উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৬)


অফিস থেকে বাসায় ফিরে রোদ। বাসায় ঢুকে দেখে তার সাত বছরের মেয়ে রোদেলা বাসার ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে কান্না করছে। আর তার দুই পাশে বসে মিষ্টার সালমান আর মিসেস রোমানা তার কান্না থামানোর চেষ্টা করেছে। নিজের আদরের একমাত্র মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে রোদ ছুটে মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে আমার মমের? এভাবে কান্না করছে কেন আমার মমটা?
বাবার আদরে আহ্লাদী মেয়ে রোদেলা বাবাকে দেখে আরও বেশি কান্না শুরু করে দিল। রোদ মেয়ের সামনে হাটু মুড়ে বসে মেয়ের দিকে তাকায়। আকাশী-সাদা রঙের হাটু পর্যন্ত লম্বা ফ্রকে মেয়েটাকে একদম মেঘ পরি মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে ফর্সা চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। রোদ মেয়ের দুইপাশে বসা নিজের বাবা-মা'য়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় মেয়ের দিকে তাকায়। পকেট থেকে টিস্যু বের করে মেয়ের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে আমার মমের? ডেডকে বল।
রোদেলা কানা থামিয়ে নাক টেনে টেনে বললো
- মম কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
কথাটা বলেই কান্না করে রোদকে জড়িয়ে ধরে। রোদ জানে দীপ্তি মেয়েকে খুব আদর করে, শুধু শুধু মেয়েকে শাস্তি দিবে না। তাই রোদ মেয়ের মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করল
- মম তো তোমাকে খুব আদরে করে, তাহলে আজকে কেন কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে?
রোদেলা বাবাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই বললো
- কারণ আমি আকিবকে কুরিয়ার করতে চেয়েছিলা।
রোদ অবাক হয়ে বললো
- এই সামান্য কারনে দীপ্তি তোমাকে শাস্তি দিয়েছে! দাঁড়াও তোমার মমকে আজকে আমি শাস্তি দিব। তার আগে চল আমার সাথে আমি আর তুমি মিলে আকিবকে কুরিয়ার পাঠাবো।
রোদেলা কান্না থামিয়ে রোদকে ছেড়ে দিয়ে সোজা চলে দাঁড়িয়ে বললো
- তুমি বুঝনি। আমি আকিবকে কিছু পাঠাবো না। আমি আকিবকে কুরিয়ারে পাঠাতে চেয়েছি।
রোদ তারপরও কিছু না বুঝে মেয়ে দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আকিবকে কুরিয়ারে পাঠাবে মানে?
রোদেলা উত্তর দিল
- স্কুলে আকিব অনেক দুষ্টুমি করে। সবাইকে বিরক্ত করে। এই খাতা নিয়ে যাচ্ছে, ওর পেন্সিল নিয়ে যাচ্ছে, ওকে ধরে মারছে, ওর চুল টানছে। কারও কথা শুনে না। ম্যামদের কথাও না। তো আজকে কি হয়েছে জানো, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমিরা আছে না।
রোদেলা এতোটুকু বলে একটু থামে। রোদ আমিরাকে চিনে, আমিরা যে রোদেলার বেস্ট ফ্রেন্ড তাও জানে। তাই ছোট করে বললো
- হুম্ম।
রোদেলা আবার বলা শুরু করল
- আকিব আমিরার ফেভারিট ইরেজার নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। আমিরা অনেক কষ্ট পেয়েছে। ও কান্না করে দিয়। এটা দেখে আমারও কষ্ট হয়। বেস্ট ফ্রেন্ড কান্না করলে আমার কষ্ট হবে না বল?
রোদ মেয়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বললো
- হ্যাঁ, অবশ্যই হবে।
বাবা কথা শুনে সন্তুষ্ট হয়ে রোদেলা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বললো
- তাইতো আমারও খুব কষ্ট হয়েছে, সাথে রাগও উঠে গিয়েছিল। তাই আমি ও'কে মেরে, বকা দিয়ে সকালে ম্যাম আমাদের জন্য যে বড় বক্সে করে চকলেট নিয়ে এসেছিল, তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে উপরে টেপ দিয়ে আটকে দেই।
মেয়ের কথা শুনে রোদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিষ্মিত চোখে সোফাতে বসা নিজের বাবা-মা'য়ের দিকে তাকায়। তারা মিটমিটিয়ে হাসছে। রোদেলা বলতে থাকে
- তারপর টেবিলের উপর থাকা ম্যামের মার্কার দিয়ে বড় করে লিখি কুরিয়ার। তারপর যেই বক্সটা বাহিয়ে নিয়ে যাবো তখনই ম্যাম চলে আসে। পরে মমকে ফোন করে স্কুলে যেতে বলে। মমের কাছে কমপ্লেন করে আর মম বাসায় এনে আমাকে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে।
কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কথা মনে পড়তেই পুনরায় কান্না শুরু করে দেয় রোদেলা। রোদ রোদেলাকে আদর করে বললো
- কান্না করে না। আমি এখনই গিয়ে তোমার মমকে বকে আসছি। বল কোথায় তোমার মম?
মিসেস রোমানা স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- বউমা কিচেনে।
রোদ রোদেলাকে মিষ্টার সালমান আর মিসেস রোমানা মধ্যে সোফাতে বসিয়ে বললো
- তুমি দাদু-দাদির সাথে থাক আমি তোমার মমকে বকে দিয়ে আসছি।
কথাটা বলে রোদ উঠে যেতে নিলেই, রোদেলা রোদের হাত করে বললো
- মমকে বেশি বকো না অল্প একটু বকো। না হয় মম কষ্ট পাবে।
রোদ মেয়ের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো
- আচ্ছা।
তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় সে। রোদ রান্নাঘরে ঢুকে দেখে দীপ্তি চিকেন নাগেস ভাজছে। রোদেলার খুব পছন্দের খাবার এটা। মেয়েকে কানে ধরিয়ে রেখে খারাপ লাগছে তার প্রিয় খাবার বানাচ্ছে সে। কথাটা ভেবে আনমনেই ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে যায় রোদের। হাসি বন্ধ করে দীপ্তি পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আমার মেয়েকে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছ কেন?
দীপ্তি রোদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, বিরক্তমাখা চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল
- তোমার মেয়ে কি করেছে জান?
রোদ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়
- জানি।
রোদের এই স্বাভাবিক উত্তর শুনে, দীপ্তি অবাক হয়ে বললো
- তারপরও তুমি এই কথা বলছ!
- হ্যাঁ বলছি। কারণ ও ছোট মানুষ, ভুল করে ফেলেছে। ভালো করে বুঝিয়ে বললেই পারতে। কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার কি প্রয়োজন ছিল?
দীপ্তি চুলা অফ করে চিকেন নাগেসগুলো একটা প্লেটে তুলতে তুলতে বললো
- এই পর্যন্ত তিনবার স্কুল থেকে কমপ্লেন এসেছে। আর আগের দুইবার অনেক ভালো করে বুঝিয়ে বলেছিলাম, কাজ হয়নি। তাই এইবার বেশি না মাএ পাঁচ মিনিট কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। তাতেই তোমার আহ্লাদে আহ্লাদী মেয়ে কান্নাকাটি করে বাড়ির সবাইকে অস্থির করে তুলেছে।
রোদ শ্বাস ফেলে বললো
- ওর কি দোষ রক্ত আছে যে।
দীপ্তি ভ্রু কুঁচকে রোদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি বলতে চাইছ তুমি?
রোদ দাত কেলিয়ে হেসে বললো
- এখন বুঝেছ, এক বাঁদরকে পালাই কতো কষ্টের আর তোমার বাপ বেচারা চার চারটে বাঁদর বড় করেছে। আমার শশুর আব্বাকে তো নোবেল দেওয়া দরকার।
দীপ্তি মুখ বাকিয়ে পুনরায় বাকি দুটো চিকেন নাগেস প্লেটে তুলতে তুলতে বললো
- আমরা বাঁদর হলেও সভ্য, তোমার মতো বদ হনুমান না।
রোদ দীপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো
- তোমার মতো বাঁদর বউকে হ্যান্ডেল করার জন্য আমাকে তো বদ হনুমান হতেই হবে।
দীপ্তি ছুটার জন্য নড়াচড়া করতে করতে বললো
- আরে! কি করছ, ছাড়। এটা তোমার বেডরুম না, কিচেন। কেউ এসে পড়বে ছাড় বলছি।
তখন রান্নাঘরের দরজা থেকে ভেসে আসে রোদেলার কন্ঠস্বর। মলিন কন্ঠে রোদেলা বললো
- ডেড তুমি কি মমকে মারছ। মমকে মেরনা, প্লিজ।
তড়িৎগতিতে দীপ্তি থেকে ছিটকে দূরে সরে যায় রোদ। তারপর পিছনে ঘুরে হাসিমুখে মেয়ের কাছে গিয়ে, মেয়েকে কোলে নিয়ে গালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো
- দেখেছ আমার মেয়ে তোমাকে কত ভালোবাসে।
দীপ্তি রাগ কন্ঠে বললো
- যদি ওই ছেলেটা শ্বাস কষ্টে মারা যেত না, তখন ওকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যেত।
রোদেলা ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- আমি তো বক্সে ফুটো করেছিলাম। কিভাবে মরতো!
রোদ হাসিমুখে বললো
- দেখেছো আমার মেয়ের মাথা কতো বুদ্ধিমান। কিন্তু মম তারপর অনেক ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো, তাই এই ধরনের কাজ আর কখনোই করো না। টিচারকে কমপ্লেন করবে, ওকে মম।
রোদেলা মাথা ডানে বামে নেড়ে বললো
- ওকে ডেড।
তারপর দীপ্তির দিকে ঘুরে মাথা নিচু করে বললো
- সরি মম আর এমন করবো না, প্রমিজ।
দীপ্তি মেয়েকে কোলে নিয়ে। হাতে একটা চিকেন নাগেস নিয়ে, ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে মেয়ের মুখের সামনে ধরে বললো
- নেও।
রোদেলা চিকেন নাগেসটা এক কামড় খেয়ে বললো
- ইয়ামি। তোমরাও খেয়ে দেখ। দেও আমি খায়িয়ে দেই।
প্লেট থেকে একটা চিকেন নাগেস নিয়ে প্রথমে দীপ্তিকে খায়িয়ে দেয়, পরে আরও একটা চিকেন নাগেস নিয়ে রোদকে খায়িয়ে দেয়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন