উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৯)
প্রবল বৃষ্টিতে আকাশ ভিজে। বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা মাটিতে পরছে, পরপরই টুপটুপ শব্দে কান আন্দোলিত হয়ে উঠছে। প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে বাস স্ট্যান্ডের ছাউনির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। জামা থেকে পানি ঝাড়ার চেষ্টা করেছে। অর্ধেকটাই ভিজে গেছে সে। ঠান্ডা লাগছে খুব। বাসায় গিয়ে গরম পানির ভাপ নিতে হবে। সর্দি হয়েছে বোধহয়। নাকটা কেমন যেন পিটপিট করছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তি বাসের জন্যে অপেক্ষা করছে। বাস আসতে এখনো আধা ঘণ্টা সময় আছে। প্রিয়ন্তি পা ভেঙে আসছে। আজ একটা প্রেজেন্টেশন ছিল তার। সারাক্ষণ দাড়িয়ে কথা বলে গেছে। অনুরাগ দুবার বসতে বলেছিল। তবে প্রিয়ন্তি মানা করেছে। বসে প্রেজেন্টেশন করলে ভালোভাবে কথা বুঝানো যায়না। প্রায় ঘণ্টাখানেক দাড়িয়ে থাকাতে পায়ের হাঁটু ব্যথা করছে। প্রিয়ন্তি পেছনে তাকাল। বসার জন্যে বেঞ্চে জায়গা খালি নেই। প্রিয়ন্তি তাই গেল ছেড়ে দাড়িয়েই রইল। হঠাৎ কোথা হতে দৌঁড়ে মাহতিম প্রিয়ন্তির পাশে এসে দাঁড়াল। প্রিয়ন্তি এসময়ে এখানে মাহতিমকে দেখে ভারী অবাক হল। মাহতিমের গায়ে ফরমাল ইন করে নেভি ব্লু রঙে শার্ট, অ্যাশ রংয়ের প্যান্ট। গলায় টাই বাঁধা। মাহতিম মাথার চুল থেকে হাত দিয়ে পানি ঝাড়াল। অতঃপর প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলল, 'হ্যাই। '
প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে মাহতিমের দিকে। মাহতিমকে জিজ্ঞেস করল প্রিয়ন্তি, 'তুমি? এখানে কেন? তাও এই পোশাকে? '
' চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। তোমার অফিসের পাশেই। '
প্রিয়ন্তি বুঝতে পারল এবার। মাহতিম বলল, 'অফিসের কাজ কেমন চলছে? বস ঠিকমত ভদ্রতা দেখাচ্ছে তো? '
প্রিয়ন্তি হকচকিয়ে গেল। মাহতিমকে বসের কথা এখনো বলেনি প্রিয়ন্তি। কারণ প্রিয়ন্তি জানে, মাহতিম ভীষন রগচটা। বসের কথা বললে সেই আগের মারপিঠ শুরু করে দেবে। এখন শর্তের কথা বলে প্রিয়ন্তি মাহতিমকে এসব থেকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু মাহতিম প্রিয়ন্তির বেলায় কতটা পজেসিভ তা প্রিয়ন্তির চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। প্রথম প্রথম প্রিয়ন্তির দিকে কেউ একটু মুগ্ধ চোখ তাকালেই মাহতিম টা হাড়গোড় ভেঙে দিত। আর এখন তো বস রীতিমত টিজ করছে প্রিয়ন্তিকে। বসকে না জানি কি থেকে কি করে বসে মাহতিম। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে বলে, 'হ্যাঁ, ভদ্র ব্যবহার করছে। '
' শিউর? '
প্রিয়ন্তি সায় দেয়। মাহতিম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে প্রিয়ন্তির দিকে চায়। সে জানে প্রিয়ন্তি মিথ্যা বলছে। প্রিয়ন্তিকে একা একটা অফিসে চাকরি করতে দিয়ে মাহতিম প্রিয়ন্তির ব্যাপারে কোনো খবর রাখবে না, তা তো হয়না। বসের সব খবর মাহতিমের কাছে আসে। ইতিমধ্যে মাহতিম অ্যাকশন নিয়ে নিয়েছে। বাকি ফলাফল প্রিয়ন্তির কাছে দ্রুত পৌঁছে যাবে। মাহতিম প্রিয়ন্তির হালচাল জিজ্ঞেস করে। প্রিয়ন্তিও বেশ হেসেখেলে উত্তর দিচ্ছে। হঠাৎ প্রিয়ন্তির পাশে ভিজে চুপচুপে দেহ নিয়ে দাড়ায় অনুরাগ। প্রিয়ন্তি অনুরাগকে এখানে দেখে বিস্মিত হয়ে। মাহতিমের দৃষ্টি সামনের দিকে, স্বাভাবিক। হয়ত অনুরাগের সম্পর্কে সে জানে না দেখেই তার এত নির্লিপ্ততা। প্রিয়ন্তি অনুরাগকে দেখে। কিন্তু কথা বলে না। নিজের কাছেই আজকাল অনুরাগের সঙ্গে কথা বলতে শঙ্কা হয় প্রিয়ন্তির। নিজের মনে যা চলছে সেসব দামাচাপা দিতে চায় প্রিয়ন্তি। কিন্তু পারে না। অনুরাগকে দেখলেই প্রিয়ন্তির বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে পরে। এলোমেলো হয়ে যায় তার দৃষ্টি। প্রিয়ন্তিকে চুপ থাকতে দেখে অনুরাগ নিজেই কথা তুলে, 'বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছ তুমি। ছাউনির ভেতর চেপে দাড়াও। '
প্রিয়ন্তি নিজের অজান্তেই অনুরাগের কথা শুনে। ছাউনির ভেতরে চেপে দাড়ায়। অনুরাগ এবার আরো ভালো করে প্রিয়ন্তিকে দেখতে পারছে। তার শান্ত চোখের চাওনি যেন প্রিয়ন্তিকে খু'ন করে ফেলছ। প্রিয়ন্তি অস্বাভাবিকতা ভাঙতে জিজ্ঞেস করে, 'গাড়ি থাকতে আপনি বাস স্ট্যান্ডে কি করছেন? '
অনুরাগ মৃদু স্বরে বলে, 'গাড়ির চাকা নষ্ট হয়েছে। তাই কদিন বাসেই যাতায়াত করতে হবে। ব্যাড লাক। '
প্রিয়ন্তি কথা বলার ফাঁকে হাঁচি দিয়ে বসে। পরপর পাঁচটা হাঁচি দিয়ে অস্থির হয়ে পরে। মাহতিম নিজের পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দেয় প্রিয়ন্তির দিকে। অনুরাগও একই সঙ্গে টিস্যু বের করে প্রিয়ন্তিকে দেয়। প্রিয়ন্তি মাহতিমের এগিয়ে দেওয়া টিস্যু দেখার আগেই অনুরাগ টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে, 'সর্দি লাগিয়েই ছাড়লে। বৃষ্টি গায়ে মাখার কি দরকার ছিল?'
প্রিয়ন্তি মুখ ফুলিয়ে চায়। অনুরাগের হাত থেকে টিস্যু নিয়ে মৃদু স্বরে জানায়, ' থ্যাংকস। '
অনুরাগ তার জবাবে মৃদু হাসে। মাহতিম এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে গোপনে টিস্যু ফিরিয়ে নেয়। টিস্যু ধরে রাখা হাত পিঠের পেছনে নিয়ে হাতের দলায় দুমড়ে মুচড়ে করে টিস্যুকে। অতঃপর প্রিয়ন্তির অগোচরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মাটিতে। প্রিয়ন্তির দৃষ্টি অনুরাগের দিকে। অনুরাগের মুগ্ধ চাওনি প্রিয়ন্তির দিকে। এসব কিছুই মাহতিমকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। মাহতিম প্রিয়ন্তিকে ডাকতে চাইল। তবে মাঝপথে অনুরাগের কথা শুরু হয়ে গেছে দেখে সে থেমে গেল। বাস এসে গেছে। প্রিয়ন্তি আর আগেপিছে দেখে না। মাহতিমকে বাসে উঠতে বলে দৌঁড়ে নিজে বাসে উঠে পরে। অনুরাগ প্রিয়ন্তির পিছুপিছু বাসে উঠে। কিন্তু মাহতিম সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। বাসে উঠে না। ওই তো বাসের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রিয়ন্তি জানালার পাশে বসেছে। অনুরাগ তার পাশে। এই দৃশ্য দেখে মাহতিমের বুকের ভেতর দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। চোখের কোণ ঘেঁষে জলের বিন্দু চিকচিক করে। মাহতিম ছাওনি থেকে বেরিয়ে যায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে চলে সড়ক ধরে। হাত কাঁপছে মাহতিমের। মাহতিম বিড়বিড় করে আওড়ায়, 'তুমি আমার হও নি, তাতে আমার কোনো আফসোস নেই প্রিয়ন্তিকা। কিন্তু তুমি অন্য কারো হলে সে যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারব না। আমাকে নিঃস্ব করে দিও না, প্রিয়ন্তিকা। আমি তোমায় খুব বেশিই ভালোবাসি, প্রিয়ন্তিকা। এতটা ভালোবাসা তুমি কখনো কারো কাছে পাবে না।'
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন