উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৫)
সফেদ রঙের ফাইল নিয়ে অনুরাগ সবে বসের কেবিনে প্রবেশ করল। বস তখন মোবাইলে ভিডিও দেখছেন। কাজের ফাঁকে একটুখানি অবসর বৈকি! অনুরাগকে দেখে বস সঙ্গেসঙ্গে ফোন বন্ধ করে ফেললেন। ফোনটি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে গলা কেশে গম্ভীর হবার চেষ্টা করে বললেন, ' টেক অ্যা সিট, অনুরাগ। '
অনুরাগ মুখে সৌজন্যতাস্বরূপ হাসি রেখে বসের সামনে রাখা চেয়ারে বসে। হাতে থাকা ফাইলটি বসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ' এখানে নতুন যাদের হায়ার করার জন্যে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে, তাদের সবার লিস্ট আছে। কাইন্ডলি চেক করে নিন, স্যার। '
সজীব তালুকদার ফাইল হাতে নিলেন। উল্টেপাল্টে ফাইল দেখার ভান করে আবার জায়গায় রেখে দিলেন। অনুরাগের দিকে চেয়ে বললেন, ' কজন মেয়ে আসবে ইন্টারভিউতে? '
অনুরাগ ভ্রু কুঁচকে ফেলে। বলে, ' সরি স্যার, আমি বুঝতে পারিনি। মেয়ে বলতে? '
সজীব তালুকদার বেশ দম্ভ নিয়ে বললেন, ' মেয়ে বলতে নারী, স্ত্রী, সহধর্মিণী। '
অনুরাগ বিরক্ত হল ভীষন। সে জানে সজীব তালুকদার একজন প্যাভার্ট। তার যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে এই অফিসে মেয়েরা রিজাইন নিয়ে বেরিয়ে যায়। কোনো মেয়েই বেশিদিন টিকে থাকে না। বয়স হয়েছে, স্ত্রী সন্তান আছে। তবুও উনার মেয়ে লোভ ক্ষান্ত হয় না। তবে অনুরাগ নিজের বিরক্ত হওয়া মুখে প্রকাশ করল না। বরং বেশ নম্র ভাবে বলল, ' আমি জানি স্যার মেয়ে মানে কি! মেয়ে দিয়ে কি হবে? যে ভালো ইন্টারভিউ দেবে সেই চাকরি পাবে। এখানে মেয়ে আর ছেলে ম্যাটার কেন করবে? '
' আসলে কি বলো তো অনুরাগ! অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম। কিন্তু মেয়েরাই আজকে সারা পৃথিবী রাজত্ব করছে। মেয়েদের মধ্যে সেই পাওয়ার, সেজ এনার্জি আছে। আমি চাই আমাদের কোম্পানি অনেক বড় হোক। তার জন্যে দরকার মেয়েদের এই পাওয়ার, এই এনার্জিকে কাজে লাগানো। বুঝতে পেরেছ? '
অনুরাগ ক্ষুব্ধ হয়ে ভীষন। অথচ বেশ শান্ত স্বরে বলে, ' জ্বি স্যার, বুঝতে পেরেছি। আমি এখন আসি? ইন্টারভিউ শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যে। বাকি কাজ গোছগাছ করতে হবে। '
সজীব তালুকদার বললেন, ' হ্যাঁ, হ্যাঁ। আসো। আর একটা কথা, ইন্টারভিউতে সবার আগে মেয়েদের পাঠাবে। ল্যাডিস ফার্স্ট। ছেলেদের ফাঁকে ফাঁকে একবার পাঠালেই হবে। '
অনুরাগের সহ্যের মাত্রা এবার যেন পেরিয়েই যাচ্ছে। সে বসের অগোচরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ সামলানোর বৃথা চেষ্টা করল। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল, ' অবশ্যই স্যার। আপনি যা বলবেন। '
অনুরাগ বসকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল বসের কেবিন থেকে। অনুরাগ যাবার পর সজীব তালুকদার আবার ড্রয়ার থেকে ফোন বের করে ভিডিও দেখতে লাগলেন। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে নগ্ন নারী পুরুষের দৃশ্য। সেই নিষিদ্ধ দৃশ্য কামুকি চোখে পরখ করতে লাগলেন সজীব তালুকদার। বুকের ভেতর কামনা উপচে পড়তে লাগল। অবনতি হতে থাকল নৈতিকতার!
অনুরাগ এই কোম্পানির ম্যানাজার। প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছে সে এখানে। তাই কোম্পানির সকল কাজ তার নখদর্পণে। অনুরাগ রিসিপশনিস্টকে বলে দিল, ইন্টারভিউতে আসা সবাইকে যেন ১২টার পর ডাকা হয়। অনুরাগ নিজের কেবিনে এসে ফাইল দেখতে লাগল। বসের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। না জানি আজ কোন মেয়ের কপাল নষ্ট হবে।
প্রিয়ন্তি তৈরি হচ্ছি। একটা ভালো কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে সে। আজই তার ইন্টারভিউ। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নাকেমুখে খাবার পুড়ে তৈরি হল ও। সবার থেকে দোয়া নিয়ে সকল সার্টিফিকেট রাখা ফাইল নিয়ে বেরিয়ে পরল ঘর থেকে।
প্রিয়ন্তি বেশ হন্তদন্ত হয়ে অফিসে প্রবেশ করল। রিসিপশনিস্টের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, 'ইন্টারভিউ কি শুরু হয়ে গেছে? '
রিসিপশনিস্ট বলল, ' না, আধা ঘণ্টা পর শুরু হবে। আপনি ওখানে বসে অপেক্ষা করুন।'
প্রিয়ন্তি যেন প্রাণ ফিরে পেল। নাহলে প্রথমদিনই দেরি করার কারণে তার মান যেত। প্রিয়ন্তি পাশে তাকাল। অনেক লোক ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউ বসে আছে। প্রিয়ন্তি একটা খালি চেয়ারে বসল। এদিকে ওদিক চেয়ে দেখল। বেশ বড়সড় অফিস। ইন্টিরিয়র ডিজাইন চমকপ্রদ। ইন্টার্ভিউ শুরু হয়েছে খানিক পর রিসিপশনিস্ট এসে ডাক দিল প্রিয়ন্তিকে ইন্টারভিউর জন্যে। প্রিয়ন্তি মুখ ভরে শ্বাস টেনে শান্ত হবার চেষ্টা করল। তারপর এগিয়ে গেল সামনে।
বসের কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করল প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি মৃদু স্বরে বলল, 'মে আই কাম ইন? '
সজীব তালুকদার ফাইল থেকে মাথা তুলে প্রিয়ন্তিকে দেখলেন। প্রিয়ন্তিকে আগাগোড়া দেখে তার মাথা গরম হয়ে গেল। প্রিয়ন্তির নেশা ধরানো ফিগারের দিকে চেয়ে বললেন, ' ইয়াহ, কাম ইন। '
প্রিয়ন্তি ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসল। সজীব তালুকদার তখনো প্রিয়ন্তির বুকের দিকে চেয়ে। প্রিয়ন্তি সেই কামুক চাউনি দেখে অস্বস্থিতে জমে উঠল। পরনের ওড়না ঠিক করে কাধ ঢেকে নিল। মুখে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে তাকাল। সজিব তালুকদার নিজেকে সামলে নিলেন। খানিক গম্ভির হবার চেষ্টা করে বললেন, ' ইউর নেইম? '
' প্রিয়ন্তি জাহান। '
' এইজ? '
' ২৪। '
' সার্টিফিকেট? '
প্রিয়ন্তি তার সার্টিফিকেট এগিয়ে দিল বসের দিকে। সজীব তালুকদার দেখলেন সার্টিফিকেট। এসব তো শুধু বাহানা মাত্র। প্রিয়ন্তি নামের এই আকর্ষণীয় মেয়েকে তার ভীষন মনে ধরেছে। যে করেই হোক তিনি এই মেয়েকে তার অফিসে রাখবেন। এমন সোনায় গড়া মেয়েকে কি হাতছাড়া করা যায়? সজীব তালুকদার ফর্মালিটি স্বরূপ বেশ কয়েকটা সহজ প্রশ্ন করলেন। প্রিয়ন্তি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিল। সজীব তালুকদার বললেন, ' আপনি ভীষন মেধাবী একটি মেয়ে। আপনারা আপনার ইন্টারভিউর ফলাফল মেইলে জানিয়ে দেব। ইউ মে গো নাও। '
প্রিয়ন্তি ভীষন খুশী হয়। চাকরির পরীক্ষাটা ভালো হয়েছে। চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। প্রিয়ন্তি বেশ হাসিখুশি মুখে বের হয় কেবিন থেকে। বেরিয়ে যেতে লাগল হঠাৎ সামনে এসে যায় অনুরাগ। অনুরাগ প্রিয়ন্তিকে দেখে অবাক হয়। তেমনি প্রিয়ন্তিও অনুরাগকে দেখে ভীষন অবাক হয়। অনুরাগ বিস্ময় স্বরে বলে, ' আপনি এখানে? '
অনুরাগকে দেখে এই অফিসের কর্মচারি মনে হচ্ছে। তাই প্রিয়ন্তি যথাসম্ভব ভদ্র উত্তর উত্তর দেবার চেষ্টা করে, ' ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম। '
অনুরাগ শুনে তাচ্ছিল্য করে বলে, ' ওহ, চাকরী করতে পারবেন এখানে? কারণ এই অফিসে চাকরী করার একটা মূল শর্ত আছে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। আই থিঙ্ক ইন্টারভিউ দেবার আগে রুলস পড়েছেন আপনি? '
প্রিয়ন্তির রাগ হয়। সেদিনের কথা মনে করে এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে! ছেলেটা অফিসের ম্যানেজার, তার গলায় ঝুলানো অফিস কার্ডে দেখাচ্ছে সেটা। তার সাথে পাঙা নিলে চাকরী হাত থেকে ফসকে যাবে। তাই প্রিয়ন্তি বেশ শান্ত থাকার চেষ্টা করে বলে, ' সরি সেদিনের রাফ বিহেভিয়ারের জন্যে। তাড়া ছিল, আর সেই সময়েই এমন অঘটন ঘটল। তাই রাগ করে উল্টাপাল্টা বলেছি। আম সরি ফর দ্যাট। '
অনুরাগ এসব সরির গীত কানে তুলে না। বরং বলে, 'ভালো ব্যবহার করাও একটা আর্ট। এটা যাকে তাকে দিয়ে হয় না। '
কথাটা বলে অনুরাগ আর অপেক্ষা করে না। প্রিয়ন্তিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। প্রিয়ন্তি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। রাগ গিজগিজ করতে থাকে তার মস্তিষ্ক। কতগুলো কথা শুনিয়ে গেল খারাপ ছেলে। রাগে ইচ্ছে করছে ছেলেটার মাথা ফা"টিয়ে ফেলতে। কিন্তু এত বড় কোম্পানিতে চাকরীর জন্যে প্রিয়ন্তি সেই ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখল। সময় তারও আসবে। তখন দেখা যাবে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন