উপন্যাস        :         ভিলেন
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
ভিলেন || মনা হোসাইন Bangla Golpo - Kobiyal
ভিলেন || মনা হোসাইন

1111111111111111111111

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ২০)

আকাশ নিচে এসে ভিজা কাপড় বদলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখল মেঘলাও নিচে আসছে।
আকাশ গিয়ে মেঘলার হাত ধরে টেনে মেঘলার ঘরে নিয়ে গেল...
মেঘলাঃ কি হয়েছে...?? এমন করছিস কেন?
আকাশঃ এত রাতে বাইরে গিয়েছিলি কেন? আর কখনো মাঝরাতে রুমের বাইরে দেখলে পা ২ টি ভেংগে দিব বুঝেছিস?
কথাগুলি বলেই আকাশ বাইরে চলে গেল। 
মেঘলা হা করে তাকিয়ে আছে...
কয়েক সেকেন্ড পর আকাশ আবার ফিরে আসল। 
মেঘলাঃ আবার কি হল?

আকাশঃ ২ মিনিটের মধ্যে ভিজা কাপড় বদলে নিবি আমি ২ মিনিট পর আবার আসব।
মেঘলাঃ ভাইয়া কি পাগল হয়ে গিয়েছে নাকি? এই দেখলাম এত শান্ত ছিল এখনি কেমন বাচ্চাদের মত আচারন করছে( মনে মনে)
আকাশঃ বিড়বিড় করা বন্ধ কর ২ মিনিট মানে ২ মিনিটই। তারমধ্যে ৩০ সেকেন্ড অলরেডি চলে গিয়েছে...

বলেই আকাশ বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে চলে গেল...
মেঘলাঃ সবার সামনে এত অপমান আর এখন আসছে দরদ দেখাতে আজব...
এদিকে আকাশ মেঘলার ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে রান্না ঘরে গেল আর সারা রান্নাঘর খোঁজে দেখতে লাগল কিন্তু কোথাও মেঘলার রান্না করা খাবারগুলি না পেয়ে আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল...

আকাশঃ হারামজাদি খাবার কোথায় রেখেছে কে জানে পেটে তো এবার ইদুর দৌড়াচ্ছে। কতটা জার্নি  করে এসেছি তাও সেই কখন এসেছি....
বেশখানিক্ষন খোঁজার পর আকাসগের মনে পরল ফ্রিজের কথা তারপর গিয়ে দেখল খাবারগুলি ফ্রিজে আছে।
আকাশ খাবার বের করে নিয়ে টেবিলে খেতে বসল।  ঠিক তখনী নাবিল পানি নিতে নিচে আসল আকাশকে খেতে দেখেই নাবিল দৌড়ে আকাশের কাছে গেল।
নাবিলঃ আরে দেখি দেখি এখানে কি হচ্ছে,উফ কি দৃশ্য একদম ফ্রেম বন্দী করার মত।তাকা তাকা এদিকে একটু তাকা একটা সেলফি তুলি..
আকাশঃ রাগ তুলবি না সর এখান থেকে...

নাবিলঃ সুন্দরী রমনী গরম গরম খাবার নিজ হাতে খায়িয়ে দিতে চাইল তখন খেলেন না এখন চাইনিজ খাবার ফেলে ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাচ্ছেন কাহিনি কি?
আকাশ চেঁচিয়ে উঠে বলল,তুই আর একটাও কথা বললে তোকে আমি এমন কিক মারব যে নিজের নাম ভুলে যাবি...
নাবিলঃ যাক বাবা আমি কি করলাম..??
আকাশঃ কি করিস নি সেটা বল...
নাবিলঃ কি করেছি বল...
আকাশঃ তোর জন্য তখন এত ভাল ভাল খাবার খেতে পারলাম না...
নাবিলঃ তোর মাথার তার ছিড়ে গিয়েছে শালা কিসব ভুলভাল বকছিস আমি তোকে মানা করেছিলাম নাকি...??

আকাশঃ তা করিস নি কিন্তু তুই থাকতে মেঘলাকে রান্না করা শিখতে হল কেন? কি করছিলি তুই বসে বসে ফিডার খাচ্ছিলি? তোকে বলে গিয়েছিলাম না ওকে দেখে রাখবি....
নাবিলঃ ওরে বাপরে স্যার এই জন্যে ক্ষেপে ছিলেন আমি তো বুঝিনি...
আকাশঃ ওর উপড় আমার রাগ আছে ঠিকি কিন্তু তার মানে তো এই না যে ওর উপড় অন্য কেউ খবরদারি করবে...ওকে শাস্তি দেই যাই করি শুধু আমি দিব অন্য কেউ না বুঝেছিস? 
এই কয়েকদিনে ও  বাড়ির কাজের মেয়ে কি করে হয়ে গেল তুই কি মরে গিয়েছিলি...??
নাবিলঃ আমি কথা দিয়েছিলাম ওকে অন্যকারো হতে দিব না. এটা তো বলি নি যে ওর সব দায়িত্ব নিব।
আকাশঃ তুই কোন দায়িত্বই পালন করিস নি ফাউল।
নাবিলঃ সে যাইহোক মেয়েটা এত কষ্ট করে রান্না করল ওর সামনে খেলেই তো পারতি।
আকাশঃ তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস নাবিল মেঘলাকে আমি কখনো মাটিতে পা রাখতে দেই নি সেই মেঘলা এখন রান্না করবে আর ১৪ গোষ্ঠী মিলে গিলবে তাও আমার সামনে কিভাবে সম্ভব?

কাউকে খেতে দিব না তাই খাই নি আর ভবিষ্যতে যেন মেঘলাকে আর কখনো রান্না ঘরে যেতে না হয় তাই বলেছি ও রান্না করলে আমি খাব না।
নাবিলঃ ঢং...সর দেখি কেমন রান্না করেছে..??
আকাশঃ যা এখান থেকে ও রান্না করেছে আমার জন্য তোদের কেন খাওয়াব এগুলিতে শুধু আমার অধিকার আছে বুঝলি...
নাবিলঃ ওরে কি লায়লি মজনুর প্রেম...ভাইয়ের বউ তো ভাবি হয় তাই না? ভাবির কাছে দেবরের দাবি আছে বুঝলি বলেই পায়েসে বাটি হাতে নিয়ে খেতে খেতে বলল দাঁড়া ওটাকে ডেকে দেখাই কেমন রাক্ষসের মত খাচ্ছিস...
আকাশঃ ডাক মানা করেছে কে...???ওকে তো আমি ঘরে লক করে এসেছি সারাদিন ডাকলেও আসতে পারবে না।
নাবিলঃ তুই যে কি চাস সেটাই বুঝি না।যতসব ফাউল কার্যকলাপ। মনে ভালবাসা রেখে লাভ কি যদি প্রকাশ করতে না পারিস আচ্ছা যা ডাকব না।
কিন্তু এটা বল যাকে এত ভালবাসিস সে কয়েক টা চকলেট নিল তুই তাও খেতে দিলি না কেন...??

আকাশঃ আমাকে আর রাগাস না নাবিল..তুই এই ৪ বছর ওর কি খোঁজ যে রেখেছিলি খোদা জানে...
মেঘলার যে দাঁতে ক্যাভিটি আছে সেটাও জানিস না? চকলেট খেলে দাঁতে ব্যাথা হত তাই দেই নি...
নাবিলঃ তাই বলে এভাবে অপমান?
আকাশঃ হ্যা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবার ওর পালা...
নাবিলঃ কষ্ট মানে..?? আকাশ কি তবে সব জানে?(মনে মনে)নাবিল আর কিছু না বলে চলে গেল
আকাশও খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে যাওয়ার সময় মেঘলাকে দেখে গেল। মেঘলা ঘুমিয়ে গিয়েছে দেখে আকাশ নিজের ঘরে চলে গেল।


রাত প্রায় শেষের দিক অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে... মেঘলা আদো আদো ঘুমে টের পেল কেউ তার গলায় হাত বুলাচ্ছে মেঘলা চমকে উঠে বসল।
আজ আবারো সেই একেই ঘটনা ঘটল মেঘলার সাথে।মেঘলা তার সামনে বসে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে চিৎকার করে উঠল...
তবে চিকিৎকার শুনে পাশে বসে থাকা ছেলেটি একদমেই বিচলিত হল না বরং শান্ত ভাবে সরে গেল। আবছা আলোয় ছেলেটির মুখ দেখা যাচ্ছে না হুডির টুপিতে মাথা পর্যন্ত ঢাকা হাতে গ্লাবস মুখেও মাস্ক পড়া।
মেঘলাঃ আপনি কে..???আমার সাথে এমন কেন করছেন?
সবসময়ের মত এবারেও ছেলেটির মুখে কথা নেই মেঘলা চারদিকে ভাল করে চোখ বুলিয়ে দেখল এটা তার রুম না এমন কি তার বাসাও না।
মেঘলাঃ আমি কোথায়?

ছেলেটি হাতে ইশারা করে মেঘলাকে অন্যরুমে যাওয়ার কথা বলল। 
মেঘলা যাচ্ছে না দেখে ছেলেটি এসে মেঘলাকে কোলে তুলে নিল....
মেঘলাও সাথে সাথে ছেলেটির মুখের মাস্কটি খুলে ফেলার চেষ্টা করল ছেলেটি প্রচন্ড রেগে গিয়ে মেঘলাকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল।
মেঘলা অবাক হয়ে গেল। 
ছেলেটি পকেট থেকে নোট কলম বের করে চিরকুট লিখে মেঘলার হাতে দিল।
-এরপর কখনো আমার সাথে বাড়াবাড়ি করলে এর ফল ভয়ানক হবে.. 
এবার মেঘলার কাছে এগিয়ে এসে জোর করে মেঘলার গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিল
মেঘলাঃ এটা কি?

ছেলেটি আবারো চিরকুট দিল,
-অন্যকারোর গিফট দেখে মন খারাপ করতে লজ্জা করে না..?? তুমি জানো না আমাকে একবার বল্লেই সারা পৃথিবীটাকে তোমার পায়ের কাছে এনে দিব তবুও কেন চোখের জল ফেললে..???
মেঘলা স্বব্ধ হয়ে আছে...
ছেলেটি আবারো চিরকুট দিল তাতে লিখা এই আকাশের ধারে কাছেও যেন তোমাকে আর কখনো না দেখি।
মেঘলা কিছু বলার আগেই ছেলেটি মেঘলার মুখে রুমাল চেপে দিল।


যথারীতি সকাল বেলা মেঘলা নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করল।
তবে চেইনটা তার গলাতেই আছে।
মেঘলা কয়েকবার খোলার চেষ্টা  করে ব্যার্থ হল।কারম চেইন টা পার্মানেন্ট লক করা।
মেঘলা ভাবতে লাগল কে হতে পারে এই ছেলেটা? যেই হোক আমার পরিচিত কেউ আচ্ছা এটা কি নীরব? কিন্তু বাসার ভিতরে কি হচ্ছে নীরব কি করে জানবে...?? আর আকাশ হওয়ার তো কোন সম্ভবনায় নেই কারন ও দেশে আসার আগে থেকেই আমার সাথে এসব হচ্ছে তবে কে...?? 
নাবিল ভাইয়া? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব নাবিল ভাইয়া আমার সাথে এমন কেন করবে ও তো জানে আমি আকাশকে ভালবাসি।
এই ভিলেন কে সেটা আমার জানার দরকার নেই আমি আজকেই আকাশ ভাইয়াকে সব বলে দিব ও নিশ্চুই খুঁজে বের করবে কে আমার সাথে এমন করছে..??
মেঘলার ভাবনায় ছেদ পড়ল
আকাশের মার গলা শুনে। 

আকাশের মা ডাকছে কিন্তু মেঘলার যেতে দেড়ি হওয়ায় আকাশ মেঘলার নাম ধরে ডাকল।
আকাশের গলার আওয়াজ মেঘলার কানে পৌছাতে দেড়ি হল মেঘলার যেতে দেড়ি হল না মেঘলা ছুটতে ছুটতে সেখানে গেল...
মেঘলা গিয়ে দেখল আকাশ সহ সবাই বসে আছে..
আকাশের মাঃ এতক্ষন ধরে ডাকছি কথা কানে যায় নি..?? নবাজাদি সবাই উঠে গেল আর তর ঘুম শেষ হয় না?
শায়রা বেগমঃ আহ ভাবি একটু ঘুমিয়েছে জন্যে এত বকাবকি করতে হয়..??
আকাশঃ ছোট মা লায় দিও না মেঘলার শাশুড়ী তোমার মত না হয়ে আমার মার মতোও তো হতে পারে তাই না? তাই বকা সহ্য করতে দাও... 
নাবিলঃ শ্বাশুড়িও ঠিক হয়ে গিয়ে যাচ্ছে কি অবাক করা কান্ড..
মেঘলাঃ আমাকে ডাকছিলি ভাইয়া...
আকাশঃ ভাইয়া...?? কে কার ভাইয়া?আর তুই আমাকে কোন সাহসে তুই করে বলিস?
নাবিলঃ আকাশ তোর না মাথাটা গেছে তুই কি ভুলে গেছিস এটা কে? মেঘলা সারাজীবন তোকে ভাইয়া আর তুই বলেই ডেকেছে
আকাশঃ মাথা আমার নয় তোর গিয়েছে,ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক কি বল তো?ও আমাদের ফুফির মেয়ে তাই তো? যেখানে ফুফিই নেই তাহলে ওর সাথে কিসের সম্পর্ক?তাই ও এখন আশ্রিতা আর কিছুনা আর বাড়ির আশ্রিতা আমাকে তুই করে বলার সাহস কি করে পায়?
মেঘলাঃ কি বলছিস এসব?

আকাশ মেঘলার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল আবার তুই বলছিস আপনি করে বলবি আমাকে...
মেঘলা চেয়েছিল আকাশকে রাতের ব্যাপারে সবকিছি বলতে কিন্তু আকাশের ব্যাবহারে আর বলতে ইচ্ছা করল না...তাই বলল না।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন