উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৩)

কালাম হোসেন ফাইজানকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।ফাইজান বিয়ের কেনাকাটা করে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। প্রায় সব টাকাই শেষ করে এসেছে। কালাম হোসেনের তা নিয়ে আক্ষেপ নেই।ছেলে যে নিজে দেখেশুনে লতার জন্য কেনাকাটা করেছে তাতেই কালাম হোসেন সন্তুষ্ট।
সাজেদা এক গাল পান মুখে দিয়ে বললো,"আল্লাহ রহমত করছে।আপনাকে আমি বলছি না এইবারের তদবির কামে আইবো।যেই পানি পড়া আনছি,ফাইজান কথার বাহিরে যাইবো না।"
কালাম হোসেন সন্তুষ্ট হয়ে বললেন,"তাবিজ কি ঠিকঠাক মতো রাখছো,?"
"হ,একটা ওর বালিশের ভিতরে, একটা তোশকের নিচে আর একটা ওর খাওয়ার পানিতে চুবাই দিই।"
কালাম হোসেন সিগারেটে টান দেন।মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বললেন,"একবার বিয়েটা হয়ে গেলেই সব শান্তি। পোলার সামনে সবসময় দুখী দুখী মুখ নিয়ে ঘুরবা।পোলারে বুঝাইবা আমি অখনো তোমার উপর রাগ হয়ে আছি।"
সাজেদা হেসে বললো, "আপনে চিন্তা কইরেন না।আমি সারাদিনই ওরে এসব শুনাই যে আপনে আমারে ছাইড়া দিবেন ও বেচাল করলে।"
একটু পর ফাইজান এসে বাপ মার রুমের দরজায় টোকা দেয়।বিয়ের কেনাকাটা সব এই রুমে। এসবের সাথে ফাইজান নিজের ফোন ও ফেলে গেছিলো। ফোন নিতেই এসেছে।
সাজেদা ছেলেকে দেখেই মুখের হাসি মিলিয়ে মুখে কষ্টের ছাপ ফুটিয়ে ফেললো।
ফাইজান ফোনটা নিয়ে চলে গেলো। মাথা ধরেছে তার ভীষণ।
শুধু কাপড় চোপড়,কসমেটিকস কিনেই ফাইজান আজকে তিন লাখ টাকা উড়িয়ে এসেছে। বিয়ে যখন বাপের পছন্দ মতো করতে হবে তাহলে বাপের টাকা কেনো উড়াবে না?
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই তরুর মুখটা ভেসে উঠে মনে। ফাইজানের বুক কেঁপে উঠে।
তরুকে কখনো কষ্ট দিবে সে কি ভেবেছিলো?
ভাবে নি।
অথচ সে-ই তো কষ্ট দিচ্ছে।
কেনো এলো তরুর জীবনে সে!
না এলেই ভালো হতো।তরু এই বুক ভাঙ্গার যন্ত্রণা পেতো না।
ফাইজানের ইচ্ছে করলো একটা বার তরুর সাথে কথা বলার।
কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়লো আর কতো কষ্ট দিবে!
কি দরকার কথা বলার এখন?
তরু ছাদের রেলিঙের এর উপর বসে আছে।
বিষণ্ণ বিকেলের এই কনে দেখা আলোয় উদাসীন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তরু।
বাড়ির সামনে লতা হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলছে।তরু সেদিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।
সামনে পরীক্ষা অথচ কেনো তরু বইতে মন দিতে পারছে না।
এই জীবন এতো কঠিন কেনো?
একটা লাফ দিয়ে এই জীবন থেকে ছুটি নিয়ে নিলে কেমন হয়!
প্রবৃত্তি যখন বারবার লাফ দেওয়ার জন্য বলছে তখনই মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। মা যখন ছিলো কতো যন্ত্রণা সহ্য করে তরুকে নিয়ে বেঁচে ছিলো। মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তো তরু নিজেই ছিলো।
তরু ফাইজানের জন্য জীবন দিয়ে দিতে চাইছে কিন্তু তরুও তো কারো বেঁচে থাকার কারণ।
মা কি করে সহ্য করবে তরুকে হারানোর যন্ত্রণা!
ফাইজান লতাকে নিয়ে সুখে সংসার করবে, তরু কেনো জীবন দিয়ে দিবে তার জন্য।
এসব ভাবনা মাথায় আসতেই তরু রেলিঙের উপর থেকে নেমে গেলো। এসব আজেবাজে কথা কেনো ভাবছে সে!
তরু নিজের জন্য বাঁচবে।
যেই সম্পদ তরুর থেকে ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিচ্ছে সেই সম্পদ তরু কাউকে হজম করতে দিবে না।তরু অনেক কিছু না বুঝতে পারে কিন্তু এটুকু জানে,আজ হোক বা কাল,আপোষে হোক বা আইনি ভাবে, এই সম্পদের মালিক তরু নিজেই।
সেই পর্যন্ত যেতে হলে তরুকে বেঁচে থাকতে হবে। শত আঘাত আসুক তবুও তরু হাল ছাড়বে না।
লতা ফোনে কথা বলুক,তরু সময় নষ্ট করবে না।তরু পড়তে বসবে।
নিজের মনকে শত বুঝিয়ে তরু পড়তে বসলো কিন্তু বেহায়া মন আবারও অবুঝ হয়ে যায়।
দুই চোখ টলমল করতে লাগলো আবারও। দম যেনো বন্ধ হয়ে আসবে যে কোনো মুহূর্তে।
টেবিলের উপর মাথা রেখে তরু কাঁদতে লাগলো।
ফাইজানদের বাড়িতে লাইটিং করা হচ্ছে। লাইটিং করা হচ্ছে লতাদের বাড়িতে ও।আলমগীর রাবেয়াদের দাওয়াত দিয়েছে।
নজরুল আলমগীরের মুখ থেকে ফাইজানের সাথে বিয়ের কথা শুনে চমকে উঠে।
ফাইজানের সাথে লতার বিয়ে মানে!
তাহলে তরু?
আলমগীর তরুকে কল দিলো। কান্না করতে করতে তরুর গলা বসে গেছে।
ফ্যাসফ্যাসে গলায় তরু হ্যালো বলতেই নজরুল আবার চমকায়।
তরু কেঁদে উঠে বললো, "আংকেল,ফাইজান বিয়ে করছে আংকেল তবে তরুকে না,লতাকে।শুধু মাত্র বাবা নেই,সম্পত্তি নেই বলে ভালোবাসার পরেও হেরে গেলাম আমি।"
"তুমি জানাও নি এই ব যে তোমারই?"
"না আংকেল,তাহলে আমার মূল্য রইলো কই?আমার ভালোবাসার অপমান হতো তাহলে।
যেই ভালোবাসা সংসার সম্পদকে কেন্দ্র করে হবে সেখানে আমি কেনো থাকবো বলেন? "
নজরুল কঠোর হয়ে বললো, "তুমি বললে আমি একটা ব্যবস্থা নিতে পারি তরু।"
"না আংকেল,কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে না।আমি ভালোবাসা দিয়ে যাকে বাঁধতে পারি নি অন্য কোনো কিছু দিয়ে তাকে আর ফেরত চাই না।
সে ফিরলেও আমি আর চাই না।যন্ত্রণা মাই ছটফট করে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো তবুও তাকে আর চাইবো না।"
নজরুল দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো, "তোমার মায়ের বাড়িতে চলে আসো তরু।ওখানে থাকলে তুমি ঠিক থাকতে পারবে না।"
তরু চোখ মুছে বললো, "আমি এখানেই থাকবো আংকেল।ফাইজানের চোখের সামনেই থাকবো।যন্ত্রণা পেতে পেতে আমার হৃৎপিণ্ড না হয় যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে যাবে তবুও আমি নিজেকে সেই আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করে নিবো।"
নজরুল আর কথা বাড়ালো না।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন