উপন্যাস       :        প্রিয়োশীর ভালোবাসা
লেখিকা        :         নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৩০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘প্রিয়োশীর ভালোবাসা’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর Bangla Love Story - Kobiyal
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর

1111111111111111111111

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০৯)

সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত, আজ হুট করে যে এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে কেউ ভাবে নাই। প্রিয়োশী নিজের রুমের দরজা আটকে বসে আছে। প্রিয়োশীর মা আর সমুদ্রের মা রান্নাঘরে রান্না করতে ব্যাস্ত। আয়ান যেনো কোথায় বেড়িয়ে গেছে। ড্রয়িংরুনে সোফায় বসা লিয়া সামনেই রাফিন। এভাবে বসে থাকতে লিয়ার খারাপ লাগছে কিন্তু হুট করে দাড়াতে পারেনা। এত বড় পেটু নি তারাহুরা করে দাঁড়ানো যায় না। রাফিন এতোক্ষন ধরে লিয়ার হাসফাস করা দেখছে।নিজের নিরবতা ভেঙ্গে রাফিন বললো.
- কেনো আমার সাথে প্রতারণা করলে লিয়া? আয়ানের মাঝে কি এমন দেখলে যে আমার কথা ভুলে গেলে।আমাকে কি ভালোবাসো নাই কখোনো?

- আমাকে ভুল বুঝোনা রাফিন আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার মতিভ্রম হয়েছিলো। তাই তো আমি কিছ্য না ভেবে আয়ানের ফাদে পা দেই। বাহিরের চাকচিক্যের মোহে পরে যাই আমি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো নিজের লাইফে এগিয়ে যাও রাফিন। 
- আমার জন্য এতোটা ভাবার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে। আসো আমি তোমাকে দাড়াতে হেল্প করি এখানে আর কেউ নাই। 

রাফিন লিয়ার অনুমতির অপেক্ষায় থাকলো না। লিয়ার হাতের কব্জি ধরে দাড়াতে সাহায্য করলো। লিয়া ধীরে ধীরে এক এক সিরি বেয়ে উঠছে আবার থেমে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে তার কষ্ট হচ্ছে এভাবে। দাড়িতে থেকে আবারো আরেক সিরি উঠলো।  এভাবে উপরে উঠা লিয়ার কাছে অনেক টাফ লাগছে। এক পা উপরে দিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে সিরির দিয়ে নিচে পড়্ব গেলো লিয়া। গগনবিদারি চিৎকার দিয়ে উঠলো সে।  রাফিন লিয়ার চিৎকার শুনে দৌড়ে লিয়ার কাছে যায়। লিয়া অসহ্য বাথা আর যন্ত্রনায় ছটফট করছে। সারা ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে৷ বাড়ির সবাই প্রিয়োশী ও দৌড়ে আসলো।

- আমার বাচ্চাকে বাচাও রাফিন,আমাকে হাসপাতাল নিয়ে চলো। 
রাফিন চুপ চাপ পাথরের মত বসে আছে,লিয়ার করুন আর্তনাদ তার কানে পৌছানো মাত্র তার হুস আসে৷ সে পাজা কোলে করে আগাতে বাড়ির সবাই সাথে যায়। বাড়িতে রাফিন বাদে কোনো পুরুষ নাই। রাফিন গাড়িতে পিছের সিটে রাখে সেখানে প্রিয়োশী আর তার মা বসলো। আর আফিয়া সিকদার রাফিনের পাশে বসলো সবাই খুব চিন্তিত। আফিয়া সিকদার যতোই লিয়াকে অপছন্দ করুক না কেন। লিয়ার অবস্থা তেমন ভালো না।

- লিয়া চোখ খোল আর একটু কষ্ট কর আমরা হাপাতালে যাচ্ছি। প্লিজ চোখ খুলে রাখ।
- আমি আর পারছিনা রনু আমি মনে হয় আর বাঁচবো না কিন্ত আমার বাচ্চাটাকে বাচা প্লিজ। 
- কিছু হবে মা তোর আর বেবির। আল্লাহ কে ডাক লিয়া।  

কথা বলতে বলতে তারা হাসপাতালে চলে গেলো। প্রিয়োশীর মা সবাই কে ফোন দিয়ে খবর জানান। শুধু সমুদ্র আর আয়ানের ফোনে তারা পায় না।  লিয়াকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রক্ত লাগবে তা আফিয়া সিকদার দিবে বলে ঠিক করেছে। লিয়ার অবস্থা তেমন ভালো না, সিজার করতে হবে তার। সবাই চুপচাপ বসেবসে আল্লাহ কে স্মরণ করে যাচ্ছে।  ঘন্টাখানেক এর মধ্যে সমুদ্রের বাবা আর  প্রিয়োশীর বাবাও সেখানে উপ্সথিত হয়।  নার্স একটি বাবুকে কোলে নিয়ে আসে লিয়ার ছেলে বাবু হয়েছে।তবে উপর থেকে পড়ায় বাচ্চাটা মাথায় ভালোই চোট পেয়েছে তাই তাকেও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে রেখেছে। লিয়ার এখোনো জ্ঞান ফিরে নাই।  আয়ান আর সমুদ্র ও হাসপাতালে চলে এসেছে। আয়ানের চোখ ফোলা মেবি কেদেছে তাই।  হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকে পড়লো সে।  লিয়ার পাশে বসে তার হাত ধতে কেদেই যাচ্ছে।  আয়ান্রত মত মানুষ ভালোবাসতে জানে তা কি বিশ্বাস হয়? স্ত্রীর এমন অবস্থায় সে যে ভেঙে পড়েছে৷ 

- মা ও মা আমার বেবি কেমন আছে আর লিয়া চোখ খুলছে না কেন মা? ওরে তাকাতে বলো।  দেখো আমার বুকটা খালি খালি লাগছে। 
- কাদে না আয়ান লিয়া ঠিক আছে, আর তোর ছেলে বাবু হয়েছে ওর একটু সমস্যা এইজন্য ওকে চেকাপের জন্য রাখা হয়েছে বাবা।
- সব আমার দোষ আমি কেন লিয়াকে একা ফেলে চলে গেলাম। আজ আমি থাকলে তো এটা হতো না আম্মু। আমি অনেক খারাপ আম্মু আল্লাহ আমাকে এইভাবে শাস্তি কেনো দিলো। আমার বাচ্চাটা তো দোষ করে নাই ও কেন এইভাবে কষ্ট পাচ্ছে।
আয়ানের আহাজারিতে সবার মন খারাপ করে দিচ্ছে। আয়ান যতোই খারাপ হোক না কেন এমনটা কারোই মানার যোগ্য না। প্রিয়োশী আর সমুদ্র এক যায়গায় বসে ছিলো। 
- আপনি বাবু কে দেখবেন?
- হ্যাঁ আমি দেখবো তুমি দেখছো?
- না চলেন দেখে আসি। 

প্রিয়োশী আর সমুদ্র চলে গেলো বাবুকে দেখতে।  বাবুটা কত ছোট আল্লাহ,সময়ের আগে দুনিয়ায়ে আসায় এখোনো অনক উইক দেখা যাচ্ছে বাবুকে। 

দেখতে দেখতে ১৬ দিন চলে গেছে, আয়ান সমুদ্র আর প্রিয়োশী একদিন হাসপাতালে বেশি ছিলো।  আয়ান একদিন অনেক শান্ত ছিলো কারো সাথেই বেশি কথা বলে নাই। এমনি লিয়ার ও, লিয়া আয়ানের প্রতি আবারো দূরবল হয়ে পরেছে। আয়ানের এমন কেয়ারিং কান্না সব কিছুর জন্য। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আয়ানের সে কি কান্না।  প্রতিটা মানুষ খারাপ হতে পারে কিন্তু কোনো বাবা খারাপ হয় না। সন্তানের প্রতি ভালোবাসাও মিথ্যে হয় না। তা আয়ান কে দেখলেই বোঝা যায়। আজকে সবাই লিয়া আর ওর বাচ্চাকে নিয়ে সিকদার বাড়ি যাবে। বাচ্চার নাম রাখা সাধারনত ৭ দিনের দিন করে। বাবু অসুস্থ থাকায় তা ২১ দিনে করবে বলে সবাই ঠিক করেছে। সিকদার বাড়িরে নতুন অতিথির আগমনে আবারো খুশিতে ভরে উঠেছে। প্রিয়োশী লিয়ার সাথে কোনো কথা না বললেও সারাদিন বাচ্চাটার সাথে খুব দুষ্টামি করে৷ 
আকিকার সব আয়োজন আয়ান আর সমুদ্র মিলেমিশে করছ্র। বাড়ির সবাইর এটা দেখে খুব ভালো লাগছে অবশেষে দুইভাইয়ের মধ্যে ঝামেলার অবসান ঘটতে চলছে। এতো খুশির মধ্যেও সব থেকে খারাপ আছে সুমাইয়া।  এই খুশি যেনো তার দু চোখের বিষ।  প্রিয়োশীর প্রতি সমুদ্রের ভালোবাসা কেয়ার দেখে জ্বলে পুড়ে মরছে সে।

অবশেষে নাম রাখার অনুষ্ঠানে  বাচ্চার নাম রাখা হলো লিয়ান সিকদার। নামটা অবশ্য প্রিয়োশীর রাখা। আয়ান আর লিয়ার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়।  সব অনুষ্টান শেষে প্রিয়োশী আর সমুদ্র ঘুরতে যাবে বলে ঠিক করে রাখে। প্ল্যান অনুযায়ী তারা বেড়িয়ে যায়।
- প্রিয়ো আমাকে বিয়ে করে কি তোর কোবো আফসোস হয়? 
- আফসোস কেনো হবে আমার। আপনার মত কাউকে পেয়েছি সেটাই আমার ভাগ্য। 
- তুই যে আমাকে ভালোবাসি না প্রিয়োশী?  আমি তো চাই প্রিয়োশীর ভালোবাসায় ভেসে যেতে। 

- কে বলেছে আপনাকে সমুদ্র যে প্রিয়োশী আপনাকে ভালোবাসে না? 
- কই প্রিয়োশী তো কখোনোই আমাকে বলে নাই সে আমাকে ভালোবাসে।
সমুদ্র যে মজা করছে তা তার এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝে গেলো প্রিয়োশী। 
- যাহ আপনি আমার সাথে মজা করছেন এটা একদম ঠিক না।
- আমি মজা করছি না।
- জানেন আমি আমার অনুভুতি বলতে পারি না। সব কথা গুছিয়ে সাজিয়েও বলত্ব পারি না। তবে আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।  এই প্রিয়োশীর ভালোবাসা আপনার প্রতি এক সমুদ্র সমান। 

- এভাবে বললে কি আর নিজেকে ঠিক রাখা যায় জান?
- দেখে শুনে গাড়ি চালান আপনি নাহলে এক্সিডেন্ট হবে।
প্রিয়োশীর কথা শেষ হওয়ার আগেই এক ট্রাকের সাথে তাদের গাড়ির ধাক্কা খেয়ে যায়। সমুদ্র আর প্রিয়োশী কিছু বুঝে উঠার আগেই এমন হয়ে গেলো। ররক্তাক্ত দুটি হাত গাড়ির ভাঙ্গা দরজা দিয়ে বেরিয়ে আছে। গাড়ির উপরে ট্রাক উঠে যাওয়ায় দুজনের মাথা থেতলে গেছে।  

সিকদার বাড়ির সবাই এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ছুটে গেলো হাসপাতালে।  সমুদ্র আর প্রিয়োশীর ঘরি মোবাইল পেলো তারা। এটা পেয়েই লাশ শনাক্ত করা হলো। বাড়ির সবাই খুন ভেঙ্গে পড়েছে। আয়ান সবাইকে সামলে নেয়, প্রিয়োশী আর সমুদ্রকে দাফন করা হয়।
হেসে নাও যত খুশি হওয়ার হয়ে নাও আমরা আবার ফিরে আসবো তখন তোমরা ছাড় পাবেনা। সব অন্যায়ের শাস্তি তোমরা পাবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


--সমাপ্ত--



লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন