উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৩)


ঢাকার ধানমন্ডির ডুপ্লেক্স বাড়ির দোতলার একটা রুমে, বিছানার উপর দুই পা তুলে গালে হাত দিয়ে বসে মুগ্ধ নয়নে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে খয়েরী রঙের সুতি শাড়ি পরা কুহু। তার সামনে সাত বছরের একটা মিষ্টি মেয়ে নামাজ পড়ছে। ফর্সা গায়ে কাঁচা হলুদ রঙের ফ্রক আর দবদবে সাদা লেগেন্স। মাথায় দেওয়া সাদার মধ্যে ছোট ছোট লাল ফুলের হিজাব। অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। সালাম ফিরিয়ে মেয়েটি কুহুর দিকে তাকিয়ে, তার মিষ্টি কন্ঠে প্রশ্ন করলো
- কিছু বলবে মামুনি।
কুহু গালে হাত রাখা অবস্থায়ই স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- না কিছু বলবো না। তুই তোর কাজ কর।
মেয়েটি মাথা ঝুলিয়ে বললো
- আচ্ছা, মামুনি।
কথাটা বলেই মেয়েটা মোনাজাত ধরে। মোনাজাত শেষ করে উঠে দাঁড়ায় সে। জায়নামাজ আর হিজাবটা ভাঁজ করে কাঠের তিন দরজার আলমারির বাপ পাশের দরজা খুলে, তাতে রাখে। তারপর পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসে টেবিলের উপর রাখা খাতাটা খুলে। অর্ধেক করে রাখা ম্যাথটা পুনরায় করা শুরু করল।
কুহু এখনও গালে হাত দিয়ে মেয়েকে দেখছে আর ভাবছে এতো ছোট একটা মেয়ে এতো লক্ষী কিভাবে হয়! নিজের মেয়েকে দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়। এই বয়সের মেয়েদের জোর করেও পড়তে বসানো যায় না আর নামাজ পড়া তো আরো দূরের কথা। কিন্তু তার মেয়ে এই বয়সেই তার বাবার বানিয়ে দেওয়া রুটিন অনুসারে টাইম মতো নাজাম পড়বে, টাইম মতো খাবে, টাইবে মতো পড়তে বসবে, টাইম মতো ঘুমাতে যাবে, টাইম মতো খেলবে। কিছু করার কথা বলতে হয় না।
কুহু যখন এসব ভাবনায় বিভোর তখনই রুমে ঢুকে মিসেস মায়া আর মিসেস কবিতা। মিসেস মায়ার হাতের প্লেটে ডোনাট আর মিসেস কবিতার হাতে প্লেটে চিকেন রোল। নাতনির জন্য নানি দাদি মিলে প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা বানায়। আজও এগুলো বানিয়েছে।
কুহুকে এভাবে গালে হাত দিয়ে খাটে বসে, সামনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিসেস কবিতা জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে কুহু? তুই এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছিস যে?
দীনা খাতা থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। কুহু গালে হাত রাখা অবস্থায়ই মাথা ঘুরিয়ে মিমেস কবিতার দিকে তাকিয়ে তার কথার উত্তর না দিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে উল্টো প্রশ্ন করলো
- মা তোমরা কি সিউর যে এ আমারই মেয়ে। হসপিটালে চেঞ্জ টেঞ্জ হয়ে যায়নি তো।
মাকে এখানে এভাবে বসে থাকতে দেখে বা মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ছোট দীনা অবাক হয় না। তার মা বরাবরই এমন কথা বলে। তার বাবা তাকে বলেছে তার মা তাকে নিয়ে অনেক প্রাউড ফিল করে, তাই এসব বলে। মিসেস মায়া মেয়েকে ধমকে বললো
- আবার তোর আজেবাজে কথা বলা শুরু করছিস। নাহ, কাব্যকে এবার বলতেই হবে, তোকে মাস্টার্সে ভর্তি করতে। সারাদিন বাসায় থেকে কাজ কাম নাই, তাই বসে বসে এসব আজেবাজে চিন্তা করিস।
কুহু গাল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে বললো
- আমার তো মনে হয় না আমি ছোট বেলায় এমন ছিলাম। তো আমার মেয়ে এমন হলো কিভাবে?
মিসেস মায়া কুহুর দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- তোর মতো বান্দর হবে কেন? আমার দিন নানু আমার কাব্য বাবার মতো হয়েছে।
পাশে দাঁড়ানো মিসেস কবিতাও বললো
- কাব্যও ছোটবেলায় এমন লক্ষী ছিল আর আমিও তোর মতো কাব্যকে দেখে অবাক হতাম।
দীনা কৌতুহলী কন্ঠে প্রশ্ন করল
- মামুনি ছোটবেলায় অনেক দুষ্ট ছিল আর পাপা খুব ভালো?
মিসেস মায়া জোরালো কন্ঠে বললো
- দুষ্ট ছিল মানে। ওর জন্য আমার বাসায় কাঁচ নামের কোন জিনিস ছিল না। কিন্তু তোমার পাপা খুব শান্ত সৃষ্ট ছিল। ঘরের জিনিস তো দূর নিজের খেলনাও নষ্ট করতো না। খেলা শেষ হলে নিজের খেলনাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতো। তোমার মামুনি তোমার পাপার উল্টো। বাহিরে নিয়ে গেলেই তার পুতুল কেনা চাই। না কিনে দিলে কান্না শুরু করে দিত। যতক্ষণ কিনে দিতাম না, ততক্ষণ কান্না চলতেই থাকতো। বাদ্য হয়ে কিনে দিতাম। তারপর বাসায় এনেই পুতুলটাকে চার ভাগে ভাগ করতো। মাথা, হাত, বডি আর পা। মাথাটা নিয়ে বেড রুমের বালিশে রাখতো। মাথার কাজ ঘুমানো, তাই মাথা ঘুমাচ্ছে। বডি রাখতো আলমারিতে। বডির কাজ নাকি শুধু ড্রেস পরা। তাই এটা আলমারিতে থাকবে। হাত দুই রেখে দিত ড্রাইনিং টেবিলের উপর। কারণ হাতের কাজ হচ্ছে খাওয়া, তাই এরা ডাইনিং টেবিলে থাকবে আর পা ছুড়ে ফেলতো রাস্তায়, হাটার জন্য।
এতো হাস্যকর কথা শুনেও দীনা হাসে না, উল্টো ছলছল চোখে নানুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- তখন কি তুমি মামুনিকে মারতে?
দীনাকে কেউ কখনোই মারেনি। এমন কি বাস্তবে কারো মামুনিকে কখনো কোন বাচ্চাকে মারতে দেখেনি সে। তবে শুনেছে, তাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে অনন্যা। সে অনেক দুষ্ট। সেই মেয়েই বলেছে সে বাসায় দুষ্টমি করলে তার মামুনি তাকে অনেক মারে। তাই দীনার ভয় হয়, তার মামুনিকেও কি তার নানু মারতো? মার খেয়ে কি তার মামুনির হাস্য উজ্জ্বল মুখটার হাসি গায়েব হয়ে চোখের জলে ভিজে যেত। মামুনিকে যে সে খুব ভালোবাসে, মামুনির দুষ্ট মিষ্টি হাসিটা যে তার সবচেয়ে প্রিয়। সেই হাসিমাখা মুখটা জলে ভরে আছে, দৃশ্যটা কল্পনা করতেই কষ্ট হয় তার। চোখ দুটো জলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। চোখের জলগুলো যেন শুধু অপেক্ষায় আছে তার নানুর হ্যাঁ বলার। তার নানু হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই তারা গড়িয়ে পড়বে তার নরম তুলতুলে গালগুলো বেয়ে।
মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কুহু উঠে গিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। মেয়েকে এখন খুব করে আদর করতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু করলো না। এখন মেয়ের সাথে একটু নরম হয়ে কথা বললেই মেয়ে কেঁদে দিবে। তাই নিজের ইচ্ছেকে সংযত রেখে চোখ দুটো ছোট ছোট করে প্রশ্ন করল
- তোর কি মনে হয়? তোর মা'র মতো এতো সুন্দর, কিউট বাচ্চাকে কেউ মারতে পারে?
দীনা না সূচক দু'দিকে মাথা নাড়ে। কুহু মিষ্টি হেসে মেয়ের গালে টুপ করে একটা চুম এঁকে দিয়ে, ভ্রু নাচিয়ে বললো
- তাহলে, আম্মু কিভাবে মারবে।
মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে দীনার। মেয়ের মুখের হাসির দিকে তাকিয়ে কুহু ভাবে, মেয়েটার গায়ের রঙটাই শুধু তার মতো হয়েছে। বাকি সবকিছু হয়েছে একদম তার বাবার মতো। এমনকি বাম গালে টোল পড়া হাসিটাও। কথাগুলো ভেবে আনন্দে তার মুখের হাসিটাও আরও চওড়া হয়।
মেয়ে আর নাতনিকে দেখে মিসেস মায়ার চোখ সুখের অশ্রুতে ভরে যায়। মেয়েটাকে নিয়ে তার সবসময় চিন্তা হতো। তার এই উড়নচণ্ডী, রাগী, একরোখা মেয়েটা সংসার সামলাতে পারবে কি না? শশুড় বাড়িতে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি না? মেয়ে ছোট থাকতেই সেই সব নিয়ে সর্বদা চিন্তিত থাকতেন তিনি। তারপর মেয়েটা যখন কিশোরী বয়সে কাব্যের প্রেমে পড়লো, তখন তার চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কাব্য তার মেয়েটাকে পছন্দ করবে কি না? কাব্যের বাবা-মা এই বিয়েতে রাজী হবে কি না? কাব্যের সাথে মেয়ের বিয়ের পর তিনি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু কাব্যের উপর আসা ঝড়ের ফলে বেশিদিন আর নিশ্চিন্তে থাকতে পারলো না। তখন তো সে ভেবেই নিয়েছিল তার মেয়েটাকে সে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলবে। সেই সব দিনের কথা ভাবলে আজও তার বুক কেঁপে উঠে। কিন্তু আল্লাহর অনেক রহমতে সব বিপদ-আপদের পর আজ তার মেয়েটা সুখী। অনেক অনেক সুখী। মনে মনে, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া সে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন