উপন্যাস : আম্বরি
লেখিকা : সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া |
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ১২)
"ভয় পেয়েছো?"
"ভীষণ।"
এরোন উচ্চসুরে হেসে উঠলো।সংকীর্ণ হয়ে থাকা মেহরীর গালে হাত বুলিয়ে দূরে সরে এলো।ছেলেটির হাসি যেন থামছেনা।
"আপনি মানুষটা বেশ খারাপ এরোন।এভাবে ভয় না দেখালে চলতো না?"
"শুনো পান্ডা।আমি একজন পুরুষ।সেরকমভাবে মানুষ।কিছু সাধারণ নিয়ম আমার মধ্যেও ঘটে।তবে নিজেকে সংযত করাও শিখতে হবে।"
মেহরীর মুখে মেঘ জমলো।কপাল কুঞ্চিত করে বলল,
"জি বুঝলাম।"
"একটা বিষয়ে সিওর থাকো আমি কখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে খা রা প কিছু করিনি।এটা বৈশিষ্ট্যতে নেই।"
বাক্যটি বলে এরোন মাথাটি একবার পিছনে হেলিয়ে নিলো।টেবিলের উপর থেকে রুট বিয়ারের ক্যানটা তুলে মেহরীর দিকে এগিয়ে দিলো।এরোনের এঁটোতে সংকোচবিহীন মুখ ঠেকালো মেহরী।
"এতোসময় আমাকে ছাড়া কী করলেন?ও হ্যাঁ বললেন না আমাকে কেমন লাগছে।"
"দেখি উঠে দাঁড়াও।"
"কেন?"
"উঠো তো আগে।"
মেহরী উঠে দাঁড়ালে তাকে মুখোমুখি হতে বলল এরোন।মেয়েটিকে বেশ দেখা যাচ্ছে।শাড়ীটির ফলে লালচে হলুদ বর্ণের কমলালেবুর মতোন।
"একটু বারবার ঘুরো তো।যেমন নতুন ড্রেস পরে আমাকে দেখাও।তখন কিন্তু লিটল বেবী গার্লের মতোন লাগে।"
এরোন যা বলছে তা মেনে নিচ্ছে মেহরী।যেন সে ভীষণ ভালো আজ্ঞা পালনকারী।ক্রমাগত নড়াচড়ার ফলে শীতল সমীরণে মেহরীর গায়ের আম্বরি(সুগন্ধ) ছড়িয়ে পড়লো।এরোন নিশ্চুপ থেকে জোরে জোরে শ্বাস নিলো।যেন সে অদৃশ্য কোনো মা দ কে র নে শা য় মত্ত্ব।নির্জন পরিবেশে এমন কার্যকলাপে অবাক হয়ে চোখ মুদে থাকা গৌড়বর্ণের পুরুষটিকে সে শুধালো,
"কী করছেন?"
"আমার পাশে এসে বসো।"
"আপনার কার্যকলাপে আজকে কেমন ভয় লাগছে আমার।"
"ভয় নেই এসো আগে।"
মেহরী গিয়ে এরোনের গা ঘেসে বসে পড়লো।তার হাতদুটো কুড়িয়ে নিলো ছেলেটি।ফিসফিস করে বলল,
"আপনার গা থেকে লেবু ফুলের সুগন্ধ আসে সেটা বুঝতে পারেন?"
"কী বলছেন।লেবু ফুলের তেমন গন্ধ হয়না।তাছাড়া এমন কোনো কিছু মাখিনি আমি।লিপবামটাও স্ট্রবেরী ফ্লেভারে দিয়েছি।চেক করুন।"
স্বীয় অধরযুগল এগিয়ে দিলো মেহরী।তৎক্ষনাৎ চোখ রা ঙা নো দেখে পিছিয়ে গেলো।এরোন বিরোধ করে বলল,
"বিষয়টি তুমি যা ভাবছো সেটা নয়।আমি মানুষদের শরীর থেকে বিশেষ ধরণের সুগন্ধ পাই।যেমন-তুমি লেমন ফ্লাওয়ার, রাফসানের থেকে পাই কলার সুগন্ধ।এটা মানুষভেদে ভিন্ন।"
এখনও অবিশ্বাসের নজরে তাকে দেখছে মেহরী।নিশ্চয় ছেলেটি তার সঙ্গে উপহাস করছে।তার দৃষ্টির ভাষা এরোন বুঝতে সংক্ষম হলো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে শুধালো,
"মাছ ও মাংসের মধ্যে একরকম গন্ধ পাওয়া যায়?বস্তুতপক্ষে আমরা দুটো প্রাণীর কিন্তু টিস্যু সম্বলিত শরীরের অংশ খে য়ে থাকি।তেমন সব মানুষ এক।কিন্তু তাদের সাথে সুগন্ধ বা গন্ধ ভিন্ন লাগে আমার নিকট।"
"অতি সাধারণ। সকলে কী আর একরকম পারফিউম ব্যবহার করে?"
"তুমি আমাকে হতাশ করছো মেহরী।বোঝার চেষ্টা করো।আমি প্রত্যেক মানুষের থেকে আলাদা আলাদা সুগন্ধ পেয়ে থাকি যা আর কেউ পায়না।"
ফিসফিস করে মেহরী শুধালো,
"আপনি ভ্যাম্পায়ার?"
"না।"
"জিন?"
"নো।আই এম এ হিউম্যান।বাট ডক্টর দেখিয়েছিলাম পরবর্তীতে তারা বলে বিষয়টা আমার মস্তিস্ক থেকে তৈরী হয়।প্রায় সকল ডক্টর এটাই বলেছি।একজন বাদে।তার ধারণা জন্মের পরে কিংবা গর্ভে থাকতে আমার উপর কোনো পরীক্ষা করা হয়েছিল।যার দরুণ মস্তিস্কে এমন লাগে।"
"বিষয়টা ইন্টারেস্টিং।আমাকে পুরোপুরি বলেন।সকলের থেকে আলাদা আলাদা গন্ধ পান?মিলে যায়না কারো?"
"মিলে।কিন্তু বিষয়টি খুব য ন্ত্র ণাদায়ক।কারণটা হলো মাঝেমধ্যে তীব্র সুগন্ধ সহ্য করা কঠিন।আমি তো এমন মানুষও দেখেছি যাদের শরীর থেকে ডুরাইনের গন্ধ ভেসে আসে।তুমি তো আমাকে বিলিভ করছো তাইনা?"
মেহরী হাঁবোধক মাথা দুলালো।এরোনের দৃঢ় করপুট আগলে ধরলো হাত দ্বারা।
"আমি আপনাকে খুব বিশ্বাস করি এরোন।এইযে কতোগুলো মাস একত্রে রয়েছি কখনো কোনো কথা মি থ্যা বলতে দেখিনি।"
"কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে ভিন্ন লাগে আমার কাছে।একবার লেবু ফুলের সুগন্ধ তো আরেকবার স্ট্রবেরীর।বিষয়টা ভাবায়।তাই ভেবে নিয়েছি আমার হয়তো সামান্যতন সিজোফ্রেনিয়া রয়েছে।"
"যদি এক্সপিরিমেন্টের কথাটি সত্য হয়?"
"সম্ভাবনা কম।এমনটা কে করবে বলো?"
"তাও ঠিক।"
"তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করে নিলে এতে খুব খুশি হয়েছি আমি মেহরী।"
এরোন হাত বাড়িয়ে মেয়েটির কপালের বিন্যস্ত চুলগুলো ঠিক করে দিলো।দুজনের মুখে প্রশান্তিময় হাসি ভেসে উঠলো।
(***)
"মেহরী কোথায় স্পর্শিয়া?"
"তাতে তোর কী?আর এখানে কেন এসেছিস?"
পরিশেষের উষ্ণতায় স্পর্শিয়ার গলার সুর ঈষৎ কেঁপে উঠলো।এমনিতে এখন উত্তেজিত হলে ভীষণ খারাপ লাগে।তাও নিজেকে সামলে দরজা আড়াল করে দাঁড়ালো।
"ও ভেতরের রুমে ঘুমাচ্ছে।"
"নাহ।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।মেহরী,মেহরী।"
"রাফসান ভুলে গেলি আমার বোন এখন সুস্থ।"
"না ভুলিনি।কিন্তু এই বিষয়টির দোহাই দিয়ে তুই ওর জীবনে এরোনকে প্রবেশ করতে দিলি।বল ও কোথায়?"
গোধূম রঙা পুরুষটির কপালের শিরা উপশিরা গুলো ফুলে উঠলো। গম্ভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছে সে। হুংকার দিয়ে বলল,
"এখন যদি দেখি মেহরী এরোনের সঙ্গে আছে তবে কিছুর তোয়াক্কা করবো।ওর জীবনে আগে আমি এসেছি।"
"তুই কোথাও গেলে আমি তোর নামে কেস করবো।"
রাফসান জবাব দিলো না।ঝড়ের মতোন এসেছিল ঠিক সেভাবে ফেরত চলে গেলো।ঠায় দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শিয়া।শাওন নিচে তার জন্য আইসক্রিম আনতে গিয়েছে।মেজাজ খারাপ করে তার আশায় সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।কী এক বিড়ম্বনা তৈরী হয়ে গেলো হঠাৎ।ফ্ল্যাটে আছে সেটির সন্ধান পেলে রাফসান যে কিছু একটা করে বসবে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
(****)
কোমড়ে আঁচলগুজে নুডলস রান্না করছে মেহরী।পাশে টুলে বসে এরোন ফোনে ভিডিও দেখছে।তাদের দেখে ঠাহর হবে দুজনে বছর বছরের বিবাহিত।একটা আপেলে কামড় বসিয়ে তা মেহরীর পানে এগিয়ে দিলো সে।দুজনে একত্রে হলে এমন জিনিস ভাগাভাগি করে খাবে।
"মেহরী।"
"হুঁ।"
"কখনো দেশের বাহিরে গিয়েছো?"
"ইন্ডিয়াতে গিয়েছিলাম।দার্জিলিং এ।অনেক সুন্দর জায়গা।তাছাড়া কলকাতা, দিল্লীও ঘোরা হয়েছে।আপু ও ভাইয়ার সাথে।"
"নিশ্চয় তাদের হানিমুন ছিল?"
মেহরী হেসে জবাব দিলো,"হ্যাঁ।"
"সুযোগ পেলে কখনো সাউথ কোরিয়াতে যাবে?"
"যাবো না কেন?"
এরোন উচ্ছাসের সঙ্গে বলতে চাইলো একমাস পর আমি সারাজীবনের নামে চলে যাবো।তখন তুমি আমার সাথে যাবে কীনা?কিন্তু বলা হলো না।তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।এরপর মেহরী পুরোদস্তর রাফসানের।কখনো কখনো সূদুর দেশ থেকে ভিডিও কলে দেখতে পারবে তাও কীনা রাফসানের স্ত্রী রুপে।একদিন হয়তো মেয়েটির ঈষৎ উঁচু পেট দেখেও চমকে যাবে এরোন।হঠাৎ গায়ে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়ে উষ্ণতা প্রকট হলো এরোনের।সত্যিই মেহরী অভিনেত্রী?চোখের ভাষা সব মিথ্যা তাহলে।দীর্ঘ শ্বাস নিলো ছেলেটি।নাকের মধ্যে স্ট্রবেরীর সুগন্ধ ভেসে এলো।সে ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না পাঁচ মাসের চেনাজানা রমণী এক সেকেন্ড বদলে গেলো।এমন সময় কলিংবেলের শব্দ শোনা গেলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন