উপন্যাস : প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত |
1111111111111111111111
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ০৩)
পাখির ভাইয়ের কথা শুনে শয়ন ভাবলো কেউ কি করে তার পরিবারের কাছে এতোটা অবহেলিত হতে পারে!শয়নের মায়াই লাগলো যেন!ও পাখির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,'আপনি খেয়েছেন দুপুরে?'
পাখি ক্ষীণ কন্ঠে বলল,'হ্যাঁ।আপনি?'
'খেয়েছি।আচ্ছা তাহলে আমি রাতের খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি।'
শয়ন এটা বলতে বলতে নিজের রুমে যেতে নিলেই পেছন থেকে পাখি ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,'খাবার অর্ডার করতে হবে না।আমি রান্না করেছি।'
শয়ন বিষ্মিত হলো।কি রান্না করেছে এই মেয়ে?রাঁধতে পারে তো ঠিক মতো?শয়নের আবার রান্না ভালো হওয়া লাগে।তাই ভার্সিটিতে থাকাকালীন নিজেই রান্না শিখে ফেলেছিলো।
অতঃপর শয়ন পাখির কথা শুনে মাথা নাড়লো তারপর ফ্রেশ হতে নিজের রুমে চলে গেলো।আর পাখি আবার রান্না ঘরে গেলো কফি বানাতে।শয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রইং রুমে আসতেই দেখলো পাখি কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো কফির কাপ।শয়ন কফির কাপ হাতে নিয়ে সোফায় বসলো।এক চুমুক দিয়ে বুঝলো মেয়েটার রান্নার হাত বেশ ভালো।ও ইশারায় পাখিকে বসতে বলল।তারপর জিজ্ঞেস করলো,'আপনি কি পড়াশোনা করতে চান?'
পাখি মাথা নাড়লো।শয়ন বলল,'পাব্লিক ভার্সিটিতে পড়ার ইচ্ছা নাকি ন্যাশনালে পড়বেন?'
'পাব্লিকে পড়ার ইচ্ছে ছিলো।'
'ছিলো?এখন নেই?'
'থাকলেও তো লাভ নেই।কোচিং করি নি আমি আমি।'
'আচ্ছা আমি সাহায্য করবো।কাল কোচিং এ ভর্তি হবেন।আপনার বই-পুস্তক আমি বাড়ি থেকে আনানোর ব্যাবস্থা করছি।'
'আপনি আমার জন্য এতকিছু কেন করবেন?'
'ভাববেন না দয়া করছি।ভার্সিটি চান্স পেয়ে আমার ঋণশোধ করে দেবেন।আর এতকিছু করার কারণ হলো আপনাকে যেন কেউ বোঝা না মনে করে।'
পাখি মনে মনে ভিষণ খুশি হলো।একটা ভয় তো থেকেই যায় শয়ন কি ওকে মেনে নেবে?কফি শেষ করে কাপ রাখতেই কল এলো শয়নের।ওর মা ফোন করেছে।শয়ন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফারজানা বেগম বললেন,'বাপ কালকে ওই মাইয়ারে নিয়া বাড়ি আয় তুই।ওর বাপ-মারে ডাইকা তাদের হাতে তুইলা দিমু।এমন বউ দরকার নেই আমাগো।তোরে আরও ভালো জায়গায় বিয়া দিমু আমি।'
'মা,আমার অফিসে এখন ছুটি নেই।'
'ছুটি নিয়া আয়।'
'না মা।আসতে পারবো না।অনেক কাজ পড়ে আছে আর ও আপাতত এখানেই থাকুক।'
'শয়ন!কি হইছে তোর?ওয় থাকবো মানে?তোর মাথা খারাপ হইয়া গেছে?'
'আমার মাথা ঠিকই আছে মা।তুমি নিজের খেয়াল রেখো।ঔষধ খেয়ে নিও ঠিকমতো আর চিন্তা করো না আমি ভালো আছি।'
কথাগুলো বলেই শয়ন ফোন কেটে দিলো।ফারজানা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না।ফোন রেখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো শয়ন।নিজের রুমে যেতে যেতে বলল,'আমি এখন কাজ করবো।পরে খাবো।আপনি খেয়ে নিয়েন।আমার জন্য বসে থাকতে হবে না।আর আমার ঘরে ছোটোখাটো একটা সেল্ফ আছে।বই পড়তে ভালো লাগলে এসে নিয়ে যাবেন।'
পাখি ক্ষীণ কন্ঠে উত্তর দিলো,'আচ্ছা।'
শয়ন কাজ করার ফাঁকে একবার দেখেছিলো পাখি একটা বই নিয়েছে।সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের 'রোদন ভরা বসন্তে'।এই নেয়ে দুঃখের উপন্যাস পড়ে কেন?যদিও শয়নের অপেক্ষাকৃত দুঃখের উপন্যাসই বেশি ভালো লাগে।কাজ শেষ করতে বেজে গেলো সাড়ে এগারোটা।শয়ন হাতমুখ ধূয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই পাখি সোফা থেকে দ্রুত উঠে এসে বলল,'আপনি বসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।'
'আপনি খেয়েছেন?'
'না।'
'আমি বলেছিলাম তো আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।'
পাখি কিছু বলল না এর উত্তরে।খাবার বেড়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।খাওয়া শেষ করে শয়ন বলল,'আপনি কাল সন্ধ্যায় তৈরি হয়ে থাকবেন।'
'আচ্ছা।'
'আমি ঘুমাবো এখন।আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন আর কিছুর প্রয়োজন হলে বলবেন আমায়।'
'আচ্ছা।'
তারপর শয়ন নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো আর পাখিও সবকিছু গুছিয়ে অন্যরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে শয়ন যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।দশমিনিটের মধ্যে না বের হতে পারলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে।কোনোরকম রেডি হয়ে ব্যাগ'টা নিয়ে বেরিয়ে পড়বে এমন সময় পাখি পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,'নাস্তা করবেন না?'
শয়ন ঘুরে বলল,'সময় নেই।আপনি করে ফেলুন আর যা বলেছি তৈরি হয়ে থাকবেন সন্ধ্যায় আর সাবধানে থাকবেন।আসছি।'
কথাগুলো বলেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লো শয়ন।পাখি নাস্তার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ভোরে উঠে নামাজ পড়ে শয়নের জন্য নাস্তা বানিয়েছিলো ও।কি আর করার!নিজে একাই খেয়ে নিলো ও।
নাস্তা খেয়ে উপন্যাস'টা নিয়ে আবারও বসলো পাখি।পড়তে পড়তেই হঠাৎ টেলিফোনের শব্দ এলো।পাখি ছুটে গেলো।ভাবলো শয়ন ফোন করেছে।রিসিভ করে কানে দিয়ে নিজেই প্রথমে বলল,'হ্যালো।'
ওপাশ থেকে একটা থমথমে মহিলা গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
'শয়ন অফিসে গেছে?'
পাখি এবার বুঝলো শয়নের মা ফোন করেছে।পাখি নম্র কন্ঠে বলল,'জ্বি আম্মা।'
'খবরদার আমাকে আম্মা বলবা না।তুমি আর তোমার পরিবার আমগো সাথে যে প্রতারণ করেছো তাতে তোমাগো নামে প্রতারণার মামলা দেওয়া উচিত।শোনো,আমার পোলার ফ্ল্যাট থেইকা বাইর হও।আর জীবন থেইকা বাইর হও।তোমার মত কালসাপ আমার পোলার জীবনে থাকলে ওর জীবন নরক হইয়া যাইবো।ভালোয় ভালোয় বাইর হও নয়তো আমি আইলে তোমারে জুতাপিটা কইরা বাইর করমু।চিনো না আমারে তুমি।তাড়াতাড়ি নামো ওর ঘাড় থেইকা।'
কথাগুলো বলেই ফোন রেখে দিলেন ফারজানা বেগম।ততক্ষণে পাখি মুখ হাত চেপে কাদছিলো।এত কটু কথা ও কখনই হজম করতে পারে না।কষ্টে ম/রে যেতে মন চায়।
অফিস থেকে ফিরে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শয়ন পাখিকে ডাক দিলো।পাখি আসতেই বলল,'রেডি আপনি?'
পাখি উপর নিচ মাথা দোলালো।শয়ন ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা অস্বাভাবিক দেখতে পেলো।নাকের পাটা লাল,চোখ ফুলে আছে।চোখের আশেপাশে আর্দ্র ভাব।ও হঠাৎই প্রশ্ন করলো,'কাঁদছিলেন কেন?'
পাখি ওর বড়বড় চোখে শয়নের দিকে চাইলো।শয়নের তখন মনে হলো মেয়েটার ওই চোখজোড়ায় আস্ত একটা দিঘী ভরে রেখেছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন