উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৬)
প্রিয়ন্তি সবে অফিস থেকে বেড়িয়েছে। মাহতিম কল করেছে, জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে চায়। চাকরির বিষয় নিয়ে কথা বলবে। প্রিয়ন্তি মানা করেনি। মাহতিমের কথামত ক্যাফেতে এসেছে। ওই তো কাছেই, মাহতিম বসে আছে। ক্যাপাচিনো কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বারবার ঘাড় কাত করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। প্রিয়ন্তিকেই খুঁজে যাচ্ছে হয়ত। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে এগিয়ে আসে।
' হঠাৎ জরুরি তলব? '
প্রিয়ন্তি কথাটা বলতে বলতে চেয়ার টেনে বসে। সার্টিফিকেট ধারণকৃত ফাইল আলগোছে টেবিলে রাখে। পাশে ব্যাগটাও রাখে। মাহতিম বলে, 'কিছু খেয়ে কথা বলি? ক্লান্ত নিশ্চয়ই! '
প্রিয়ন্তি সত্যি বেশ ক্লান্ত ছিল। চোখ ধিমে আসছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি বলল, 'আপাতত পানি হলে চলবে। '
মাহতিম ওয়েটার ডেকে পানি দিতে বলল। সঙ্গে ক্যাপাচিনো কফি। ওয়েটার আগে পানি দিয়ে গেল। প্রিয়ন্তি এক ঢোক সমস্ত পানি খেয়ে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুটা শান্ত হয়ে বলে, 'এখন বলো কি বলবে। শুনছি। '
মাহতিন গম্ভির হয়ে আসে। টেবিলে নখ দিয়ে খুঁটে অযথা শব্দ করে। বলে, 'আচ্ছা, চাকরি না করলে হয় না? চাকরি করে কে কি করে মহা অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে, হু? '
' বোকার মত কথা বলবে না। তোমার বাবার বয়স হয়েছে। তোমার ভাইয়া একা আর কত সংসার চালাবে? নিজে এবার দায়িত্ত্ব নিতে শেখো। '
ইতিমধ্যে ক্যাপাচিনো কফি এসে গেছে। মাহতিম নিজের জন্যে আবারও একটা কফি অর্ডার করেছে। সেটাও এসেছে। মাহতিম প্রিয়ন্তির কথা শুনে হেসে বলে, 'চাকরি করলে কি তোমাকে পাব? অযথা কষ্ট। ভাইয়া তো আছেই। ভাইয়া না পারলে তখন নাহয় দেখব চাকরি ব্যাপার। '
প্রিয়ন্তি আর কথা বাড়ায় না। পাগলকে বুঝালে বুঝে। কিন্তু মাহতিম হচ্ছে মহা পাগল। একে বোঝানো হচ্ছে দুনিয়ার অসাধ্য। প্রিয়ন্তি কথা বলছে না দেখে মাহতিম জিজ্ঞেস করে, 'ইন্টারভিউ কেমন হলো? '
কথা বলতে বলতে মাহতিম টেবিল থেকে প্রিয়ন্তির সার্টিফিকেট হাতে নিল। ভ্রু কুচকে সার্টিফিকেটে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। প্রিয়ন্তি নিজের মত করে বলে, 'ভালো হয়েছে। তবে বসটা কেমন যেন! একটু অদ্ভুত। চোখটা সারাক্ষন কেমন যেন হয়ে থাকে। ওভারঅল কোম্পানি ভালো লেগেছে। চাকরি হয়ে যাবে বোধহয়। বেতনও ভালো। তুমি এখানে ট্রাই করতে পারো, মাহতিম। আমার মনে হয় তোমারও হয়ে যাবে এখানে। অনেক সহজ প্রশ্ন করে, জানো? '
মাহতিম শেষের কথাগুলো শুনেনি। বরং প্রথম কথা শুনেই তার চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তির অগোচরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। শান্ত স্বরে বলে, 'বসের চোখ কেমন? ভালো না খারাপ? '
প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, ' খারাপ না, আবার ভালোও না। অদ্ভুত! আমার একবার মনে হয়েছিল তিনি আমাকে স্ক্যান করেছে। পরে দেখলাম আমাকে করেনি। আমার পেছনে কি একটা দেখছে। ''
মাহতিম শুনে। অযথা হাসে, ' তোমার মধ্যে দেখার মত কি আছে? ওই দুই চোখ, আর নরম গাল, আর হাসি। আর কি দেখবে? '
প্রিয়ন্তি চোখ পাকায়, ' এগুলো কি দেখার মত কিছু না? '
' এগুলো দেখেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। দেখলে শরীরটাই দেখবে। আমার মত তো আর সবাই ভালো মানুষ না, তাইনা? '
মাহতিম হাসছে। প্রিয়ন্তি মিথ্যা রাগ দেখাল। মাহতিম আগের চেয়ে প্রিয়ন্তির সঙ্গে সহজ হয়ে এসেছে। মজা করে, হাসে, অযথা প্রশংসা করে না। প্রিয়ন্তির কথামত এখন শুধু বন্ধুর মত আচরণ করে। তাদের বন্ধুত্ত্ব এই দুই মাসে আগের চেয়ে বেশ দৃঢ় হয়েছে। প্রিয়ন্তি নিজে এখন মাহতিমের সঙ্গে কথা না বললে ভালো লাগে না। মন খারাপ হলে প্রিয়ন্তি মাহতিমকে কল করে। কথা বলে, হাসে, মাহতিম প্রিয়ন্তির সঙ্গে নানা মজাদার কথা বলে। প্রিয়ন্তির মন খারাপ তখন হুহু করে পালিয়ে যায়। নিপা, দৃষ্টি যেমন প্রিয়ন্তির ভালো বন্ধু, তেমনি এখন মাহতিমও প্রিয়ন্তির ভালো বন্ধু হয়েছে। প্রিয়ন্তির মনে এখন আগের মত অপরাধবোধ হয় না। মাহতিমের সামনে গেলে অস্বস্থিতে জমে যায় না। বরং প্রিয়ন্তি-মাহতিমের সম্পর্ক বেশ সহজ হয়ে উঠেছে। তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের! শুধুই বন্ধুত্বের।
তাদের দুজনের কথা বলার মধ্যে কফি শেষ হয়। প্রিয়ন্তি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে। দুজন অর্ধাঅর্ধি টাকা দেবে। এটা তারা সবসময়ই করে আসছে। মাহতিম প্রথম প্রথম মানা করত। নিজে টাকা দিতে চাইত। তবে প্রিয়ন্তির যুক্তির কাছে বরাবরই হার মানত। তাই এখন থেকে দুজন যা বিল আসে তার অর্ধেক করে দেয়। দুটো ক্যাপাচিনো ২২০ টাকা হয়েছে। প্রিয়ন্তি ১১০ টাকা বের করে, মাহতিমও ওয়ালেট থেকে ১১০ টাকা বের করে। ওয়েটার এসে বিল নিয়ে যায়। প্রিয়ন্তি ব্যাগ কাধে তুলে ফাইল হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাহতিম ওয়ালেট পকেটে পুড়ে এগিয়ে আসে প্রিয়ন্তির দিকে।
প্রিয়ন্তি বাস খুঁজছে। মাহতিম পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলছে। খেলছে বললে ভুল হবে। খেলার ফাঁকে ফাঁকে প্রিয়ন্তিকে দেখছে। যার জন্যে বারবার খেলায় হেরে যাচ্ছে সে। তবে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। এখন আর মাহতিম প্রিয়ন্তির দিকে সরাসরি তাকায় না। তাদের বন্ধুত্বের খাতিরে। এই দুই মাসে প্রিয়ন্তির দিকে আড়চোখে তাকানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তার। প্রিয়ন্তি বাস পাচ্ছে না। মাহতিমকে খেলতে দেখে তার ভীষন বিরক্ত লাগছে। প্রিয়ন্তি বিরক্ত হয়ে বলে, 'রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে যাচ্ছ না কেন? '
মাহতিম গেমস খেলতে খেলতে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয়, ' বাইক আনিনি। '
' কেন? '
' নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক করাতে দিয়েছি। '
সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বাইক মোটেও নষ্ট হয়নি। বরং বহাল তবিয়তেই আছে। কিন্তু প্রিয়ন্তির সঙ্গে রোদ গায়ে মেখে বাসের জন্যে অপেক্ষা করা, আবার বাসে একসঙ্গে বাসায় পৌঁছানো এই সুযোগগুলো মিস করতে চায়নি মাহতিম। বাইক আনলে প্রিয়ন্তি কখনোই মাহতিমের বাইকে চরবে না। মানা করবে দু হাত দিয়ে। তাই একসঙ্গে বাসে যাবার জন্যে এই মিথ্যা বাহানা বানাল। কিন্তু সরাসরি তো এই কথাগুলো প্রিয়ন্তিকে বলা যাবে না। খারাপ শুনাবে।
প্রিয়ন্তি গরম লাগছে ভীষন। গায়ের কামিজ ঘামে চুপচুপ। প্রিয়ন্তি ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিল। একটু পর বাস এল। প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে গেল। মাহতিম ফোন পকেটে রেখে নিজেও এগিয়ে গেল। ঠেলাঠেলি করে প্রিয়ন্তি বাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। প্রিয়ন্তির গায়ের সঙ্গে যেন কোনো ছেলের গা না মেশে তাই মাহতিম প্রিয়ন্তির দেহের সামনে হাত দিয়ে আগলে প্রিয়ন্তিকে বাসে তুলে দিল। নিজেও এক ফাঁকে বাসে উঠে পরল। ঘামে ভেজা চুল ঝেড়ে মৃদু হেসে এগিয়ে এসে বসল প্রিয়ন্তির পাশে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন