উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (পর্ব - ১১)

সময়টা পাঁচ মাস অতিক্রম করেছে।মেহরীর মধ্যে তবুও কোনো রকম বড় মানুষের স্বভাব আসেনি।চড়ুই পাখির মতো সারাক্ষণ উড়ে বেড়ায়।বিশেষ করে এরোনের সংস্পর্শে সে যেন ছোট্ট বাচ্চাটি।রোজ ঘন্টার পর ঘন্টা দুজনে একত্রে অতিবাহিত করে।ভালোবাসার কথা মুখে বহুবার জানিয়েছে এরোনকে মেহরী।কিন্তু জবাবে ছেলেটি মৃদু হাসে।কেমন প্রহেলিকা চলছে দুজনের মধ্যে।

অনেকক্ষণ ধরে মেহরীকে শাড়ী পরানোর চেষ্টায় আছে স্পর্শিয়া।বর্তমানে তার নয়মাস চলছে।বেশ মোটাসোটাও হয়েছে বটে।কয়দিন পর ডেলিভারি।সে শাড়ী ভালো পরানো জানলেও এখন কিছুটি করতে পারছেনা।নিচে ঝুকতে মানা করে দিয়েছে ডক্টর।ওদিকে মেহরী বিরক্ত হয়ে বলল,
"দাও আপু আমি করছি।কতোক্ষণ হলো।অথচ ঠিকঠাক কিছুই হলো না।"

"আরে দাঁড়া না।পারবো আমি।তুই ভালো করে পরতে জানিস না।পরে খুলে গেলে এরোন হাসতে হাসতে খু ন হবে।"
"হোক।তবুও তুমি ছাড়ো।আমি করে নিচ্ছি।"

স্পর্শিয়া শাড়ীটা ছেড়ে দিলে খুব যত্নসহকারে পরে নিলো মেহরী।আজ সে এরোনের সঙ্গে বাহিরে ঘুরতে যাবে।স্পর্শিয়া ও শাওনের বিশ্বাস ছেলেটা এই কয়মাসে খুব করে অর্জন করে চলেছে।এমনকি রিচি স্বত্তাও ফিরে আসেনি।ডাক্তারের কাছে চেক আপের জন্য নিয়ে যাওয়া হলে বলেছে মেহরী হয়তো খুব শীঘ্রই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।এজন্য ভিনদেশীদের মতোন দেখতে ছেলেটার প্রতি স্পর্শিয়ার কৃতজ্ঞতাবোধের অন্ত নেই।সময় হলেই বাড়ীতে ডেকে চারজন ভালো আড্ডা দেয়।মুখে হালকা কিছু প্রসাধনীর স্পর্শ করলো মেহরী।স্পর্শিয়া বোনকে পিছন থেকে জাপটে ধরে আয়নায় দেখে শুধালো,"এরোন আজকে প্রপোজ করলে আমাকে সবার আগে জানাবি কিন্তু।'


"কী যে বলো না আপু।হুঁ ওই জেন্টালম্যান করবে প্রোপজ।ভীষণ শ য় তা ন লোকটা।ভালোবাসি বললে হাসে। বায়রনের কবিতা শোনালে বাচ্চামো বলে।"
"এগুলো মনের অনুভূতি নয় রে।আমি ওর চোখে তোর জন্য মায়া দেখেছি।"
পিছন ফিরলো মেহরী।চোখে মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলল'"জানো আপু বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি।আমার জন্য তার চোখে অসীম মায়া আছে।কিন্তু মুখে কেন বলেনা?"
"হয়তো নিজের পরিচয় কিংবা পদমর্যাদা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।শোনা যায় ছেলেটা ভুল থেকে জন্ম নিয়েছে।"

"আমি সেসব তোয়াক্কা করিনা।যাই হোক দেরী হয়ে যাচ্ছে।পু়্ঁচির খেয়াল রেখো।"
"সেটা আপনার ভাবতে হবেনা।"
মৃদু হেসে স্পর্শিয়াকে বিদায় জানালো মেহরী।ড্রয়িং রুমে শাওন বসেছিল।তাকে হাতের ইশারা করে তৎক্ষনাৎ জুতো পরে বের হয়ে গেলো মেয়েটা।

"স্পর্শিয়া,রাফসান আজকেও ফোন করেছিল আমাকে।এসব মেনে নিতে পারছেনা।"
শাওন বেশ গম্ভীরমুখে কথাগুলো বললেও স্পর্শিয়া তোয়াক্কা করলো না।চোখেমুখে বিরক্তিভাব ফুটে উঠলো।শাওনের আধ খাওয়া কফিটিতে চুমুক বসালো।

"আমি আগেই ওকে বলেছিলাম।মিথ্যা মরিচীকার পিছনে না ছুটতে।মেহরী একদিন সুস্থ হতো সেটা বিশ্বাস ছিল আমার।এরোনের সাথে থেকে...।"
শাওন থামিয়ে দিলো তাকে।

"এরোনের জন্য মেহরী সুস্থ হচ্ছে এমন নাও হতে পারে।ডক্টর ভালো চিকিৎসা করছে কিন্তু।"
"বিশ্বাস করো কিংবা নাই করো।সুস্থটা এরোনের জন্য হচ্ছে।রাফসান তা মেনে নিলে ওর জন্য ভালো।আজ মনে হচ্ছে ছেলেটি মেহরীকে প্রোপজ করবে।সত্যিই এমন হলে আগামী তিনদিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিবো।তখন ভয় থাকবেনা।সত্যি করে বলো আমার বোন মেহরী সুস্থ অবস্থায় যাকে ভালোবাসে সে রাফসান নয় বরং এরোন।কিন্তু ছেলেটি ওর অসুস্থতার কথা জানলে কী হবে কে জানে।"


"শান্ত হও স্পর্শিয়া।এতো বেশী ভেবো না।মেহরীর সুস্থতা আমাদের জন্য জরুরি।যা হওয়ার হবে।"
স্পর্শিয়া নীরবে মাথা দুলালো।সে মনে মনে ভীত হয়ে আছে।আসন্ন ভবিষ্যতে কী হবে সেটা যেন এক বিরাট প্রশ্ন।

"মেয়েটির প্রতি কী তোমার সত্যিই কোনো ভালোবাসা নেই?সবটা শা রী রি ক আকর্ষণ?"
স্মিথের প্রশ্নে মৃদু হাসলো এরোন।ছেলেটা তার যুবক বয়সের বন্ধু।গত দুই বছর ধরে বেশ ভালো সম্পর্ক আছে।মাঝে একবার প্যারিসে দেখা হয়েছিল দুজনের।প্রায় রোজ ভিডিও কলে কথাও হয়।স্ক্রিনের অপর পাশে থাকা স্মিথ উত্তরের অপেক্ষায় ভ্রু কুঞ্চিত করে আছে।ঠান্ডা লাগার দরুণ ফর্সা নাকটি টমেটোর রঙ ধারণ করেছে।এরোন ইংলিশে জবাব দিলো,
"শুধু আকর্ষণ এ ব্যতীত কিছু নয়। একে অপরের সংস্রবে এসেছি কারণ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছি।কোনো মেয়ের প্রতি দূর্বল হতে চাইনা।"

"আমার সেটা মনে হচ্ছেনা।"
"তো কী মনে হয়?"
"মেহরীকে পছন্দ করো তুমি।"

এরোন উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।পূর্ব দিক থেকে উষ্ণ সমীরণ এসে তাকে ছুঁয়ে গেলো।
"হতেও পারে মেহরীকে আমি ভালোবাসি।"
"হেয়ালী করো না তো এরোন।মেয়েটা কিন্তু সিরিয়াস।"


"ভুলে যাচ্ছো ও রাফসানের প্রেমিকা।দুমুখো মেয়ে।নিজের প্রেমিককে ঠকাচ্ছে।এলিসার মতোন এসব মানুষদের শুধু ঘৃণা করি আমি।"
"এলিসা আন্টি তোমার মা হয়।এভাবে বলো না।"
"ওহো বাদ দাও স্মিথ।মেহরীকে নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছেনা।"

প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললো স্মিথ।কোনো একটা কাগজ দেখে বলল,
"ভিক্টোরিয়াকে বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়ায় নিয়ে আসতে কিছু জটিলতা তৈরী হবে।এয়ারপোর্টে সম্ভব নয়।কেউ রাজী হচ্ছে না। নীলয়ের কী করলে তুমি?"

"সময় হলে জানতে পারবে।"
"তাবিয়া বেচারী।কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য।নীলয়কে বাঁ চি য়ে রাখা কোনোভাবে সম্ভব নয়।তোমার " She" তাবিয়ার জন্য কষ্ট হয়।মেয়েটিকে ঢাল বানিয়ে কীভাবে নীলয় ভিক্টোরিয়া চুরি করে নিয়েছিল।"

"নিজেকে সামলে নিতে পারবে তাবিয়া।রাখছি মেহরী আসার সময় হয়ে যাচ্ছে।"
স্মিথের থেকে বিদায় নিয়ে ল্যাপটপটি বন্ধ করে দিলো এরোন।গত পাঁচ মাসে নিজের কাজগুলো বহু কষ্টে গুছিয়ে নিয়েছে।আর একটি মাস এরপর সারাজীবনের জন্য দেশ ছেড়ে দিবে। তার চেষ্টার ফলে কোহিনূর জুয়েলার্সের কর্ণধারকে ভিক্টোরিয়া চুরির দায় হতে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু কেউ জানেনা ভিক্টোরিয়ার খোঁজ আসলেও মিলেছে।এক সন্ধ্যায় কোন এক প তি তার বিছানা হতে নীলয়কে ধরেছিল এরোন।সেই চুরি ও অ প হ র ণের নাটকটা সাজিয়েছিল।বিষয়টা পূর্বেই ধারণা করেছিল কিন্তু তাবিয়ার প্রতি নীলয়ের ভালোবাসা দেখে আগাতে পারেনি।গত পাঁচ মাস ধরে নীলয় কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না।ভিক্টোরিয়া বর্তমানে গোপনে এরোনের নিকট আছে।এমনকি তার নানা ফিলিপও জানেন না।


কলিং বেলের শব্দ শোনা গেলো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে এরোন আধশোয়া হলো।এই ফ্ল্যাটে গতকাল রাতে এসেছে সে।এটা শাওনের অন্য আরেকটি ফ্ল্যাট।মেহরী নিজেই এখানে আসতে বলেছে।নিজ অনুভূতির ব্যাপারে একটুও সন্দেহ নেই এরোনের।হ্যাঁ সে মেহরীকে ভালোবাসে।এ কারণে শাওনের কাছে ভিক্টোরিয়া আছে এই নাটকটাও মিথ্যা করেছে।রাফসানের প্রেমিকা জেনেও শেষবার মেয়েটিকে পাওয়ার প্রয়াস করছে।কিছুটা সফলও।কিন্তু মেহরীর দ্বিমুখো হওয়ার কারণে ভেতরে ভেতরে জ্বলে যাচ্ছে সে।আজ দরজা খোলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা হচ্ছেনা।ভয়ংকর কিছু হয়ে যেতে পারে।

"দরজা খুলছিলেন না কেন?এক্সট্রা চাবি ছিল সেটা দিয়ে ভেতরে আসতে হলো।"
এরোনে বড্ড অগোছালো হয়ে সোফায় আধশোয়া হয়ে আছে।এই ফ্ল্যাটটিতে আগেও বহুবার সময় কাঁটিয়েছে তারা।কিন্তু আজ সবদিনের ব্যতিক্রম।এরোনের মনে হচ্ছে ভুল করবে সে।ভীষণ ভুল।

"কী হলো এরোন।কথা বলছেন না কেন?"
"এদিকে এসো মেহরী।আজ সুন্দর লাগছে দেখতে তোমাকে।"
"সত্যিই?"
"আমি কখনো মিথ্যা বলি?"

সোফার অপর প্রান্তে বসলো মেহরী।কানের পিঠে চুলটা গুঁজে বলল,
"আপনার মুখে প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে।"
"ভালোবাসো এজন্য?"
"মিথ্যা মনে হয়?"
এরোনের নিজেরও বলতে ইচ্ছে করলো ভালোবাসার কথা, চাওয়া পাওয়ার কথা।কিন্তু দায়বদ্ধতাও আছে।ধূসর চোখে দৃষ্টিতে কুণ্ঠাবোধ করছে মেহরী।শুকনো ঢোক গিললো।এরোনের এই দৃষ্টি ভীষণ অচেনা।অকস্মাৎ দুটো প্রাণ কাছাকাছি হলো।হকচকিয়ে মেহরী শুধালো, 
"কী হলো মি.এরোন?"


ফিসফিস করে জবাব দিলো পুরুষটি।
"আজ ভুল করবো মেহরী।অনেক ভুল।সব সংযম ভেঙে দিবো।"
শিওরে উঠলো মেহরী।প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পূর্বে নিজেকে এরোনের করপুটস্পর্শে পেলো।নির্জন পরিবেশ সবটা এলেমেলো হয়ে গেলো হঠাৎ।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন