
আরাফঃ হ্যা পাখি।উঠে পরেছো।
নবনি আরাফের বুকে মাঝে ডুব দিলো।যেন এর থেকে শান্তির জায়গা আর কোথাও নেই।
নবনিঃ আই লাভ ইউ সো মাচ আরাফ পাখি।
আরাফঃ হা হা হা।আই লাভ ইউ টু মাচ।অনেকে গুলা মাচ।মাচের বড় মাচ।হা হা হা।
নবনিঃ আই এম সরি। আমার জন্য আপনি এতো বড় বিপদে পরলেন।আমি আপনাকে সন্দেহ না করলে আপনি রেগে বের হতেন না। আমার আপনাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল।সব সব সব দোষ আমার। আমার জন্য বাবা আপনাকে বকে গেল।আমি বাবাকে সব বলে দিবো।আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন।আপনি যে আমার দুনিয়ার জান্নাত।আমি খুব খারাপ।খুব খুব খারাপ।
আরাফঃ শিসসসসসসসস।খবরদার আমার বউকে খারাপ বলবা না।আমার বউ দুনিয়ার সব থেকে লক্ষী বউ।
নবনিঃ আর আপনি আমার থেকে ও অনেক ভালো।অনেক অনেক অনেক ভালো একজন হাসবেন্ড।
আরাফঃ তাহলে একটু খারাপ হই?
নবনিঃ মানে?
আরাফঃ তোমার না আদর লাগবে।তারপর আমার বাচ্চার মা ও তো হতে হবে।তাই না পাখি?
নবনি আরাফের বুকের থেকে মাথা উঠাচ্ছেই না।আরো ভিতরের ঢুকা গেলে যদি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেত।
আরাফঃ আমার বউটাকে কয় দিন আদর করি নেই বলে শুকিয়ে গিয়েছে।এটা কি জাতি মানবে?জাতি তো আরাফ কে কিপ্টা বলে ঘোষণা করবে।
আরাফ নবনি চুলের ভাজে হাত ঢুকালো।নিজের খোচা খোচা দাড়িগুলো নবনির নরম নরম গালে ঘষছে।আর নবনি খিলখিল করে হাসছে।নবনি হাসি ওয়ালে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসছে।আরাফ এই সময়টা উপভোগ করছে।
নবনিঃআপনার দাড়ি গুলো আমার খুব ভালো লাগে।এগুলো খুব ছোটও না আবার খুব বড় ও না।একদম পার্ফেক্ট।সবসময় এমনি রাখবেন।
আরাফঃএটা কি করে সম্ভব।দাড়িতো বড় হবেই তাই না?আমি এটাকে বড় হওয়া থেকে করে আটকাই। তুমি বরং এক কাজ কইরো।দাড়িগুলো বড় হলে নিজেই ক্লিন সেভ করে দিও।কেমন?!
নবনিঃআমি পারি না কেটে গেলে।
আরাফঃকিচ্ছু হবে না। আমাকে কিন্তু ক্লিন সেভ এও খারাপ লাগে নে।করে দেখতে পারো।
নবনিঃআমারতো এই লুকের আরাফকেই চাই। যার ছোট ছোট দাড়ি আমি ঘষতে পারবো।হি হি হি।
আচ্ছা চলুন ম্যাডাম খেয়ে ঘুমিয়ে পরি।কালকে বাসায় চলে যাবো।
নবনিঃআচ্ছা।
রাত~১২টা
অন্ধকার কেবিনে নবনি আরাফের বুকে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।আরাফ ও নবনিকে বুকে নিয়ে তৃপ্তি সহকারে ঘুমিয়ে ছিল।হঠাৎ রুমে সুগন্ধি ছড়িয়ে গেল।আরাফ এর ঘুম খুব পাতলা।সে ঘ্রাণে জেগে উঠে।আজকের চাঁদটা এত প্রখর আলো দিচ্ছিল যে কেবিন মৃদ্যু আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।আরাফ টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখলো নবনি সাদা জামা পরে কেবিনে রাখা সোফায় বসে আছে।মনে হচ্ছে গোসল করে এসেছে।নবনিকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।এত সুন্দর আর চোখ ধাধানো নবনিকে এর আগে কখনো দেখায় নি।নবনি আরাফের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিলো।
আরাফ খেয়াল করলো তার বুকটা ভারী হয়ে আছে।তাকিয়ে দেখলো নবনি তার বুকে শুয়ে আছে।আরাফ তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালালো।সাথে সাথে একটা কালো বিড়াল কেবিনের জানালা থেকে বেরিয়ে গেল।আরাফ অবাক হলো এটা ভেবে যে ১২ তালা কেবিনের জানালা থেকে বিড়াল লাফ দেয় কি করে। আর নবনি যদি তার বুকে থাকে তাহলে সে কাকে দেখলো।
কেবিনের বাতি জ্বালানে নবনি উঠে পরলো।
নবনিঃআরাফ।কি হয়েছে।ঘুম আসছে না?
আরাফ দর দর করে ঘামছে।নবনি ভয় পাবে বলে ওকে কিছু বললো না।
আরাফঃহুম। বাতিটা জ্বালিয়েই ঘুমাই।অন্ধকার ভালো লাগছে না।
নবনিঃআচ্ছা।
নবনি ঘুমিয়ে পরলো আরাফ সেই রাতটা নির্ঘুম কাটালো।
পরের দিন সকাল-
আরাফঃ নবনি রেডি হয়েছো। বোরখা নিকাব পরো। রাজ আসছে আমাদের নিতে। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।
নবনিঃআমরা আমাদের বাসায় যাবো?না মানে আপনার বাসায় যাবো না।
আরাফঃনা।
নবনি কিছু বলতে নিলে
আরাফঃNo more talk. Lets Go.
আরাফের মা নিলীমা চৌধুরী এসেছেন আরাফের সাথে দেখা করতে।নবনি তাকে বিনয়ের সাথে সালাম দিলে তিনি রূঢ় ভাবে সালামের উত্তর দেন।
নিলীমা চৌধুরীঃ কেমন আছো আরাফ?
আরাফঃআলহামদুলিল্লাহ ভালো।
নিলীমা চৌধুরীঃবাসায় চলো।
আরাফঃকেন মা!যাতে আবার আমার অনুপস্থিতে আমার স্ত্রী কে বের করে দিতে পারো?
নিলীমা চৌধুরীঃতোর কাছে আমার থেকেও তোর স্ত্রী বড় হয়ে গেলো?
আরাফঃবসো মা।
নিলীমা চৌধুরী বসলেন।
আরাফঃমা তুমি যখন বিয়ে করে এসেছিলে তুমি চেয়েছো আমার বাবা তোমাকে ভালোবাসুক কিন্তু যখন তোমার ছেলে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে সেটা তুমি কেন নিতে পারো না মা?
তুমি আমাকে দুনিয়ায় এনেছো।তুমি আমার জন্মদাত্রী মা।তাই তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো।কিন্তু এই মেয়েটার সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই।তবুও সে আমাকে তার মন উজাড় করে ভালোবাসে।তার নির্স্বাথ ভালোবাসার প্রতিদান কি কিছুই না?
একটা মেয়ে তার বাবা মা সব ছেড়ে তার স্বামীর কাছে আসতে পারে এটা সমাজ সহজেই মেনে নেয়।কিন্তু ছেলে তার বাবা মাকে ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে থাকবে সেটা কেন মেনে নিতে পারে না?
আমার কাছে মা বাবা সবই আছে তারপরও তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো।আর নবনির কাছে তুমি আর বাবা ছাড়া কেউ নেই।সে তার বাপ ভাই ছেড়ে এসেছে অথচ তুমি ওকে ভালোবাসতে পারো না কেন মা?
তুমি ভালোবেসেই দেখতা। সে আমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারলে তুমি আমার মা সে তোমাকে আমার থেকে দ্বিগুণ ভালোবাসতো।
নিলীমা চৌধুরীঃনবনি এতিম।ওর মা নেই।ওর বাসায় তুই এক গ্লাস পানিও পাবি না।ও ওই বাসায় বেড়াতে গিয়ে রান্না করবে তারপর তোর কপালে খাবার জুটবে।
নবনি চোখ বেয়ে পানি পরলো।নবনি সেটা সাথে সাথে মুছে ফেলে।আরাফ ঠিকই না দেখেও বুঝতে পারে।
আরাফঃমা তুমি জানো অনাথ মেয়েরা ভালোবাসার কাংগাল হয়।তুমি যদি চাইতা ও তোমাকে ওর মার জায়গাটা খুব সহজেই দিতো।কারন সে অভাবে আছে। মায়ের অভাবে।কিন্তু তুমি একটা মেয়ে পেয়েও আগলে নিলে না।এটা নবনির না তোমার ব্যর্থতা মা।
নিলীমা চৌধুরীঃএই কয়দিনেই তুই ওর হয়ে আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস।আর তো সময় পরেই আছে।
আরাফঃহা হা হা।আমি ওই ছেলেদের মতো না যারা একটা মেয়েকে রাত দিন ভালোবাসবে আর যখন মেয়েটা ভালোবেসে ফেলবে তখন ফ্যামিলি মানছে না বলে ছেড়ে দিবে।তোমার ছেলে এমন না মা।
আমি হাত ধরলে আকড়ে রাখতে জানি।
নিলীমা চৌধুরীঃতুই এই মেয়ের সাথে কখনও সুখি হবি না।
আরাফঃআমি যেমন তোমার খুব যত্নে গড়া ছেলে।নবনিও তার মা বাবার আদরের সন্তান।ওর মা ও রাত দিন এক করে ওকে মানুষ করেছে।ওকে কষ্ট দিয়ে আমি কখনো ভালো থাকতে পারবো না।
আর যে সুখ নবনিকে ছেড়ে থাকলে আমার কাছে ধরা দিবে সে সুখের প্রয়োজন আমার নেই।তার থেকে ভালো নবনির হাত ধরে সারাজীবন অসুখি থাকি।
নিলীমা চৌধুরীঃআমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই তোর কাছে?
মা তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিকই কিন্তু তোমার জেদকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসো।যেদিন এই জেদকে পরাজিত করে ছেলের ভালো থাকার কারনটাকে বুঝবা সেদিন তুমি নিজেই নবনিকে আগলে নিবা।আমি সে দিনের অপেক্ষা করবো।
আরাফ নবনির হাত ধরে বেরিয়ে গেল।
গাড়িতে ~
নবনিঃআই এম সরি। আমি মার মন জয় করতে পারি নাই।
আরাফঃনা পাখি।মার মনে জেদ জয় করে রেখেছে।তিনি তার নিজের মতকে এতটাই প্রাধান্য দিচ্ছেন যে আমাকে আর তোমাকে চোখেই দেখতে পাচ্ছেন না।আমি যদি তোমাকে ছেড়ে মাকে বেছে নিতাম তাহলে মায়ের অন্যায়কে প্রশয় দেয়া হতো।এতে আমার মা ভুল পথে গর্বের সাথে এগোতে থাকতেন।সমাজকে দৃষ্টিভংগী বদলাতে হবে।সবসময় মা ভিক্টিম কার্ড প্লে করে ছেলের বউকে শোষণ করতে পারে না।
নবনি আরাফ এর হাতে চুমু দিল।
নবনিঃআল্লাহ আর নবীর পর আমি আপনাকে সব থেকে বেশি সম্মান করি।তাই হয়তো
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন~
আমার পর আর কাউকে সিজদাহ করার অনুমতি থাকলে তোমরা তোমাদের স্বামীকে সিজদাহ করতে।
আর এই অনুমতি থাকলে আমি অবশ্যই এমনটা করতাম।
রাতে~
নবনি ঘুমিয়ে আছে।আরাফ তার বাবার অফিসে জয়েন করেছে।আর্মি থেকে রিটায়ার্ড নিবে বলে সিধান্ত নিয়েছে।তার বাবার বয়স হয়েছে।এখন তার ছেলের সাপোর্ট এর প্রয়োজন।আরাফ ল্যাপটপে কাজ করছিল।এমন সময় রুমে সুগন্ধি ছড়িয়ে পরে। আরাফ বিছানায় তাকিয়ে দেখে নবনি নেই।দরজা খোলার শব্দ হচ্ছে।বাথরুম থেকে নবনি বের হয়ে আসলো।
আরাফঃনবনি এতো রাতে গোসল করলা যে ঠান্ডা লাগবে না?
নবনি আরাফের কোলে এসে বসলো।আরাফ খুব অবাক হলো কারন এমনিতে নবনিকে আরাফ জোর করে কোলে বসায় কিন্তু আজকে নবনির এই বিহেভিয়ার কেমন জানি লাগছে। তারপর নবনির গা থেকে সেই সুগন্ধি আসছে যেমনটা হাসপাতালে পেয়েছিল।
আরাফঃনবনি।নবনিইইই।
নবনির চোখ অসম্ভব লাল।সে আরাফের দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নবনিঃআদর করবেন না।আরাফ?
আরাফ আয়াতুল কুরসি পরতে শুরু করে।আরাফের ঠোঁট নবনির কানের কাছে।নবনির গলার আওয়াজ ভয়ংকার শোনাচ্ছে।
নবনিঃআরাফ কি করছেন। আমার ভালো লাগছে না।বন্ধ করুন।আরায়ায়ায়ফ। আহ আমি ব্যাথা পাচ্ছি।আমাকে মারছে আরাফ বন্ধু করুন।
আরাফ এক নাগাড়ে নবনির কানের কাছে পড়েই যাচ্ছে।এক টা পর্যায় নবনি আরাফের গলা চেপে ধরে।আরাফ নবনির সাথে পারছে না।এ যেন এক জন নয় অনেক জন মিলে আরাফের গলা চেপে ধরেছে।তখনই ফজরের আযান দেয়।আর নবনি হুট করে শান্ত হয়ে আরাফের বুকে ঢলে পরে।আরাফ বুঝতে পারে নবনি জ্ঞান হারিয়েছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
২১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন