গল্প : মিথ্যা
লেখক : নাজিম উদ দৌলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ই আগষ্ট, ২০১৬ ইং
লেখক নাজিম উদ দৌলার “মিথ্যা” শিরোনামের এই গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য এটি হুবহু প্রকাশিত হল। লেখক অনবদ্য এ গল্পটি ২০১৬ সালের ১০ই আগষ্ট লিখেছেন।
![]() |
মিথ্যা || নাজিম উদ দৌলা |
মিথ্যা || নাজিম উদ দৌলা
নিশুতি রাত! গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ঘড়িতে সময় রাত একটা। নগরীর মানুষ সব ঘুমিয়ে পড়েছে। দুই-চারটা বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়া রাস্তায় আর কোনো প্রাণী নেই। তাই তো এত রাতে একটা হান্টিং নাইফ হাতে অনায়াসে হেঁটে যেতে পারছি। কেউ দেখছে না আমাকে, বাধা দেওয়ার কেউ নেই!
আজ একটা খুন করব আমি। আমার জীবনের প্রথম খুন এবং সম্ভবত শেষ খুন! কেউ জানবে না আমার এই দুরভিসন্ধির কথা। শুধু সাক্ষি থাকবে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্ট, রাতের নিস্তব্ধতা আর আমার চাপা দ্বীর্ঘশ্বাস!
কাকে খুন করব জানতে চান?
একটি মেয়েকে!
মেয়েটির নাম?
নুসরাত।
খুন করার কারণ?
কারণ সে আমাকে মিথ্যা বলেছে!
মিথ্যা! সব মিথ্যা! নুসরাত আমাকে যা বলেছে সব মিথ্যে! সব বানোয়াট!
গত আষাঢ়ের এক বৃষ্টির দিনে যখন দুজনে একই ছাতার নিচে পরস্পরের গায়ে সেঁটে হাঁটছিলাম, নুসরাত বলেছিল, “আমি তোমাকে ভালবাসি!”
মিথ্যা!
এক বিকেলে শহিদুল্লাহ হলের সামনের পুকুর পাড়ে আমার হাত ধরে নুসরাত বলেছিল- “আমি তোমাকে কখনও ছেড়ে যাব না!”
আরো এক মিথ্যা!
এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে আমার গলায় ঠোঁট বুলিয়ে মেয়েটি বলেছিল- “তুমিই আমার জীবনের শেষ পুরুষ!”
সবচেয়ে বড় মিথ্যা!
নুসরাত তার কথা রাখেনি! ঠুনকো মনোমালিন্যের জের ধরে সে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে! তার পিতা দুবাই ফেরত এক পয়সাওয়ালা মধ্যবয়সী দুম্বার সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে। নুসরাত হি হি করে হাসতে হাসতে রাজি হয়ে গেছে! একবারও চিন্তা করেনি- আমার কি হবে?
আমি তো তাকে ভালবেসেছি হৃদয়ের গভীর থেকে!
আমি তো তাকে ছাড়া আর কাউকে জীবনে জড়াই নি!
আমার জীবনে প্রথম, শেষ এবং একমাত্র নারী- নুসরাত!
তাহলে কেন সে আমার সাথে এমন করলো?
আর মাত্র দু’দিন পর নুসরাতের বিয়ে হবে! আমি কোন অবস্থাতেই তা মেনে নিতে পারি না! নুসরাত যদি আমার না হয়, তাহলে আমি তাকে আর কারো হতে দেব না! তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- নুসরাতকে খুন করবো আমি! নিজ হাতে!
নির্জন রাতের আঁধারে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পথ দেখে হাঁটছি আমি। শান্তিনগর বাজারের গলির সামনে এসে একমুহূর্ত থামলাম। হঠাৎ আকাশে বিজলির ঝলক দেখা দিলো, প্রকান্ড শব্দে ভয় পেয়ে হয়তো অনেকের ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু ওরা জানে না, বজ্রপাতের চেয়েও অনেক জোরে শব্দ করে কাঁদছে আমার হৃদয়।
হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্যে চলে এলাম আমি। একটা বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়ালাম। নামফলকে ঠিকানা লেখা আছে-
“৩২/৪, পীর সাহেবের গলি, শান্তিনগর”
নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার বুক চিঁড়ে। এই বাড়িতে একদিন বরের বেশে আসার কথা ছিলো আমার! হায় সেলুকাস! এসেছি খুনীর বেশে!
দোতালার ব্যালকনির পাশের ঘরটি নুসরাতের শোয়ার ঘর। ছোটবেলা থেকে তালগাছ থেকে নারকেল গাছে লাফিয়ে বেরিয়েছি আমি। পানির পাইপ বেয়ে দোতালার ব্যালকনিতে উঠে পড়তে আমার দুই মিনিটের বেশি লাগলো না!
ব্যালকনির দরজা ভেতর থেকে সিটকিনি আটকানো ছিল। কিন্তু পাশেই জানালা। কাঁচ টেনে জানালা খুলে দরজার সিটকিনি খুলতে লাগল আরও দুই মিনিট! গোটা পরিকল্পনায় এটাই ছিল সবচে কঠিন কাজ! কিন্তু এত সহজেই ভেতরে ঢুকে পড়তে পারব ভাবিনি!
জ্যোৎস্নার অল্প আলোতে বিছানায় শুয়ে থাকা নুসরাতকে লাগছে দেবীর মত! কি অপূর্ব সুন্দর তার দেহের গড়ন! সবকিছু সুন্দর দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা তাকে। শুধু দেয়নি সুন্দর একটা মন!
আমার চোখের কোণ বেয়ে দু-ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। এত ভালোবাসি যাকে, তাকে আজ নিজ হাতে মেরে ফেলবো। ভাবতেই বুক ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু আমার সাথে মিথ্যা বলার শাস্তি আজ তাকে পেতেই হবে!
সময়ক্ষেপণ করলাম না। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল আমার। লম্বা দম নিলাম। দু-হাতে ছুরি ধরে প্রস্তুত হলাম। তারপর গায়ের জোরে নামিয়ে আনলাম নুসরাতের বুকের উপর। আমূল ঢুকে গেছে ছুরিটা! তীব্র যন্ত্রণায় আর্ত-চিৎকার করে উঠলো নুসরাত।
সেই চিৎকার শুনে আমারও গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।
বাইরে খুব হইচই শুরু হয়ে গেছে! বাসার লোকেরা নুসরাতের চিৎকার শুনে জেগে উঠেছে। বাঁচতে হলে এখনই পালানো দরকার! কিন্তু আমি পালাতে চাই না! ওরা ধরতে পারলে আমাকে পুলিশে দেবে, শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড! তাতে কি? নুসরাতকে শেষ করে দিয়েছি! এখন আর আমি বেঁচে থাকব কার জন্য?
লোকজন দৌড়ে এসে নুসরাতের ঘরে ঢুকলো। লাইট জ্বালানো হলো। এদের কাউকে আমি চিনি না! নুসরাতের বাসার মানুষকে তো আমি দেখেছি আগে! এরা কারা? ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানায় যন্ত্রণায় কাঁতরাতে থাকা নুসরাতের দিকে তাকালাম আমি। এবং বুঝলাম-
নুসরাত আরো একটা মিথ্যা বলেছে আমাকে!
তার বাসার ঠিকানা মিথ্যা বলেছে!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
....সমাপ্ত....
লেখক সংক্ষেপ:
নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘অ্যানালাইজেন’-এ কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প ‘কবি’ প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস ‘ইনকারনেশন’। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ‘ব্লাডস্টোন’ তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ১টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী চরিত্র ‘মাসুদরানা’ নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। এছাড়াও ‘শান’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সহ বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। অবসর সময় কাটে বই পড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ এক হয়ে দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন