উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৭)


তূবা ড্রয়িংরুমের সোফায় বাম হাতে টিভির রিমুট নিয়ে বসে একের পর এক চ্যানেল চেন্স করছে আর ডান হাতে তার সামনে সোফার টেবিলে রাখা বাটি ভর্তি ফ্রেন্স ফ্রাই থেকে কিছুক্ষনের পর পর একটা করে ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে মুখে পুরছে। তার পাশেই সোফাতে গাঢ় নীল রঙের টি-শার্ট আর ধূসর রঙের টাউজার পরে বইয়ে মুখ বুজে বসে পড়ছে আয়াস। এখানে বসে বসে পড়ার তার কোন ইচ্ছেই নেই। সে মূলত এখানে বসে থেকে দীনার আসার অপেক্ষা করছে। দীনা এলে বাগানে গিয়ে পড়তে বসবে। মেয়েটা খোলামেলা গাছ, ফুলে ঘেরা জায়গা পছন্দ করে। তাই সে বাগানে পড়বে বসে ঠিক করেছে। কিন্তু এখনো আসছে না কেন? বই থেকে মুখ তুলে পুনরায় ড্রয়িং রুমের দেয়ালে ঝুলানো বড় ঘড়িটার দিকে তাকায় আয়াস। পাঁচটায় দীনার আসার কথা ছিল, এখন পাঁচটা পনেরো বাজে। এখনো আসার নাম নেই। তখন দরজার দিক থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে। মিষ্টি বাচ্চা মেয়েলি কন্ঠেস্বরটি বললো
- আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
তূবা হাতের রিমোট সোফাতে রেখে উঠে গিয়ে দীনাকে কোলে নিয়ে গালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে, হাসিমুখে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম আম্মু।
কণ্ঠেস্বর আর কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনেই আয়াস বুঝে যে সে এতোক্ষণ যার জন্য বসে বসে অপেক্ষা করছিল সে এসে পড়েছে। তাই মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকায় সে। কিন্তু সামনের দিকে তাকাতেই গোলাপি রঙের হাটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা টপ আর কালো লেগেন্স পরা দীনাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। আয়াসকে দীনার চোখে পড়তেই, সে আয়াসের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো
- আসসালামু আলাইকুম আয়াস ভাইয়া।
আয়াস ভ্রু কুঁচকে রেখেই বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। তোমার বই কোথায়?
দীনা নিচু স্বরে বললো
- আনিনি।
আয়াস কুঁচকানো ভ্রু যুগল আরও কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কেন?
কুহু ড্রয়িং রুমে আসতে আসতে বললো
- আমি না করেছি নিয়ে আসতে।
আয়াস তার কুঁচকানো ভ্রু সোজা করে বললো
- আসসালামু আলাইকুম মামুনি।
কুহু আয়াসের চুল ঘেঁটে দিয়ে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম আব্বা।
আয়াস প্রশ্ন করল
- মামুনি তুমি বই আনতে না করলে কেন? আমি আজকে দিনকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট টপিক পড়াতাম।
কুহু উত্তরে বললো
- দেখ আজকের বিকেলটা কত সুন্দর। এতো সুন্দর বিকেলে তোমাদের পড়তে হবে না। খেলতে যাও। বাচ্চাদের খেলাধুলা করা খুব প্রয়োজন।
আয়াস স্বাভাবিক ভাবে বললো
- শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে, কল্পনাশক্তি, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, চিন্তাশক্তি বাড়াতে, শরীরের ক্লান্তি, একঘেয়েমি, বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ দূরে সরিয়ে মনকে শান্ত রাখতে, উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধি করতে খেলাধুলা করা প্রয়োজন। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের আর সেই পরিমাণ খেলাধুলা আমরা আজকে স্কুলে করে ফেলেছি। তাই আজকে আর খেলাধুলা না করলেও হবে। তাও যদি আমি বা দিন খেলতে চাইতাম তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু আমরা দুজনেই তো পড়তে চাচ্ছি।
আয়াস আরও কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কুহু বললো
- বুঝেছি বাপ। সামনের বার থেকে বই নিয়ে আসবো।
অভ্র মাথা নেড়ে দীনাকে বললো
- দিন চল আজকে আপাতত নেট থেকে তোমাকে টপিকটা বুঝিয়ে দেই।
আচ্ছা।
বলে দীনা উঠে আয়াসের সাথে উপরে চলে যায়। তূবা তাদের বাসার কাজের মেয়ে ডাক দেয়
- কমলা।
বয়স আঠারোর কমলা ড্রয়িং রুমে এসে বললো
- জ্বি ভাবি।
তূবা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- আয়াসের রুমে ফ্রেন্স ফ্রাই দিয়ে এসো।
- আচ্ছা
বলেই কমলা পুনরায় রান্নাঘরে চলে যায়। কুহু তূবার পাশে বসে, তূবার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো
- একটা অভ্র ভাইয়ায় কি তোর মন ভরে নাই? যে দুনিয়াতে আরও একটা অভ্র আনতে গেলি?
তূবা ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের বাটিটা বাম হাতে নেয়। ডান হাতে এক পিস ফ্রেন্স ফ্রাই রেখে। বাটিটা কুহুর দিকে এগিয়ে দিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- আমাকে শুরু বলিস কেন? নিজে কি করেছিস? ডুপ্লিকেট কাব্য ভাইয়া জন্ম দিয়ে বসে আছিস।
কুহু এক পিস ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে তা দাত দিয়ে কাটতে কাটতে, হতাশ কন্ঠে বললো
- কপাল!
💞
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে দীপক। কোলে পাঁচ বছরের ছোট ছেলে নক্ষত্র। দেখলে যে কেউ বলবে দে এ মিষ্টার আফরানের নাতনি। চোখ, নাক, মুখ সব মিষ্টার আফরানের মতো। তবে স্বভাব যতটুকু বুঝা যায় তাতে মনে হয় না সে দাদার মতোই গম্ভীর স্বভাবের হবে। এখনও বাবার কোলে গুরুগম্ভীর মুখ করে আছে। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে দৌড়াদৌড়া করছে দীপক আর নীলার যমজ মেয়ে নুপুর আর পায়েল। প্রথম জন্ম নেওয়া মেয়ের নাম পায়েল। প্রথম মানে এক আর পায়েল থাকে একটা। দ্বিতীয় জন্ম নেওয়া মেয়ের নাম নুপুর। দ্বিতীয় মানে দুই আর নুপুর থাকে দুইটা। এই বিখ্যাত যুক্তি ধারা তাদের দুই বোনের এই নাম রেখেছে তাদের ছোট ফুপি মানে তূবা। দীপক সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে আসতেই আট বছরের দুটো মেয়ে পায়েল আর নুপুর তার চারপাশ ঘিরে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। ফলে দীপকের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাটতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই দীপক একটু শক্ত কন্ঠে বললো
- পায়েল নুপুর আস্তে। নক্ষত্র পড়ে যাবে।
সোফাতে বসে খবর দেখছিলেন মিষ্টার আফরান। ছেলের কথা শুনে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো
- এই তুই আমার নাতনিদের বকছিস কোন সাহসে।
দীপক ক্ষীণ সরে বললো
- বকিনি তো, ওদের জন্য ব্যালেন্স রাখতে পারছিলাম না। তাই,,,,,,
দীপককে কথা শেষ করতে না দিয়েই, মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- এতো বড় ছেলে হয়ে এইটুকুতেই ব্যালেন্স হারাস কিভাবে! নীলাকে দেখিস একা হাতে তিনটাকে কি সুন্দর সামলায়। কখনো শুনেছিস ওদের সাথে জোরে কথা বলতে।
নীলাকে মিষ্টার আফরান তার বাকি তিন মেয়ের মতোই ভালোবাসে। সে কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে তার শশুর না, হারিয়ে যাওয়া বাপ। তাই সে তার বাকি মেয়েদের মতো নীলাকেও নাম ধরে ডাকে। কখনো বউমা বলে না। কিন্তু এদিক থেকে মিসেস সোনালী একটু ভিন্ন। সে নীলাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলেও, বউমা বলেই সবসময় ডাকে। তার একটাই কথা তিন তিনটে মেয়ে আছে কিন্তু ছেলের বউ নেই। একেও যদি মেয়েদের মতো নাম ধরে ডাকে তাহলে বউমা ডাকবে কাকে? তারও তো সখ আছে কাউকে বউমা বলে ডাকার। বাচ্চাদের জন্য স্যুপ হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকে মিসেস সোনালী। তার পিছনে মিষ্টার আফরানের জন্য এক কাপ চা আর দীপকের জন্য এক মগ কফি নিয়ে আসে নীলা। মিসেস সোনালী রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো
- আহা ছেলেটা বড় হয়েছে, তিন তিনটে বাচ্চার বাপ। এখনো এভাবে ওকে বকো না তো।
মিষ্টার আফরান তার গম্ভীর কন্ঠে বললো
- বকার মতো কাজ করলে শুধু এখন না, নাতিপুতি হয়ে গেলেও বকা খাবে।
নীলা মিষ্টার আফরানের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো
- বাবা তোমার চা।
মিষ্টার আফরান নীলার হাত থেকে চা'য়ের কাপ নেয়।
এদিকে,
মিসেস সোনালী স্যুপ দিয়ে সোফাতে পায়েল আর নুপুরকে বসিয়ে দিয়ে, নক্ষত্রকে খাওয়ানোর জন্য দীপকের কোল থেকে নিতে গেলেই দীপকের তার মা'কে ফিসফিসিয়ে বললো
- মা আমি কি বাবার সৎ ছেলে?
মিসেস সোনালী নক্ষত্রকে কোলে নিয়ে রাগী চোখে ছেলের দিকে তাকায়। দীপক বোকা হেসে আমতা-আমতা করে বললো
- না মানে, আমাকে তুমি রাস্তা থেকে কুরিয়ে নিয়ে এসেছ না কি, তাই বলতে চাইছিলাম।
মিসেস সোনালী মুখে নকল রাগ ফুটিয়ে বললো
- বাচ্চাদের সামনে মাইর খেতে না চাইলে চুপ কর।
দীপক পাল্টা আর কোন কথা বলে না। নীলা কফি দিলে, তা নিয়ে মেয়েদের পাশে গিয়ে বসে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন