উপন্যাস        :         পদ্মমির 
লেখিকা         :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
Bangla Golpo পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব - ৬)


আমিরের দ্বিতীয় অফিস অন্য এলাকায়। নারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিংবা অন্য কোনো অপরাধ জগতের বাসিন্দা প্রত্যেকে ওখানে দেখা করতে যায়।

আমির সেক্রেটারিকে ভারিক্কি গলায় বলল, ‘তাকে আসতে দিবেন না।’ ইন্টারকমের সুইচ অফ করে দিল ও।

আলমগীরসহ আরো ছয়জন আমিরের অফিসে ঢুকল। দ্বিতীয় অফিসে যাবার সময় হবে না বলে তাদেরকে আমির এখানে ডেকেছে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কে কোন এলাকায় যাবে, কীভাবে কী করবে তার একটা ছক তৈরি করেছে। প্রত্যেকের হাতে তা তুলে দিবে। আলমগীরের পাশে কবির দাঁড়িয়ে আছে; তেইশ বছরের তরুণ। বছর ছয়েক আগে কবিরকে পথ থেকে তুলে এনেছিল আমির।

মাতালের মতো চোখ বুজে আসছে বার বার, ঢলছে সে।

আমির কপাল কুঞ্চন করে বলল, ‘ওর কী হলো?’

কবির ধপাৎ করে আলমগীরের গায়ের উপর পড়ে যায়।

আলমগীর দ্রুত ধরে ফেলল, ‘বেশি গিলে ফেলছে।’

কবির জড়ানো গলায় বলে, ‘আমি শুনতাছি। খালি দাঁড়াইতে পারতাছি না, পা দুইটা কই জানি চইল্লা গেছে। আপনি কন, আমি শুনতাছি, শুনতাছি-‘

আমির গর্জে উঠল, ‘ঘাড় ধরে ও কে বের করে দাও।’ আবার বাজল ইন্টারকম।

সেক্রেটারি বিনীত সুরে বলল, ‘আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। রফিক মাওলা বলেছেন তিনি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলতে চান।’

তাৎক্ষণিক আমিরের শরীরের স্নায়ুতে টান পড়ল। রগে রগে কিছু একটা ছুটতে শুরু করল। রফিক মাওলা পদ্মজা সম্পর্কে কী বলবে? ভালো কিছু নয় তা নিশ্চিত। আমির বলল, ‘ভেতরে পাঠিয়ে দাও।’

তার চোখমুখের রঙ পরিবর্তন হতে দেখে আলমগীর প্রশ্ন করল, ‘কী হয়েছে?’

‘রফিক মাওলা অফিসে।’

‘ও এখানে কী করে?’

‘পদ্মজাকে নিয়ে কিছু বলতে চায়।’

কবির ছাড়া উপস্থিত বাকি ছয়জনের মুখে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। এরা প্রত্যেকে আমিরের বিশ্বস্ত সঙ্গী। একেকজন একেক দলের দলনেতা হয়ে কাজ করে। পদাজা সম্পর্কে সব জানে। পাঁচটি বছর পদ্মজার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার যে আপ্রাণ চেষ্টা ছিল আমিরের, তাতে এদেরও অবদান রয়েছে।

আমির কোথাও গেলে তারাই পদ্মজাকে আড়াল থেকে রক্ষা

করে। তাদের নাম সাদিক, সুরুজ, আবুল, আসাদসারওয়ার, কবির ও আলমগীর।

রফিক মাওলা অফিসে ঢুকল। প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাল চারিদিকে। চাকচিক্য এবং আভিজাত্যপূর্ণ অফিস!

দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘বহুদিন পর দেখা মি. হাওলাদার।’

আমিরের সোজাসাপটা প্রশ্ন, ‘কী বলতে চান?’

রফিক বাকিদের দেখে বলল, ‘এদের সামনেই বলব?’

‘দ্রুত বলুন, আমার কাজ আছে।’ তাড়া দিল আমির।

পদ্মজার নাম উঠায় অস্থিরবোধ করছে সে।

আগে তো বসতে দিন।’

আমির ও রফিকের কাছাকাছি বয়স। এক সময় দুজনের মধ্যে মহব্বত ছিল। একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করত। সেই সম্পর্ক আর নেই।

এখন দুজন দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু।

আমিরের মুখোমুখি একটি চেয়ার দখল করে বসল রফিক। বলল, ‘ভাবি কেমন আছে? শরীর ভালো আছে তো?’

রফিকের মুখে পদ্মজার সম্পর্কে কিছু শুনতে চাচ্ছে নাআমির।

এতোটাই অস্থির হয়ে পড়েছে যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

রফিক পুনরায় বলল, ‘ভাবির নাকি জ্বর এসেছিল, এখন ঠিক আছে?’

আমির কটমট করে তাকিয়ে আছে। তার হয়ে আলমগীর বলল, ‘হেঁয়ালি ছাড়ুন। কী বলতে চান? কাজের কথায় আসুন।’

রফিক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘ভাবির সম্পর্কেই বলতেচাই।’

রফিক পদ্মজা সম্পর্কে কিছু বলতে চায় শোনার পর থেকেই আমিরের রক্ত টগবগ করছে। আতঙ্কে বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। সে গর্জে উঠার আগে রফিক বলল, ‘ভাবিকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে শুনলাম, ভাবি নাকি…’ রফিক থামল।

আমিরের দিকে তাকিয়ে ফিচলে হাসল। আমির মনে মনে ভাবছে, ‘রফিক যেন এটা না বলে, ও জেনে গেছে পদ্মজা আমার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু জানে না। তাহলে শত্রুপক্ষরা আমাকে ধ্বংস করার মোক্ষম হাতিয়ার পেয়ে যাবে। এটা যেন না হয়, না হয়!’

কিন্তু তাই হলো। রফিক নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাবির থেকে আড়াল করা কি ঠিক, হচ্ছে? অর্ধাঙ্গিনীর তো সব জানা উচিত। সে জানবে না তো কে জানবে? ভাবির সাথে অবিচার হচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আমির বলল, ‘কী জানার কথা বলছেন?’

রফিক নিষ্পাপ গলায় বলল, ‘অতীতের ফষ্টিনষ্টি,

দুইটা বউ, নারী ব্যবসা, এতো বড় একটা চক্র -‘

আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে  আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে চলে আসল, ‘বেরিয়ে যা কুত্তার বাচ্চা। এখুনি বেরিয়ে যা।’

আলমগীর, সাদিক দুজন মিলে রফিককে বগল থাবা দিয়ে ধরে বের করে দেয়ার জন্য। রফিক ঠোঁটে বাঁকা হাসি এঁটে বলল, ‘আশা করি ভাবি তার স্বামীর গল্পটা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনবে।’

আমিরের চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। বুকের ভেতর ধিকধিক করে জ্বলছে আগুন। রফিক মাওলা জানে মানে কুতুবউদ্দিনও জানে। সে ফেঁসে গেছে। পাথর হয়ে গেছে আমির। দ্রুত আলমগীরকে থামিয়ে দিয়ে দূর্বল ও কর্কশ গলায় বলল, ‘কী চাস?’

রফিক বিজয়ের হাসি হাসল। দুই হাত ঝেড়ে আবার চেয়ারে বসে পেশাগত ভঙ্গিতে বলল, ‘স্যার বলেছেন, ইয়াকিসাফির সঙ্গে যে চুক্তিপত্র করেছেন সেটি যেন আপনি বাতিল করেন। আপনার পশ্চিমের জায়গাটাও চান, যেখানে আপনি আরেকটা ফ্যাক্টরি করতে চাচ্ছেন। স্যার সেখানে শপিংমল করবেন আর চারটি জাহাজ চাই। এতটুকুই।’

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।

 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন