উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২০)
মাহতিম আর হাঁটতে পারছে না। পা দুটো যেন ভে"ঙে আসছে। এক ঘন্টা হেঁটেছে সে। বাসার প্রায় কাছেই চলে এসেছে। এতক্ষণ বৃষ্টির পানিতে তার চোখের কোণ ঘেঁষে পড়া জল লুকিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বৃষ্টি নেই। ফকফকা আকাশ। আকাশের উপর বসে আছে উত্তাপহীন ঠসঠসে সূর্য। মাহতিমের ভিজে শার্ট এতক্ষণে শুকিয়ে যাওয়ার পথে। ইন করা শার্ট কুঁচকে গেছে বৃষ্টির পানিতে। মাহতিম বাসায় যায় না। গলার টাই ঢিলে করে বাসার সামনে টং দোকানে বসে একের পর এক সিগারেট ফুঁকে। ওয়াহিদ কল করেছিল একবার। মাহতিম কোথায় আছে, জানতে চেয়েছে। মাহতিম নিজের অবস্থান জানিয়ে সঙ্গেসঙ্গে কল কেটে দিয়েছে। প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে ওয়াহিদ বাইক নিয়ে ঝড়ের গতিতে টং দোকানে আসে। এলোমেলো বিধ্বস্ত মাহতিমকে দেখে তার বুকের ভেতর মুঁ"চড়ে উঠে। ওয়াহিদ দৌঁড়ে গিয়ে মাহতিমকে জড়িয়ে ধরে। মাহতিমের হাত আগের ন্যায় সোজা হয়ে আছে। আঙ্গুলে ডগায় অবশিষ্ট সিগারেট। ওয়াহিদ মাহতিমকে ছেড়ে দেয়। ব্যস্ত কণ্ঠে বলে, 'কি হয়েছে তোর মাহতিম? এমন লাগছে কেন তোকে? '
মাহতিম অবশিষ্ট সিগারেটে শেষটান দিয়ে সেটা ফেলে দেয়। আরো একটা সিগারেট ধরায়। ওয়াহিদ সব দেখে। হাত বাড়িয়ে মাহতিমের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রেগে বলে, 'শরীর খেয়ে ফেলার শখ জেগেছে? একদিন সিগারেট মুখে নিয়েই মরবি তুই শালা। '
মাহতিম কথা বলে না। পুনরায় সিগারেট ধরানোর তাড়া দেখায় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়াহিদ মাহতিমের এমন নিরবতা দেখতে পারে না। কষ্ট হয় তার। ওয়াহিদ কিছুক্ষণ থেমে তারপর জিজ্ঞেস করে, 'প্রিয়ন্তির কিছু হয়েছে? '
মাহতিম ক্লেশপূর্ন হাসে। ওয়াহিদ যা বুঝার বুঝে যায়। এ আর নতুন কি? প্রিয়ন্তির সঙ্গে মাহতিমের সদা ঝামেলা হয়। আর এভাবেই মাহতিম ভেঙে পরে। তবে আজকের ন্যায় মাহতিমকে ভেঙে পরতে আগে কখনো দেখে নি ওয়াহিদ। ওয়াহিদ উত্তরের আশায় মাহতিমের দিকে চেয়ে। কিছুক্ষণ পর মাহতিম নিজে বলে, 'আমি কি খুব খারাপ, ওয়াহিদ? আমাকে কি একদম ভালোবাসা যায় না? আমি কি প্রিয়ন্তির অযোগ্য ছিলাম? '
ওয়াহিদের বুকটা পু"ড়ে ছা"রখার হয়ে যায় মাহতিমের কথা শুনে। ওয়াহিদ উত্তর দেয়, 'না, তুই হচ্ছিস দুনিয়ার সবথেকে গর্দভ প্রেমিক। এবার ঝেড়ে কাশ। কাহিনী কি হয়েছে খুলে বল। '
মাহতিম একে একে সব বলে ওয়াহিদকে। ওয়াহিদ মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় সব শুনে। কিছুক্ষণ চিন্তিত থেকে তারপর হঠাৎ করেই বলে, 'আরে, তোর চোখের দেখা তো ভুলও হতে পারে। হতে পারে, ছেলেটা প্রিয়ন্তির অফিসের কলিগ। তার সঙ্গে দুটো কথা বলেছে তো কি এমন হয়েছে? বাসে করে গিয়েছে। চেনাজানা তাই পাশাপাশি বসতেই পারে। এতে এমন রিয়েক্ট করছিস কেন? এবার তোর স্বভাব পাল্টা। এমন অভার পজেসিভ হলে আমি নিশ্চিত তুই প্রিয়ন্তিকে হারাবি। '
মাহতিম কিছুক্ষণ ভাবে। তার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না, অন্য কারো সঙ্গে প্রিয়ন্তিকে ভাবতে। ওয়াহিদের কথা সত্য হয়ত। হতে পারে, প্রিয়ন্তি ছেলেটার সঙ্গে ফরমাল কথাবার্তা বলেছে। অযথাই মাহতিম চিন্তা করছে হয়ত। আসলে, মাহতিম ছেলেটা বড্ড ভীতু। সে কষ্ট পেতে চায়না। তাই তো নিজের দেখা বিষয়কে সে মনের শান্তির জন্যে অদেখা করে গেল। সে সবসময় চায় সুখ পেতে। তাই প্রিয়ন্তির সঙ্গে অন্য কাউকে কল্পনা করে সে দুঃখী হতে চায়না। প্রিয়ন্তি তার, ভাবলে মনের মধ্যে যে শান্তি বয়ে বেড়ায়,সেই শান্তি, সেই উচ্ছাস মাহতিম হারাতে চায় না। মাহতিম ছেলেটা যে বড্ড বোকা।
মাহতিমের মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে যায়। সে চমকিত কণ্ঠে বলে, 'হয়ত তোর কথাই ঠিক। সবসময় চোখের দেখা তো ঠিক হয় না। '
ওয়াহিদ হেসে মাহতিমের কাধে চাপড় দেয়। বলে, 'এই তো বুঝসস। বুঝালে বুঝো, আর না বুঝালে কচি খোকা সাজো। ধান্দাবাজ! '
মাহতিমের কণ্ঠে শান্তি দেখালেও মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খচখচ থেকেই গেল। শান্তি পেয়েও যেন শান্তি পাওয়া হল না তার। কোথাও যেন একটা অসহ্য কষ্ট চিরবিরিয়ে উঠল।
ওয়াহিদ বলল, 'সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যা। ফ্রেশ হ। পারলে প্রিয়ন্তিকে কল কর। পুরো বিষয়টা খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা কর। তোর উত্তর তুই নিজেই পেয়ে যাবি। '
মাহতিম শুনে ওয়াহিদের কথা। সিগারেট ফেলে মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখের ভেতর ধৌত করে বাসার দিকে চলে।
প্রিয়ন্তি বাসায় এসেছে অনেকক্ষণ হল। রাত বাড়ার সঙ্গে তার নাকের পিটপিট করাও যেন বেড়েছে। ঠান্ডা লেগে কাদা তার গা। এই হাঁচি দিচ্ছে তো এই কাশি দিচ্ছে। গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো বলে। প্রিয়ন্তির মা ঔষধ এনে রেখেছেন টেবিলের উপর। প্রিয়ন্তি এই ঠাণ্ডা, কাশি গায়ে মেখে আগামী কালের জন্যে প্রেজেন্টেশনের স্লাইড তৈরি করছে। আজ সারা রাস্তা অনুরাগের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছে প্রিয়ন্তি। কেন যেন অনুরাগের সঙ্গে কথা বলতে প্রিয়ন্তির ভালো লাগে। অনুরাগ অনেক ম্যাচিওর একটা ছেলে। কথাবার্তা মার্জিত। আজ অব্দি প্রিয়ন্তির দিকে খারাপ নজরে তাকায় নি। মাহতিমের ন্যায় অযথা পাগলামি করে প্রিয়ন্তিকে বিব্রত করেনি। অনুরাগের কথার ধরনে প্রিয়ন্তি নিশ্চিত, অনুরাগ প্রিয়ন্তিকে পছন্দ করে। নাহলে এতটা কেয়ার সামান্য কর্মচারীর প্রতি সে নিশ্চয়ই দেখাত না। তাছাড়া প্রিয়ন্তি নিজের অজান্তেই চায়, অনুরাগ তার প্রতি সহনশীল হোক। আজকাল অনুরাগের সংস্পর্শ প্রিয়ন্তির মন কাড়ে। এই অনুভূতি এত বছর মাহতিমের জন্যে অনুভব করেনি প্রিয়ন্তি। এই অনুভব শুধুই অনুরাগের বেলায় তৈরি হয়েছে। এ কেমন অনুভূতি! মাহতিম, অনুরাগ, মাহতিম,অনুরাগ! এই দুই পুরুষের দ্বন্ধে প্রিয়ন্তি পি"ষে। অনুরাগকে ভালোবাসলে মাহতিম খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু অনুরাগের থেকে দূরে থাকলে প্রিয়ন্তি কষ্ট পাবে। কি করবে, কোথায় যাবে, কিছুই ঠাহর করতে পারছে না প্রিয়ন্তি। তাই প্রিয়ন্তি এক সহজ উপায় বেছে নিল। আজ থেকে অনুরাগকে অদেখা করবে প্রিয়ন্তি। অনুরাগের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। দরকার নেই এসব প্রেম ভালোবাসার। প্রিয়ন্তি একা আছেই, একাই থাকবে। তার জীবনে কোনো মাহতিম বা অনুরাগের দরকার নেই। সে একাই দিব্যি ভালো আছে। কিন্তু প্রিয়ন্তির এই পণ বেশিক্ষণ ঠিকল না। ভাবনার পরপরই কল এলো অনুরাগের। প্রিয়ন্তি অনুরাগের কল দেখে মোহাচ্ছন্ন হয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে কল ধরতে গেলেও পণের কথা মনে পরে আর ধরল না। একবার রিং বাজল, আবার বাজল। তিনবারের সময় প্রিয়ন্তির হৃদয় নরম হয়ে গেল। সে সকল পণের কথা ভুলে কল রিসিভ করে বসল।
অনুরাগ এতক্ষণ কল কেন ধরেনি দেখে কোনপ্রকার রাগ দেখাল না। বরং বেশ নরম স্বরে বলল, 'ব্যস্ত ছিল? পরে কল করব? '
এখানেই মাহতিম এবং অনুরাগে পার্থক্য খুঁজে পেল প্রিয়ন্তি। মাহতিম একটু কল রিসিভ না করলে বাসার নিচে এসে যেত। রাত বিরাতে ঢিল ছুঁড়ত জানালায়। এই বিষয়টা প্রিয়ন্তি নিতে পারত না। রাগ উঠত। অনুরাগ তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
' কথা বলছ না? ব্যস্ত ভীষন? কল কেটে দেব? '
অনুরাগের আদর করে কথা বলা দেখে প্রিয়ন্তির মনের মধ্যে উদয় হওয়া শঙ্কা কোথাও যেন ঘাপটি মেরে বসল। প্রিয়ন্তি একগাল হেসে বলল, 'কালকের প্রেজেন্টেশনের জন্যে স্লাইড বানাচ্ছি। '
কথা বলার মধ্যে প্রিয়ন্তি আরো দুবার হাঁচি দিল। হাঁচির শব্দে অনুরাগ চোখ কুঁচকে বলল, 'ঠান্ডা লেগেছে নাকি? '
প্রিয়ন্তি টিস্যু দিয়ে নাক মুছে বলল, 'হু। জ্বরও আসবে বোধহয়। '
অনুরাগ শুনল। প্রিয়ন্তির কথা শুনে তার অযথাই খারাপ লাগল। অনুরাগ বলল, 'ঠান্ডা লাগলে আজ কাজ করার দরকার নেই। রেস্ট নাও। আর কালকের জন্যে সিক লিভ নিয়ে নাও। '
প্রিয়ন্তি আর একবার হাঁচি দিয়ে বলল, 'না, লাগবে না। আমি ঠিক আছি। '
অনুরাগ এবার খানিক রাগ দেখাল। কণ্ঠে কঠোরতা ঢেলে বলল, 'জেদ দেখাবে না। ল্যাপটপ বন্ধ করবে, গরম পানির ভাঁপ নেবে, তারপর ঔষধ খেয়ে চুপ করে শুয়ে পড়বে। আর এসব করবে এক্ষুণি, এই সময়ে। '
প্রিয়ন্তি কিছু কথা বলতে চায়। পারে না। কেন যেন অনুরাগের কথা মানতে ইচ্ছে করছে। তাই প্রিয়ন্তি রাজি হয়ে যায়। কল কেটে টেবিলে মোবাইল রাখবে, তার আগে দেখে মোবাইলে মাহতিমের দশটা কল। মাহতিম এতগুলো কল দিল কখন? ওয়েটিং-এ পেয়েছে নিশ্চয়ই। ইশ! কি না কি ভেবে ফেলেছে। প্রিয়ন্তি সঙ্গেসঙ্গে মাহতিমকে কল করে। এবার মাহতিমের মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে। প্রিয়ন্তি আরো কবার কল করে। বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে দেখে প্রিয়ন্তি হাল ছেড়ে অনুরাগের কথামত ল্যাপটপ বন্ধ করে, ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন