উপন্যাস : প্রিয়োশীর ভালোবাসা
লেখিকা : নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ৩০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘প্রিয়োশীর ভালোবাসা’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর |
1111111111111111111111
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০৬)
প্রিয়োশী রাগি চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,না পারে সে সমুদ্র কে তার রাগের আগুনে পুঁড়িয়ে ছাই করে দিবে। সমুদ্র তো মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছে।
- কি বললেন আমি ডায়েট করি এটা শুন লাগলো মানে? আমি যে ডায়েট করি তা অবিশ্বাস করছেন।
- ইশ না কে বললো আমি অবিশ্বাস করছি। আমি তো তোকে বিশ্বাস করলাম যে তুই ডায়েট করোস। তা কত কেজি ওজন কমিয়েছিস?
- একমাসে আমি ১ কেজি ওজন কমিয়েছি জানেন।
প্রিয়োশী অনেক ভাব নিয়ে কথাটি বললো। প্রিয়োশীর কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো সমুদ্র। প্রিয়োশী অবাক হয়ে সমুদ্রের হাসি দেখে যাচ্ছে। লোকটার হাসি এতো সুন্দর কেনো? ইশ আমি এভাবে তাকালাম কি ভাববে।
- আপনি হাসছেন কেনো এভাবে?
- হাসবো না তো কি করবো আমি? লাস্টে শুনা লাগলো প্রিয়োশী সিকদার এক কেজি ওজন কমিয়ে এতো ভাব নিচ্ছে।
- আমি জানি আপনার জ্বলে। আমি গুলুমুলু দেখে আপনার হয়তো জেলাস ফিল হয় আমি বুঝি।
সমুদ্র হেসে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে দিলো। প্রিয়োশী নিজের মতো চিপ্স খাচ্ছে আর ফোন বের করে স্ক্রোল করা শুরু করে দিলো। দুইজনের মধ্যে আর কোনো কথা হচ্ছে না। প্রিয়োশী খুব মনযোগ দিয়ে ফোনে কিছু করছে।
- প্রিয়ো লাঞ্চে কোথায় যাবি?
- আপনার যেই যায়গা ভালো লাগে সেখানে চলুন।
- মোবাইলে এতো মনযোগ দিয়ে করছিস?
- ভার্সিটি থেকে আমাদের এসাইনমেন্ট দিয়েছে তা আমার ফ্রেন্ড ইনবক্সে সেয়ার করলো আমার সাথে।
- পড়াশোনা তো ছেড়েই দিয়েছিস। ভাবছি এবার তোকে বিয়ে দেওয়া যাক।
- আমি বিয়ে করছি না এখন তুমি করো।
- সময় হলেই দেখা যাবে।
রেষ্টুরেন্টের সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে প্রিয়োশী কে বললো ভিতরে যেতে। সমুদ্র গাড়ি পার্ক করে আসবে। সমুদ্রের কথা মতো প্রিয়োশীও রেষ্টুরেন্টের মধ্যে ঢুকে সমুদ্রের অপেক্ষা করতো লাগলো। প্রিয়োশী বসে বসে মেন্যু কার্ড দেখছিলো। তখন ওয়েটার এসে জানতে চাইলো প্রিয়োশী কি নিবে.
- ম্যাম কি কি অর্ডার করবেন?
- একটা চিজ পাস্তা,মাসরুম স্যুপ,পিজ্জা,বার্গার,চকলেট শেক, আইস্ক্রিম,বোরহানি। ওহ হ্যাঁ ফ্রাইড রাইস,চিকেন ফ্রাই,বিফ আর লাস্টে কোকাকোলা।
- আর কিছু ম্যাম?
- দাঁড়ান আমার সাথে যে আছে উনিও তো অর্ডার দিবেন, আমি তো শুধু আমার অর্ডার দিলাম আপনাকে।
ওয়েটার আর সমুদ্র হা করে তাকিয়ে আছে প্রিয়োশীর দিকে৷ সমুদ্র বসতে বসতে বললো।
- মাত্র এই কয়টা খাবার কি অরডার দিলি তুই প্রিয়ো। আর কিছু নিবি না?
- দেখছেন আমিও ভাবছি কম হয়ে গেছে কিন্তু কি করবো বলুন? আমি তো বেশি খাবার খেতে পারবো না ডায়েট করছি তো তাই। থাক ১ ঘন্টা পরে আমাকে পানিপুরি আর ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাইয়েন।
প্রিয়োশীর কথায় ওয়টারের কাশি শুরু হয়ে গেলো আর সমুদ্র অবিশ্বাস্য চোখে দেখে যাচ্ছে । মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সমুদ্র।
- স্যার আপনি কিছু অর্ডার করবেন?
- হ্যাঁ আমার জন্য কফি আর একটা চিকেন স্যুপ দিয়েন।
ওয়েটার চলে যাওয়ার পর সমুদ্র প্রিয়োশীকে বলে।
- প্রিয়ো তুই ঠিক আছিস?
- হ্যাঁ আমার আবার কি হবে? ভাইয়া জানেন আমার খুদা কম লাগছে যদি বেশি খুদা লাগতো না তাহলে আমি কতগুলা খাবার যে অর্ডার দিতাম আজ।
- এতো এতো খাবার অর্ডার দেওয়ার পরেও বলছিস তোর কম খুদা লাগছে? এর থেকেও আরো বেশি খাইতে পারিস,এতো খাবার কোথায় যায় প্রিয়ো?
- এই আপনি আমার খাবাররের দিকে একদম নজর দিবেন না ভাইয়া। আশ্চর্য খাবার আবার কোথায় যাবে আমার পেটুতে যায়।
- তুই কোন ডায়েটচার্ট ফলো করিস আমাকেও দিস।
- বাসায় আমার রুমে দেওয়ালে টানানো আছে বাসায় গিয়ে দেখে নিয়েন। চুপচাপ থাকেন খাবার দিতে এতো লেট করছে কেন।
সমুদ্র মনেমনে ভাবছে এই কোম খাদকের পাল্লায় সে পরেছে। আল্লাহ রে এই মেয়ে এতো খাওয়ার পরেও নাকি খুদা বেশি লাগেনা। আমাকে দুইদিনে ফকির বানাবে এ। ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পর এক এক করে সব খাবার খেয়ে যাচ্ছে প্রিয়ো। সব গুলা আইটেম থেকে একটু একটু করে খাচ্ছে। সমুদ্র কফি খাওয়া শেষ করার ১০ মিনিটের মাথায় তার চিকেন স্যুপ দিয়ে গেলো। সমুদ্র নিজের খাবার রেখে প্রিয়োর খাওয়া দেখে যাচ্ছে। কিভাবে খাচ্ছে প্রিয়ো দেখে মনে হচ্ছে কতকাল না খেয়ে আছে সে। সমুদ্র একটু খাওয়ার পর আর খেতে পারছেনা। প্রিয়োশীর খাওয়া শেষ সে কোকাকোলায় এক চুমুক দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো।
- সমুদ্র ভাইয়া আপনি যদি আপনার খাবার খেতে না পারেন তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
- কিভাবে?
- আমাকে দিন আপনি তো খেতে পারছেন না? আপনার উপর আমার খুব মায়া লাগছে ভাইয়া তাই আপনার হয়ে স্যুপ টা আমি খেয়ে নিবো। নাহলে এই কিউট চিকেন স্যুপ আপনাকে অভিশাপ দিবে।
- তুই খেতে পারবি আই মিন তোর পেটুতে যায়গা আছে?
- না তো কিন্তু আমি এখন স্যুপ না খেলে স্যুপটা কান্না করবে।
- আচ্ছে নে খা।
সমুদ্র বোকার মতো দেখেই যাচ্ছে প্রিয়ো কে। স্যুপ না কি অভিশাপ দিবে কান্না করবে। আবার স্যুপ কিউট ও হয় আর কতো কি শুনা লাগবে। সমুদ্র নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে এই মেয়ের সাথে আর কিছুক্ষন থাকলে। প্রিয়োশী খাবার শেষ করে ঢেকুর তুললো।
- ইয়াক এসব কোন ধরনের কাজ প্রিয়ো?
- দূর ভাইয়া চিল করো তো।
,,সিকদার বাড়িতে...
- সুমাইয়া এই সুমাইয়া কোথায় তুই?, ( সামায়রার নাম চেঞ্জ করে সুমাইয়া রাখা হলো)
- এইযে খালা আমি এখানে৷
- তোকে কি এই বাসায় এনেছি ঢেং ঢেং করে ঘুরতে? আর সারাদিন বাড়ির বাহিরে থাকতে।
- আমি কি করবো বলো তোমার বড় ছেলে আমাকে পাত্তাই দেয় না। এতো চেষ্টা করি।
- লজ্জা লাগেমা এসব বলতে মেয়ে মানুষ কেনো হয়েছিস একটা ছেলেকে নিজের দিকে টানতে পারিস না?
- আমার দিকে তাকায় না তোমার ছেলে। যাইহোক আয়ান ভাইয়ের প্ল্যান কি খালা কিছু জানো?
- আমার প্ল্যান জানার মতো যোগ্যতা আর বয়স এখোনো হয় নাই তোর। নিজের চর্কায় তেল দে।
সুমাইয়া আর মিসেস আফিয়া সিকদারের কথার মধ্যে আয়ান রুমে ঢুকে এই কথার জবাব দিলো।
- তুমি চুপ থাকো আয়ান বড় বড় লেকচার দিয়ো না। বিয়ে অই ফকিন্নির বাচ্চাকে করেছো লজ্জা লাগেনা? রওনাক কে বিয়ে করলেও তো এই বাড়ির বাকি অর্ধেক সম্পত্তি তুমি পেতে।
- মা লিয়াকে নিতে একদম বাজে কথা বলবে না। আর অপমান তো দূরে থাক।
- মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার, কি আছে কি অই লিয়ার মাঝে?
- লিয়াকে আমি ভালোবাসি এই নিয়ে আর কোনো কথা হবে না। আর বাকি রইলো রওনাক? রওনাক কেও আমি বিয়ে করবো। ওরা দুই বান্ধবি দুই সতিন হয়ে থাকবে। অই সম্পত্তি কেবল আর কেবল আমার হবে।
- তুমি বলবে আর রওনাক তোমাকে নাচতে নাচতে বিয়ে করে নিবে তাই না?
- কেনো নিবেনা ও আমার ভালোবাসায় অন্ধ মা। দেখলে না আমার পাশে লিয়া কে দেখে সু,,,,ই,,,,সা,,,,ই,,,,ডের চেষ্টা করেছিলো?
- হ্যাঁ আমার সব মনে আছে শুরু থেকে একটা কথা বলে যাচ্ছি আমি তোমাকে সমুদ্র বড় ভাই হয় তোমার ও কে হিংসা করো না। অর্ধেক সম্পত্তি ও কে দিয়েছে তো কি হয়েছে রওনাক কে বিয়ে করে বাকি অর্ধেক তুমি নিজের নামে করে নেও।
- সমুদ্র সমুদ্র আর সমুদ্র কে ও সব আদর সম্মান ভালোবাসা ও কেনো পাবে মা? বাবার আদরের বাড়ির সবার চোখের মনি একা সমুদ্র কেনো হবে? তুমি ও মা সমুদ্র কে ভালোবাসো কেনো ও তো।
- চুপ আয়ান এই কথা আমি তোমার মুখে শুনবো না। সমুদ্র আমার ছেলে আমার আর ও তোমার বড় ভাই মাথায় রাখবে৷
আয়ান রাগে দরজায় লাথি মেরব রুম থেকে বের হয়ে যায়। সুমাইয়া ওর খালাকে বলে৷
- খালা লিয়া তোমার ছেলেকে দেখো তাবিজ করেছে তুমি কিভাবে মেনে নিচ্ছো?
- না মেনে উপায় নাই আয়ান য্ব বড্ড যেদি সুমু ও কে সামলানো দায়। লিয়ার বাচ্চা একমাত্র ভরশা এখন আমাদের৷ তুই যেভাবেই হোক যা করতে হয় কর সমুদ্র কে প্রেমের জালে ফেল৷
প্রিয়োশী এতো এতো খাবার খেয়ে আর উঠে দাড়াতে পারছে না। সমুদ্র এবার প্রিয়োশীকে ভয় দেখানোর বুদ্ধি বের করলো।
- এতো এতো খাবার যে খেলি তোর কাছে টাকা আছে প্রিয়ো বিল কিভাবে দিবি?
প্রিয়োশী ও ভাবনায় পরে গেলো সে তো টাকা আনে নাই। এখন সে সমুদ্রের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।
- আমার দিকে তাকাবি না আমি এতো টাকা দিতে পারবো না।
- এতো কিপ্টামি কেনো করেন দিয়ে দেন না বাসায় গিয়ে আম্মুর থেকে নিয়ে আপনাকে দিয়ে দিবো।
- দিতে পারি আমার এক শর্ত আছে।
- আচ্ছা আমি আপনার সব শর্ত মানতে রাজি ভাইয়া।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন