উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান - Bangla Golpo - Kobiyal - কবিয়াল
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

1111111111111111111111

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৬)

মেহরাব বাসায় এসে নবনি আদ্রিতা আদ্রিয়ান সবাইকে পায়।নবনি সোফায় বসে কথা বলছিলো আদ্রিতার সাথে।মেহরাব নবনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
নবনিঃকই গিয়েছিলে বাপ বেটা?
মেহরাবঃতুমি যখন আদ্রিতাকে নিয়ে চলে যাও আমি  কিছু বলি?
আদ্রিতাঃবলবে কি করে!! তুমিতো এমন ইনোসেন্ট লুক নিয়েই সবার আদর জিতে নাও।
আদ্রিয়ান ফুটবল এতো জোরে কিক করলো যে বল আদ্রিতার মাথায় এসে লাগতো।
মেহরাব ক্যাচ করে নেয়।
আরাফঃসাবধানে খেলো।আদ্রিয়ান। এখনই আদ্রিতা ব্যাথা পেতো।
মেহরাবঃওরে বকো কেন?বল ও জানে কার মাথায় গোবর ভরা।তাই সেখানেই যেয়ে পড়ে। যাতে গোবর কিছুটা বের হয়।
আদ্রিতাঃকি বললে ভাইয়া?আদ্রিয়ান তুই এদিকে আয় তোর খবরই আসে।অষ্টম শ্রেনিতে এ পড়িস তবুও বড় হলি না।আজকে তোর খবরই আসে।
আদ্রিয়ান দৌড়ে যেয়ে মেহরাব এর পিছনে লুকালো।
মেহরাবঃআদ্রিতা আপু। আমি কিন্তু তোর বড়।খবরদার ওকে কিছু বলবি না।
আদ্রিতাঃ১ মিনিট এর বড় আমি মানি না।পেটে তো আমরা একসাথেই এসেছিলাম।
মেহরাবঃআব্বু। কিছু বলো না।
আরাফঃবলার আর কিছুই নাই।তুই তো চলেই যাবি।আজকে মারামারি করে নে।
নবনিঃচলে যাবে মানে!!কোথায় যাবে?
আরাফঃবিদেশে।
নবনিঃকিহহ।কেন?
আদ্রিতাঃভাইয়া কেন যাবে?
আরাফঃআজিব তো। ছেলেকে কি পড়াশোনা করাবে না?ভালো মানসম্মত পড়াশোনা করতে হলে তো বিদেশে যেতেই হবে।আমিও তো আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করেছি।
(রাস্তায় মেহরাব আরাফকে নিষেধ করেছিলো নূর এর ব্যাপারটা সবাইকে জানাতে।তাই আরাফ কথাটা ঘুরিয়ে উপস্থাপন করলো)
নবনিঃকোনো দরকার নেই।আমার ছেলে একা কি করে থাকবে?
আরাফঃএকা কই নবনি? বাবা আর রাজ ও তো ওখানেই আসে।ওদের সাথে থাকবে।
নবনিঃকিন্তু
মেহরাবঃআম্মু।আমি যেতে চাই।আমাকে বাধা দিও না প্লিজ।তুমি কি আমার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাড়াবা?
(নবনি বাবা ছেলে মিষ্টি মিষ্টি মন ভোলানো কথার মাঝে বেশিখন টিকতে পারলো না।আর হ্যা বলে দিলো)
আদ্রিয়ান তিথির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।তাই সেও বিদেশে যাওয়ার বায়না ধরলো।
আদ্রিয়ানঃআমি ও যাবো ভাইয়া সাথে।
আরাফঃকেন???তুমি যেয়ে কি করবে?
আদ্রিয়ানঃআমি এতোক্ষন তোমাদের কথা মন দিয়ে শুনছি।আর যা বুঝলাম বিদেশ গেলেই ভালো রেসাল্ট করা যাবে।আর তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করতে পারবো।
নবনিঃকি শুরু করলি তোরা?
আদ্রিয়ানঃআম্মু। আমি ভাইয়াকে দেখে শুনে রাখবো। ভাইয়া ওখানে যেয়ে কি না কি করে। আর তুমিতো জানোই আমি আব্বুর মতো আর্মী জয়েন করবো।আমাকে ভালো রেসাল্ট করতেই হবে।
আরাফঃআদ্রিতা তুমিও যাবা?
আদ্রিতাঃখায়া লয়া কাম নাই তো আমার। দেশ রাইখা বিদেশে মরতে যাবো।আমি এখানেই থাকবো।
মেহরাব নবনির এক পা ধরে বসে গেলো।তার দেখাদেখি আদ্রিয়ান ও আর এক পা ধরে বসে গেলো।
আরাফ আদ্রিতা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আরাফ এর মনে পড়ে গেলো সেও একদিন নবনিকে পাওয়ার জন্য এমনই বায়না ধরেছিলো।আজ মেহরাব আর আদ্রিয়ান নূর আর তিথির জন্য ও তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করার জেদে নেমেছে।ইতিহাস রিপিট হচ্ছে।আরাফ এর হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে পড়লো।
আদ্রিতাঃআব্বু। তুমি কাদছো?
মেহরাব আদ্রিয়ান নবনি সবাই আরাফ এর দিকে তাকায়।
আরাফঃকি যে বলো।আরাফাত চৌধুরী আবার কাদতে পারে নাকি?!!
নবনিঃনাহ। একদমই না।
আরাফ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।যার মানে ছিলো ছেলেমেয়েদের সামনে আমার মান সম্মান রেখো।
নবনি বুঝতে পেরে কথাটা ঘুরিয়ে দিলো।
নবনিঃআচ্ছা।যাও তোমরা ব্যাগ গুছাও।
মেহরাব আদ্রিয়ান একসাথে ইয়েএএএ বলে উঠলো।
আদ্রিতাঃবিদেশে যাওয়ার জন্য মানুষ এতো পাগল হয় তোদের মতো তাড়ছিড়াদের না দেখলে জাতি জানতোই না।
মেহরাবঃকার বুকে যেনো আগুন জ্বলছে।ইসসস টিকা যাচ্ছে না।
আদ্রিয়ানঃঅনেক পোড়া গন্ধ। চলো রুমে চলে যাই।আর একটু ক্ষন এখানে থাকলে যে জ্বলতেসে সেই দম বন্ধ করে মারা যাবে।
আদ্রিয়ান মারতে ছুটে গেলো।মেহরাব আদ্রিয়ান ভৌ দৌড় দিলো।
আরাফ নবনিকে জড়িয়ে ধরলো।
আরাফঃআমার বউ কিন্তু অনেক স্ট্রং।
নবনিঃহুম।
মেহরাব আদ্রিয়ান সেই দিনই ফ্লাইটে করে আমেরিকা চলে গেলো।মেহরাব যাওয়ার পর নূর বদলে গেলো।হাসতে ভুলে গেলো।সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে।নূর এর মাঝে জেদ চেপে বসলো।আরাফ এর কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমান এর জেদ।আরাফ এর প্রতি করা সব রাগ নূর পড়াশোনায় বের করলো।
বছরের পালা বদলে মেহরাব এর প্রতি নূর এর ভালোবাসা আর রাগ দুটোই তীব্র হলো।যার ফল মেহরাব এর বিদেশ থেকে ফেরত আসার দিন বের হলো।এর আগে মেহরাব চার বছরে একবার ও নূর এর সাথে যোগাযোগ করে নাই।
বর্তমান~
আরাফঃকি?কিছু মনে পড়ে?
নিলয় কিছুই বললো না।
আরাফঃআজকে মেহরাব এর এক্সিডেন্ট এর কারনটা যে নূর এর বিয়ে এটা বুঝতে আমার ৩ সেকেন্ড লাগে নাই।নিলয়।
নিলয়ঃআমি নূরকে কখনো মেহরাবকে দিবো না আরাফ।
আরাফঃআজকের পর আমি নিজেই নূরকে আমার ছেলের জন্য গ্রহন করবো না।এতোদিন আমি মেহরাব আদ্রিতা আদ্রিয়ান নূর আর তিথির বাবা হয়ে চুপ ছিলাম।এখন থেকে আমি শুধুই মেহরাব আদ্রিয়ান আদ্রিতার বাবা।আজকের পর মেহরাব কখনো নূর এর এগোবে না।এটা আরাফাত চৌধুরীর ওয়াদা।
আরাফ বেরিয়ে পড়লো।
নিলয়ঃএমনটা কখনোই হবে না।আরাফাত চৌধুরী। 
আরাফ মুচকি হেসে চলে গেলো।
আরাফ মেহরাব এর কেবিনে আসে মেহরাব এর সাথে কথা বলতে।মেহরাব এর পাশে আদ্রিতা আদ্রিয়ান তিথি নূর আরিয়ান সবাই বসে আছে।
আরাফ আরিয়ান এর দিকে তাকিয়ে একটা ভ্রু উঁচু আর একটা ভ্রু নিচু করে ।যার মানে কে তুমি?
আরিয়ানঃআসসালামু আলাইকুম।আংকেল।আমি নূর এর হবু স্বামী।
আরাফঃওহ। আই সি।
তিথিঃবাবাই বসো এখানে। 
তিথি উঠে আরাফকে বসার জায়গা দিলো।আরাফ মেহরাব এর পাশে যেয়ে আরামসে বসলো।
আরাফঃআমাকেতো চিনতেই পেরেছো!!এখানে বসে থাকা সব বাচ্চার বাবা আরাফাত চৌধুরী। 
আরিয়ানঃহ্যা।আংকেল। চিনতে পেরেছি।কিন্তু আপনি কি আমার ও বাবা।মানে ওই যে বললেন এইখানে বসে থাকা সব বাচ্চার বাবা।
আরাফঃস্মার্ট নয় এটাকে ওভার স্মার্ট বলে।তা এসব কথা বলা ছাড়াও কিছু করো নাকি।দেখে তো বেকারই মনে হচ্ছে।
আরিয়ানঃএখন বুঝলাম আদ্রিতা আদ্রিয়ান আর মেহরাব এমন বাকা কেন!!কারন তাদের বাবাই একজন বাকা মানুষ।আমাকে দেখে যে খুশি হয় নেই তা ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে।আমি যে কোন কুক্ষনে আদ্রিতা সামনে পড়েছিলাম।ভাবছিলাম আজকেই নিলয় আংকেলকে বলে বিয়েটা ভাংবো কিন্তু এখানেই তো জটলা লেগে আছে।বুঝতে পারছি না আমার কোন দোষ এর কারনে এরা আমাকে এতো অপচ্ছন্দ করছে। (মনে মনে)
আরাফঃকই হারিয়ে গেলে আরিয়ান?
আরিয়ানঃহ্যা হ্যা হ্যা আংকেল।
আমি ডাক্টার।ঢাকা মেডিকেল এর কিডনি বিভাগের ডাক্টার।
আরাফঃওহ।আচ্ছা তোমরা সবাই বাইরে যাও।আমার মেহরাব আদ্রিতা আদ্রিয়ান এর সাথে কিছু কথা আছে।
তিথিঃআমি থাকবো। 
নূরঃআমিও।
আরিয়ানঃসবাই থাকলে আমি কেন যাবো?
আরাফঃনূর তোমার কালকে বিয়ে।আরিয়ান এর উপর মনোযোগ দাও।আরিয়ান ওকে নিয়ে যাও।আর বিথি চিন্তা করছে তিথির জন্য। আরিয়ান ওকে নামিয়ে দিয়ো।
এখন তোমরা যেতে পারো।
সবাই অবাক হয়ে আরাফ এর দিকে তাকিয়ে আছে।আরাফ এতো কঠিন হতে পারে তা সবার কল্পনার ও বাইরে।কারন আরাফ সব সময় সবার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি সর্ম্পক বজায় রাখতো।
নূর একটু কষ্টও পায় আরাফ এর ব্যবহারে।তিথি আরিয়ান আর নূর চলে যায়।
মেহরাব আদ্রিতা আদ্রিয়ান খুব চিন্তিতো।তার এক জন আর এক জন মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
আরাফঃমেহরাব।
মেহরাবঃহ্যা আব্বু।বলো।
আরাফঃনূরকে ভুলে যাবে তুমিই।
আদ্রিয়ান আদ্রিতা একসাথে বলে উঠলো কিহ!!!
মেহরাব স্থির হয়ে রইলো।উচ্চারণ করার মতো কোনো শব্দই সে পাচ্ছে না।
আরাফঃনূর তার জীবনে এগোচ্ছে।আর আমি চাই না মেহরাব নূর এর জন্য আর এক বিন্দু পরিমান কষ্ট  পাক।
মেহরাবঃআমি পারবো না।আব্বু।
আদ্রিয়ানঃভাইয়া ভাবিকে অনেক ভালোবাসে আব্বু।বিদেশে একটা রাত ও এমন ছিলো না যে ভাইয়া নূর ভাবীর জন্য কাদে নাই।তুমি এই অন্যায় করো না ভাইয়ার সাথে।
আরাফঃআর নূর এর যে কালকে বিয়ে তার কি করবে তোমরা?
আদ্রিতাঃআব্বু।বিয়েটাকে আমরা আটকে দেই।তাহলেই তো হয়।
আরাফঃনা।আমি নিলয়কে ওয়াদা করেছি যে মেহরাব আর কখনোই নূর এর দিকে ফিরে তাকাবে না।আমি আশা করি আমার ছেলে মেয়ে এই ওয়াদা রাখবে।
আরাফ মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে এই কথাটা বলে। মেহরাব এর চোখ দিয়ে টুপ করে পানি পড়লো। কেউ দেখার আগেই মেহরাব সেটা মুছে নিলো।কিন্তু আরাফ ঠিকই বুঝতে পারলো।আরাফ এর বুকটা ঝলসে গেলো ছেলের কষ্টে।
আরাফঃতোমরা তিন জন এর একজন ও নূর এর বিয়ে ভাংগা নিয়ে পাগলামি করবে না।
আদ্রিয়ানঃকিন্তু আব্বু
মেহরাবঃআমি ওয়াদা করলাম আব্বু।আমিই তোমার ওয়াদা জীবন দিয়ে হলেও রাখবো।নূর এর কালকেই বিয়ে হবে।আমি নিজে সব কিছুর আয়োজন করবো।
আরাফ সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।আরাফ এর পিছনে আদ্রিতাও চলে গেলো।
নূর বাসায় আসতেই নিলয় এর মুখোমুখি হলো।
নিলয়ঃতোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।ফ্রেশ হয়ে রুমে এসো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন