উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৯৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯৯)


সবুজ গাছ, বাহারি রঙের ফুল আর কাঁচা পাকা নানা রকমের ফলে ঘেরা বাগানের মধ্যে আজ চাঁদের হাট বসেছে। আয়াস, দীনা, নক্ষত্র, পায়েল, নুপুর, নিশান, তনয়, অন্তি, চাঁদনি, তাইয়া, রোদেলা, অনি, আভা সবাই একসাথে খেলছে। সেখানে তাদের পরিবারও উপস্থিত আছে। আসলে আজকে অভ্র আর তূবার এগারোতম বিবাহ বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে বাগানেই ছোট করে আনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মেহমান বলতে আছে মিষ্টার আফরান আর মিষ্টার আসাদের পরিবার, তূবাদের চার ভাই-বোনের পরিবার, চার ভাই-বোনের বন্ধুদের পরিবার আর অভ্রের বন্ধু মুরাদের পরিবার। যদিও মুরাদ আর তার সদ্য বিয়ে করা বউ আনিকা আসতে পারেনি, হানিমুনে আছে বলে। আনিকার পিএইচডি করা শেষ হলে চার বছর আগে তাদের কাবিন হয়। কথা ছিল এক বছর পরে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে আনিকাকে ঘরে তুলবে মুরাদ। কিন্তু এক নারী আর শিশু পাচারকারী চক্রকে ধরতে ব্যস্ত থাকে তাদের বিয়েটা তিন বছর পিছিয়ে যায়। যার ফলে একমাস আগে তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। আর তিনদিন আগে তারা হানিমুনে জাপান যায়। তাই এখানে এসতে পারছে না বলে বন্ধুকে ভিডিও কলে কল করে কথা বলছে। ফোনের স্কিমে ভেসে উঠা মুরাদ আফসোস করে বললো
- ইস! কতো ইচ্ছে ছিল তোর অ্যানিভার্সারীতে আসার। কিন্তু জীবনের একটা মাএ হানিমুন দেখে তা ছেড়ে আর আসতে পারলাম না।
অভ্র দুষ্ট হেসে বললো
- তোর ইচ্ছে থাকলে আরও দুই তিনটাবার হানিমুনে যেতে পারিস কিন্তু।
মুরাদ মলিন কন্ঠে বললো
- সেই কপাল কি আর আমার আছে।
মুরাদের কথা শেষ হয়ে না হতেই, তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আনিকা শক্ত কন্ঠে বললো
- মানে! কি বুঝাতে চাইছ তুমি?
মুরাদ বোকার মতো হেসে বললো
- মানে বুঝাতে চাইছে, আমি তুমি দুজনেই তো অনেক বিজি মানুষ। চাইলেই তো আমরা আবার হানিমুনে আসতে পারবো না।
আনিকা সন্দেহের দৃষ্টিতে মুরাদের দিকে তাকিয়ে বললো
- সত্যি কি এটা বুঝতে চাইছো! কিন্তু আমার তোমার কথার ধরন শুনে এটা মনে হলো না। মনে হলো তুমি আরও দুই তিনটা বিয়ে করে তাদের নিয়ে হানিমুনে আসার কথা বলছো।
মুরাদ মুখে ভোলা বালা ভাব ফুটিয়ে বললো
- ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি বলছো এসব! আমি তোমার কথা ছাড়া অন্য কোম মেয়ের কথা কল্পনাও করতে পারি না।
আনিকা রেগে দাতে দাত চেপে বললো
- আমাকে একদম বোকা বানানোর চেষ্টা করবে না। মানুষ বিয়ে করে একবারই হানিমুন করে। যতই তাদের সময় থাকুক না কেন, দুই তিনবার হানিমুনে কেউ যায় না।
- সব কিছুই তো সময়ের সাথে সাথে চেন্স হয়ে যাচ্ছে, তাই আমি এও নিয়মটাও চেন্স করার কথা ভাবছিলাম আর কি।
কথাটা বলেই মুরাদ বোকার মতো করে হাসে। মুরাদের বোকা হাসির দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আনিকা বললো
- আচ্ছা তাই, বুঝি।
মুরাদ আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
- হ্যাঁ গো বউ।
- আচ্ছা চেন্স কর। তবে একা একা।
কথাটা বলেই আনিকা পাশের রুমে চলে যায়। মুরাদের মুখটা চুপসে এতটুকু হয়ে যায়। স্কিনের মধ্যে মুরাদের গোবেচারা মুখটা দেখে অভ্র হেসে দেয়। তার পাশে থাকা তূবাও মুচকি মুচকি হাসছে। মুরাদ ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো
- তুই বন্ধু না, বন্ধু নামের শএু। দিলি তো আমার হানিমুন শুরু হওয়ার আগেই ধ্বংস করে।
অভ্র হাসি থামিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- আমি কি তোকে বলেছি নাকি, দুই তিনটে বিয়ে করার কথা। আমিও তো এক বিয়ে দুই তিনবার হানিমুনে যাওয়ার কথাই বলেছি।
মুরাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- আমার কথা আমাকেই শোনাচ্ছিস না! তোকে আমি দেশে এসে দেখবো। আগে যাই এখন গিয়ে রাগিনীর রাগ ভাঙাই।
- যা, বায়।
কথাটা বলেই অভ্র ফোন কেটে দেয়। ঠিক তখনই অভ্রের কাছে এসে দীপক বললো
- সবাই তো চলে এসেছে, এবার কেকটা কেটে ফেল।
অভ্র স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- আরও একটু পরে।
তূবা অভ্রকে প্রশ্ন করল
- কেন?
অভ্র উত্তর দিল
- এখনো একজন গেস্ট আসা বাকি আছে।
তূবা আশেপাশে তাকিয়ে কে আসার বাকি আছে তাকে খুজে, কিন্তু পায় না। দীপকও কে আসার বাকি আছে, তা বুঝতে না পেরে অভ্রকে ছোট করে প্রশ্ন করল
- কে?
অভ্র স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- হসপিটালের একজন ডাক্তার।
তূবা অবাক হয়ে, কৌতুহলী চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- হসপিটালের ডাক্তার! কিন্তু তুমি না বললে বাহিরের কাউলে ইনভাইট করবে না। তাই হসপিটালের কাউকে বলবেন না। তাহলে?
অভ্র আগের মতোই স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল
- এর কাছে তোমার গিফট আছে, তাই একে বলেছি।
তূবা আগের চেয়ে আরও বেশি কৌতুহলী হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কে নিয়ে আসবে? কোন ডাক্তার আর কি গিফট?
- তোমাকে বলেছিলাম না হসপিটালে একজন নিউ ডার্মাটোলজিস্ট জয়েন করেছে, সে আসছে। গিফট ওয়েট কর। আসলেই দেখতে পা,,,,
অভ্র কথাটা শেষ করার আগেই, তার ফোনটা বেজে উঠে। আবার বন্ধও হয়ে যায়, কেউ মিসড কল দিয়েছে। অভ্র ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো
- এই তো এসে পড়েছে। এখানে দাঁড়াও তুমি
তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দীপ্তির সাথে কথা বলতে থাকা কুহু ডাক দিল
- এই কুহু।
কুহু অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- হ্যাঁ অভ্র ভাইয়া।
অভ্র হাসিমুখে কুহুকে বললো
- তুমি এসে তূবার পাশে দাঁড়াও। শালী হিসেবে এবারের অ্যানিভার্সারীতে তোমাকেও গিফট দিবো।
কুহু খুশি হয়ে বললো
- সত্যি! থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
কুহু খুশি হলেও বাকিরা চেচিয়ে উঠে। দীপ্তি ভ্রু কুঁচকে বললো
- এটা কিন্তু ঠিক না ভাইয়া।
চন্দ্রা তোয়ার কথায় সায় দিয়ে বললো
- হ্যাঁ আমরা কি দোষ করলাম। আমরা কেন গিফট পাবো।
তোয়াও একমত প্রকাশ করে বললো
- আমাদেরো গিফয় চাই।
দীপক পাশ থেকে বললো
- তাহলে আমরা বাদ ছাবো কেন?
শুভ্র পাশ থেকে বললো
- দীপ্তিরা যদি শালী হিসেবে গিফট পায়, তাহলে আমরাও শালা হিসেবে গিফট চাই।
অভিও সায় দিয়ে বললো
- হ্যাঁ, একদম।
অভ্র সবার দিকে তাকিয়ে বললো
- সবাই গিফট নিবি?
সবাই একসাথে বললো
- হ্যাঁ।
অভ্র বললো
- আচ্ছা ঠিক আছে। তোরা সবাই দাঁড়া।
তারপর খুঁজে খুঁজে অতুলের দিকে তাকিয়ে, অতুলকে বললো
- এই অতুল তুমিও এসো, এসে আমার পাশে দাঁড়াও।
অতুল এসে অভ্রের পাশে দাঁড়ায়। সবাই অভ্রের কথামতো দাঁড়িয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে গেইট দিয়ে একটা মেরুন রঙের গাড়ি ঢুকে। গাড়ি ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে, গাড়ি থেকে নামে নীল শাড়ির উপর সাদা এপ্রোন পরা দোলা। গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের প্যাসেঞ্জার সিটে দরজা খুলে গাড়ি থেকে বের হয় দিশা। যাকে দেখে কিরণ অবাক চোখে তাকায়। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা তূবা আর কুহু একে অপরের দিকে তাকিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্র তূবা আর কুহুর দিকে তাকিয়ে হাসি। তূবা আর কুহু পুনরায় একে অপরের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে গিয়ে দোলাকে জড়িয়ে ধরে। হাপুস নয়নে তিন বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। থেকে নামে তিন বান্ধবীর এমন মিলন ক্ষণ দেখে বাকিদের মধ্যে কারো চোখে ঠোঁটে খুশির হাসি, তো কারো চোখে আনন্দ অশ্রু। অতুল দোলার কাছে গিয়ে খুবই শান্ত কন্ঠে ডাকে
- দোলা।
তিন বান্ধুবী একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দোলা স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে অতুলকে। এই এগারো বছরে অনেক চেন্স হয়েছে সে। আগের রাগী ছেলেটা, এখন গম্ভীর এক পুরুষ। শারীরিক দিক দিয়েও অনেক পরিবর্তন এসেছে। লম্বা না হলেও স্বাস্থ্য আগের থেকে আরও ভালো হয়েছে। অতুল মুখে কিছু না বলে কোথায় আছে, কাদের সামনে আছে সব ভুলে নিজের ডান হাত দিয়ে দোলার বাম হাতের কনুইয়ের একটু উপরে ধরে টেনে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১০০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন