উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৪)
প্রিয়ন্তি অনুষ্ঠানে এসেছে কিছুক্ষণ হল। তার চোখ মাহতিমকে খুঁজে যাচ্ছে। পেয়েও গেল ক্ষনিকেই। ওই তো দূরে মাহতিম ওয়াহিদের সঙ্গে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে এগিয়ে যায় মাহতিমের দিকে। পেছন থেকে মাহতিমের কাধে চাপড় দিয়ে বলে, 'হ্যাই। '
প্রিয়ন্তির কন্ঠ শুনে মাহতিম চমকে পেছনে তাকায়। প্রিয়ন্তি হাস্যোজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে মাহতিমের দিকে। প্রিয়ন্তিকে দেখে মাহতিমের চোখ আটকে গেছে। সম্পূর্ন শরীর আচমকা কেঁপে উঠছে। আগাগোড়া প্রিয়ন্তিকে দেখল মাহতিম। মাথা ঝিমঝিম করে উঠল তার। সে চোখ বুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত থাকার চেষ্টা করল। প্রিয়ন্তি নিজেকে একপল দেখে আবার মাহতিমের দিকে চেয়ে সুধাল, 'আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে? আসলে তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়েছি। তুমি বারবার ফোন করে পাগল করে দিচ্ছিলে। তাই সময় পাইনি ভালো করে তৈরি হবার। '
মাহতিম এখনো ভালো করে কথা বলতে পারছে না। চোখের ভেতরটা জ্বলছে। ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে আশপাশ। মাহতিম কথা বলছে না দেখে প্রিয়ন্তি মাহতিমের কাঁধে হাত রেখে ডাকে, 'এই মাহতিম? '
মাহতিম শুনে প্রিয়ন্তির ডাক। সঙ্গেসঙ্গে চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রিয়ন্তি কেন তার হয় নি? আজ যে প্রিয়ন্তিকে অধিক সুন্দর দেখাচ্ছে, চোখ ধাঁধানো রূপে ঝলসে দিচ্ছে বুকের ভেতর, মাহতিমের ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির নরম গালে দুই সেকেন্ডের জন্যে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে তওবা করে নিতে। তবে এই অবাধ্য ইচ্ছে দমাল মাহতিম। দুই চোখে আস্ত আদরের সমুদ্রে নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে চাইল। মৃদু স্বরে বলল, 'প্রিয়ন্তি…প্রিয়ন্তিকা… তোমাকে.. আজ..'
মাহতিমের কণ্ঠ কথা বলার ফাঁকে কাঁপছে। প্রিয়ন্তি বলল, 'আমাকে কি? খারাপ লাগছে দেখতে? '
মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে বলে উঠল, 'না। '
' তাহলে? '
' তোমাকে…আজ…পাগল করা সুন্দর লাগছে। '
প্রিয়ন্তি শুনে। মাহতিমের আচমকা এমন কথায় সর্বাঙ্গ যেন অস্বস্তিতে জমে উঠে। অবাধ্য চুল কানের পেছনে গুঁজে মাথা নত করে ফেলে প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হয়েছে, মাহতিম বুঝতে পেরেছে। সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তির বন্ধুত্বের শর্তের কথা মনে পরে। মাহতিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, 'সরি উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্যে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। এসো। '
মাহতিমের চোখে স্পষ্ট বাঁধভাঙা কষ্ট দেখতে পারছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু প্রিয়ন্তির হাতে কিছু করার নেই। সে চাইলেও মাহতিমকে নিজের মন দিতে পারছে না। কোথাও যেন একটা সংকোচ থেকে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি মাহতিমে পাশে হাঁটছে। আচমকা প্রিয়ন্তি বলল, 'তোমাকে যে মেয়ে পাবে, সে মেয়ে অনেক ভাগ্যবতী হবে, মাহতিম।'
'সে মেয়ে তুমিও হতে পারতে। '
মাহতিমের কণ্ঠে তাচ্ছিল্য। কণ্ঠে কষ্টের তীব্রতা অনুভব হতে প্রিয়ন্তির বুকের ভেতরটা কষ্টে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হচ্ছে দেখে মাহতিম হেসে উঠে বলে, 'ওয়াহিদকে দেখেছ? আসার পর থেকেই নিপার পেছনে ঘরঘুর করছে। আমাকে প্রেম করবি না করবি না বলে, নিজেই প্রেমে পাগল। '
প্রিয়ন্তি অবাক হয়। অদূরে ওয়াহিদ এবং নিপা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি সেদিকে চেয়ে বলে, 'নিপাকে ওয়াহিদ ভালোবাসে? আমি জানতাম না। '
' কেন জানবে? সারাক্ষণ মাথায় পড়াশোনা ঘুরলে এসব প্রেম পিরিতির খবর মাথায় ঢুকবে? '
প্রিয়ন্তি রাগ নিয়ে তাকায় মাহতিমের দিকে। মাহতিম এক ভ্রু উঁচু করে প্রিয়ন্তিকে দেখে। মাহতিমের মুখের এমন হাস্যকর অভিব্যক্তি দেখে প্রিয়ন্তি হেসে ফেলে। মাহতিমের মাথাটা আবার যেন ঝিম ধরে বসে। মেয়েটা এমন করে হাসে কেন? হাসলে যেন শুভ্র চোখের ভেতরটাও হেসে উঠে। ঠোঁটের কোণে সুন্দর এক ভাঁজ পরে। চারপাশ চমকাতে থাকে। মাহতিমের দু চোখে প্রিয়ন্তির হাসি প্রজাপতির ন্যায় ঝলমল করতে থাকে। মাহতিমের ইচ্ছে করে ওই বুক ধড়ফড় করা হাসির পানে আজীবন চেয়ে থাকতে। আজীবন!
বেশ কয়েকদিন পরের কথা। প্রিয়ন্তি নিপার সঙ্গে একটা লাইব্রেরিতে এসেছে। বই কেনার উদ্দেশ্যে। প্রিয়ন্তি বই কিনে বের হয়েছে। নিপা বলল, 'প্রিয়, একটু শপে যাবি আমার সঙ্গে। কিছু ইন্টার্নাল কাপড় কিনতে হবে। '
প্রিয়ন্তি সম্মতি দেয়। নিপার সঙ্গে কাছের একটা নারী শপে প্রবেশ করে। নিপা তার প্রয়োজনীয় কাপড় কিনে নেয়। তার কেন শেষ হলে প্রিয়ন্তিকে জিজ্ঞেস করে, 'তুই কিছু কিনবি? '
প্রিয়ন্তি মানা করে। নিপা বিল মেটায়। তারপর দুইজনেই বেরিয়ে আসে দোকান থেকে।
বাসায় যাবার জন্য রিকশা খুঁজছে দুজনেই। হঠাৎ প্রিয়ন্তি বলে, 'তোর সঙ্গে ওয়াহিদের রিলেশন চলছে, নিপা? '
নিপা চমকে যায়। কেমন যেন করে উঠে। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে, 'না তো। কেন এই কথা জিজ্ঞেস করলি? '
প্রিয়ন্তি বেশ রয়েসয়ে জবাব দিল, 'মাহতিম বলেছে। '
নিপা কিছুক্ষণ থামে। ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুধায়, 'আমাদের মধ্যে কখনও কিছু হবার নয়। ওয়াহিদ ওয়েল সেটেল্ড না। মা বাবা কখনোই একটা বেকার ছেলের হাতে আমাকে তুলে দেবে না। আর আমি পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারব না। কিন্তু ওয়াহিদ এই বাস্তবতাটুকু মেনে নিতে পারছে না। খামোকা পাগলামি করছে। বুঝতে পারছি না সবদিক কিভাবে সামলাব। '
প্রিয়ন্তি হাসে। বলে, 'তুই ওকে ভালোবাসিস? '
নিপা মৃদু কন্ঠে বলে, 'হ্যাঁ। '
' তাহলে চিন্তা করছিস কেন? ওয়াহিদকে কিছুদিন সময় দে। অনার্স শেষ করেছে। মাহতিম বলল, ওয়াহিদ নাকি ছোটখাটো জব খুঁজছে। জব পেয়েও যাবে কদিনের মধ্যে। তুই একবার হাত বাড়িয়েই দেখ না। ওয়াহিদ হাত লুফে নিবে, ছেড়ে দেবে না। আমার ওর উপর পুরো বিশ্বাস আছে! '
নিপা হয়ত ভাবনায় পরে গেল। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা মনে পড়ায় সে ভাবনার তাল কেটে গেল। আচমকা নিপা বলে উঠল, 'তাহলে তোর মাহতিমের সঙ্গে কি সমস্যা? বন্ধু হতে পেরেছিস আর প্রেমিকা হতে পারবি না? সেও তোকে পাগলের মত ভালোবাসে। তোর একবার হাত বাড়ানোর অপেক্ষায় সে চাতক পাখির ন্যায় বসে। মাহতিমকে কেন একটা সুযোগ দিচ্ছিস না? '
প্রিয়ন্তি মৃদু কন্ঠে উত্তর দেয়, 'কারণ আমি তাকে ভালোবাসি না। তুই ওয়াহিদকে ভালোবাসিস আর ওয়াহিদ তোকে। তাই দুজনের মধ্যে সমস্যার সমাধান সহজে বলা গেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কি আছে জানিস? একপাক্ষিক ভালোবাসা। এমন নয় যে আমি মাহতিমকে ভালোবাসার চেষ্টা করিনি। প্রচন্ড চেষ্টা করেছি। কিন্তু দিনশেষে কেন যেন ওর কথা ভাবতে আমার ভালো লাগতো না, ওর পাগল কথা বার্তায় লজ্জা পেতাম না উল্টো রাগ হত। আমি মনকে বুঝিয়েছে ভালোবাসার জন্যে। কিন্তু মন শুনেনি। তুই বল, এটা কি আমার দোষ? মাহতিম আমাকে ভালোবেসেছে, সেটাও কি আমার দোষ? আমি ওকে বলেছি ভালোবাসতে? ভালোবেসে এখন খামোকা কষ্ট পাচ্ছে। অথচ এই কষ্টের বদলে আমি সহানুভূতি ব্যতীত আর কিছুই দিতে পারছি না। কেউ আমাকে বুঝে না নিপা। সবাই নিজের দিকটায় দেখে। আমার দিকে আমি কি দিয়ে যাচ্ছি সেটা কেউ দেখতে চায় না। আমারও মন আছে। আমিও ভালোবাসতে চাই কাউকে। কিন্তু নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নয়। '
নিপার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে পরে। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে মাহতিমের নাম। নিপা অনেকদিন ধরে চেয়েছিল প্রিয়ন্তির মুখ থেকে মাহতিমকে ভালো না বাসার কারণ বের করবে। আজ সেই চেষ্টাই করেছে সে। তাই প্রিয়ন্তি কথা বলার আগে মাহতিমকে কল করেছে সে। এতক্ষণ প্রিয়ন্তি যা যা বলেছে, সবই মাহতিম শুনেছে। কলের উপরের বারে ওয়াহিদের মেসেজ ভাসছে,,
' তুমি কেন প্রিয়ন্তির সব কথা মাহতিমকে শুনালে? মাহতিমকে কেমন যেন লাগছে। ফোন কাটো দ্রুত। '
ওয়াহিদের মেসেজ দেখে নিপা দ্রুত ফোন কেটে দেয়। প্রিয়ন্তির কাঁধে হাত রেখে সুধায়, 'সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু নিজের মনকে বোঝার চেষ্টা কর। '
' সেটা করেছি বলেই আজ মাহতিমের চোখে আমি কঠোর, খারাপ একটা মেয়ে। '
নিপা বলে, ' মাহতিমের চোখে তুই কখনোই খারাপ ছিলি না, প্রিয়। খামোকা নিজেকে খারাপ মনে করিস না। '
প্রিয়ন্তি উত্তর দেয় না। বরং মলিন চোখে খুঁজে চলে রিকশা। একের পর এক খালি রিকশা তাদের পেরিয়ে চলে যায়। প্রিয়ন্তি দেখে না। কেমন যেন নির্জীব হয়ে আছে তার মন। মনের মধ্যে হাজার খানেক মাকড়সার জালের ন্যায় পেঁচানো দ্বন্ধ! অথচ সেসবের কোনো সমাধান মিলছে না। কেন মিলছে না? মেলা উচিৎ! প্রিয়ন্তিকে এই দমবন্ধ করা কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার জন্যে এই দ্বন্দ্বের সমাধান মেলা উচিৎ!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন