উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৫)

একটা একটা করে মোট সাতটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। বরের গাড়ি এখনো আসে নি।কালাম হোসেন প্রায় ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন।তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অতিথিরা সবাই ভেতরে ঢুকে গেছে। এক দফা মানুষ খেতে বসে গেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে। আলমগীর ৫০০ মেহমানের আয়োজন করেছে। মেয়েরা লাগেজ নিয়ে লতাকে সাজাতে গেলো। লতা ফাইজানের বোনের কাছে শুনেছে সব এক্সপেন্সিভ জিনিস কিনেছে ফাইজান লতার জন্য।
কালাম হোসেন গেইটের বাহিরে অপেক্ষা করছেন।আরো ১০ মিনিট পর দেখা গেলো বরের গাড়ি আসছে।পথে বরের গাড়ির চাকায় সমস্যা হওয়ায় ওটা রেখেই অন্য গাড়িগুলো চলে আসতে হয়েছে। কালাম হোসেন এগিয়ে যেতেই দেখলেন বড় জামাই সোহেল শুকনো মুখে এগিয়ে আসছে।
কালাম হোসেনের বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। সোহেল এগিয়ে এসে একটা কাগজ এগিয়ে দেয় কালাম হোসেনের দিকে।
কালাম হোসেন তা না নিয়েই বললো, "কিসের কাগজ দিচ্ছো এইটা?ফাইজানকে নামাও গাড়ি থেকে আগে।"
সোহেল মুখ ভোঁতা করে বললো, "ফাইজান নেই আব্বা।ও পালিয়ে গেছে। "
কালাম হোসেনের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। কি বলছে এটা সোহেল!
ফাইজান নেই মানে?
"গায়ের টায়ারে ফাইজান নিজেই কিছু একটা করে রেখেছিলো সম্ভবত। আপনারা তো দেখলেন গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। গাড়ি ঠিক করার জন্য দাঁড়ায়,আপনাদের গাড়ি চলে আসার পর আমরা দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে বাহিরে দাঁড়াই।ফাইজান আমাকে বললো, প্রস্রাব করে আসছে।
আমি ও তা ভেবে অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু ১০ মিনিট হয়ে গেলো ও আসে নি।পরে গাড়িতে দেখি এই কাগজটা রেখে গেছে। চিঠিটা পড়ে বুঝতে পারলাম ফাইজান আর আসবে না বিয়ে করতে। "
কালাম হোসেনের সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে তিনি কাগজটা খুললেন।
"আব্বা!
যদিও শ্রদ্ধেয় আব্বা লিখেই পত্র লিখা শুরু করবো ভেবেছিলাম কিন্তু পরমুহূর্তে মনে পড়লো আপনি কি আসলেই শ্রদ্ধার যোগ্য?
আপনার নিজের কি মনে হয় আব্বা?
ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি সবসময় আপনি আপনার সব সিদ্ধান্ত আমাদের সব ভাইবোনের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।
আপনি আমাদের ভালো চেয়েই করেছেন হয়তো কিন্তু সেই ভালোটা মেনে নিতে বুক ভেঙে যেতো আব্বা।
ছোট বেলায় একটা সাইকেলের অনেক শখ ছিলো। বন্ধুরা দেখতাম সাইকেল চালাতো,নিজেদের সাইকেল।আপনাকে বলেছিলাম আব্বা একটা সাইকেল কিনে দেন।আপনি বলেছিলেন,সাইকেলের দরকার নাই।এক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকবে।ওই যে আমাদের ভালো চান বলেই বলেছেন কিন্তু সেই ভালো আমাকে বঞ্চিত করেছে আমার এডভেঞ্চারাস কৈশোর থেকে। শুক্রবার ছুটির দিনে বন্ধুরা সবাই সাইকেল নিয়ে ঘুরতে যেতো অনেক দূরের পথে,অচেনা পথে।একদিন এক মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ পড়তো। আমি শুধু বারান্দায় বসে দেখতাম ওরা হৈহৈ করে আসছে।
একবার আপনাকে বললাম আব্বা স্কুল থেকে পিকনিকে কক্সবাজার যাবে।আপনি বললেন,যাওয়া লাগবে না,তুই সাতার জানিস না ভালো।
আমি অনেক অনুরোধ করে বলেছি দরকার হলে আমি পানিতে নামবো না।আপনি বলেছিলেন দরকার নেই।পড়া নষ্ট হবে।এই দুই দিনে বরং পড়া আরো কিছুটা পড়ে এগিয়ে থাকতে পারবো অন্যদের থেকে। বড় হলে সারাজীবন পড়ে থাকবে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য।
পড়া আমি পড়েছি আব্বা,এগিয়েও ছিলাম সবার থেকে।কিন্তু আমার লাস্ট বেঞ্চে বসা ক্লাসের লাস্ট বয়টা পিকনিক থেকে এসে যেই উল্লাস প্রকাশ করেছে, পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে ও সেই উল্লাস আমার হয় নি আব্বা। আর বড় হয়ে ও আমি কক্সবাজার গিয়েছি কিন্তু কৈশোরের সেই বন্ধুদেরকে আর পাশে পাই নি।
সব বয়সের কিছু চাওয়া থাকে আব্বা, আপনি আমাদের ভালো চাইতেন সবসময় কিন্তু ভালো রাখেন নি আমাদের। ভালো চাওয়া আর ভালো রাখা দুটো আলাদা বিষয় এটাই আপনি বুঝতে পারেন নি।
আমার সবকিছুই আপনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।নিজেকে আমার মনে হতো অবুঝ শিশু।
আপনার এই ভালো চাওয়ার চক্করে পড়ে আমার জীবনটা পুরো এলোমেলো হয়ে গেলো।
আমি ভালোবেসেছিলাম যাকে আপনি তাকে পছন্দ করেন নি ওর বাবা নেই বলে। বাবা মা কি সবার আজীবন থাকে?আপনি যে আগামীকাল বেঁচে থাকবেন তার নিশ্চয়তা কি?
আমাকে বারবার আপনারা ধোঁকা দিয়েছেন। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে আমার সাথে মিথ্যা বলেছেন।তারপর মা'কে তালাক দিবেন এটা বলে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাটককটা করলেন।আপনি আর মা যে কি রকম জাত অভিনেতা / অভিনেত্রী তা আমি আগে বুঝতে পারি নি।
শেষে কি-না এরকম একটা জঘন্য মিথ্যা কথা বলতে ও বাদ দিলেন না!ওই দিন আমার ফোনটা আমি ইচ্ছে করেই আপনাদের রুমে রেখে এসেছি রেকর্ডার অন করে। আপনার ছেলে হয়ে অভিনয় করতে পারবো না তা তো হবে না আব্বা।আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করবো। আজ করি আর এক যুগ পরে।আপনার কথা মতো সবসময় সব কিছু করে এসেছি কিন্তু এই একটা কাজ আপনার কথামতো করতে পারছি না আব্বা।আমি যাকে ভালোবাসি তাকে নিজের সবটা দিয়েই ভালোবাসি।
নিজের মনকে অন্য কারো কাছে রেখে সংসার অন্য কারো সাথে করা আমাকে দিয়ে হবে না।আমার ভালোবাসা মিথ্যে না।আমার কমিটমেন্ট মিথ্যা না।"
কালাম হোসেন সোহেলের দিকে তাকিয়ে বললো, "এখন আমি কি করবো সোহেল? "
সোহেল জবাব দিতে পারলো না।সোহেলের মামাতো বোন তরু,লতা।সোহেল এগিয়ে গিয়ে আলমগীরকে জানায় সবটা।
মুহূর্তেই আনন্দ অনুষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে আসে।লতাকে সাজানো হচ্ছে, এরইমধ্যে জানাজানি হয়ে গেলো ফাইজান আসে নি।
আলমগীর ফাইজানের আব্বার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো।মুহূর্তেই বিয়ে বাড়ির চেহারা পালটে গেলো। এতো আয়োজন, এতো কিছু সব কি বৃথা যাবে!
কালাম হোসেন সেই ধস্তাধস্তির মধ্যে জানতে পারলেন ফাইজান আসলে লতারই চাচাতো বোন তরুকে ভালোবাসে।
কালাম হোসেন একটা সুক্ষ্ম চাল চাললেন।আজকে যদি বউ নিয়ে বাড়ি না ফিরেন তবে তিনি সবার কাছে ছোট হয়ে যাবেন এলাকায়। সিদ্ধান্ত নিলেন তরুকে ফাইজানের বউ করে নিয়ে ফিরবেন।ফাইজানকে এছাড়া আর হাতের মুঠোয় আনতে পারবেন না বুঝতে পেরেছেন।তবে তরুকে এমন শিক্ষা দিবেন যে আজীবন আফসোস করবে। সুইটিকে যেভাবে তাড়িয়েছিলো,তরুও বিয়ের পর নিজে থেকে ফাইজানকে ছেড়ে আসবে।তা দুই বছর সংসার করুক আর দশ বছর। তরুকে শান্তি দিবেন না।
আলমগীরের কাছ থেকে সরে গিয়ে নজরুলের কাছে যায়।দুষ্ট লোকের কথা মিষ্টি হবে এটা সবাই জানে।
নজরুলের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে কালাম হোসেন তরুকে ফাইজানের সাথে বিয়ে দিতে আজকে এই আসরেই।কালাম হোসেনের স্থির বিশ্বাস এখানে উপস্থিত কারো না কারো সাথে ফাইজান যোগাযোগ করবেই।যদি যোগাযোগ করে তাহলে জানতে পারবে তরুর সাথে বিয়ে হবে।তরুর সাথে বিয়ে হবে জানলে ফাইজান আসবেই।
নজরুল এক কথায় সোজা নিষেধ করে দিলো।নজরুলের হাতে ধরে অনুরোধ করে কালাম হোসেন বললো, "ভাইজান আমার ছেলে তো আমাকে জানায় নি এসব ব্যাপারে। জানালে কি এরকম ভুল করি!আপনি মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন না ভাই।ছেলে মেয়ে রাজি থাকলে আমরা কেনো ঝামেলায় জড়াবো।"
অনেক অনুরোধের পর নজরুল তরুকে ডাকে।কালাম হোসেনকে অবাক করে দিয়ে তরু নিজেই অসম্মতি জানায় ফাইজানকে বিয়ে করতে।
কালাম হোসেন লজ্জিত মুখে শেষ পর্যন্ত ফিরে গেলেন।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন