উপন্যাস : প্রিয়োশীর ভালোবাসা
লেখিকা : নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ৩০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘প্রিয়োশীর ভালোবাসা’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর |
1111111111111111111111
০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০৭)
সমুদ্র রওনাক কে নিয়ে নদীর পারে ঘুরতে যায়৷ সুরেশ্বর নদীর পার টা আসলেই খুব সুন্দর৷ একটা নতুন ক্যাফের কাজ চলছে পাশেই। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে টিন আর কাঠ দিয়ে বানানো হচ্ছে ক্যাফে হাউজ টি।
- যায়গা টা খুব সুন্দর সমুদ্র ভাইয়া। আমাকে কি আপনি এই ক্যাফে যখন পুরো তৈরি হয়ে যাবে তখন আবার নিয়ে আসবেন?
- যায়গাটা কি তোর খুব বেশি পছন্দ হয়েছে প্রিয়ো?
- হ্যাঁ দেখেন কি বাতাস, সামনে নদী কি শান্ত। আচ্ছা আমি ওখানে গিয়ে নিচে নেমে পানিতে পা ডুবাই?
- না দরকার নাই পরে যাবি তুই।
- না দেখেন ওই যে কত মানুষ নিচে নেমে কাজ করছে তাদের তো কিছু হচ্ছে না।
- আমার সাথে বেশি তর্কের দরকার নাই। চল তুই না ফুচকা খাবি?
- হ্য খাওয়াবেন? আমার কাছে তো কোনো টাকা নাই আমি দিতে পারবো না।
- দেওয়া লাগবে না চল বাহিরে দেখি কোথায় ফুচকা পাওয়া যায় নাকি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো প্রিয়োশী আর সমুদ্র বাড়ি ফিরলো। বাড়িতে সমুদ্রের সাথে প্রিয়োশীকে ঢুকতে দেখে আয়াত রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। দ্রুত সে ওখান থেকে সরে যায় যা তে সমুদ্র আর প্রিয়োশী ও কে না দেখতে পায়। সমুদ্র চলে গেলো নিজের রুমে। প্রিয়োশী কে তার রুমে যেতে হলে আয়ানের রুম পাস করে যাওয়া লাগে। আয়ানের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়োশী কে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রাখে। থতমত খেয়ে যায় প্রিয়োশী। আয়ানের এসব কাজে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
- আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসার মানে কি?
- বাহ রওনাক তোর এই রাগি রাগি আওয়াজ তো আমার সেই লাগে।
- মজা করছেন আমার সাথে আয়ান ভাইয়া? আমার হাত ছাড়ুন।
- আমার প্রতি ভালোবাসা দুইদিনের মধ্যে শেষ? বাহ আজ আবার আমার বড় ভাইয়ের সাথে।
- ভালোবাসা শব্দ টা অন্তত আপনার সাথে যায় না। আপনার স্ত্রী ঘরে আছে আপনার এইরকম কাজ শোভা পায় না। আর এসব নোংরা কথা আমাকে বললে ভালো হবে না।
প্রিয়োশী আয়ান কে এক প্রকার ধাক্কা মেরে সরিয়ে রাগে হনহন করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো। কেমন সারা শরীর রিতীমত ঘিনঘিন করছে তার। ওয়াসরুমে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেলো। আয়ান নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখে লিয়া দাঁড়িয়ে আছে। লিয়া আয়ান কে তাকাতে দেখে আবার নিজের রুমে চলে গেলো।
- শুনো যা জানো চুপচাপ থাকো রাফিন কে দেখে কি তার প্রতি পিরিত তোমার উতলে পড়ছে?
- আমাকে নিজের মতো চরিত্রহীন ভাবছেন মিস্টার সিকদার?
- মুখ সামলিয়ে কথা বলো লিয়া।
- ওহ প্লিজ সাট আপ। আপনার মুখে এসব কথা মানায় না। আপনি নিজের ক্যারেক্টর সামলান। আর কিছুদিন পর সন্তানের বাবা হবেন ভেবে দেখছেন এমন চেহারা নিয়ে সন্তানের সামনে কিভাবে দারাবেন?
- তুমি তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো লিয়া। আমাকে রাগিয়ো না ফল ভালো হবে না।
- যা খারাপ করার আমার সাথে তো আপনি করেই ফেলছেন আর কি করবেন? আর কিছু বাকি নাই। কিন্ত এমন দিন আসবে আপনি পস্তাবেন খুব করে পস্তাবেন।
আয়ান সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পরলো। এখন নিজের রাগ কান্ট্রোল করা লাগবে। লিয়ার সাথে তর্ক জরিয়ে তাকে উত্তেজিত করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে। লিয়া সোফায় বসে কান্না করতে লাগলো। এভাবে কারো জিবন চলতে পারেনা।
প্রিয়োশী গোসল সেরে এসে কম্বোল জরিয়ে বসলো। শীত লাগছে তার।
এই বাড়ি থেকে যেতে পারলে বাঁচে সে। কিন্তু বড় আব্বু তো যাওয়ার পারমিশন দিলো না। কিছু একটা করতে হবে এভাবে চলতে পারেনা সব কিছু। এক বাসায় এই জঘন্য লোকের সাথে থাকা যায় না।
লিয়া উঠে ধীরে ধীরে সমুদ্রের রুমে গেলো। লিয়া কে এই সময় নিজের রুমে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো সমুদ্র।
- কি ব্যাপার লিয়া কিছু কি হয়েছে?
- না ভাইয়া কিছু হয় নাই।
- তাহলে এই সময় তুমি আমার রুমে?
- আমি কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে ভাইয়া!
- আচ্ছা বলো।
- ভাইয়া আমি আয়ান কে ডিভোর্স দিতে চাই। আমি ওর সাথে আর থাকতে পারছি না। আর আমি আয়ান কে এসব বলার সাহস ও পাচ্ছি না। আয়ান আমার মা আর ভাই কে নিজের কাছে আটকিয়ে রেখেছে।
- দেখো লিয়া ডিভোর্স সব কিছুর সমাধান না। ভেবে দেখো এখন তুমি একা না। বাবুরে তো আয়ান তোমাকে দিবে না। সেও এই বাচ্চার বাবা সে তো তার অধিকার ছাড়বে না।
- আমি কিছু জানিনা ভাইয়া আপনি কিছু একটা করুন। আপনার মা আর ভাইয়ের আমাদের নিয়ে যেই খেলা শুরু করেছে তা অনেক ভয়ংকর। উনি আয়ানের সাথে আবারো প্রিয়োশীর বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আর আয়ান ও রাজি। আমার জিবন যেভাবে নষ্ট হলো আমি চাইনা আমার বেষ্টফ্রেন্ড এর জিবন টা ও এইভাবে নষ্ট হোক। আয়ান অনেক ভয়ংকর ভাইয়া নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে কাউক মেরে ফেলতেও দুবার ভাববে না।
সমুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লিয়ার দিকে। মেয়েটা নিশ্চুপ কান্না করে যাচ্ছে। হেচকি উঠে গেছে তার। সমুদ্র বেশি অবাক হলো তার মায়ের কথা শুনে। সে কি ঠিক শুনেছে তার মা এমন জঘন্য কোনো কাজ করতে পারে?
- শান্ত হও লিয়া তোমার এই অবস্থায় এমন অস্থীর মানায় না। এক কাজ করো গিয়ে রেষ্ট নেও আমি দেখছি কি করা যায়।
লিয়া সমুদ্রের কথায় ভরসা পেলো। সমুদ্রের মাথা কাজ করছেনা কি করবে। উঠে সে তার বাবার মায়ের কাছে গেলো।
- আম্মু আসবো?
- হ্যাঁ বাবা আয় তুই,তোর কি পারমিশন নেওয়া লাগে।
- আমি কিছু কথা বলতে চাচ্ছি বাবা তোমাদের।
- হ্যাঁ বল।
- শুনো আয়ানের বিয়ে হয়েছে কয়েকদিন পর এই বাড়িতে নতুন একজন আসবে তাই না? আমি চাচ্ছিলাম ব্যাবসার সব ভার তুমি আয়ানের উপর ছেড়ে দিয়ে রেষ্ট করো।
- কি বলতে চাচ্ছিস তুই বাবা,আর এই সম্পত্তির অর্ধেক মালিক তুই। আমার নামের সব সম্পত্তি আমি আগেই তোকে দিয়ে দিয়েছি।
- এইটাই তো অন্যায় করছো তুমি বাবা। আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না বাবা। আমি যেমন তোমার সন্তান আয়ান ও ঠিক তেমন। তাহলে আমাদের দুজন কে তোমার সমান চোখে দেখা উচিত? তুমি কিভাবে তোমার নামের সব আমাকে দিয়ে দিলে। আয়ান কি পেয়েছে বাবা ওর ও অধিকার আছে।
- সিকদার বাড়ির একমাত্র বংশধর তুই সমুদ্র, আর এসব সব এই সিকদার বাড়ির রক্ত হিসেবে তোর পাওয়ার কথা।
- তাহলে বাবা আজ আমার ও বলার কথা আয়ান যেমন তোমার ছেলে না তেমন আমিও তো আম্মুর ছেলে না? সেই হিসেবে আম্মুর ও আমাকে লালন - পালন করা উচিত হয় নাই। আমাকে সে আয়ানের থেকে বেশি ভালোবাসা দিয়েছে এটাও তার উচিত হয় নাই। তোমার ভাবনা আর কাজের জন্য আয়ানের এই অবস্থা।
- সমুদ্র তুই তোর বাবার সাথে এভাবে কথা বলবি না। উনার যা ভালো মনে হয়েছে তিনি তাই করেছে।এইসব বলার কোনো মানে নাই।
- কিভাবে বাদ দিব আম্মু? তুমি আমাকে কোনো সার্থ ছাড়াই ভালোবেসে গেলে। আর আব্বু কেনো পারলো না আয়ান কে আমার মতো করে দেখতে। ছোট থেকে সব আমি পেয়েছি আয়ান কিছু পায় নাই। বাবা তার খোঁজ ও রাখে নাই।
আফিয়া সিকদার কান্না করছে, সে যেমন হোক সমুদ্র কে সে অনেক ভালোবাসে। সমুদ্রের জন্য তার ভালোবাসা আদর স্নেহ কম ছিলো না। কিন্তু তার বাবা আয়ানের প্রতি সেই সমান দায়িত্ব পালন করতে পারে নাই।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন