উপন্যাস       :        প্রিয়োশীর ভালোবাসা
লেখিকা        :         নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৩০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘প্রিয়োশীর ভালোবাসা’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর Bangla Love Story - Kobiyal
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর

1111111111111111111111

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০৮)

আজ এতো সব কিছুর জন্য দায়ী একমাত্র সমুদ্রের বাবা। সে যদি আয়ান কে সমুদ্রের মতো ভালোবাসা দিতো তাহলে আয়ানের মনে সমুদ্রের প্রতি এতো তিক্ততা এসে জমা হতো না। সব কিছুর লিমিট থাকে।  ছোট বেলা থেকে আয়ানের প্রতি এমন ব্যাবহার করায় তার মন বিষিয়ে গেছে তাই তো সমুদ্র কে ঘৃনা করে। 

- আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিও কিন্তু এটাই ।
- তোর কথা ভুল নয় সমুদ্র আমি অন্যায় করেছি তাই আয়ান এমন হয়েছে। তুই যা ভালো মনে করিস তাই কর।
-দরকার নাই সমুদ্র তোমার নামে যা আছে তোমার থাকুক। আয়ান কে দিতে হবে না।  আমি তোমাকে আয়ানের এর থেকেও বেশি ভালোবাসি।
- আমি জানি আম্মু তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই সম্মত্তির জন্যেই না তুমি আমার প্রিয়োশীকে আমার থেকে আলদা করে আয়ানের সাথে বিয়ে দিতে চাও যাতে আয়ান ওর ভাগের সম্পত্তি পায়? আমার প্রিয়োশী কে হলেই হবে আর কিছু চাই না। 

রাতে উকিল আসবে তোমরা উপস্থিত থেকো ঠিক সময়ে আমি আসি। 
সমুদ্র যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে তার বাবা - মা। তাদের দুজনের মনেই আজ পাহার সমান অপরাধবোধ। দুজন সমান অপরাধী। 

সিকদার বাডির প্রতিটা মেম্বার আজ ড্রয়িংরুমে উপস্থিত৷ প্রেগন্যান্ট লিয়াও সেখানে এসে দাঁড়ায়।  তা দেখে প্রিয়োশী উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে দেয়।।
-আমাদের আজ এখানে ডাকার কারন কি সমুদ্র আমাদের বলবে?
- হ্যাঁ অবশ্যই  চাচ্চু জানাবো। আশা করি আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন?
- তোকে বিশ্বাস করবো না তো আর কাকে করবো বাবা?
-তাহলে বসো একটু অপেক্ষা করো।

প্রিয়োশীর বাবা আর সমুদ্রের কথোপকথনে আয়ান বিরক্ত হচ্ছে। আয়ান চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। কি এমন কাজ যে সবাই চুপচাপ আছে। 
তখন ই একজন উকিল বাড়িতে আসলো। 
- সরি সমুদ্র আমার আসতে একটু লেট হয়ে গেলো৷
- ইটস ওকে মিস্টার মিনহাজ। এবার আপনার যা কাজ করার তা শুরু করুন। 
- সব রেডি করাই আছে শুধু আপনাদের সাইন করলেই হবে। 
প্রিয়োশী এতোক্ষন চুপচাপ থাকলেও এবার জিজ্ঞেস করলো। 
- এসব কিসের কাগজপত্র,আর সবাই সাইন ই বা কেনো করবে?
- এটা আমার নামের সম্পত্তির কাগজ। আমার নামে যা যা বাবা দিয়েছেন আজ আমি তা সবকিছু আয়ানের নামে দিয়ে দিচ্ছি।

সনুদ্রের কথায় ওর বাবা - মা বাদে পরিবারের সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলো। সমুদ্র কেনো এসব করছে।  আয়ান তো আকাশ থেকে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। 
- এসব কি বলছো ভাইয়া আমি কেনো তোমার নামের সম্পত্তি নিবো। এই সম্পত্তি তোমার বাবার তাই এর উপর অধিকার ও তোমার।
- আমার একার বাবা না তোর ও বাবা আয়ান সে৷ হয়তো সে ভুল করছে তাই বলে মা যেমন আমাদের দুজনের বাবাও সেইম। আর আমার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি নিয়ে নিয়েছি। কারো কোনো আপত্তি আছে?

কেউই কিছু বললো না। কারন যার সম্পত্তি সে নিজে দিয়ে দিয়েছে তাতে অন্যকেউ কি বলবে। আর সব থেকে বড় কথা সমুদ্র কিছু না ভেবে কিছু করে না। 
আয়ান আর কিছু বললো না এতো সম্পত্তির মালিক সে একা হবে এসব ভেবেই খুশিতে তার চোখ চিকচিক করে উঠলো। কিছু না করেও সব তার নিজের হচ্ছে এর থেকে ভালো আর কি হবে। আয়ানের নামে সব লিখে দিলো সমুদ্র আর বাকি সবাই শুধু নির্বার শ্রোতা। তখন একজন হুজুর টাইপ লোক আসলো। 

- ছোট আব্বু আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো। মনে আছে তুমি আমাকে কি ওয়াদা দিয়ছিলে? আজ তোমাকে তোনার ওয়াদা পূর্ণ করতে হবে। আমাকে আমার আমানত ফিরত দিতে হবে। 
- আমার সব মনে আছে রে। আমাকে ক্ষমা করে দিস আমি তোর আমানতের খেয়ানত করতে যাচ্ছিলাম।  আমার কোনো আপত্তি নাই যদি প্রিয়োশী রাজি থাকে। 
প্রিয়োশী ওর বাবা আর সমুদ্রের কথায় অবাক হয়ে বোকার মত তাকিয়ে আছে। কি বিষয়ে কথা হচ্ছে তা তাদের বোধগম্য হচ্ছেনা। 
প্রিয়োশীর মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সে সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েকে জানাবে। মেয়ের হাত ধরে ওখান থেকে চলে গেলো বাড়ির ভিতরে এরমধ্যে ওখানে সমুদ্র ও বাকি সব পেপার চেক করে নিলো।

অনেক্ষন পর যখন প্রিয়োশীকে নিয়ে ওর মা আসেন প্রিয়োশী তখন নিশ্চুপ। নিচের দিকে মাথা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়োশীর মা জানালো সে বিয়েতে রাজি। সমুদ্র আর প্রিয়োশীর বিয়ে পড়ানো শুর‍্য হলো। আয়ান শুধু নির্বাক শ্রোতা হয়ে দাড়িয়ে আছ্র। আজ সে জিতেও হেরে গেলো। সমুদ্র সম্পত্তি দিয়ে মেইন জিনিস নিয়ে গেলো। হাতের কাগজ মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো। আয়ানের অবস্থা দেখে মৃদু হাসলো লিয়া। দেখুক কেমন লাগে যখন নিজের অতিব প্রিয় জিনিস না চাইলেও হারানো লাগে।

রাফিন একদৃষ্টিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। লিয়াকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। প্রেগন্যান্সির জন্য হয়তো লিয়ার চেহারায় এতো লাবন্যময় লাগছে। কি গুলুমুলু লাগছে মেয়েটা কে। চোখের কোনে এসে পানি ভির জমাতে শুরু করলো। দৃষ্টি ঝাপ্সা হতে লাগলো রাফিনের৷ আজ হয়তো আয়ানের যায়গায় তার থাকার কথা ছিলো। আজ লিয়ার  গর্ভে আয়ানের সন্তান না  রাফিনের হতো। কিন্তু সব কি আর চাইলেও পাওয়া যায়? লিয়া রাফিনের ভাগ্যে ছিলো না তাই আজ সে অন্য কারো। চোখ থেকে গড়িয়ে পরা পানি হাত দিয়ে মুছে ফেললো সে৷

সমুদ্র আর প্রিয়োশীর বিয়ের পরে সমুদ্র সবাইকে জানায়। তার চাকরী না হওয়া অব্দি তারা এই বাড়িতে থাকবে। সমুদ্রের এহেন কথায় বাড়ির কেউ রাজি না।।
- প্রিয়োশী আমি চাইছি তুই তোর নামের সব রাফিন কে দিয়ে দিবি। আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী।  আমি চাই তোর স্বামীর যতটুকু আছে ততটুকু ই তোর হবে। আর যদি তুই চাস এই৷ সিকদার বাড়িতে থাকতে তাহলে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আমি এই বাড়িতে থাকবো না। এখন এই বাড়ি আয়ানের। 

- যেমন আয়ানের ঠিক তেমন আমারো সমুদ্র। তুমি আর প্রিয়োশী কোথাও  যাস না বাবা। 
- ছোট আব্বু আম্মু আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি যেখানেই যাই তোমাদের মেয়েকে কষ্ট পেতে দিবো না। ও যাতে সব থেকে ভালো থাকে আমি সেই ব্যাবস্থাই করবো।
- ভাইয়া তুমি এখানেই থাকবে কোথাও যাবেনা।  
আয়ান না চাইতেও নিজের ইমপ্রেশনস বজায় রাখতে এটা বললো। 
- না আয়ান আমি অনেক পেয়েছি এই বাসা থেকে এবার নাহ মাই তোর পালা। প্রিয়োশী আমি চাই আমরা যাওয়ার পর রাফিন ও তার সমান অধিকার পাক। রাফিন নিজের অধিকারে দাপটের সাথে এই বাসায় থাকবে। ভবিষ্যতে ওর বিয়ে হবে তখন ওর স্ত্রী সন্তান হবে যাতে তাদের অধিকার ঠিকঠাক থাকে। 

প্রিয়োশীর মনে সমুদ্রের প্রতি সম্মান বাড়তেই থাকে। থাকবেই না কেন সমুদ্র সবার কথা ঠিকভাবে মনে রেখে সব সিদ্ধান্ত নেয়। 
- আমার কোনো সমস্যা নাই। আমার কোনো কালেই এসবের প্রতি আগ্রোহ ছিলো না। শুধু দাদু আমাকে এসব দিয়ে যায়। আমিও চাই সব কিছু আমার ভাইয়া পাক। আমার ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসে আমিও বাসি৷ 

কথা বলতে বলতে রাফিনের কাছে গিয়ে কান্না করে দেয় প্রিয়োশী। কেনো কান্না পাচ্ছে তার সে জানেনা। হয়তো এই ভাইয়ের থেকে দূরে যেতে হবে এই কথা ভেবে। এটাই যে নিয়তী। রাফিনের বিয়ের কথা শুনে লিয়ার বুকটা ঢক করে উঠলো। উঠবেই বা না কেন?  নিজের সামনে নিজের ভালোবাসা অন্যকারো হবে এমন কথায় তো কষ্ট হবেই।  কিন্তু লিয়া সেও তো অনেক আগে রাফিন কে ঠকিয়েছে৷ সে তো আয়ানের মোহে আটকে রাফিন কে ধোকা দিয়েছিলো। আয়ান তো একা দোষি না? লিয়ার ইচ্ছা না থাকলে আয়ানের একা এতোদুর আগানো কখোনোই হতো না। সুমাইয়া নিজের বান্ধবির জন্মদিনে গিয়েছিলো। সে যখন এসে জানবে সমুদের বিয়ে হয়ে গেছে তখন কি হবে?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন