উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৪)


- আম্মু আব্বু বলেছে দুধটুকু খেয়ে নিতে।
কথাটা বললো হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বছর দশের একটা ছেলে। দেখতে একদর ছোট সাইজের অভ্র। চোখ, নাক, মুখ, গায়ের রঙ সব কিছু অভ্রের মতো। এমনকি চোখে চশমাও পরে অভ্রের মতো। চুলগুলো ডানদিকে সিঁথি করা। পরনে আকাশী রঙের ফুল হাতার শার্ট সাথে জিন্সের প্যান্ট। বাম হাতের কব্জিতে অভ্রের মতো ঘড়িও পরেছে। সেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখল, এখন ৫ঃ৪৫ বাজে। ৬ঃ০০ তার অনলাইন ক্লাস আছে। কিন্তু মা'কে দুধ না খায়িয়ে সে ক্লাসে যাবে না। বিছানায় আপাত মস্তক কাথায় মোড়ানো তূবা বললো
- তুই রেখে যা। আমি পরে খেয়ে নিব সোনা।
ছেলেটা তার মিষ্টি কন্ঠে বললো
- না আম্মু, আব্বু বলে গিয়েছে আমি যেন দাঁড়িয়ে থেকে তোমাকে দুধটুকু খাওয়াই। না হয় তুমি খাবে না, লুকিয়ে ফেলে দিবে।
মুখ থেকে কাথা সরিয়ে ছেলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে তূবা বললো
- আয়াস তুই আম্মুর কথা শুনবি না!
আয়াস তার মা'য়ের দিকে তাকিয়ে, স্বাভাবিক ভাবে বললো
- আব্বু বলেছে কেউ অন্যায় আবদার করলে তা শুনতে হয় না। প্লিজ মা খেয়ে নেও।
তূবা ছোট ছোট চোখ করে ছেলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, "তোর বাপরে গিয়ে বল খেতে।" কিন্তু মুখে বললো না। কাথাটা টেনে নাক পর্যন্ত ঢেকে চোখ বন্ধ করে বললো
- তোর না ক্লাস আছে। যা ক্লাসে যা।
আয়াস পুনরায় নিজের হাতের ঘড়িটার দিকে তাকায়। এখন সময় ৫ঃ৫৫। তা দেখে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বললো
- ক্লাস শুরু হওয়ার আরও পাঁচ মিনিট বাকি আছে। কিন্তু তুমি দুধ না খেলে আমি যাবো না।
তূবা আগের মতো চোখ দুটো বন্ধ রেখেই বললো
- শুধু শুধু এগুলো না করে ক্লাস করতে যা।
আয়াস সুন্দর করে বললো
- তুমি এই দুধটা খেলে তোমার ঠান্ডা ভাবটা চলে যাবে অনেক ভালো লাগবে। খেয়ে দেখ একটু।
তখনই অভ্র রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো
- কি সুন্দর দৃশ্য। যেখানে আমাকে বাসায় এসে দেখার কথা ছিল, তুই তোর ছেলের পিছনে খাবার নিয়ে ঘুরছিস। সেখানে এখানে তোর ছেলে তোর পিছনে খাবার নিয়ে ঘুরে।
তূবা কাথার ভিতর থেকে মুখ বের করে, গাল ফুলায়। অভ্র আয়াসের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে, আয়াসকে বললো
- আয়াস সোনা তুমি ক্লাস করতে যাও। আমি তোমার মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।
আয়াস তার বাবার হাতে দুধের গ্লাসটা দিয়ে বললো
- আচ্ছা, বাবা।
তারপর রুম থেকে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। অভ্র তূবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- খাচ্ছিস না কেন?
তূবা অভ্রের কথার উত্তর না দিয়ে বললো
- ছেলেটা ডুপ্লিকেট তোমার মত হয়েছে। কি দরকার ছিল ডুপ্লিকেট তোমার মতো হওয়ার? আমার মতো হতো।
অভ্র তূবার দিকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
- কপাল ভাল আমাদের ছেলে আমার মতো হয়েছে। এক তোরে পালতে পালতেই আমার জীবন শেষ। আবার তোর মতো আরেকটা হলে তো আমার হসপিটাল ছেড়ে বাসায় তোদের পিছনেই পড়ে থাকতে হতো।
তূবা মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো
- যাও তুমি গিয়ে হসপিটালেই থাক। তাতে অন্তত আমি তোমার বিরক্ত থেকে বেঁচে যাবো।
অভ্র অবাক হয়ে বললো
- আমি বিরক্ত করি!
তূবা কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- তো, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি দুধ খেতে পছন্দ করি না। তাও এটা নিয়ে আমার পিছনে পরে থাক। এটা বিরক্ত না।
- আচ্ছা ঠিকাছে, আমি কালকে সকালে যে হসপিটালে যাবো আর বাসায় আসবো না। কেউ যেন আবার আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি না করে।
অভ্রের কথা শুনে তূবা দৃঢ়তার সাথে বললো
- করবে না যাও।
অভ্র বিছানায় তূবার পাশে বসতে বসতে বললো
- ঠিক আছে কালকে বাসায় আসবো না। কিন্তু আজকে তো আমার বিরক্ত সয্য করে দুধটা খেতে হবে।
তূবা একলাফে শোয়া থেকে উঠে বললো
- এই তুমি হাত মুখ না ধুয়ে বিছানায় বসেছ কেন? উঠ উঠ।
অভ্র নিজের ডান পা'টা আরও একটু উঠিয়ে বসে বললো
- এখন তুই এই দুধটা শেষ না করলে, আমি বিছানায় হাত-পা তুলে সুয়ে থাকবো।
তূবা অভ্রের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিতে নিতে রাগী কন্ঠে বললো
- দিন, দিন একটা খবিশ হয়ে যাচ্ছো তুমি।
- দিন, দিন অনেক সাহস বেড়ে যাচ্ছে তোর।
অভ্রের কথা শুনে পাল্টা কোন কথা বলে না তূবা। শুধু দুধ খেতে খেতে গ্লাসের ভিতর থেকে বাঁকা চোখে অভ্রের দিকে তাকায় সে। খাওয়া শেষ হলে খালি গ্লাসটা অভ্রের কাছে দিয়ে বললো
- শেষ, শান্তি।
অভ্র পকেট থেকে টিস্যু বের করতে করতে বললো
- ছেলের বয়স দশ বছর হয়ে গেল, এখন বড় হলি না তুই।
তূবা নম্র কন্ঠে বললো
- দশ বছর! সময় কতো দূত চলে যায় তাই না। এই মনে হয় সেদিন আয়াসের জন্ম হলো।
অভ্র টিস্যু দিয়ে তূবার মুখ মুছে দিতে দিতে তূবা কথার উত্তরে ছোট করে বললো
- হুম।
তূবা ফিক করে হেসে বললো
- আমার এখনো মনে পড়লে হাসি পায়। আমাকে ওটিতে দেখে তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে দেখে বাবা তোমাকে কিভাবে বকেছিল। আঙুল উঁচিয়ে বলেছিল, তুই আমার ছেলে হয়ে কিভাবে এমন একটা কাজ করলি। আমার নাক কান সব কেটে দিলি। আমার হসপিটালের নাম বদনাম করে দিলি। যেই হসপিটালের ডাক্তার ওটিতে অজ্ঞান হয়ে যায়, সেই হসপিটালে রুগী আসবে?
কথাগুলো বলে আরও বেশি করে হাসতে থাকে তূবা। অভ্রের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। সেদিন ওটিতে তূবাকে দেখেই তার হাত-পা কাঁপতে থাকে। শরীর অবশ হয়ে যায়। চলাফেরা তো দূরের কথা, সামান্য হাত-পা নাড়ানোর শক্তিটুকুও ছিল না। হার্টের ডাক্তার সে। কতো কতো রোগীর হার্ট কাটা ছেঁড়া করেছে সে, কখন তার এমন লাগেনি। হয়ত তারা তার প্রিয়জন ছিল না বলে। চোখ দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরার পর সে জানতে পারে যে সে আড়াই ঘন্টা অজ্ঞান অবস্থায় ছিল আর এই আড়াই ঘন্টা মধ্যেই তূবার ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে। তার একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। মা আর ছেলেকে কেবিনেও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ছুটে যায় কেবিনে সবার সামনেই সেদিন সে জড়িয়ে ধরেছিল তূবাকে, কোলে নিয়ে আদরে ভরে দিয়েছিল আয়াসকে। তারপরই শুরু হয় তার বাবার বকা। সেদিন সে তার শশুড়ের কড়া কথা শুনার জন্যও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে সেদিন মিষ্টার আফরান তাকে কিছুই বলেননি। সেদিন মিষ্টার আফরান প্রথম নাতিকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। মানুষটা উপর দিয়ে যত শক্ত দেখায়, আসলে ভিতরে ভিতরে ঠিক ততটাই নরম। ভাবনা থেকে বের হয়ে অভ্র বললো
- আমার জায়গায় তুমি থাকলে বুঝতে।
তূবা দাত বের করে হেসে বললো
- তাই তো আমি ডাক্তারী টাক্তারী না পড়ে সহজ সরল বাংলায় অনার্স করেছি। যদিও বাংলা পড়তে গিয়েও আমার দুই চারটা দাত ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। সাথে কুহুর বকা তো ফ্রি ছিলই। বেচারি আমার জন্য বাংলা নিয়ে ফেঁসে গিয়েছিল।
হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় হুট করে অভ্র বললো
- তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
তূবা উল্লসিত কন্ঠে বললো
- সত্যি! কি সারপ্রাইজ বল, বল।
অভ্র স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- উহুম, এখন বলবো না। সামনের সপ্তাহে আমাদের তখন পাবি।
তূবা তীক্ষ্ণ চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- তাহলে এখন বলার কি প্রয়োজন ছিল। যাও, গিয়ে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন