উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৩১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩২)
টেস্ট পরীক্ষার ডেট দিয়ে দিয়েছে। তরু পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না।কেমন অদ্ভুত লাগে তরুর।ফাইজানের সাথে পরিচয় হওয়ার আগে তো কখনো পড়তে বসে এরকম লাগে নি তরুর।
বরং পড়ায় মন দিলে দুনিয়া ভুলে যেতো অথচ এখন মাথায় ফাইজান ছাড়া কিছু নেই।
কেনো এরকম লাগছে?
তরুর মনে হলো তার মাথায় বুঝি আসমান ভেঙে পড়েছে।হতভম্ব তরু তাকিয়ে রইলো লতার দিকে।
লতা হাসতে হাসতে বললো, "কি ভেবেছিলি?ফাইজানকে তোর করে নিবি তরু?এতো সোজা?
এবার দেখলি?এই দুনিয়াটাই এরকম তরু।সবাই সবার স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না।আমি ফাইজানকে বিয়ে করবো তার চাইতে বেশি খুশি কেনো জানিস?তোর থেকে ফাইজানকে কেড়ে নিতে পারছি।সবসময় তুই সব কিছুতে এগিয়ে ছিলি।সৌন্দর্য, পড়ালেখা সবকিছু দিয়ে তুই এগিয়ে। কিন্তু দেখলি ভাগ্যর দিক দিয়ে আমি কতো এগিয়ে? "
তরু নির্বাক হয়ে বসে রইলো। এই দুনিয়াটা তরুর কাছে কেমন বিষাক্ত মনে হচ্ছে এক নিমিষেই। এজন্যই কি ফাইজান তরুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে?
তরুর ইচ্ছে করলো এক বার,অন্তত একবার ফাইজানের সাথে কথা বলতে।
একটা বার ফাইজানের গলার স্বর শোনার জন্য তরুর মনে হচ্ছে তার প্রাণ বুঝি বের হয়ে যাবে।
ফাইজান কল করেছে লতাকে।এই প্রথম ফাইজান লতার সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছে। লতা খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। সর্ব প্রথম দৌড়ে তরুর কাছে এলো লতা।তরুকে বললো তরু দেখ ফাইজান কল দিয়েছে আমাকে।তরু তাকিয়ে দেখে একটা অন্য নাম্বার থেকে কল এসেছে। তরুর হঠাৎ করে কি হলো।টান দিয়ে লতার হাত থেকে ফোন নিয়ে ছুটে বের হয়ে গেলো। ফোন কানে নিয়ে পাগলের মতো হ্যালো হ্যালো বলতে লাগলো।
তরুর কণ্ঠ শুনে ফাইজান চমকে উঠে। কিন্তু বলার মতো কি কিছু আছে ফাইজানের?
তরু বলতে লাগলো, "ফাইজান,ফাইজান একবার আমার সাথে কথা বলুন।প্লিজ একটা বার আমাকে তরু বলে ডাকেন।একবার বলেন লতা যা বলছে সব মিথ্যা। আপনার সাথে ওর বিয়ে হবে না বলুন একবার। আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন।মনে নেই আপনার। বিশ্বাস করেন,আমি শুধু আপনাকে চাই।আমার কিছু লাগবে না।পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সব কিছু আমি বাদ দিয়ে দিবো।আপনার ফ্যামিলি, আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই চলবো আমি।দিন শেষে শুধু আপনি আমার হলেই আমি খুশি।"
"সেসব সম্ভব হবে না আর।আমি নিরুপায়।"
"আমি বিশ্বাস করি না।আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন আমি কখনো এটা বিশ্বাস করি না।একবার বলুন না ফাইজান।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি মরে যাবো ফাইজান।বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করছে আমার। আপনি একবার আমাকে ভালোবাসি বলুন,আমি সব অসুখ সেরে যাবে।"
ফাইজানের রেসপন্স না পেয়ে ফোনের স্ক্রিনের তাকিয়ে দেখে কল কেটে গেছে আগেই।
তরু ধপ করে বসে পড়ে ছাদের ফ্লোরে। লতা এসে ফোনটা নিয়ে নেয়।লতার ইচ্ছে করছিলো অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু তরুকে এরকম দুমড়ে মুচড়ে যেতে দেখে আর কিছু বললো না।
সেখানে দাঁড়িয়ে লতা আবারও কল দিলো ফাইজানের বাবার নাম্বারে। ফাইজানের বাবা পাশেই বসে ছিলো ফাইজানের।
ফোনটা ফাইজানের দিকে দিয়ে বললো, "কথা বল,লতা কল দিয়েছে। তখন তো কেটে গেছে কল।"
ফাইজান কল রিসিভ করে বললো, "কেমন আছো লতা?"
"আপনি আমার সাথে কথা বলছেন,আমার চাইতে সুখী এই দুনিয়ায় কেউ নেই এখন আর।"
"আমি কল দিয়েছি জানতে বিয়েতে তুমি লেহেঙ্গা নাকি শাড়ি,কোনটা পরতে চাও?এখন তো অনেকেই লেহেঙ্গা পড়ছে।"
"আপনার যেটা ভালো লাগে, তাই নিয়েন।আমার কোনো চয়েস নাই আপনি ছাড়া। "
ফাইজান হেসে ফেলে।
"সবকিছু কি আমার পছন্দ মতোই নিবো?"
"হ্যাঁ, আপনি আমাকে মনে করে পছন্দ করবেন এটাই তো আমার পরম পাওয়া।"
তরু সব শুনছে।তরুর মনে হচ্ছে কেউ বুঝি ব্লে ড দিয়ে কেটে ওর গায়ে লবন মরিচ লাগিয়ে দিচ্ছে। লতার প্রতিটি কথা তরুর গায়ে আগুনের ফুলকির মতো লাগছে।
তরু ধীর পায়ে নেমে এলো।লতার কথা তরুর সহ্য হচ্ছে না। বারবার নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে লাগলো, কেনো এভাবে ধোঁকা দিলো ফাইজান ওকে?
কোন অপরাধে?
নিজেই তো ভালোবাসলো,নিজেই কেনো ছেড়ে গেলো তবে?
কেনো তরুকে এভাবে ভেঙে চুরমার করে দিলো।
রুমের দরজা বন্ধ করে তরু বই নিয়ে বসে।আজকে সারাদিন তরু অনেক পড়বে।বুকে যন্ত্রণা নিয়ে মস্তিষ্ককে বইয়ে বন্দী করে রাখবে তরু।
মন কি কথা শুনে?
খেয়াল করতেই দেখে বইয়ের পৃষ্ঠা চোখের পানিতে ভিজে গেছে সব।তরু স্থির হয়ে চেয়ারে বসে থাকতে পারছে না।
ফ্লোরে গলা কা টা মুরগির মতো তড়পাতে লাগলো। বারবার মনে হতে লাগলো এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাবে যন্ত্রণায়।এই বুঝি মরে যাবে সে।মরে গেলেও বাঁচে।
ফাইজান ফোন রেখে উদাস হয়ে বসে রইলো। কালাম হোসেন এক মুহূর্তের জন্য ফাইজানকে একা ছাড়তে চান না।সর্ব্দাই কেউ না কেউ ফাইজানের আশেপাশে থাকে।
বিকেলে বোনেরা,ভাইয়ের বউয়েরা মিলে তৈরি হয়ে নিলো বিয়ের কেনাকাটা করতে যাওয়ার জন্য। ফাইজান একটা আকাশি রঙের পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়ে নিলো।
কালাম হোসেন ছোট ছেলের বিয়েতে দুই হাত খুলে খরচ করছেন।
ফাইজানের হাতে নগদ দুই লাখ টাকা তুলে দিলেন।নিজের চেক বইয়ে সই করে চেকবই ও দিয়ে দিলেন।
শপিং মলে ঘুরে একটা সিঁদুর লাল রঙের বেনারশী শাড়ি কিনলো।শাড়ি কিনতে গিয়ে ফাইজানের মনে পড়লো তরু বলেছিলো বিয়েতে সিঁদুর লাল রঙের জামদানী পরবে সে।
৭০ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনতেই বোনেরা সবাই কানাকানি করতে লাগলো।
বড় ভাইয়ের বউ বললো, "এতো দিন তো বিয়েই করতে চাও নাই আর এখন বউয়ের জন্য এতো দামী শাড়ি?"
ফাইজান হেসে বললো, "বিয়ে তো একবারই করবো ভাবী।বউ আজ না হোক,কাল ঠিকই মেনে নিবো। কিন্তু বিয়ে তো তখন আবার করতে পারবো না।বাকি জীবন বউ খোঁটা দিবে বিয়েতে ভালো কিছু দিই নি বলে। সেই রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন