উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৫)


খান বাড়ির ডাইনিং রুমে ডাইনিং টেবিলের উপর খাবার সাজাচ্ছে খান বাড়ির দুই বউ তিথি আর চন্দ্রা। সব কাজ বাড়ির সার্ভেন্টরাই করে। শুধু রান্নাটা তারা দুই ঝা মিলে করে। আগে মিসেস রুচি রান্না করতো। তাদের বিয়ে কিছুদিন পর থেকে মিসেস রুচিকে তারা দুই ঝা মিলে সাহায্য করতো। ইদানীং মিসেস রুচির শরীরটা বেশি ভালো না। বয়স হয়ে গিয়েছে এখন আর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রান্না করা সম্ভব না। তাই দুই বউ মিলেই রান্না করে। আর সখ করে প্রতিবেলা রান্না করার পর খুব সুন্দর করে সবকিছু টেবিল সাজায়। সাজানো প্রায় শেষ তখন নিচে নামে মিসেস রুচি। তার পর পরই নিচে আসে মিষ্টার আব্রাহাম, আয়ান, আহান, আয়ান আর তিথির নয় বছরের ছেলে তনয় আর ছয় বছরের মেয়ে অন্তি, আহান আর চেয়ে চন্দ্রার আট বছরের মেয়ে চাঁদনি। মিষ্টার এখন অফিস আর রাজনীতি কোনটাই করে না। অফিসের সব দ্বায়িত্ব আয়ানকে বুঝিয়ে দিয়েছে আর রাজনীতির স্থানটা নিয়েছে আহান। বাবার মতই সে এখন দেশের মন্ত্রী। এখন মিষ্টার আব্রাহাম নিজের স্ত্রী আর নাতি-নাতনিদের নিয়েই সময় কাটাতে পছন্দ করেন। আয়ান আর আহান তাদের কাজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েই নিচে নেমেছে। তনয়, অন্তি আর চাঁদনিও স্কুল ড্রেস পড়েই নিচে নেমেছে। সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলের খেতে বসে। খেতে খেতেই মিষ্টার আব্রাহাম খেয়াল করলো চাঁদনির মুখটা মলিন হয়ে আছে। তাই চাঁদনির উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল
- কি বেপার আজকে আমার চাঁদ মনির মুখটা এমন দুঃখী দুঃখী হয়ে আছে কেন?
চাঁদনি মুখের সিদ্ধ ডিম গিলে, বেজার মুখে বললো
- বড় আম্মু, বড় আব্বু, অন্তি অতুল মামার বাড়ি চলে যাচ্ছে। আসবে সেই রবিবার।
অন্তির মনও কিছুটা খারাপ। মিষ্টার আব্রাহাম বললো
- তাহলে তুমিও তাদের সাথে যাও।
চাঁদনি মাথা না সূচক নাড়িয়ে বললো
- আব্বু আম্মু তো যাবে না। আমি তাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।
চাঁদনির কথা শেষ হতে না হতেই তনয় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এই মিকি মাউস আমিও তো মামার বাসায় যাচ্ছি। তুই আমার নাম বললি না কেন?
আসলে চাঁদনির মাথা ভর্তি চুল বেশির ভাগ সময়ই দুই জুটি করা থাকে। তাই তনয় তাকে মিকি মাউস ডাকে। চাঁদনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- তোমার নাম কেন বলবো? তোমাকে তো আমি মিস করবো না। তুমি গেলে আমি খুশি হবো। তুমি বাসায় থাকলে শুধু আমাকে পঁচা কথা বল, আমার চুল টেনে দেও।
তনয় উঠে চাঁদনির জুটি টেনে ধরে বললো
- কি বললি! আবার বল।
চাঁদনি চিল্লিয়ে উঠলো। আয়ান আর আহান ছাড়া বাকি সবাই তনয়কে ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আহান একটা শ্বাস ফেলে বললো
- ভাই এই দুটো মনে হয় না, আমার ইচ্ছাটা পূরণ করবে। তোর ছোটটাও হয়েছে মেয়ে, ছেলে হলে আমি আরেকটা মেয়ের ট্রাই করতাম।
আয়ান হাসিমুখে বললো
- চিন্তা করিস না। এর মাও একসময় আমাকে পছন্দ করতো না। টাইম দে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আহান মলিন কন্ঠে বললো
- তাই যেন হয়।
💞
পড়ন্ত বিকেল বেলা, ছাদের ঠিক মাঝখানে রাখা টেবিল চেয়ারের, চেয়ারে বসে তার নতুন উপন্যাস "এক বিন্দু ভালোবাসা" লিখছে তোয়া। বর্তমান যুগের একজন জনপ্রিয় লেখকের নাম "তোয়া আহাম্মেদ।" এই পর্যন্ত সে মোট তেরোটা বই বের করেছে। সবগুলো বই তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। এই বইটা নিয়েও সে বেশ আশাবাদী। তোয়া যখন উপন্যাস লেখায় মগ্ন, তখনই দুই মগ কফি হাতে ছাদে উঠে অভি। ছাদে উঠেই ছাদের ঠিক মাঝখানে রাখা লোহার নরম গদির চেয়ারের উপর বসে থাকা নিজের প্রেয়সীকে দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে সে। এই পড়ন্ত বিকেলে হলুদ রঙের শাড়িতে খুব স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। সেদিকে কয়েক সেকেন্ড স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে, তোয়ার দিকে পা বাড়ায় সে। লেখায় ব্যস্ত তোয়ার পাশে দাঁড়িয়ে অনুনয়ের কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- রানী সাহেবার কি সময় হবে এই অধমের সাথে কফি খেতে খেতে একটু গল্প করার?
তোয়া খাতা থেকে মুখ তুলে অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো
- অন্যদের জন্য হবে না। তবে রাজা সাহেবের জন্য আমার সবসময় অফুরন্ত সময় আছে।
অভি তোয়ার পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো
- ধন্য আমি রানী সাহেবা।
দুজনেই হেসে দেয়। অভি তোয়ার দিকে একটা কফি মগ এগিয়ে দিয়ে বললো
- কফি।
তোয়া হাতের কলমটা খাতার উপর রেখে, কফি মগটা অভির হাত থেকে নিতে নিতে বললো
- ধন্যবাদ।
অভি কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো
- তা লেখিকা ম্যামের লেখা কেমন চলছে?
তোয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো
- খুব ভালো।
- জানতো আমি আজকে আবার প্রেমে পড়েছি।
তোয়া অভির দিকে হাসিমুখে তাকাতেই অভি পুনরায় বললো
- শেষ বিকেলে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িতে নিজেকে জোড়ানো এক রমনীর প্রেমে পড়েছি আমি, হালকা হাওয়ায় উড়তে থাকা তার কালো কেসে দেখে মাতাল হয়েছি আমি, দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকা রমনীকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তোয়া মনে মনে খুব খুশি হলেও, মুখে নকল মলিন ভাব ফুটিয়ে বললো
- আমার লেখালেখির ক্যারিয়ারের শেষ এবার।
অভি তোয়ার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
- বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অভি রহমান বই লেখা শুরু করলে আমার বই কি আর কেউ কিনবে।
তোয়ার কথা শুনে অভি মিষ্টি হেসে বললো
- আপনি নিশ্চিতে থাকতে পারেন রানী সাহেবা। আমার গল্প শুধু তোমাতেই সীমাবদ্ধ।
তোয়া মিষ্টি করে হাসে, সুখের হাসি। সেদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে অভিও ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে। একজন সার্ভেন্টের কোলে চড়ে ছাদে আসে বয়স ছয়ের একটা মিষ্টি মেয়ে তাইয়া। ছাদে উঠে সার্ভেন্টের কোলে থেকেই তাইয়া বললো
- মাম্মা, পাপা।
তোয়া আর অভি তাইয়ার দিকে তাকায়। বাচ্চা মেয়েটা সার্ভেন্টকে দিকে তাকিয়ে বললো
- আন্টি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দেও।
- আচ্ছা, আম্মু।
বলেই সার্ভেন্ট তাইয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। তোয়া হাতের থাক কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে মেয়ের দিকে হাত বাড়ায়। তাইয়া গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার মাম্মার কোলে। সার্ভেন্ট চলে যায়। একমাত্র মেয়েকে বুকে জড়িয়ে তোয়া প্রশ্ন করল
- আমার মাম্মার খেলা শেষ?
তাইয়া উপর নিচে মাথা ঝুলিয়ে উত্তর দিল
- হুম।
তোয়া পুনরায় প্রশ্ন করল
- দাদু, দাদি কোথায়?
তাইয়া মিষ্টি করে উত্তর দিল
- ফ্রেশ হচ্ছে।
অভি মেয়েকে জিজ্ঞেস করল
- তা আজকে আমার পাপা কি কি খেলা খেলেছে?
তাইয়া নিজের পাপারর দিকে তাকিয়ে বললো
- অনেক কিছু। প্রথমে কানা মাছি খেলেছি, তারপর লুকোচুরি ,,,,,,
মা বাবা আর ছোট মিষ্টি তাইয়ার গল্প চলতে থাকে।
💞
- ঘুমিয়ে গিয়েছে?
তিথির করা প্রশ্নে অতুল ছোট করে উত্তর দেয়
- হুম।
আয়ান ঘুমন্ত ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ে, তিথির উদ্দেশ্যে বললো
- আমি তনয়কে নিচ্ছি, তুমি অন্তিকে নেও।
অতুল বাঁধা দিয়ে বললো
- থাক ওরা আজকে আমার সাথেই থাক। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে ওদের তুমি নিয়ে গিয়েছ, তাহলে আবার গতবারের মতো কান্না করবে।
তিথি চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- কিন্তু, অন্তি যদি রাতে কান্না করে?
অতুল ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো
- তোমার ফোন খোলা রেখ, কান্না করলে আমি কল করবো।
তিথিকে নিয়ে আয়ান রুম থেকে বের হতে হতে বললো
- আচ্ছা শালাবাবু।
অতুল রুম থেকে বের হয়ে তিথিদের রুমের দিকে যেতে যেতে তিথি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। বিষয়টা লক্ষ্য করে আয়ান তিথির হাত ধরে। তিথি আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো
- ভাইয়ের ভালোবাসাটা কি পূর্ণতা পাবে না। এগারোটা বছর হয়ে গেল।
আয়ান তিথিকে আশ্বাস দিয়ে বললো
- ধৈর্য ধর খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন