উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৫৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৫৬)
আরাফ পিছে ফিরে তাকালে দেখতে পেতো নবনি বারান্দায় দাড়িয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে আরাফ এর যাওয়ার পানে চেয়েছিল।
কিন্তু আরাফ পিছু ফিরে নেই।ফিরলে হয়তো ছেড়ে যেতে পারতো না। তাই ভয়ে পিছনে ছেড়ে আসা ভালোবাসার মানুষগুলোর দিকে তাকানোর সাহস পায় নেই।
স্বামী নামক শব্দটার উচ্চারণ যত সহজ এর গভীরতা ততই গভীর।একটা নারীর সব থেকে বেশি অভিমান রাগ স্বামী নামক ব্যাক্তির উপরই হয়।কিন্তু এই স্বামী নামক ব্যাক্তির কাছেই স্পেশাল ম্যাজিক দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।তাদের বুকে মাথা রাখলে পাহাড় সমান অভিমান ও সুড়সুড় করে গলে যায়।তাদের একটা আদুরে স্পর্শ কঠিন কঠিন আঘাতে মলম নামক ওষুধ লেপে দেয়।একটা নারীর ভালোবাসা ছাড়া তার ভালোবাসার মানুষ এর কাছে আর কি বা চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে!!
নবনিঃআপনার উপর আমার খুব রাগ হয়েছিলো।খুব অভিমান চেপে রেখেছিলাম এই বুকে।কিন্তু আজ যখন আপনি আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন তখন আমার সব অভিমান এর আগুন আরাফ নামক পানির ছোয়ায় নিভে যায়।আমার আপনার প্রতি আর কোনো অভিযোগ নেই আরাফ।
বাবাকে আপনার ব্যাপাটা আমি শেয়ার করবো না।কারন আপনার গোপনীয়তা মানে আমারও গোপনীয়তা।আর আপনি আমাকে আজকে যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো আমার কাছে আমানত।আমার স্বামী রেখে যাওয়া আমানত আমি সেটা খেয়ানত করবো না।
কিন্তু কে আমদের বাসায় আপনার শত্রু!!কার কথা বলেছেন আপনি?এখন যে আমাকেও এটা বের করতে হবে।আমার স্বামী মানে আমার শত্রু।আমি তাকে ছাড় দিবো না। সে যেই হয় না কেনো!
কিন্তু তার আগে আপনাকে একটু শাস্তিতো দিতেই হয়।আমার থেকে এতো দিন আমার আরাফপাখিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।এখন আমিও আপনার নবনি পাখিকে আপনার কাছ থেকে দূরে নিয়ে সালামকে বুঝিয়ে দিবো।হি হি হি।
কালকে দেখা হচ্ছে সালাম সাহেব।
নবনি বিছানায় যেয়ে শান্তির ঘুম দিলো। আজ স্লিপিং পিলস ছাড়াই প্রশান্তিময় ঘুমে নিজেকে জর্জরিত করতে পারলো নবনি।
সকালবেলা~
নবনি আজকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়লো।ব্লাউজটা খুব লং।হাত এর কবজি আর পেট খুব সহজ এ ঢেকে গিয়েছে।তারপর মাস্ক পড়ে খুব সুন্দর করে বুক পিঠ ঢেকে হিজাব পরলো।
নবনি খুব সাবধানে পর্দা সহিত শাড়ি পরিধান করলো।তারপর চোখে কাজল দিয়ে বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্য। বাবুদেরকে আদর চৌধুরীর কাছে রেখে চলে আসলো অফিসে।
নবনি অফিসে প্রবেশ করে দেখে এখনো কেউ আসে নাই।সালাম সোফায় শুয়ে আছে।নবনির খুব খারাপ লাগলো।
নবনিঃবাসায় একদিন বিছানায় শুতে দেই নেই বলে আপনি খাট কিনতে চেয়েছিলেন আর আজকে বালিশ ছাড়া এতোটুক সোফায় সাচ্ছন্দ্য ঘুমাচ্ছেন।আপনার যে কতো রূপ। যত দেখি ততই অবাক হই।
নবনি আস্তে করে আরাফ এর কাছে গেলো।চোখে মোটা চশমা থাকায় চোখগুলো দেখা যাচ্ছে না।নবনি কিছুক্ষন আরাফকে দেখলো তারপর চিৎকার করে উঠলো~
তেলায়ায়াপোকায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
আরাফ লাফ মেরে উঠে গেলো।
সালামঃকি হয়েছে কি হয়েছে?!!আপনি ঠিক আছেন ম্যাম। ব্যাথা পেয়েছেন? কি হয়েছে বলেন না কেনো?
নবনির মুচকি হাসলো।
নবনিঃতেলাপোকা ছিল।
কথাটা বলে নবনি তার কেবিনে চলে গেলো।আরাফ আহম্মক এর মতো চেয়ে রইলো।
আরাফঃএই মেয়ে আজকে শাড়ি পড়ে আসছে কেন?আমার বুকে আগুন লাগাতে?আমিতো এমনিতেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে আছি।আমাকে আর কতো পুরাবে!!
তানভীরঃগুড মনিং স্যার।ঘুম কেমন হলো?
আরাফঃজানি না।কফি বানিয়ে আনো ফাস্ট।
আরাফ হন হন করে চলে গেলো।
তানভীর আরাফের দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে ভাবতে লাগলো। স্যার এর আবার কি হলো।
ভায়াউউউ।
তানভীর লাফ মেরে উঠলো।
তানভীরঃলা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
বিথীঃহা হা হা। হা হা হা। ভীতুর ডিম।
তানভীরঃসাতচুন্নি মেয়ে।এভাবে সাত সকালে কেউ মাসুম একটা বাচ্চাকে ভয় দেখায়!!
বিথীঃরাতে দেখাবো বুঝি?
তানভীরঃতোমার উপর চিনি ছুড়ে দিবো। পিপড়া কামড়াবে তারপর বুঝবা মজা।
বিথীঃমাইন্ড ইউর ইন্টেনশনস।তুমি আমার এসিস্টেন্ট মনে রেখো।ফলো মি।
তানভীর বিথীর পিছনে পিছনে গেলো।
তানভীরঃইয়া আল্লাহ এ কেমন শাস্তি।
বিথীঃশাস্তি এখনো দিলাম কই। এই ফাইলগুলো চেক করে দিবেন। এখন আজকেই।
তানভীরঃএতোগুলো ফাইল একসাথে?আজকেই?
বিথীঃহ্যা।
তানভীরঃকাজ কি প্রথম করছেন?কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না।
বিথীঃতাইলে বাসায় চলে যান।চাকরি করতে হবে না।
তানভীরঃআচ্ছা।আমি করে আনছি।
বিথীঃকোথাও যাবেন না আপনি।আমার সামনে বসে করবেন।আমি দেখবো কি কাজ করেন।আপনি আবার যে ফাকিবাজ।
তানভীর আর কথা বাড়ালো না।বাড়ালে বাড়তেই থাকবে।সে মন দিয়ে কাজ করতে লাগলো।আর বিথী মন দিয়ে তানভীরকে দেখতে লাগলো।
বিথীঃএই বোকা ভীতুর ডিম ছেলেটাকে খুব ভালো লাগছে। ইনোসেন্ট চকলেট বয়।
বিথী মুচকি মুচকি হাসছে।
নবনির কেবিনে সালাম কফি নিয়ে যায়।
সালামঃআসবো?
নবনিঃনা। দাঁড়িয়ে থাকুন।
সালাম দাঁড়িয়ে আছে আর নবনি কেবিনে থেকে ছোট্ট আয়নার সামনে যেয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করছে।আরাফ এর চোখ নবনির উন্মোক্ত পেটের দিকে পড়ে।আরাফ চোখ সাথে সাথে নামিয়ে নেয়।
সালামঃআমি পড়ে আসি ম্যাম।
নবনিঃনা। আসুন।
আরাফ কফির মগটা নবনির হাতে দেয়। আর নবনি ইচ্ছে করে আরাফ এর হাত ছুয়ে দেয়।আরাফ শকড এর উপর শকড খাচ্ছে।
নবনিকে কফি দিয়ে আরাফ কেটে পড়তে চাইলে নবনি ডাক দেয়।
নবনিঃআমার জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসেন। যান
সালামঃআমিইই?!
নবনিঃতো কে!!?
সালামঃআরাফাত চৌধুরী ব্রেকফাস্ট বানাবে কি দিন আসলো আমার!!?(মনে মনে)
নবনিঃকিছু বলেছেন?
আরাফঃনা না।কিছু না।আসছি।
আরাফ যেতেই নবনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।আচ্ছা মতো সাইজ করেছে আজকে আরাফকে।
আরাফ একটু পর ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসে।বেচারার হাতটা পুরে গিয়েছে।নবনির খুব খারাপ লাগলো।
প্লেটে আদা পুরা পরোটা আর ডিম ভাজা।নবনি মুখে দিতেই অবস্থা গা গুলিয়ে আসলো।কিন্তু আরাফ বড় আশা নিয়ে নবনির দিকে তাকিয়ে আছে নবনি খাবারটা না ফেলে খুব মজা করে খেয়ে নিলো।
সালামঃকেমন হয়েছে?ম্যাম?
নবনিঃখুব টেস্ট।কিন্তু এই খাবার খেয়ে আমি কিছু ভাবছি।
সালামঃকি ম্যাম?
নবনি উঠে গিয়ে আরাফ এর গা ঘেষে দাড়ালো।আর আরাফ পিছাতে লাগলো।আরাফ পিছনে চলে যাচ্ছে বলে নবনি আরাফ এর গলা জড়িয়ে ধরলো।
সালামঃম্যাম। আপনি এগুলো কি করছেন?!!
নবনিঃআপনার হাতের নাস্তা খেয়েতো আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম।মানুষ খাবার ভালো চুমু খায়।
সালামঃতাতো হাতে খায়।কিন্তু আপনি এমন গা ঘেষছেন কেন!!
নবনি টুপ করে আরাফ এর গালে চুমু খেলো।আরাফ পুরো থ হয়ে গেলো।
নবনিঃআমি গালে চুমু দেই।এটা নবনি স্পেশাল।
আরাফ কিছুই বুঝতে পারলো না। আর যখন বুঝলো তখন রাগে ফেটে পরলো।
সালামঃআপনার লজ্জা করে না।স্বামী থাকতে পর পুরুষের গালে চুমু খেতে!!
নবনিঃলজ্জা করবে কেন!!আমার স্বামীতো তার এক্স লিজার সাথে পালিয়ে গিয়েছে।এখন আমি আর কতোকাল সিংগেল থাকবো। বলুন তো।প্রতিদিন ব্রেকফাস্ট বানানের জন্য হলেওতো আপনার মতো কাউকে আমার দরকার।আমাকে বিয়ে করবেন!?
সালাম রাগে থরথর করে কাপতে লাগলো।চোখ গুলো চশমার ভিতর দিয়েও লাল দেখা যাচ্ছে।
সালামঃআরাফ স্যার আসলে আপনাকে এটার কৈফিয়ত দিতে হবে!!আর আরাফ স্যার কারো সাথে পালায় নেই।এগুলো খবর কোথা থেকে পান আপনি?
নবনিঃসেটা আপনার জানতে হবে না।শুনেন আমি আজকে কেবিন এর বাইরে যাবো না।আপনি আমার সব কাজ ভিতরে এসে দিয়ে যাবেন।আর কাউকে ঢুকতে দিবেন না।এখন যান।
আরাফ ধপ ধপ করে বড় বড় পা করে বেরিয়ে গেলো।
নবনি পেট চেপে হাসতে লাগলো।
আরাফঃকতো বড় সাহস আমি হারিয়েছি ১৭ দিন হলো এখনই আমাকে ভুলে গিয়েছে।নায়ায়ায়।আমি এই সালামকে মেরে ফেলবো।নবনি সালাম এর প্রেমে পড়তে পারে না।নবনি শুধুই আরাফ এর।
আরাফ বিড়বিড় করতে করতে হাটছিলো আর আদর চৌধুরীর সাথে ধাক্কা লাগে।
সালামঃস্যার। আপনি এখানে কেন?কিছু লাগবে?
আদর চৌধুরীঃনা।
আদর চৌধুরী স্টোর রুমে চলে যান।আরাফ এর কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে।
আরাফঃবাবাকে এমন চিন্তিতো মনে হচ্ছিলো কেন!!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৫৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন