উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯১)


দু:খিত আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন তা এই মূহুর্তে বন্ধ ,,,,,,,,,
যান্ত্রিক মেয়েলি কন্ঠস্বরের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই কাব্য লাইন কেটে দেয়। কপালের চিন্তার ভাঁজটা আরও গভীর হয়। কাব্যর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মিসেস কবিতা চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি রে কুহু ফোন রিসিভ করল?
কাব্যের সাথে ড্রয়িং রুমের সোফাতে কাদো কাদো মুখ নিয়ে বসে থাকা কিরণও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য মিসেস কবিতার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- নাহ, মা। ফোন এখনো সুইচড অফ বলছে।
মিসেস কবিতা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো
- কোথায় গেল মেয়েটা? আর ফোনটাই বা বন্ধ কেন বলছে? খুব চিন্তা হচ্ছে রে কাব্য।
কাব্য নিজের চিন্তাটাকে আড়াল করে, ফোনটা টাউজারের পকেটে রাখতে রাখতে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মিসেস কবিতাকে বললো
- চিন্তা করো না মা, হয়তো মার্কেটে গয়েছে আর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি রাস্তায় এগিয়ে গিয়ে দেখি।
যদিও কাব্য এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাও মিসেস কবিতার ভয় হয়, কাব্যকে একা একা এই দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে বাহিরে যাক। কাব্য গোপন করার চেষ্টা করলেও, মিসেস কবিতা তো মা। তিনি ঠিকই কাব্যের চিন্তাটা বুঝে। তাই তিনি কাব্যকে বললো
- তুই একা জাসনা, কিরণকেও সাথে নিয়ে যা।
কাব্যও বুঝে কিছুদিন আগে মাএ এতো বড় একটা দুর্ঘটনা হওয়ার পর মিসেস কবিত তাকে এই অসময়ে একা বাড়ির বাহিরে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। তাই ছোট করে কাব্য বললো
- আচ্ছা।
কারণের দিকে তাকিয়ে পুনরায় কাব্য বললো
- চল কিরণ।
কিরণ কোন কথা না বলে উঠে দরজার দিকে আগায়। কাব্যও মাএ দরজার দিকে পা বাড়ায় এমন সময় কাব্যের টাউজারের পকেটে থাকা ফোনটা সশব্দে বেজে উঠে। কাব্য তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে। যদি কুহু ফোন করে থাকে তাই। কিন্তু স্কিনে ভেসে উঠা "পৃথা" নামটা দেখে তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে। এখন এই সময়ে মাথায় এমন একটা চিন্তা নিয়ে তার কারও সাথেই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কিছু বন্ধুত্বের খাতিরে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কলটা রিসিভ করে, যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত স্বাভাবিক রেখে বললো
- আসসালামু আলাইকুম পৃথা।
💞
রাত বারোটা বেজে উনিশ মিনিট। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থেকে চাঁদটা আবছা আলোয় আলোকিত করে রেখেছে পুরো ধরণী। কাব্য আর কুহুর রুমের ভিতরও একই অবস্থা। রুমে জ্বালানো ড্রিম লাইটের রঙিন ক্ষীণ আলোতে আলোকিত হয়ে আছে পুরো রুম। এই আলোতেই অসচ্ছ ভাবে দেখা যাচ্ছে বিছানায় কাব্যের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকা কুহুকে। যে এখন কাব্যকে তার কিডন্যাপ হওয়ার কাহিনি বিস্তারিত ভাবে বলছে,
আজকে দুপুরে -------
কোচিং থেকে রিকশায় করে কুহু যখন বাসায় ফিরছিল। তখন, রিকশার সামনে একটা কালো রঙের মাইক্রো এসে থামে। যার ফলে থেমে যায় কুহুর রিকশা। মাইক্রো থেকে তিনজন লোক নেমে রিকশায় বসা কুহুকে ঘিরে ফেলে। কুহু ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করে, শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কারা তোমরা? এভাবে আমাকে ঘিরে রেখেছ কেন?
লোক তিনজন কথার উত্তর দেয় না। একজন লোক কুহুর নাকের কাছে কিছু একটা স্প্রে করলে জ্ঞান হারায় কুহু।
পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় কুহু। নিজেকে একটা রুমের খাটে উপর সোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে সে। এটা তার কোন পরিচিত রুম না। মনে পড়ে যায় তাকে কেউ কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে। সে এখন কোথায় আছে তা বুঝার জন্য ভালো করে পুরো রুমে চোখ বুলোয় সে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রুমটায় এই খাট আর একটা আলমারি ছাড়া আর কিছু নেই। শোয়া থেকে উঠে বসে সে। তখনই রুমের ভেজানো দরজা খুলে হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে, রুমের ভিতরে ঢুকে ফর্সা গায়ে লাল-কালো রঙের শার্ট-প্যান্ট পরা নিরব। কুহুকে খাটের উপর বসে থাকতে দেখে নিরব মিষ্টি হেসে বললো
- তোমার জ্ঞান ফিরেছে, কুহু পাখি।
অবাক চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে বিষ্মিত কন্ঠে কুহু বললো
- নিরব ভাইয়া তুমি! তুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছ!
একটু থেমে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
- অবশ্য আমি অবাক হচ্ছি কেন? যে নিজের বোনের স্বামীকে মারার জন্য লোক ভাড়া করতে পারে, তার জন্য এটা অসম্ভব কিছু না।
নিরব ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বললো
- একটু ভুল বললে কুহু পাখি। ওটা বোনের স্বামী হবে না। হবু বউয়ের এক্স হাসবেন্ড হবে আর কিছুক্ষনের মধ্যে হবু বউ কথাটাও আর থাকবে না।
কুহু রাগে দাত কিড়মিড়িয়ে বললো
- আমি মরে গেলেও কাব্যকে ডিভোর্স দিব না আর না তোমাকে বিয়ে করবো।
নিরব শয়তানি হাসি হেসে বললো
- আর যদি কাব্য বেঁচেই না থাকে, তাহলে তো তোমার ওকে ডিভোর্স দিতে হবেই না।
কুহু বিষ্মিত চোখে নিরবের দিকে তাকায়। নিরব শক্ত কন্ঠে বললো
- একবার বেঁচে গিয়েছে দেখে, বার বার বেঁচে যাবে এমন গ্যারান্টি কিন্তু নেই।
কুহু অনুনয়ের কন্ঠে বললো
- প্লিজ, ভাইয়া তুমি এমন কেন করছ। আমার নিজের কোন ভাই নেই। সেই ছোটবেলা থেকেই তোমাকে নিজের আপন বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করি, ভালোবেসি।
কপালে ভাঁজ ফেলে নিরব বললো
- দুনিয়ার সবাই যদি আমার বোন হয়, তাহলে আমার বউ হবে কে?
হাতের শপিং ব্যাগটা বিছানায় কুহুর পাশে রেখে নিরব পুনরায় বললো
- কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রেডি হয়ে নেও। না হয় কাব্য আর এই পৃথিবীতে থাকবে না।
তখনই রুমে পুলিশের সাথে ঢুকে পৃথা। পুলিশ নিরবের দিকে বন্দুক তাক করে বললো
- মিষ্টার নিরব হত্যা আর অপহরণের অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
নিরব পৃথার দিকে বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে, রাগী কন্ঠে বললো
- পৃথা তুমি পুলিশকে খবর দিয়েছ! ইউ ষ্টুপিড ফুল। আমি কুহুকে নিয়ে সরে পড়লে তো কাব্য তোমারই হয়ে যেত।
কাব্যের অন্য কোন মেয়ের সাথে রিলেশন আছে কিনা, তা জানার জন্য। তখনই জানতে পারে কাব্যকে একতরফা ভালোবাসা পৃথা সম্পর্কে। পৃথাকে অনেক বুঝায় যেন তার সাথে মিলে কাব্য আর কুহুকে আলাদা করে। কিন্তু পৃথা রাজী হয় না। এরপর আর নিরবের সাথে পৃথার কোন কথা বা দেখা হয়নি। কিন্তু কাব্যের এক্সিডেন্টের খবর জানার পর পৃথার নিরবের উপর সন্দেহ হয়। তাই সে নিরবকে খুঁজতে থাকে আর ভাগ্যক্রমে ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় কুহুকে কয়েকজন লোককে কিডন্যাপ করতে দেখে ফেলে। পুলিশ আর কাব্যকে ফোন করে সেই কিডন্যাপারদের ফলে করে আসে। পৃথা একগাল হেসে বললো
- আমি কাব্যকে ভালোবাসি। কাব্যের মোহে পরিনি। ভালোবাসার মানুষকে সুখী দেখার মধ্যে যে কি সুখ আছে, তা তোর মতো স্বার্থপর মানুষ বুঝবে না।
তখনই একপ্রকার দূরে রুমে ঢুকে কাব্য।
বর্তমানে ----------------
পুরো কাহিনি বলার পর কুহু কাব্যের বুক থেকে মাথা তুলে কাব্যের দিকে তাকিয়ে, মলিন কন্ঠে বললো
- পৃথা তোমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে তাই না? তোমার খুশির জন্য ও তোমাকে ছেড়ে গেল। কিন্তু আমি তোমার রিজেকশন শুনে ঘরে তান্ডব চালালাম।
কুহুর শেষের কথাটা শুনে কাব্য হেসে দিয়ে বললো
- পৃথা জানে যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে ছেড়ে, তাকে ভালোবাসাবো না। অন্যদিকে, তুমি জানতে আমি কালো বলে তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না, তাই তুমি আমাকে জোর করেছ। তোমার ক্ষেত্রেও যদি এমন হতো যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তাহলে তুমিও কখনো আমাকে জোর করতে না। ছোটবেলা থেকে তুমি আমাকে যতটা সাপোর্ট দিয়েছ, যতোটা ভালোবাসো। অন্য কেউ তা পারতো না আর সব থেকে বড় কথা আমি আমার এই কুহুরানীটাকে ভালোবাসি। ভিষণ ভালোবাসি। তাই অন্য কেউ আমাকে ভালোবাসলো কিনা তা আমার দেখার প্রয়োজন নেই।
কুহু সন্তুষ্টের হাসি দিয়ে পুনরায় কাব্যের বুকে মাথা রাখে। একটা শান্তির ঘুম দেওয়ার জন্য।

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন