উপন্যাস        :         ভিলেন
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
ভিলেন || মনা হোসাইন Bangla Golpo - Kobiyal
ভিলেন || মনা হোসাইন

1111111111111111111111

২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ২১)

মেঘলা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলল আচ্ছা স্যার বলুন আপনার জন্য আমি ঠিক কি করতে পারি?
আকাশঃ আমি না তোকে মা ডেকেছে...
মেঘলাঃবাড়ির আশ্রিতাকে তুই করে বলাটা যে অভদ্রতা সেটা কি বিলেত ফিরত সম্মানিত আকাশ চৌধুরী জানেন?
আকাশঃ কি বললি...??
মেঘলা আকাশ কে পাত্তা না দিয়ে আকাশের মার কাছে গিয়ে বলল কেন ডেকেছো.?
রুবিনা বেগমঃসকালের চা টা কে দিবে শুনি?
মেঘলাঃ আমিই দিতাম যদি আপনার উদ্ভট ছেলে আমাকে নিষেধ না করত।
আকাশঃ আবার বাজে কথা...??

মেঘলাঃ বড় মা আপনি আপনার ছেলের সাথে বুঝে নিন আমি রান্না করব নাকি না? যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন আমার ক্লাস আছে। 
আকাশঃ চোখের সামনে থেকে বিদায় হ তোর চ্যাটাংচ্যাটাং কথা সহ্য হচ্ছে না আমার।
মেঘলা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল।
ছোট মা সবার জন্য চা এনে দিল।
নাবিল আর আকাশ পাশাপাশি বসেছে,
নাবিলঃ ওটার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করিস কেন?
আকাশঃ কি করলাম?
নাবিলঃ তুই করে বললে কি হয়?
আকাশঃ বাচ্চারা তার মার কাছ থেকে কথা শিখে তুই কি সেটা জানিস?
নাবিলঃ হ্যা জানি তো...

আকাশঃ তো তুই নিশ্চুই চাস না আমার বাচ্চারা আমাকে তুই করে বলুক..
নাবিলঃ মানে কি?
আকাশঃ মাথায় কি গোবর ছাড়া আর কিছু নেই? যাক আর বুঝিয়ে বলতে পারব না। সামনে থেকে সর ঘরে যাব।
নাবিলঃ ওয়েট ওয়েট বাচ্চারা মার কাছ থেকে কথা শিখে,আর তোর বাচ্চা মেঘলার কাছ থেকে কথা শিখে তোকে তুই করে বলবে যার মানে হল মেঘলা তোর বাচ্চার মা হবে?
আকাশঃ যাক এতক্ষন পর মাথায় ঢুকল কিন্তু অবাক হচ্ছিস কেন? তুই কি এটা আজ নতুন জানলি নাকি?ছোট থেকে কম হলেও ১০০০ বার বিয়ে হয়েছে আমাদের এবার শুধু বাচ্চা আসার অপেক্ষা কথা গুলি বলতে বলতে আকাশ চলে গেল।
নাবিলঃ কি যে চায় এই ছেলে কে জানে।
মেঘলা রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বের হতেই আকাশের গলা শুনতে পেল...

মেঘলা গিয়ে বলল,
মেঘলাঃ আবার কি হল?
আকাশঃ তোকে আমি নিয়ে যাব 
মেঘলাঃ আমি একাই যেতে পারি
আকাশঃ থাপ্পড় কি আরও একটা লাগবে নাকি?
মেঘলা আর কোন কথা বলল না।
আকাশ আর মেঘলা একসাথেই বাইরে গেল। 
আজ অনেকদিন পর আকাশ আবার বাইক নিয়ে বের হল।
আকাশঃ উঠ...
মেঘলা বাইক কেন গাড়িতে যাই?
আকাশ চোখ গরম করে মেঘলার দিকে তাকাতেই মেঘলা উঠে বসল...
আকাশঃ ধরে বস...
মেঘলা দূরেই বসে আছে.
আকাশঃ হাত ভাংগার কথা মনে হয় ভুলে গিয়েছিস আচ্ছা আমার কোন সমস্যা নেই যেভাবে ইচ্ছা বসে থাক পরে কিছু বলতে আসিস না
মেঘলাঃ নিজেকে কি ভাবে কে জানে সবকিছুই জোর করে করিয়ে নিবে ভিলেনি আচারন যতসব...

মেঘলা বাধ্য হয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরল।
আকাশ ড্রাইভ করতে করতে বলল লজ্জা করে না?
মেঘলা অবাক হয়ে বলল তুই তো না সরি আপনি ত বললেন ধরে বসতে।
আকাশঃ এসবের কথা বলি নি এতবড় ধিংগি মেয়ে এখনো স্কুলের গন্ডি পার হতে পারিস নি সেটার কথা বল্লাম।
মেঘলাঃ ভাইয়া কি তবে সব জানে?মনে মনে
আকাশঃ চুপ করে আছিস কেন? 
তুই ই বল উল্টা পাল্টা কাজ না করলে এখন তুই কলেজে পড়তি না?
মেঘলাঃ স্কুলে চলে এসেছি থামা..সরি থামান
আকাশ বাইক থামিয়ে মেঘলাকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দিল।মেঘলাও চলে যাচ্ছিল।

আকাশঃ ওই...
মেঘলাঃ বলুন...
আকাশঃ এদিকে আয়..
মেঘলাঃউফফ ভাল লাগে না কাছে এসে বলল কি হয়েছে বলুন...
আকাশ মেঘলার হাত টা টেনে কাটা দাগটায় একবার হাত বুলিয়ে দাগটার দিকে তাকিয়েই বলল,
আকাশঃ জানিস কিছুদিনের মধ্যেই নীলিমারর সাথে আমার বিয়ে...
মেঘলাঃআমার হাত কাটা তুই এটাও জানিস আবার নীলিমার জন্য যে এসব করে ছিলাম সেটাও জানিস তবুও আমার সাথে এমন ভিলেনের মত আচারন করছিস?তারমানে কি তুই সত্যি বদলে গেছিস?(মনে মনে) 

মেঘলাঃ তো আমার কি? ভালই তো কবে বিয়ে?
আকাশঃ যা ক্লাসে যা...
মেঘলা রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেল।
আকাশ এবার স্কুলের সামনের দোকান টায় গেল।
আকাশঃ মামা কেমন আছো?
দোকানদারঃ আরে আকাশ যে কতদিন পর আসলে এসো এসো বসো।
আকাশঃ না বসবো না এটা নাও
দোকানদারঃ কি এটা
আকাশঃ একটা চেক এগিয়ে দিয়ে বলল এতদিন বিদেশে ছিলাম আর আমার কোন ইনকামও ছিল না তাই দিতে পারি নি। তাই এখন দিচ্ছি ৪ বছরের বিল একসাথে।
দোকানদারঃ কিন্তু কিসের বিল...
আকাশঃ ওই যে বলেছিলাম মেঘলাকে প্রতিদিন আইস্ক্রিম দিবে..
দোকানদারঃ কিন্তু মেঘলা তো আইস্ক্রিম..

আকাশঃ হুম জানি মেঘলা আইস্ক্রিম নেয় নি ইনফেক্ট ও তো স্কুলেই আসে নি
কিন্তু কেউ যদি তার কথা না রাখে তার দায় তো আমার না তাই না? আমি কথা দিয়েছিলাম ওকে আমি আমার কথা রাখব।তবে এ ব্যাপারে মেঘলাকে কিছু বলো না প্লিজ কথাগুলি বলে চেক টা রেখে আকাশ চলে গেল।
দোকানদার খুব অবাক হল।



দুপুরে স্কুল ছুটি হওয়ার পর মেঘলা যখন বাসায় যাচ্ছিল দোকানদার মেঘলাকে ডাকল..
মেঘলাঃ বলো মামা
দোকানদারঃ আইস্ক্রিম খাবে..???
আইস্ক্রিমের কথা বলতেই মেঘলার মুখটা মলিন হয়ে গেল।
মুখে হতাশার হাসি টেনে বলল আমি আইস্ক্রিম খাই না মামা 
দোকানদারঃ সে কি তোমার তো আইস্ক্রিম খুব পছন্দের ছিল।
মেঘলাঃ সময়ের সাথে যদি মানুষ বদলে যেতে পারে তাহলে পছন্দ অপছন্দের আর কি দোষ বলো সেটাও বদলাতে পারে বলেই মেঘলা চলে গেল।
মেঘলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছিল তখনী  তার সামনে এসে একটা গাড়ি থামল। 
মেঘলাঃ আরে নীরব কেমন আছো।
নীরবঃ হুম ভাল আছি এসো তোমাকে বাসায় ড্রপ করে দেই... 
মেঘলাও উঠে গেল।
মেঘলাঃ তুমি হঠাৎ এখানে...???
নীরবঃ আমি এখানেই চলে এসেছি বাবা এখান্ব নতুন ফ্যাক্টরি ওপেন করেছেন তো তাই।
মেঘলাঃ বাহ খুব ভাল হয়েছে।
নীরবঃ তোমার কি খবর শুনলাম আকাশ নাকি দেশে ফিরেছে বিয়েটা কবে করছো?
মেঘলা কোন উত্তর দিল না...

দেখতে দেখতে বাসার সামনে চলে আসল নীরব মেঘলাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
মেঘলা বাসায় ঢুকতেই দেখল বাগানে কিসব যেনো রান্না হচ্ছে আকাশ নাবিল সবাই মিলে মজা করতে করতে মিলে রান্না করছে।
মেঘলা ঘরে না গিয়ে সেখানে গেল।
মেঘলাঃ তোরা কি করছিস এখানে...???
ঈষানঃ আমরা তো পিকনিক খেলছি এসো না তুমি আমাদের সাথে এড হয়ে যাও।
মেঘলা হা করে তাকিয়ে আছে...
ঈষান হাত বাড়িয়ে বলল আমি ঈষান আকাশের কাজিন।
মেঘলাও হাত মিলিয়ে বলল আমি মেঘলা...
আকাশ আর নাবিল ২ জনেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা স্কুল ব্যাগ টা রেখে এগিয়ে গিয়ে বলল আমি হেল্প করে দেই..??
আকাশঃ না.. তোকে তো আমি খেলায় নিব না তুই হেল্প করবি কেন?
মেঘলাঃ মানে..??
আকাশঃ আমরা ভাইবোনরা মিলে পিকনিক খেলছি তোকে কেন নিব? তুই আমাদের কেউ না বুঝেছিস চুপচাপ ঘরে যা...
মেঘলাঃ এমন করিস কেন..?? আমি কি সব খাবার খেয়ে ফেলব নাকি আমাকে খেলায় নিলে কি হয়?

আকাশ আবারো সেই বিখ্যাত থাপ্পড় টা মেঘলার গালে বসিয়ে দিয়ে বলল আবারো তুই করে বলছিস? তোকে নিব না মানে নিব না যা এখান থেকে।
মেঘলা আর কিছু না বলে ঘরে চলে গেল।
ঈষানঃ দেখেই বুঝা যায় এই বাসায় সবার ছোট মেঘলা, আমরা বড় রা সবাই খেলছি ওকে নিলে কি হত ?
আকাশঃ হাত মিলিয়ে মজা পেয়েছিস মনে হচ্ছে তাই আরো একটু কাছে চাইছিস তাই না..?
ঈষান; ছি আকাশ কিসব বলছিস।



মেঘলা ঘরের ভিতর থেকে সব দেখছে আকাশ নিলিমার নেহা মিলি সবার সাথে মজা করছে।
মেঘলাঃ সবকিছু কত বদলে গেছে তুই কত বদলে গেছিস যেই আমাকে তুই নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতি আজ তুই সেই আমাকে কারন ছাড়াই সবার সামনে থাপ্পড় মারিস অপমান করিস...
যে তুই আমি ছাড়া কোন মেয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলতি না আজ সেই তুই সবার সাথেই মজা করিস শুধু আমাকেই সহ্য করতে পারিস না কথাগুলি ভাবতে ভাবতে চোখের জল ফেলছিল মেঘলা...
তখনী ছোট মা মেঘলাকে ডাকল।
ছোট মাঃ কিরে মেঘলা নিচে আয় স্কুল থেকে এসে তো খেলি না খাবি আয়।
মেঘলা চোখ মুছে নিচে গেল।



এদিকে,
পিকনিকের রান্না প্রায় শেষের দিক।
আকাশঃ সবাই চল ফ্রেশ হয়ে আসি এসে খাব...
সবাই যে যার রুমে গেল মেঘলা ততক্ষনে খেয়ে নিয়ে ছোট মাকে কাজে হেল্প করছে...
বেশকিছুক্ষন পর সবাই মিলে বাগানে গেল।
কিন্তু সেখানে গিয়ে সবাই অবাক হয়ে গেল।
কারন তাদের রান্না করা খাবার গুলি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কেউ ইচ্ছে করে সব খাবারগুলি ফেলে দিয়েছে...
সবাই রেগে গেল...
নেহাঃ এটা মেঘলা ছাড়া অন্য কারো কাজ হতেই পারে না।
নিলিমাঃ মেয়েটা এত ফাযিল কেন? ওকে নেয় নি বলে পিকনিকটাই নষ্ট করে দিল?
নাবিলঃ আজ তো ওর একদিন কি আমার একদিন...
সবাই মিলে মেঘলাকে বকা দিতে দিতে ঘরে ঢুকল। 
ঘরে এসে,
 নাবিলঃ মেঘলার বাচ্চা কোথায় তুই? আজ একবার শুধু তোকে হাতের কাছে পাই তারপর বুঝাব।
নেহা মিলি নিলিমা সারা বাড়ি খুঁজে দেখল কিন্তু মেঘলা কোথাও নেই। 
নাবিল প্রচন্ড রেগে আছে কিন্তু আকাশ এখনো মেঘলাকে কোন বকা দেয় নি বা রাগ ও করেনি।

কিছুক্ষন পর বলল ওকে তোরা খুঁজে পাবি না। 
নাবিলঃ কেন পাব না..
আকাশঃ লুকিয়ে পড়েছে তাই।
বলে আকাশ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লক করে দিল।
তারপর বলতে শুরু করল
বের হ...এত ভয় পেলে হয় নাকি..??
মেঘলা আকাশের আলমারির ভিতর থেকেই ভাবছে ভাইয়া কি আমাকে বলছে? কিন্তু আমি যে এখানে লুকিয়েছি সেটা ও কি করে জানবে...???
আকাশঃ বিড়বিড় করা বাদ দিয়ে বের হ আমি জানি তুই আলমারির ভিতরে আছিস।
সারাজীবন এক জায়গায় লুকালে যেকোন বোকাও বুঝবে কোথায় লুকিয়েছিস বলেই আকাশ আলমারির খুলে দিল...
মেঘলা বের হয়ে ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বলল 
আমি কিছু করি নি...

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন