উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৯১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯২)
এগারো বছর পর,
কানাডার ড্যানফোর্থ শহরের "ঢাকা কাবাব" রেস্টুরেন্টে বসে খুব স্বাদ করে জিলাপি খাচ্ছে জিন্স টপ পরা, একুশ বছরের সুন্দরী তরুণী দিশা। প্রতি রবিবার বিকেলেই সে আশেপাশের কোন না কোন বাঙালি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যায়। দশ বছর বয়সে সেই যে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় এসেছে সে, আর কখনো দেশে যায়নি। নিজের দেশকে খুব মিস করে সে। তাই সময় পেলেই বাঙালি রেস্টুরেন্টে চলে যায় সে। বাঙালি রেস্টুরেন্টে এলে কিছু সময়ের জন্য নিজের দেশে আছে বলে মনে হয় তার। তাই ছুটি পেলেই বাঙালি রেস্টুরেন্টে যায় সে। তেমনই আজকেও এসেছে সে। অনেকদিন ধরে জিলাপি খাওয়া হয় না, তাই এসেই জিলাপি অর্ডার করে তৃপ্তি করে খাচ্ছে সে। তার ঠিক সামনেই বসে ফোন দেখতে থাকা তার নতুন বান্ধবী কানাডিয়ান মেয়ে ইমা উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
- হেই ডেইসা।
কপালে বিরক্তের ভাঁজ পড়ে দিশার। ইমা নামের এই মেয়েটা খুব সহজ সরল। তাই তার সাথে ছয়মাস আগে বন্ধুত্ব হয় দিশার। কিন্তু এই মেয়ের বাংলা উচ্চারণ জঘন্য। তার এতো সুন্দর দিশা নামটাকে ডাস্টবিন বানিয়ে দিল! এই দীর্ঘ ছয়মাসেও এই মেয়েকে তার নামটা ঠিক মতো শিখাতে পারেনি সে। আচ্ছা, সে কি টিচার হিসেবে খারাপ নাকি এই মেয়ে স্টুডেন্ট হিসেবে ডাব্বা মার্কা? এইসব চিন্তা আপাতত সাইডে রেখে, কন্ঠে বিরক্ত ভাব নিয়েই দিশা বললো
- হাউ মেনি টাইমস ডু আই হেভ টু সে টু ইউ মাই নেইম ইস দিশা, নট ডেইসা।
ইমা বোকা হেসে বললো
- ওকে, ওকে সরি। বাট ডু ইউ নো দিস ইয়ার প্রিটজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ উইনার ইস বেঙলাদেশী।
"বেঙলাদেশী" শব্দটা খুব কানে বাজে তার, তাই এতো খুশির একটা খবর শুনেও না হেসে, শক্ত কন্ঠে বললো
- ইটস বাংলাদেশী, নট বেঙলাদেশী। প্লিজ, সে ইট প্রোপারলি। বাই দা ওয়ে, হোয়াট ইস দা নেইম অফ দা উইনার?
ইমা ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে পড়তে পড়তে বললো
- ইটস আয়েদ ইসলাম আটুল।
নিশার জিলাপি খাওয়া শেষ। হাত মোছার জন্য টিস্যু নিতে নিতে মুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বলল
- উফ! ইউ,,,,,,,সো মি।
ইমার নিজের হাতের ফোনটা নিশার দিকে ঘুরায়। নিশা টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ফোনের স্কিনের দিকে তাকায়।
এদিকে,
ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের টপস আর কালো রঙের লং স্কার্ট পরা একটা মেয়ে। পিছনে ঘুরে আছে দেখে মুখ দেখা যাচ্ছে না, শুধু কাঁধ পর্যন্ত লম্বা কুচকুচে কালো চুলগুলো দেখা যাচ্ছে। বিছানার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়া করিয়ে রাখা গিটারটা হাতে নেয় মেয়েটা। হেটে জানালার সাথে আট্যাচ কাউচে বসে, গিটার বাজিয়ে গান শুরু করল
- It’s a little cold in paradise tonight
Love faded
I’m finding new forms,
I’ll ride it out
It’s fine for now
Then you come along and I cry
Liberated
I’m seeing clearly now,
there’s no turning back
And I’m overwhelmed
রেস্টুরেন্টে,
একজন মানুষ নিজের চোখ জোড়া যতটা বড় করতে পারা যায়, ঠিক ততটা বড় করে স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে দিশা। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে স্কিনের দিকে তাকিয়ে থেকে, উঠে এক দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়। ইমা কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো সেখানে বসে নিশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
এদিকে,
খোলা জানালা দিয়ে আসা বাতাসে জানালার দুইপাশে লাগানো সাদা পর্দাগুলো উড়ছে। তার মধ্যে বসে মিষ্টি কন্ঠে এখন গান করছে মেয়েটা। গিটারের তালে তালে মেয়েটা গাইছে
- Do you really want to set the night on fire
You’re my only way out
Do you really want to turn your life around again
You know you’re my last chance
রেস্টুরেন্টের সামনে,
দিশা পার্কিং-এ রাখা নিজের সাইকেলটা নিয়ে রওনা হয়। ইমা পার্কিং এসে দিশাকে চলে দেতে দেখে পিছু ডাকল
- ডেইসা।
কিন্তু দিশা শুনে না। দ্রুত গতিতে সাইকেল চালতে থাকে।
এদিকে,
মেয়েটা গান গাইছে,
- Can you feel my
Can you feel my
Can you feel my tears they won’t dry
Can you feel my
Can you feel my teardrops of the loneliest girl
The loneliest girl
রাস্তায়,
দিশা যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে,
মেয়েটা এখনও গান গাইছে,
Can you really love with a broken heart
In the cold rain
I’m giving it a try
I’ll let it fly
You can count me in
So when the night falls
I’ll be on your side
These eyes don’t lie
Cause my defeated heart’s got nothing to hide
It’s my only vice
বাসায় কাছে,
বাসার কাছে আসতেই নিশার কানে ভেসে আসে মিষ্টি গানের সুর। সাইকেলটা পার্ক করে দ্রুত বাসার ভিতরে যায় সে। গানের কথাগুলো তার কানে আরও স্পষ্ট আসতে থালে
- Can you feel my
Can you feel my
Can you feel my tears they won’t dry
Can you feel my
Can you feel my
Can you feel my tears they won’t dry
Can you feel my
Can you feel my
Can you feel my tears they won’t dry
Can you feel my
Can you feel my teardrops of the loneliest girl
The loneliest girl
রুমের খোলা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে জানালার দারে বসে গান করতে থাকা মেয়েটার দিকে। মেয়েটার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে এক মনে গিটার বাজিয়ে গান করে চলেছে,
- Keep it keep it close to your heart
and it won’t go
Keep it keep it close
and then you’ll start to grow.
মেয়েটার গান শেষ করে চোখ দুটো বন্ধ করে, উপরের দিকে মুখ তুলে। ফর্সা মিষ্টি চেহারায় গোল ফ্রেমের চশমাতে মেয়েটাকে ভালোই মানিয়েছে। দিশা মেয়েটার কাছে গিয়ে, কাঁধে হাত রেখে নম্র কন্ঠে ডাকল
- আপুনি।
মেয়েটা চোখ খুলে, ঘাড় ঘুরিয়ে দিশার দিকে তাকায়। মেয়েটার এই মলিন মুখ দেখে দিশার খুব কষ্ট হয়। কে বলবে এই তার সেই হাসিখুশি মিষ্টি বোন দোলা। যে মেয়ের মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকতো, সেই মেয়ের মুখে গত দশ বছরে হাসি দেখেনি সে। একটা দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করে, দিশা মেয়েটাকে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আজকের নিউজ দেখেছ আপু?
দোলা শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- না।
দোলা পরক্ষণেই আবার পাল্টা প্রশ্ন করল
- কেন?
দিশা আনন্দের সাথে বললো
- তুমি জানো, এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে কেউ প্রিটজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ পেয়েছে আর সেটা হচ্ছে অতুল ভাইয়া।
দিশার কথা শোনার পরই চোখ দিয়ে ঝরনা দ্বারার মতো জল গড়িয়ে পরতে থাকে দোলার। দশ বছর আগে কানাডায় আসার পর থেকে টানা দুই বছর দোলা কেঁদেছিল। খুব কেঁদেছিল। তারপর থেকে গত নয় বছরে দোলার চোখে পানি দেখেনি কেউ। আজকে আবার দোলা কাঁদছে সে। তবে এই কান্না আর দুই বছর আগের কান্নার মধ্যে পার্থক্য আছে। দুই বছর আগের কান্না ছিল দুঃখের কান্না, প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে আসার কষ্টের কান্না। কিন্তু আজকের এই কান্না হচ্ছে সুখের কান্না, ভালোবাসার মানুষটির সাফল্যের খবর শুনে চোখ বেয়ে পড়া আনন্দের অশ্রু।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৯৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন