উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৫৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৫৭)
আরাফ তার বাবা পিছু নিতে গেলে নবনির চিৎকার শুনতে পায়।সে সবকিছু ভুলে নবনির কাছে দৌড় দেয়।
সালামঃম্যাম।কি হয়েছে?আর ইউ ওকে?
নবনিঃকেবিন লক করুন আগে।আমি চাই না কেউ প্রবেশ করুক।
সালাম কেবিন লক করে দেয়।
নবনিঃপায়ে কাচ ঢুকে গিয়েছে।
কথাটা নবনি কাদো কাদো হয়ে বলে। আরাফ নবনি কান্না চেহারা দেখে ভুলেই যায় সে নবনির উপর রেগে ছিলো।
আরাফঃকই দেখি?
আরাফ নবনির পা নিজের হাটুর উপর রাখে।
নবনিঃকি করছেন!ছাড়ুন আপনি আমার পায়ে হাত দিতে পারেননা।
সালামঃকেন দিতে পারবো না?একজন অফিস এর পিয়ন কেন মালকিন এর পায়ে হাত দিতে পারবে না?
নবনিঃনা পারবেন না। ছাড়ুন।
সালামঃআপনি যখন ইচ্ছা আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন আর আমি আপনার পায়ে হাত দিতে পারবো না!আচ্ছা আপনার মনে আরাফ স্যার এর প্রতি এতোটুক ভালোবাসাই ছিলো যে ১৬/১৭ দিনে মুছে গেলো?আমিতো স্যার এর কাছে শুনেছিলাম আপনি খুব পর্দাশীল। তাহলে আজকে আমার সামনে এভাবে শাড়ি পড়ে কেন আসলেন?
আরাফ পা থেকে কাচের টুকরো টান দিয়ে বের করলো।
নবনিঃআহহহ।
আরাফঃজানে ম্যাম।বাহ্যিক ব্যাথা থেকে অন্তরের ব্যাথা আরো বেশি আঘাত দেয়।
আরাফ নবনির পা ব্যান্ডেজ করে দেয়।
আপনি এখনো আরাফাত চৌধুরীর স্ত্রী। নিজের সীমা বজায় রাখুন।স্যার যেখানেই গিয়েছেন আসবেন ঠিকই।তখন এগুলোর ফল ভালো হবে না।
সালাম বেড়িয়ে গেলো।
নবনি আরাফ এর যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো।
নবনিঃআমি আরাফকে একটু বেশি আঘাত করে ফেলেছি।খুব রেগে আছে।বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেললাম নাতো।রাগের মাথা আরাফ কিছু করে না ফেলে!
আরাফ বাইরে যেয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি পান করলো।তারপর পানির গ্লাসটা হাতে চেপে ধরলো গ্লাস ভেংগে কাচ সব হাতে ঢুকে গেলো।হাত বেয়ে টপটপ করে রক্ত পরতে লাগলো।
আরাফঃকেনো নবনিপাখি?কেন??? তুমি কেন সালাম এর প্রতি দুর্বল হবে?তুমি শুধু আরাফাত চৌধুরী শুধুই আমায়ায়ারর।
আরাফ খেয়াল করলো আদর চৌধুরী স্টোর রুম থেকে বের হলেন।বের হয়ে এদিক ওদিক দেখে চলে গেলেন।
আরাফঃবাবা!এমন সন্দেহজনক ব্যবহার কেন করছেন!
নবনির কল আসে আরাফ এর ফোনে।
নবনিঃআমার কেবিনে আসেন।এখনই।
সালামঃকি শুরু করলো এই মেয়ে!মনটা চাচ্ছে ঠাটায়া একটা দেই কানের নিচে।আজকে সালাম বলে কিছু বলতে পারছি না।
আরাফ নবনির কেবিনে যায়।সাথে একটা বোরকা নিয়ে আসে।
সালামঃম্যাম বোরখা নিয়ে আসছি। এখন এটা পরে আপনি বাইরে যেতে পারবেন। বার বার আমাকে ডাকবেন না।আমার সামনে শাড়ি পড়ে টই টই করছেন তাতে কিছু না বাইরে অন্যদের সামনে যেতে পারবে না।কি অধঃপতন!!
কেবিনের লাইট অফ হয়ে গেলো।নবনি আরাফকে জড়িয়ে ধরে।
সালামঃকি করছেন ম্যাম।ছাড়েন আমাকে নাহলে
নবনিঃনা ছাড়লে কি করবেন আরাফাত চৌধুরী?
আরাফ পুরো থ হয়ে গেলো।নবনি আরাফকে ছেড়ে দিলো আর কেবিনের বিদুৎ এসে পরলো।
নবনিঃহা হা হা। কেমন দিলাম?
সালামঃম্যাম!আপনি এসব কি বলছেন?আমি আরাফাত চৌধুরী হতে যাবো কি করে!কেনো?
নবনিঃসব কাজ আমরা একসাথে করি তাও এইবার আমাকে বাদ দিয়ে দিলেন কেনো?আরাফ নবনির জুটি ভালো লাগে নাই বুঝি?
আরাফঃআমি আমি আমি!!
নবনিঃআমি আমি কি হ্যা!!কি মনে করেছেন?আমার স্বামীকে সালাম নামক চরিত্রের আড়ালে লুকিয়ে ফেলবেন!আর আমি টের ও পাবো না??এমনি এমনিতো আপনার সাথে সংসার করে দুই বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছি!! তাই না??
আরাফঃতুমি কি করে জেনেছো সব?
নবনিঃতা জানা লাগবে না আপনার।আপনি আমাকে এখন পুরো সত্যটা বলেন।কেন এমন করেছেন?
আরাফঃআচ্ছা ম্যাম। লাইটটা কি আবার অফ করা যাবে?
নবনি মুচকি হেসে বিথীকে মেসেজ করে।সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায়।আরাফ নবনির হাত ধরে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
নবনিঃএতোক্ষনতো আমাকে কতো ঝাড়াচ্ছিলেন এখন কি হলো।
আরাফঃতুমিইতো জেনে বুঝে রাগাচ্ছিলে আমাকে।
নবনি কিছু বললো না।
আরাফঃআচ্ছা আমার উপর রাগ করো নেই?অভিমান হয় নেই?
নবনিঃহয়েছিল।কিন্তু কালকে রাতে আপনি যে আদর করে রেখে এসেছেন আমার সব রাগ পানি হয়ে গিয়েছে।
আরাফঃতার মানে তুমি কালকে রাতে জেগে ছিলে আর আমার সাথে নিখুঁত অভিনয় করছিলো।এতো দুষ্ট কবে থেকে হলে নবনি পাখি?
নবনিঃহবো না কেন?অভিনয় না করলে সত্যটা কি করে জানতাম।সজাগ থাকলেতো আপনি কিছুই বলতেন না আমাকে।
আরাফঃতাই না! তুমি যে এতো ভালো অভিনয় করতে পারো এটা জানলে তো আমি আগেই তোমাকে আমার প্লানে ইনভলভ করে নিতাম।আমি তো ভেবেছিলাম তুমি পারবে না অভিনয় করতে তাই তোমাকে কিছুই বলি নেই।
নবনিঃআপনি বলেই দেখতেন এমন কোনো কাজ নেই যে নবনি পারবে না।
আচ্ছা আপনি আমাকে আগে এটা বলেন আপনি ক্লিন সেভ কেনো করেছেন?রাতে খোচা খোচা দাড়িগুলোর ঘষা পড়ে নাই গালে।আমার ভালো লাগে নেই ব্যাপারটা।আমার গালের খোচা খোচা দাড়ির ঘষাই ভালো লাগে।গাল আপনার সাথে ভীষন রাগ করেছে।
আরাফ নবনির গালে টুপ করে চুমু খেলো।রাগ করো না নবনি পাখির গাল।দাড়ি সেভ না করলে নকল দাড়ি লাগাতে পারতাম না।আর লাগালেও উঠানের সময় খুব ব্যাথা পেতাম।তাই ক্লিন সেভ করতে হয়েছে। সরি নবনি পাখির গাল।
নবনিঃহি হি হি।
আরাফঃএখন চুপ করো অনেক দিন পর সজাগ অবস্থা নিজের বউকে জড়িয়ে ধরেছি আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
নবনিঃকি করছেন!এভাবে জড়িয়ে ধরছেন যে আপনার নকল দাড়ি মোচ খুলে যাবে তো।
আরাফঃযাবে না।এটা মুভি সিরিয়ালের মতো কম দামী আঠা না যে খুলে পড়ে যাবে। এটা অনেক দামী আঠা রাতে ১ ঘন্টা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে তারপর খোলা যায়।
নবনিঃআমার সাথে দেখা করার আগে এতোক্ষন ভিজেয়ে রেখেছিলেন।
আরাফঃশিসসসসস।
আরাফ নবনিকে কোলে তুলে নিয়ে টেবিল এর উপর বসালো।তারপর ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরলো অনেকক্ষন পর কামড় দিয়ে ছেড়ে দিলো।
নবনিঃআহহ।এতো জোরে কামড় দিলেন কেন?
আরাফঃআমাকে রাগানের শাস্তি।কি দরকার ছিলো সালাম এর এতো কাছে যাওয়ার?
নবনিঃসালাম তো আমার স্বামীই ছিলো।তাহলে কাছে যেতে কি সমস্যা?
আরাফঃনা। তোমার স্বামী আরাফাত চৌধুরী। বুঝলে?
নবনিঃবুঝেছি স্যার।এখন আমাকে ছাড়েন। এতক্ষন বসের কেবিন এর বাতি অফ থাকলে মানুষ সন্দেহ করবে।
আরাফঃউহুউম।ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
নবনিঃএতো দিন কি করে ছিলেন?
আরাফঃজ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে।
হুট করে বিদুৎ এসে পরলো।আরাফ দ্রুত সরে পরলো।
আরাফঃকাকে কাজে রাখলে বসের পারমিশন ছাড়াই লাইট জ্বালিয়ে দিলো।ভালো কর্মী রাখবে না।তোমার দ্বারা কিছু হবে না।তোমার মাথায় বুদ্ধি কম!!
নবনি কিছু বলতে যাবে তখনই কে জানি কেবিনে নক করলো।আরাফ গেট খুলতেই তানভীর বিথীর হাত টেনে হুরহুর করে টেনে নিয়ে আসলো।
তানভীরঃম্যাম।আপনি কেমন মেয়েকে কাজে রাখলেন আপনার কেবিনের বাতি নিভিয়ে দিয়েছিলো এই মেয়ে। আমি ধরে নিয়ে এসেছি।
বিথিঃসরি ম্যাম।এই রাম গাধাটা আমাকে টানতে টানতে নিয়ে আসছে।
নবনি ছোট ছোট চোখ করে আরাফ এর দিকে তাকালো। আরাফ এর নবনির চোখে চোখ পরতেই সে উপরে দিকে চোখ তুলে নিলো।
নবনিঃউপরে কি দেখছেন এদিকে দেখেন।কি বলছিলেন আমি ভালো কর্মী রাখতে পারি নাই।আমার মাথায় বুদ্ধি কম? এবার কি হলো?কার কর্মী দোষ করেছে?
আরাফ তানভীর এর মাথায় ফাইল দিয়ে একটা জোরে বাড়ি মারলো ।
তানভীরঃআমি কি করলাম?
আরাফঃ সব সময় উলটা কাজ করিস তুই।আবার বলে কি করলাম!!
তানভীরঃস্যার?🥺🥺
আরাফঃশাট আপ।
বিথিঃম্যাম আমি বুঝি না আমি তার এসিস্ট্যান্ট নাকি সে আমার এসিস্ট্যান্ট। সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকে!
তানভীরঃতো লাগবো না? আমার জব কেড়ে নিয়েছেন আপনি!আপনাকে তো আমি এত সহজ এ ছাড়ছি না।
বিথিঃআপনাকে ছাড়তে কে বলেছে?আপনি আমাকে সারাজীবন এর জন্য ধরে রাখেন।
তানভীরঃতাহলে আমাকে সেই সুযোগটা দাও যাতে তোমাকে ধরে রাখি।
আরাফ নবনি হা হয়ে ওদের কথা শুনছে।
নবনিঃএদের মাঝখানে না সাপে নেউলে সর্ম্পক ছিলো?
আরাফঃএরা এতো রোমান্টিক কথা কি করে বলে?!!
নবনিঃকি জানি?
আরাফঃএইই!! কি হচ্ছে?
বিথিঃসালাম।চুপ থাকেন তো।পিওন হয়ে এতো কথা বলবেন না।
নবনিঃগেট আউট। আউ সেইড গেট আউট।তানভীর বিথি নবনির হুট করে রেগে যাওয়ার কারনটা বুঝলো না।
তারা বেরিয়ে গেলো।
আরাফঃকি হলো! এভাবে রেগে গেলে হবে?এই জন্যি তোমাকে কিছু বলি নেই।কারণ তুমি নিতে পারতে না।
নবনিঃকেন জানি রাগ উঠে গেলো।আপনাকে কেউ কিছু বললে সহ্য হয় না।
আরাফঃতোমারতো সহ্য করা শিখতে হবে নবনি। না হলে তুমি আমার সাথে কাজ কি করে করবে?
নবনিঃআপনি কোন শত্রুর কথা বলেছিলেন আমাকে আরাফ?আমাকে প্লিজ সবটা বুঝিয়ে বলেন।
আরাফঃবলছি।
আরাফ কেবিন লক করে দেয়।যাতে কেউ না শুনতে পারে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৫৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন