উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২১)

প্রিয়ন্তি অফিসের যাবে বলে বেড়িয়েছে। বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড পথটা রিকশা করে যেতে হয়। ভাড়া পাঁচ টাকা। তারপর বাসে করে অফিসে যেয়ে ভাড়া পরে বিশ টাকা। মোট, পঁচিশ টাকা। প্রিয়ন্তি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজে যাচ্ছে। হঠাৎ প্রিয়ন্তির চোখ আটকে অদূরের একটা টং দোকানের সামনে। সাত সকালে টঙের দোকানে ভীষন ভিড় দেখা যাচ্ছে। দোকানের একটু সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাহতিম। আজও ফরমাল শার্ট ইন করে পড়া, গলায় টাই আর প্যান্ট। বোধহয় অফিসে যাচ্ছে। মাহতিমের চাকরি কি তবে হয়ে গেছে? প্রিয়ন্তি মনে পরে, পরশু রাত থেকে মাহতিমের সঙ্গে তার কোনোরূপ কথাবার্তা হয়নি। মাহতিম এই দুইদিন প্রিয়ন্তির আশেপাশেও আসেনি। প্রিয়ন্তির খটকা লাগছে। মাহতিম এমন করে চুপ করে যাওয়া ছেলে মোটেও নয়। প্রিয়ন্তি এগিয়ে যায় মাহতিমের দিকে। খানিক দূরে থেকেই ডাকে, 'এই মাহতিম! '

চেনা মানুষের কন্ঠস্বর শুনে চমকে পেছনে তাকায় মাহতিম। প্রিয়ন্তি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ভ্রু কুঁচকে, গাল দুখানা ফুলিয়ে ভীষন আকর্ষণীয় চেহারা নিয়ে ধেয়ে আসছে তার মন চুরি করতে। মাহতিম মৃদু হেসে উঠে। প্রিয়ন্তির দিকে এগিয়ে যেতে চায়। পরক্ষনেই পা"জোরা থেমে যায় তার। প্রিয়ন্তির সঙ্গে সে রেগে আছে। তাই সে পণ করেছে, যতক্ষণ অব্দি প্রিয়ন্তি তার রাগ না ভাঙাবে, সে প্রিয়ন্তির দিকে আর তাকাবে না। প্রিয়ন্তিকে অত্যধিক সুন্দর লাগলেও না। মাহতিম সিগারেট ফেলে দেয়। মুখে হাত নিয়ে দেখে, মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে। বি"দঘুটে গন্ধ। মাহতিম হাত উঁচু করে মুখের সামনে ঝেড়ে সিগারেটের ধোঁয়া কাটাতে চায়। এত সিগারেট গিলেছে সে, এখন তার চারপাশে সিগাররেটের ধোঁয়া কুণ্ডলিত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। মাহতিম মাউথ ওয়াশ বের করে মুখ ধুয়ে নেয়। ততক্ষণে প্রিয়ন্তি সামনে এসে পরেছে তার। প্রিয়ন্তি দূর থেকেই মাহতিমের এসব উদ্ভট কাণ্ডকারখানা দেখছিল। মাহতিম এখন ফিটফাট। গলা কেশে গম্ভীর হবার ফেষ্টা করে বলে, 'তুমি এখানে কেন? '

প্রিয়ন্তি বুকের কাছে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে তীক্ষ্ম চোখ চায় মাহতিমের দিকে। অতঃপর বলে, 'কটা সিগারেট পেটে গেছে? '
মাহতিম হকচকিয়ে যায়। কিন্তু চেহারা আগের ন্যায় গুরুগম্ভীর করে বলে, 'তোমার তাতে কি? আমি মরে গেলেই তো শান্তি তোমার। '
প্রিয়ন্তি মৃদু নিঃশ্বাস ছাড়ে। হাতের ভাঁজ ছেড়ে দিয়ে বলে, 'গতকাল রাতে ফোন বন্ধ কেন ছিল? '

মাহতিম প্রিয়ন্তির প্রশ্ন গায়ে তুলে না। বরং ত্যাড়াভাবে বলে, 'তোমার ফোনও তো ওয়েটিং এ ছিল! আমিও এখন একই প্রশ্ন করলে কি উত্তর দেবে? '
প্রিয়ন্তি বলে, 'অফিসের জরুরি কল ছিল। '
মাহতিম তাচ্ছিল্য ভরা হাসে। বলে, 'হ্যাঁ, ঠিকই তো। রাত দুইটার দিকে অফিসের খুব জরুরি কথাই আটত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড ধরে বলছিলে তুমি। '
প্রিয়ন্তি অবাক হয়। সুধায়, ' তুমি টাইম গুনে যাচ্ছিলে? '

মাহতিম উত্তর দেয় না। বরং মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে চেয়ে থাকে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পুনরায় কি মনে পড়ায় প্রশ্ন করে, 'সেদিন বাসে উঠো কি কেন তুমি? দেখলাম বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটছিলে। আমি ডেকেওছিলাম কয়েকবার। শুনো নি। '
মাহতিম প্রিয়ন্তির দিকে চায়। কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলে, 'ওহ, তোমার খেয়াল ছিল তাহলে? '
' এভাবে কেন কথা বলছ? সোজাভাবে কথা বলো। '
' সোজা জিনিসকে তুমিই বাঁকা করছ, প্রিয়ন্তিকা। '

প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে ভীষন বিস্ময় নিয়ে মাহতিমে দিকে তাকিয়ে রইল। মাহতিমের হঠাৎ এরূপ বদলে যাওয়ার কারণ প্রিয়ন্তি কিছুতেই ধরতে পারছে না। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে বেশ থমথমে স্বরে মাহতিম বলল, 'চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, প্রিয়ন্তিকা। তোমার অফিসের পাশেই। মাসে ২৫০০০ হাজার টাকা স্যালারি। এটুকু দিয়েই খুব সহজেই সংসার চালানো যাবে। ভাইয়ের পুলিশের চাকরির টাকা দিয়ে আমার সংসার চালাতে হবে না। '

প্রিয়ন্তি শুনে। খুশি হয়। পাগলটা অবশেষে বুঝল। প্রিয়ন্তি উচ্ছল কণ্ঠে বলে, ' কংগ্রাচুলেশন। '
' শুধু কংগ্রেস? '
মাহতিমের আহত কণ্ঠ। মাহতিম চাকরিটা নিয়েছে শুধুমাত্র প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করার জন্যে। তাই সে চাকরির কথা বলার পাশাপাশি নিজের সংসার চালানোর ক্ষমতা নিয়েও কথা বলেছে। বুক ভর্তি অনেক আশা নিয়ে প্রিয়ন্তির কাছে চাকরির কথা বলেছে মাহতিম। অথচ প্রিয়ন্তি…. মাহতিমের বুক ছিঁ"ড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। মনের মধ্যে বি"ষাক্ত পোকা যেন কা"মড়াতে থাকে অবিরত।

প্রিয়ন্তি কিছু একটা ভাবে। অতঃপর মাহতিমের হাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে, ' প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে সবার আগে নিজের জন্যে একটা ঘড়ি কিনবে। তোমার হাতের ঘড়ির বেল্ট ছিঁ"ড়ে গেছে। '

মাহতিম নিজের হাতের দিকে চায়। ঘড়িটা আসলেই বেশ পুরনো হয়ে গেছে। বাবা এইচএসসি পাশ করার পর এই ঘড়িটা দিয়েছিল তাকে। এখনো পরে যাচ্ছে সে। নতুন ঘড়ি কিনতে ইচ্ছে করেনি। এখন দেখতে পারছে। ঘড়িটার বেল্ট ছিঁ"ড়ে গেছে জায়গায় জায়গায়। নিজস্ব চাকচিক্য হারিয়েছে ঘড়ি। মাহতিম অলস চোখে ঘড়ির দিকে চেয়ে আবার প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। তার অনেক ইচ্ছে, নিজের প্রথম বেতন দিয়ে সে প্রিয়ন্তিকে কিছু কিনে দেবে। এর আগেও প্রিয়ন্তিকে সে নানা কিছু দিতে চেয়েছে। কিন্তু প্রিয়ন্তি সেসবের কিছুই নেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে বারবার। এবারেও যে নিবে না, সেটা মাহতিম খুব ভালো করে জানে। মাহতিম কৌশলে জিজ্ঞেস করে, ' তোমার একটা বেলিফুলের গাজরা ছিল না, প্রিয়ন্তিকা? ওই যে, বিদায় অনুষ্ঠানের দিন যেটা তুমি হারিয়ে ফেলেছিলে। ''
প্রিয়ন্তি মাথা নাড়ে। মাহতিম বলে, ' সেটা আমি খুঁজে পেয়েছি। আগামীকাল নিয়ে আসব। বাসায় আছে ওটা। আমার ড্রয়ারে রাখা।'

প্রিয়ন্তি মাথা নাড়ে। বলে, ' কোথায় পেলে? '
' স্টেজের পেছনে। তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীতে নাচার সময় বোধহয় চুল থেকে খুলে পরে গিয়েছিল। আমি কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। '
প্রিয়ন্তি ব্যস্ত চোখে হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আধা ঘন্টার মধ্যে অফিসে না পৌঁছালে আজকের প্রেজেনটেশনের টাইম পেরিয়ে যাবে। প্রিয়ন্তি তাই তাড়াহুড়ো করে বলে, 'আচ্ছা, নিয়ে এসো। এখন আমি যাই, হ্যাঁ? অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাকি কথা কাল হবে। '

প্রিয়ন্তি মাহতিমের দিকে বিদায় নিয়ে হুড়মুড় করে রিকশায় উঠে পরে। মাহতিম অলস চোখে প্রিয়ন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর নিজেও অফিসের যাবার উদ্দেশ্যে বাইকে চড়ে বসে।


প্রিয়ন্তি অফিসে পৌঁছে দেখে অফিসের হাবভাব খুব একটা সুবিধার নয়। কোথাও যেন একটা গন্ডগোল লেগেছে। প্রিয়ন্তি সব দেখে চুপ করে নিজের কেবিনে এসে বসে। পরপরই উঠে দাঁড়ায় বসের কিছু নোং"রা কথা শুনে, 'রাতটা কোথায় কাটালেন, মিস প্রিয়ন্তি? নিজের ঘরে নাকি আপনার প্রেমিক মাহতিম ইয়ানের ঘরে? '

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন