উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৪)

রাবেয়া লতার সাথে ফাইজানের বিয়ের কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো। ফাইজান তো তার মেয়েকে ভালোবাসতো!
তবে এই কেমন ভালোবাসা ছিলো!
তরুর জন্য রাবেয়ার পরাণ পুড়তে লাগলো। পরক্ষণে মনে হলো ভালোই হয়েছে অবশ্য। রাবেয়া তো চেয়েছিলো মনে প্রাণে ফাইজান যাতে তরুকে বিয়ে না করে। তার মেয়ের জীবন এখনই রান্নাঘরের চার দেয়ালে আটকে যসবে তা রাবেয়া মানতে পারতো না।মেয়ের দিকে তাকিয়ে রাবেয়া হয়তো মেনে নিতো ঠিকই কিন্তু মন সবসময় ফাইজানের উপর বিরূপ থাকতো।
যেই মেয়ে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে ভেবে রাবেয়া সবার আঘাত সহ্য করে গেছে সেই মেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন কি-না পূর্ণ হবে না!
নিজের মেয়েকে রাবেয়া চেনেন।
তরু ঠিকই নিজেকে সামলে নিতে পারবে।
রাবেয়া,নাজিয়া,সালেহা,নজরুল এলো বিয়ের আগের দিন বিকেলে।সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ হবে।
লতা পার্লারে গিয়েছিলো সাজতে।রাবেয়ার তরুকে বললো, "যাবি তুই?"
তরু মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "না মা।আমার পড়া আছে।"
তরুর বুক কাঁপছে বারবার ভয়ে।মা যদি জানতে চায় ফাইজান কেনো এরকম করছে তাহলে কি জবাব দিবে মা'কে!
তরুকে অবাক করে দিয়ে রাবেয়া একটা বার ও এই প্রসঙ্গে কথা বলে নি। যেনো রাবেয়া জানেই না তরুর সাথে ফাইজানের কোনো সম্পর্ক ছিলো।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই মিলে ভীষণ আনন্দ করলো,নাচানাচি, গান,হৈহল্লা সবই হলো।
তরু নিজের ঘরের দরজা,জানালা বন্ধ করে দুই কানে আঙুল গুঁজে বই নিয়ে বসে রইলো। বাহিরের কোনো আওয়াজ যাতে কানে না আসে তার জন্য তারস্বরে চিৎকার করে করে পড়তে লাগলো।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাতের দুটো বেজে গেছে। লতা ভীষণ আনন্দিত। আজকের রাতটা লতার মনে হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম রাত।
এই রাতটা কেটে গেলেই ফাইজান তার হয়ে যাবে।
আজীবনের জন্য ফাইজানকে নিজের করে পাবে।
লতা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। কেনো রাত শেষ হচ্ছে না!
সকাল বেলা গ্রামের রীতি অনুযায়ী ফাইজানকে পাঁচজন মিলে মেহেদী পরালো।তারপর সারা শরীরে হলুদ দেওয়া হলো।
সব রীতি নীতি মেনে লতার ও বিয়ের গোসল করা হলো।তরু লতাকে অপলক দেখতে লাগলো।
নাজিয়ার কিছু ভালো লাগছে না।বারবার তরুকে বললো, "তুই কেনো মেনে নিচ্ছিস মুখ বুজে?কেনো তোর চাচা চাচীকে জানাচ্ছিস না?তোর কাজিন এতো বেহায়া কেনো?ও তো জানে তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস।ও কিভাবে পারছে অন্যের প্রেমিককে বিয়ে করতে? তুই না জানালে আমি জানাবো।"
তরু শীতল কণ্ঠে বললো, "না নাজিয়া।কাউকে কিছু জানাতে হবে না।আমি বিচার সভা বসিয়ে ফাইজানকে নিজের করে পেতে চাই না।তাছাড়া ওর প্রতি আমার সব অনুভূতিকে আমি মে রে ফেলেছি।ফাইজান ছাড়া ও তরু বাঁচবে।"
নাজিয়া তরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, "তুই কেনো এতো কষ্ট সহ্য করিস তরু?কিভাবে পারছিস?আমি নিজেই তো সহ্য করতে পারছি না।"
তরু হাসে।হেসে বলে,"তৈরি হয়ে নে।পোলাও রোস্ট খেতে হবে তো।শোন নাজিয়া,আমার প্লেটে তুই বারবার মাংস তুলে দিবি জোর করে করে, আমি ও তোর প্লেটে তুলে দিবো জোর করে করে। "
নাজিয়া তরুর দিকে তাকিয়ে বলে, "গলা দিয়ে নামবে খাবার? "
"না নামার কি আছে?কাজিনের বিয়ে,ভালো করে খাবো না তা কি হয়?"
"যতোই নিজেকে কুল প্রমাণ করিস তরু,অশ্রুতে টলমল করা চোখ কিভাবে লুকাবি?"
তরু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে, "এসব বাদ দে নাজিয়া।"
নাজিয়া বাহিরে বের হতেই তরু রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।ভেতর থেকে কান্নারা সব বের হয়ে আসতে চাইছে।জানালা খুলে দিয়ে তরু হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। বিড়বিড় করে বললো, "আমাদের আর গুছিয়ে সংসার করা হলো না।এক বালিশে দুইজন মাথা রেখে ঘুমানোর যেই স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আর পূর্ণতা পেলো না।তোমার নীল পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে পরবো বলে যেই সাদা শাড়িটি কিনেছিলাম,তা এখন আমার বৈধব্য প্রকাশ করে। অনেক ইচ্ছে ছিলো তোমার হাতে হাত রেখে আকাশের চাঁদ দেখবো অথচ তুমি এখন অন্য কারো আকাশের চাঁদ হয়ে গেলে।
আমার আকাশ জুড়ে নিকষকালো অন্ধকার।
হাত ধরে রাস্তা পার করে দিবে বলে একা একা রাস্তা পার হতে শিখি নি অথচ জীবন আমাকে এখন এমন জায়গায় এনে ফেলেছে যে আমি তলিয়ে যাচ্ছি অতল গহ্বরে। হাত বাড়িয়ে তোলার মতো সেই তুমি নেই।
ভালোবাসা ভালো থেকো।নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা। "
সারা বাড়িতে মরিচ বাতি জ্বলছে।অতিথিদের আনন্দিত হাস্যোজ্জ্বল মুখ তরুর বুকে বিষের মতো এসে বিঁধছে।বাবুর্চিদের রান্না করা খাবারের ঘ্রাণে তরুর গা গুলিয়ে আসছে।তরুর ইচ্ছে করছে কোনো অজানা জায়গায় লুকিয়ে যেতে।
বাহিরে থেকে চিৎকার শোনা গেলো পাত্রপক্ষের গাড়ি আসতেছে। ছেলে মেয়েরা সবাই সেদিকে ছুটে গেলো।
তরুর হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। নাজিয়া এসে তরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নাজিয়া জানে উপরে উপরে তরু যতোই নিজেকে শক্ত প্রকাশ করুক কিন্তু ভেতরে ভেতরে তো অন্তঃসার শূন্য।
তরুর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।নাজিয়াকে বললো,
" আমাকে রুমে নিয়ে যা নাজিয়া।আমার হাত পা বন্ধ হয়ে আসছে।আমার নিশ্বাস আটকে আসছে।"
রুমে গিয়ে তরু নাজিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তরুর বুক ভেঙে আসছে।তরু ভেবেছিলো সহ্য করতে পারবে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এই যন্ত্রণা সহ্য করার মতো না।ভালোবেসে প্রিয় মানুষটাকে পাওয়ার কথা ছিলো, অথচ তার বদলে পেলো এক বুক যন্ত্রণা।
নিয়ম করে কথা বলা মানুষটাই যে নিয়ম করে যন্ত্রণা দিবে কেউ কি জানতো!

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন