উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
1111111111111111111111
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৫)
আরাফ নিলয় এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।নিলয় এর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
নিলয়ঃআরাফ।আমি কখনো চাই নাই মেহরাব এর সাথে এমন কিছু হউক।
আরাফঃকিন্তু কারনটা তো তুইইই!!
নিলয়ঃআমিইই!!আমিইই!!কারন?
আরাফঃনিলয় এটা তুই ও ভালো করে জানিস মেহরাব কতো আস্তে ড্রাইভ করে। ওর এমন এক্সিডেন্ট কি আদোও স্বাভাবিক?
নিলয়ঃনা।কিন্তু এর সাথে আমার কি সংযোগ?
আরাফঃমেহরাব এর দেশ ছাড়ার কারনটা কিন্তু বাকি কেউ না জানলেও তুই আর আমিই খুব ভালো করে জানি।মনে পড়ে সেই দিন এর কথা??
নিলয় এর মনে পড়ে যায় চার বছর আগের ঘটনা।
ফ্ল্যাশব্যাক~
নিলয় ড্রয়িংরুমে বসে খবর এর কাগজ পড়ছিলো।হঠাৎ নূর কাদতে কাদতে বাসায় আসে।একমাত্র মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখে নিলয় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
নিলয়ঃকি হয়েছে মা?কাদছো কেন?কেউ কিছু বলেছে? বলো আমাকে!তুমি তো স্কুলে গিয়েছেলে? তাহলে কি হয়েছে? বলো।
নূরঃমেহের। মেহের আমাকে কথাটা শেষ করার আগে নূর জ্ঞান হারায়।
নিলয় নূর কে কোলে করে নিয়ে রুমে রেখে ডাক্টার আনায়।
নিলয়ঃকি হয়েছে?ওর? ডক্টর?
ডক্টরঃভয় পেয়েছে। ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।
নিলয়ের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।কারন নূর সেন্সলেস হওয়ার আগে মেহরাব এর নাম নিয়েছিলো। আর মেহরাব সবসময় নূরকে চোখে চোখে রাখে। আর শাসন করে।এক মাত্র মেয়ে হওয়ায় বাসায় কেউই নূরকে কিছুই বলে না।যার জন্য নূর মাত্রা অতিরিক্ত জেদী হয়ে উঠে।
আর নূর এর জেদ মেহরাব বিন্দু পরিমান সহ্য করতে পারে না।তাই মেহরাব সবসময় নূরকে শাসানের কড়া নজরদারীতে রাখে।
নিলয়ঃমেহরাব আজকে তুমি সব লিমিট ক্রস করে দিয়েছো।তুমি নূরকে এমন কি বলেছো বা করেছো যে আমার মেয়ে জ্ঞান হারায়।
নিলয় আরাফ এর বাসায় চলে আসে।মেহরাব একটু আগেই বাসায় ফিরে।আরাফ নিজের রুমে বসে অফিস এর কাজ করছিলো। নবনি আদ্রিতার সাথে বাইরে গিয়েছে।
বাসায় মেহরাব আর আরাফ একা।এমন সময় নিলয় বাসায় প্রবেশ করে চেচাতে শুরু করে।
নিলয়ঃমেহরায়ায়ায়াব। মেহরায়ায়াব।
আরাফঃকি হয়েছে চেচাচ্ছিস কেন?
নিলয়ঃকই লুকিয়ে রেখেছিস? তোর ছেলেকে?বের কর ওকে।আজ আমি ওকে মেরেই ফেলবো।
মেহরাব এর সারা গায়ে রক্ত লেগে আছে।
মেহরাবঃকি হয়েছে বাবাই?
নিলয় মেহরাবকে থাপ্পড় মারে।মেহরাব থাপ্পড় খেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরাফঃনিলয়য়য়য়।খবরদার ওর গায়ে হাত তুলবি না।আমার ছেলে অন্যায় করলে আমি নিজ হাতে তাকে শাস্তি দিবো। আগে বল কি হয়েছে?
নিলয়ঃতোর ছেলে সব সময় নূরকে নিয়ে মাত্রা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। কিন্তু ওর সব বাড়াবাড়ি আজ সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে।ও নূরকে কি এমন করেছে যে নূর সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
মেহরাবঃবাবাই।কি হয়েছে?নূরপাখি ঠিক আছে?সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে!!তাহলে তুমি ওকে রেখে এখানে এসেছো কেন?মামনি আছে ওর সাথে? ও তো ভয় পাবে একা।আমার যেতে হবে ওর কাছে।
নিলয়ঃখবরদার। তুমি ওর আশেপাশেও যাবা না।
মেহরাব এর পা থেমে গেলো।মেহরাব চোখে পানি টলটল করছে।
আরাফঃমেহরাব কি হয়েছে কলেজে?
মেহরাবঃকিছু ছেলে নূর পাখিকে ডিসটাব করছিলো। আমার রাগ উঠে যায়। আমি ওদেরকে অনেক মারি। আমার নূর পাখির দিকে ওরা তাকায় কোন সাহসে।ওদেরকে মারার সময় নূর ওখানেই ছিলো। তারপর আমি আর ওকে দেখি নাই।আমি ভাবছি ও বাসায় চলে গিয়েছে।কিন্তু আমি জানতাম না ও এতো ভয় পাবে। জানলে ওই শয়তানগুলোকে মেরেই ফেলতাম।
নিলয়ঃহয়েছে তোমার নাটক?
আরাফঃনিলয়য়য়য়।মুখ সামলে কথা বল।মেহরাব কখনো মিথ্যে বলে না।
নিলয়ঃতুই ছেলের প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিস।
মেহরাবঃবাবাই।আমাকে একবার নূর এর কাছে যেতে দাও।আমি সব কথা শুনবো তোমার।আই প্রমিজ।
নিলয়ঃ আমি আজকেই নূরকে বিদেশে পাঠিয়ে দিবো।
মেহরাবঃনা বাবাই।তুমি এমন করতে পারো না।নূর ওখানে একা থাকতে পারবে না।ও পরিবার ছাড়া কি করে থাকবে?
নিলয়ঃতোমার থেকে নিজের মেয়েকে বাচাতে হলে আমার তাকে দূরে পাঠাতেই হবে।তুমি এখানে থাকতে আমার মেয়েকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
মেহরাবঃআমি এখানে না থাকলেই তো হলো?
আরাফঃকি বলছো মেহরাব?
মেহরাবঃআমি আজকেই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
নিলয় কিছুই বললো না।
মেহরাবঃবাবাই।আমাকে শেষবারের মতো নূরকে দেখতে দাও।তারপর আমি চলে যাবো।প্লিজ বাবাই।প্লিজ।
মেহরাব এর চোখের পানি নিলয় এর কঠোর মনে কিছুটা হলেও আঘাত করলো।
নিলয়ঃতুমি নূরকে শেষবার এর মতো একবার দেখতে পারো।
মেহরাব কথাটা বলার পরই দৌড়ে চলে গেলো নূর এর কাছে।
আরাফঃআজকে তুই আমার বন্ধুর পদটা হারিয়ে ফেললি নিলয়।আমার ছেলেকে কাদিয়ে তুই আরাফাত চৌধুরীকে সরাসরি আঘাত করেছিস।
নিলয়ঃতোর ছেলে যেমন তোর কাছে দামী। তেমন আমার মেয়ে ও আমার জীবন।
আরাফঃআমি তোর মেয়েকে তোর থেকে দূর করি নাই।কিন্তু তুই আমার ছেলেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলি।এটা আমি বেচে থাকতে কখনো ভুলবো না।
আরাফ সেখান থেকে চলে যায়।
নিলয়ঃআমি জেনে বুঝে নূরকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে ঠেলে দিতে পারি না।আই এম সরি আরাফ।বাবার কাছে বন্ধুত্ব হেরে গেলো আজ।
মেহরাব নূর এর রুমে প্রবেশ করে।ওয়ারদা নূর এর পাশেই বসে ছিলো।
ওয়ারদাঃমেহরাব।বসো।আমি তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসছি।
ওয়ারদা উঠে চলে যেতেই মেহরাব নূরকে জড়িয়ে ধরে। নূর এর তখন জ্ঞান ফিরে আসে।
নূরঃমেহের।
মেহরাবঃহ্যা।হ্যা।পাখি বলো?এই যে আমি। আমি আছি তো পাখি।
নূরঃওরা খুব পচা মেহের।ওরা আমাকে অনেক পচা পচা কথা বলেছে।আপনি ওদেরকে মেরে ঠিক করেছেন।
মেহরাবঃশিইসসসস।বেশি কথা বলো তুমি।
নূরঃআপনি ব্যাথা পেয়েছেন?মেহের। দেখি।
নূর মেহরাব এর হাতে পায়ে দেখতে লাগলো।হাতের জায়গাটা একটু ছিলে গিয়েছে।
নূর ব্যান্ডেজ নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ করতে লাগে।
মেহরাব মুচকি হাসে।
মেহরাবঃনূর পাখি।তুমি তো অনেক ভালো ব্যান্ডেজ করো।ডাক্টার হবে আমার নূর পাখি তাই না?
নূরঃহুম।কিন্তু আমি তো রক্ত খুব ভয় পাই।
মেহরাবঃহা হা হা।তাইলে আর কি!হাতুড়ি ডাক্টার আমার।হা হা হা।
নূরঃজ্বী না।আমি খুব ভালো ডাক্টার হবো।
মেহরাবঃআমার মনে হয় না।
নূরঃকি বললেন? আমি দেখিয়ে দিবো আপনাকে।
মেহরাব মুচকি হাসলো।
মেহরাবঃআমি জানি নূর পাখি।তোমার জেদ অনেক। আমি যে থাকবো না আর তোমার জীবনে তাই তোমাকে জেদ চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।যাতে আমি না থাকলেও তুমি ভাংগো না।তোমাকে ডাক্টার হতেই হবে।(মনে মনে)
নূরঃহয়ে গিয়েছে।
মেহরাব হুট করে রেগে যায়।
মেহরাবঃআমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি একটা ভীতুর ডিম।
নূরঃএভাবে বলছেন কেন?
মেহরাবঃতো কীভাবে বলবো?ওই ছেলে গুলো যখন তোমাকে পচা কথা বলছিলো। তখন চুপ ছিলে কেন?
নূরঃআমি ভ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
মেহরাবঃভয়!!কেন ভয় পাবে তুমি?একটা কথা সবসময় মনে রাখবে নূর।
তুমি যতোক্ষন নিজের জন্য না দাঁড়াবে
কেউই তোমার পাশে দাঁড়াবে না।
আর আমি কি সবসময় থাকবো?আমি সেই সময় না থাকলে কি হতো?হ্যা? কি হতো?
নূরঃসরি।বকছেন কেন?আমাকে কেউ এভাবে বকে না।আপনি কেন বকেন?
মেহরাবঃসবাই মাথা উঠালে কি আমার ও উঠাতে হবে?ভুল করলে কি তোমাকে আদর করবো?থাকবোই না আমি এমন ভীতুর ডিম এর সাথে।আমি আজকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
মেহরাব বেড়িয়ে পড়লো।
নূর মেহরাব এর পিছু পিছু দৌড়ে যেতে মেহরাবকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
নূরঃআপনি যাবেন না।মেহের।আমি আর কখনো এমন করবো না।আমি নিজের জন্য প্রতিবাদ করবো মেহের। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন।
মেহরাবঃমেহরাব চৌধুরী মাফ করতে জানে না।নূর।
মেহরাব নূরকে ছাড়িয়ে চলে গেলো।
নূর জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো।কাদতে লাগলো। মেহরাব একবার ও পিছনে ফিরে তাকায় নাই।সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মেহরাব গাড়িতে বসে কাদতে লাগলো।
মেহরাবঃআই এম সরি নূর পাখি। আই এম সরিইইই।
কেউ একজন মেহরাব এর কাধে হাত রাখলো।মেহরাব পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশের সিটে আরাফ বসে আছে।মেহরাব আরাফকে জড়িয়ে ধরে।
মেহরাবঃআমি কিছু করি নাই।আব্বু। বাবাই আমাকে ভুল বুঝেছে।
আরাফঃআমি জানি মেহরাব।সারা দুনিয়ে এক হয়েও যদি বলে মেহরাব নূর এর ক্ষতি করেছে আমি তা মানবো না।আমি জানি আমার মেহরাব নূরকে নিজের জীবন থেকে বেশী ভালোবাসে।
মেহরাবঃআমার অতিরিক্ত ভালোবাসাই আমার কাল হয়ে দাড়িয়েছে।আব্বু।আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি।
আরাফঃনা মেহরাব।ও যদি তোমার ভাগ্যে থাকে ভাগ্য তোমায় নিজে ওকে তোমার কাছে এনে দিবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।বাচ্চা।
মেহরাবঃআমি চলে যাবো আব্বু।টিকিট কাটো।
মেহরাব চোখের পানি মুছে গাড়ি বাসার দিকে ঘুড়ালো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন