উপন্যাস       :        প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত Bangla Golpo - Kobiyal
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত

1111111111111111111111

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ০২)

ল্যাপটপে কাজ করছিলো শয়ন।হঠাৎ দারোয়ানের কল আসে।দারোয়ান পাখির জ্ঞান হারানোর খবর জানায় শয়ন'কে।তখনই আরেকটা ফোন আসে এটা পাখির বাবা খায়রুল হকের।শয়ন রিসিভ করতেই তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললেন,'বাবা,আমার মেয়েটারে কোথাও পাইতাছি না।তুমি একটু দেখবা?কোথায় চলে গেলো মেয়েটা আমার।'
শয়ন ওনাকে শান্ত করতে বলল,'আঙ্কেল আপনি শান্ত হোন।আপনার মেয়ে আমার কাছেই আছে।'

'সত্যি?সত্যি কইতাছো?'
'হ্যাঁ আঙ্কেল আপনারা চিন্তা করবেন না।'
'আইচ্ছা বাবা।ওর খেয়াল রাইখো।'
ফোন রেখে শয়ন দ্রুত নিচে নামলো।বাসার সামনে এতরাতেও ছোটখাটো একটা জটলা বেঁধে গেছে।শয়ন জটলা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পাখি'কে কোলে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,'আপনারা যে যার যার বাসায় যান।
তখন আমজনতার মধ্যে কয়েকজন বলে উঠলো,'কি হন আপনি ওনার?'
যদিও স্বামী পরিচয় দিতে বেশ খারাপ লাগছে ওর।মুখে আঁটকে আছে তবুও এত রাতে যেন হাঙ্গামা না হয় তাই বলল,'আমি ওর স্বামী।'

'আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো?'আমজনতার মধ্যে কেউ একজন আবারও প্রশ্ন করলো।শয়ন দারোয়ান'কে ডেকে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ওদের বিয়ের ছবি দেখালো।তখন সবাই শান্ত হলো।যে যার যার মত যেতে লাগলো আর যাওয়ার সময় কেউ কেউ বলছিলো, 'কেমন স্বামী নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে পারে না।এসব ছেলেদের জন্যই মেয়েরা এত নির্যাতিত।'

শয়ন এসব শুনে কিছু বলল না।পাখিকে কোলে করে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দারোয়ানকে বলল ডাক্তার ডাকতে।প্রায় আধঘন্টা পর ডাক্তার এসে পাখিকে চেক-আপ করে বলল,'ওনার প্রেশার লো হয়ে গেছে।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আর ক্ষুধার কারণে জ্ঞান হারিয়েছে।জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তখন কিছু খেয়ে ঔষধগুলো খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।'
শয়ন সৌজন্যমূলক হেসে বলল,'ধন্যবাদ ডাক্তার।'
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর শয়ন কিচেনে গিয়ে নুডলস বানিয়ে আনলো।এরমধ্যে পাখির হুশ চলে এসেছে কিন্তু মাথাব্যথা হচ্ছে প্রচুর।ধীরে ধীরে উঠে বসল ও।সামনেই শয়ন বসে আছে।ওকে উঠতে দেখে বলল,'খেয়ে ঔষধগুলো খেয়ে নেবেন।'

বলেই চলে যেতে নিলে পাখি ক্ষীণ কন্ঠে বলল,'একটু দাড়ান।আমার কথাগুলো শুনুন।'
'এখন না।চুপচাপ খেয়ে রেস্ট নিন।এই বিষয়ে আমরা সকালে কথা বলবো।'
এরপর আর দাঁড়ালো না শয়ন সোজা বেরিয়ে অন্যরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।পাখি অনেক কষ্টে নুডলস আর ঔষধ খেয়ে বিছানায় বসেই কাঁদতে লাগলো।তবে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটুর ওপর মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে যখন পাখির ঘুম ভাঙলো তখন তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে বাইরে চলে এলো।শয়ন তখন নাস্তা করছিলো।এখনই বেরিয়ে যাবে।পাখিকে দেখে বলল,'আপনার বাবাকে ফোন করেছি।উনি এসে নিয়ে যাবে।'
পাখি আর্তনাদ করে বলল,'আমি যাবো না।আমার কথা না শুনলে আমি যাবো না।'
'কালই বলেছি কোনো কথা শোনার নেই আমার।'
কথাটা বলেই শয়ন উঠে দাড়ালো।আর তখনই পাখি আচমকা ওর পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,'প্লিজ,দয়া করুন।একটু শুনুন।সবটা শুনে আপনার যা ইচ্ছে করবেন কিন্তু আগে সব শুনুন।'
শয়ন না চাইতেই বলল,'আচ্ছা,উঠুন।আপনার কি বলার আছে বলুন।সব বলে শেষ করার পর বিদায় হবেন।'
পাখি উঠে চোখের পানি মুছে বলতে শুরু করলো।

'আমি আপনার সাথে বিয়ের আগেই সবকিছু বলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা-মায়ের ব্ল্যাকমেইলের কারণে বলতে পারি নি।আমার মত মেয়ের জন্য এত ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ এসেছে শুনে তারা হাতছাড়া করতে চায় নি তাই জোরপূর্বক আমাকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।আমাকে সতেরো বছরেই বিয়ে দেওয়া হয় পাশের গ্রামের নাজির মোল্লার ছেলে নাজিম মোল্লার সাথে।প্রভাবশালী আর টাকা পয়সা দেখে ছেলে কেমন সেটা বিচার করে দেখে নি তারা।বিয়ের পর কোনো রাত বাকি নেই আমি মার খাই নি।মাতাল হয়ে এসে ইচ্ছামত পিটাতো।বাবা-মা'কে বললেও তারা বলতো মানিয়ে নিতে।বিয়ের পর মেয়েদের এমন অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়।সহ্য করতে করতে একদিন রাতে সে আমাকে বেধড়ক মেরে আমার মুখের ভেতর হুইল পাউডার ঢেলে দেয়।সেদিন মরে যেতাম শুধু ওই বাড়ির কাজের মেয়ে যদি আমার বাবা-মাকে ফোন না করতো।তারপর হাসপাতালে নেওয়া হলো আমাকে।কয়েকবার বমি করিয়ে ওয়াশ করানো হলো। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরও বাবা-মা চাইছিলো না আমি ওই বাড়ি থেকে চলে আসি কিন্তু আমি জোর করে ডিভোর্স নেই।ডিভোর্সের পর থেকে এই তিনবছর বাপের বাড়িতে কম অপমানিত হই নি। ভাইয়েরা, ভাবীরা, মা, বাবা সবাই অপমান করতো। তাই তিন বছর পর যখন আপনারা আসলেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তখন তারা লোভ সামলাতে পারে নি।ধরে আবার বিয়ে দিলো।আমাকে কিছু জানাতেও দেওয়া হলো না।এখানে আমার কি অপরাধ একটু বলবেন?আমি কেন বারবার শাস্তি পাচ্ছি।আমি কি করেছি?'

বলতে বলতেই পাখি কেঁদে দিলো।শায়ন তখন প্রশ্ন করলো,'আপনার কোনো বাচ্চা নেই?'
'না।সংসার ই তো হয় নি।'পাখি চোখ মুছে উত্তর দিলো।
'কিন্তু আমি তো শুনলাম আপনার দুইবছরের একটা বাচ্চা আছে।'
'না,আপনি ভূল শুনেছেন।আমার কোনো বাচ্চা নেই।'
'আপনি মিথ্যা বলছেন।'

পাখি অসহায় কন্ঠে বলল,'আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস করুন আমার কোনো বাচ্চা নেই।আমার বড় আপা দুই বছর আগে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়।ওর বাচ্চা এখন আমাদের কাছেই থাকে।বাচ্চার বাবা বাচ্চার দায়িত্ব নেবে না।'
সবশুনেও মনে মনে খচখচানি রয়ে গেলো।মেয়েটা কি আদৌ সত্যি বলছে?নাকি এটা অভিনয়?শয়ন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,'আমার এখন যেতে হবে।আমি আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবেন।'
পাখি মাথা নেড়ে সায় দিলো।শয়ন অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো।
অফিস শেষে শয়ন ফিরতেই দেখলো পাখি রান্নাঘরে কিছু একটা করছে।শয়ন ডেকে বলল,'আপনার বাবা আসে নি?'
'না।'

শয়ন তৎক্ষনাৎ ফোন করলেও ফোন রিসিভ হলো না।আবার যখন ফোন করলো তখন ফোন রিসিভ করলো ওর বড় ভাই।শয়ন বলল,'আপনাদের না আসার কথা ছিলো?'
'আইতে পারুম না।আমরা মাইয়া বিয়া দিয়া দিছি।এখন আপনে কি করবেন সেইটা আপনের ব্যাপার।সংসার করবেন না মাই/রা ফেলবেন হেইটা আমরা জানি না।'
এটা বলেই ফোন কেটে দিলো পাখির বড় ভাই।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন