উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৮)


জ্বর মাথা ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারছেনা নিশা। সেখানে নিজে উঠে খাওয়া তো খুব কষ্টের। এদিকে বাসায় নিশা আর তার দশ বছরের ছেলে নিশান ছাড়া আর কেউ নেই। রিশান অফিসে আর মিসেস শান্তি আর মিসেস শিখা গিয়েছে গ্রামের বাড়ি। তারা একসাথে যেতে চাইনি। কোনবারই যেতে চায় না। নিশা জোর করেই পাঠায়। তাদের সারাটা জীবনই তো গিয়েছে কষ্টের মধ্যে দিয়ে। সন্তানদের একা হাতে মানুষ করার সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। এখন একটু নিজেদের মতো করে ঘুরুক। গ্রামে ঘুরেফিরে নিজেদের শৈশব কৈশোরের সুখময় স্মৃতি মনে করে একটু হাসুক। একা একা যাওয়ার থেকে দুজনে মিলে গেলে আনন্দে হবে তাই। তাই সে প্রতিবারই তাদের পাঠায়। কিন্তু কে জানতে তারা এবার যাওয়ার পরে তার এমন ধুম জ্বর চলে আসবে। মায়ের এমন জ্বর দেখে ছেলে রিশানকে কল করে। ছুটি নিয়ে দ্রুত বাসায় আসে সে। খাবার ওষুধ সব কিনে নিয়ে এসেছে। কোন রকম হাত ধুয়ে নিশাকে খায়িয়ে দিতে যাবে যাবে, তখনই বাধ সাধে নিশান। তার বাচ্চা কন্ঠে বললো
- বাবা তুমি অফিস থকে এসে তো ভালো করে হাত মুখ ধোওনি, তার উপর চিন্তা, তারাহুরো করে এসে তুমি অনেক ক্লান্ত। আমাকে দেও আমি মাকে খায়িয়ে দেই।
এতোটুকু ছেলের মুখে এমন কথা শুনে অবাক কন্ঠে বললো
- তুমি পারবে বাবা!
- খুব পারবো।
কথাটা বলেই রিশানের হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিজের ছোট ছোট হাত দিয়ে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত মেখে খুব যত্ন করে নিশাকে খাইয়ি দিতে থাকে। জীবনে কোনদিন বাবার হাতে না খাওয়া নিশা ছেলের হাতে খেয়েই যেন, বাবার হাতে খাওয়ার তৃপ্তি পায়। অসুস্থতার সব কষ্ট যেন নিমেষেই ভুলে যায়। ছেলে আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে রিশান। তার স্ত্রী যে ছেলের মধ্যেই নিজের না দেখা বাবাকে খুঁজে পেয়েছে তা খুব ভালোই বুঝতে পারছে সে। তারও মাঝে মাঝে মনে হয় এটা তার ছেলে না। তার হারিয়ে যাওয়া বাবা। না হয় এতোটুকু বাচ্চা এতো বুঝদার এতো শান্ত ভদ্র কিভাবে হয়। নিশান নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তোমাকেও একটু খায়িয়ে দেই বাবা।
রিশান কোন উত্তর দেয় না, ছেলের কাছে মুখ নিয়ে হা করে। নিশান নিজের বাবাকেও যত্ন করে খাইয়ে দেয়।
💞
একের পর এক দুর্দান্ত কেস সলভ করার ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের সাহায্য করার পর রোদের করা সেই হ্যাকিং গ্রুপ "লীস্থ" এখন অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও কেউ জানে না এই গ্রুপের মালিক কে বা কারা এখানে কাজ করে। সরকারের অনেক বড় বড় সব হ্যাকিং এর কাজ এখন এই গ্রুপই করে থাকে। এই গ্রুপের পদ বিন্যাসেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ ৬৪টি জেলাতে মোট একহাজার পাঁচজন হ্যাকার আছে। এই একহাজার পাঁচজন হ্যাকারদের তিনটি স্তরের ভাগ করা আছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন শ্রেনীর হ্যাকার হচ্ছে হচ্ছে ফিল্ড হ্যাকার। তার উপরের স্তরের হ্যাকারদের বলা হয় ডিসট্রিকট হেড হ্যাকার আর সবার উপরের হ্যাকারকে বলা হয় হেড হ্যাকার। ডিসট্রিকট হেড হ্যাকার ফিল্ড হ্যাকারদের কাজ, স্যালারি বুঝিয়ে দেওয়া। একজন হ্যাকার অন্যজনকে না চিনলেও, একটা ডিসট্রিকট এর ডিসট্রিকট হেড হ্যাকার সেই ডিসট্রিকট এ থাকা সব ফিল্ড হ্যাকারদের চিনে। আবার এই আটজন ডিসট্রিকট হেডের সব কাজের কৈফিয়ত দিতে হয় হেড হ্যাকার মানে "মিষ্টার আর" মানে রোদকে। সেই আটজন বিভাগীয় প্রধান হ্যাকারদের মধ্যে একজন হচ্ছে শুভ্র। পুরো ঢাকা বিভাগের প্রধান সে। তার অধীনে দুইশো ছাপ্পান্ন জন ফিল্ড হ্যাকার আছে। এছাড়াও দেশের টপ আইটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট "মাই ড্রিম" ট্রেনিং সেন্টারের মালিক সে। অফিস শেষে রাজধানী বাড়িধারা ডিওএইচএস নিজের তিনতালা বাসার ভিতরে গাড়ি ঢুকিয়ে, গাড়ি থেকে নামে সে। বাবার ইচ্ছে সে পূরণ করতে পেরেছে সে। শুধু পূরণ নয় খুব ভালো ভাবেই পূরণ করতে পেরেছে সে। যদি তার জন্য তাকে দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু এখান যখন বাসার সামনে শাহ ভিলা নাম দেখে। ছেলে-মেয়ে, চাচা-চাচি, আর অনুকে তার বানানো এই বাড়িতে সুখে থাকতে দেখে। তখন তার কষ্টের চেয়ে হাজার গুণ বেশি খুশি লাগে। শুভ্র গাড়ি থেকে নামতেই দৌড় এসে তাকে জড়িয়ে ধরে তার নয় বছরের ছেলে আভা আর ছয় বছরের মেয়ে অনি। এটা আজকে নতুন না প্রতিদিনই শুভ্র আসার আগে তারা শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করে। শুভ্র আসলেই দৌড়ে ছুটে বাবার কাছে চলে যায় তারা। বাবাকে তারা খুব ভালোবাসে আর শুভ্রও যেন তার ছেলে-মেয়ের মধ্যেই মৃত বাবা-মা'কে খুঁজে পায়। ছেলে-মেয়ের সামনে হাটু গেরে বসে, তাদের দুজনের কপালেই চুমু এঁকে দেয় শুভ্র। মেয়েকে কোলে নিয়ে ছেলের হাত ধরে দুজনের সাথে গল্প করতে করতে বাসায় ভিতরের দিকে পা বাড়ায়, সে জানে সেখানে আরও তিনটে প্রাণ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
💞
নিজের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা চুল আঁচড়াচ্ছে দেশের সেরা আইটি ফ্রামের মালিক কাব্য। কালো গায়ে লাল টকটকে রঙের শার্ট এর উপর কালো রঙের ব্লেজার সাথে কালো রঙের প্যান্টটে খুব ভালো মানিয়েছে লম্বা জীম করা বডির কাব্যকে। খুব স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। কুহু রুমে ঢুকে কাব্যকে দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়েই কাব্যের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আয়নার মধ্যে দিয়ে কুহুকে নিজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, ঘুরে কাব্য কুহুকে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে কুহু?
কুহু কাব্যের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, তার কুঁচকানো জোড়া আরও খানিকটা কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- আজকে কি তোমার অফিসে কোন নতুন এমপ্লয়ি আসবে?
কুহুর প্রশ্ন শুনে কাব্য কিছুটা অবাক হয়ে যায়, সহজ সরল কন্ঠে উত্তর দেয়
- না তো।
উত্তর দেওয়া শেষ হতে না হতেই, কাব্য পুনরায় পাল্টা প্রশ্ন করল
- কেন?
কুহু কাব্যের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখতে দেখতে বললো
- না তোমাকে এতো সুন্দর করে সাজগোছ করতে দেখে মনে হলো।
কাব্য হেসে বললো
- না রাখিনি তো। আর রাখলেই বা কি এই বুড়োকে কে পছন্দ করবে।
- তুমি বুড়ো! তাই জন্য তো এখনো বিয়ের প্রপোজ আসে।
আসলে, কিছুদিন আগে কাব্য এক বয়স্ক মহিলাকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করে, সেই মহিলা কাব্যের উপর কৃতজ্ঞ হয়ে তাকে সিঙ্গেল ভেবে নিজের নাতনির জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেয়। সেই কথা থেকেই কুহু কাব্যকে এই কথা বলে। কুহু পুনরায় বললো
- ভেবেছিলাম বাচ্চার বাপ হয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে নিশ্চিতে সংসার করতে পারবো। কিন্তু হলো কি, কাজকলা। তুমি যখন দেশের বাহিরে ছিলে, তখন তো আমি রাতে স্বপ্নতে দেখতাম কোন বিদেশিনী পেত্নী তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে।
কাব্য ক্ষীণ শব্দ করে হেসে বললো
- ভাগ্য ভাল আমি মেয়ে আর তুমি ছেলে হওনি। তাহলে, তো,,,,,,
কাব্যকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, কুহু কাব্যের একদম কাছে এসে, নিজের দুই হাত দিয়ে কাব্যের ব্লেজার টেনে ধরে বললো
- একদম ঘরে বন্দী করে রেখে দিতাম।
কাব্য ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে কুহুর কোমর জড়িয়ে ধরে বললো
- এতো টেনশন করতে হবে না কুহুরানী। আমি তোমার ছিলাম, আছি, থাকবো।
কুহু কাব্যের বুকে মাথা রেখে ম্লান কন্ঠে বললো
- আমি তোমাকে অবিশ্বাস করিনা। সমস্যাটা হলো তুমি অতিরিক্ত ভালো মানুষ। মানুষ বললেই তার উপকার করতে চলে যাও। তাই আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হয়। যদি কেউ তোমার সরলতার সুযোগ নিয়ে কোন ক্ষতি করে।
কাব্য মিষ্টি করে বললো
- চিন্তা করনা, তুমি আছো না। কিছু হবে না আমার।
হঠাৎ কিছু মনে পড়লে কুহু কাব্যের বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, কাব্যের দিকে তাকায়। তারপর উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
- ওহ, ভালো কথা মনে পড়েছে। জান কিরণ প্রেমে পড়েছে।
কাব্য বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় করে বললো
- কিহ! কার?
কুহু হাসি মুখে উত্তর দিল
- মেয়েও বুয়েটেই স্টুডেন্ট। ওর জুনিয়র।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন