উপন্যাস       :        শকুন
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “শকুন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
শকুন || আরশি আয়াত
শকুন || আরশি আয়াত

শকুন || আরশি আয়াত (পর্ব - ১)

পিরিয়ডের রক্তে ভেজা প্যাড'টা নাকের কাছে ধরে ঘ্রাণ নিলো শামীম।তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসলো।নিপাট মুখশ্রীতে ফুটে উঠলো কুটিল হাসি।এটা জোগাড় করতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।গুণে গুণে এক হাজার টাকা দু'টো নোট খসাতে হয়েছে।এবার জমবে খেলা।ঠকানোর মূল্য হাড়েহাড়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

হিমানীর প্রিয় বান্ধবী রুপা।এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকতে পারলেও রুপার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না।একেবারে ছোটোবেলা থেকে বন্ধুত্ব তাদের।এখন তো মনে হয় বান্ধবী নয় দু'বোন।দুই পরিবারের চেনাজানাও ভালো তাই রাত,দিন নেই আসা যাওয়া লেগেই থাকে।হিমানী আজ কলেজে যায় নি পেট ব্যাথায় অস্থির হয়ে ঘরেই বসে আছে।মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো নরক যন্ত্রণার সমান।খেতে,ঘুমাতে,পড়তে কিছুতেই ভালো লাগে না।আর দিনরাত শারীরিক যন্ত্রণা তো আছেই।

তলপেটে হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে হিমানী।বাসায় এখন মা ছাড়া কেউ নেই।সবাই যার যার কাজে চলে গেছে।অন্যদিন হলে ও নিজেও বাসায় থাকে না।।সামনে টিভিতে হিন্দি সিনেমা চলছে তাতে মনযোগ নেই ওর।দু'হাতের আঙুল দ্বারা সমান তালে টাইপ করে চলছে ।কখনো হাসছে,কখনো বা লজ্জা পাচ্ছে।একটু পরই রুপা আসবে।আজ বৃহস্পতিবার বলে হাফ ক্লাস পরেই ছুটি।রুপা এখনও জানে না ও নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে।এই ছেলেটা এখনও পড়াশোনা করে না।নিজে কিছুই করে না তবে বাপের কাঁড়ি কাড়ি টাকা আছে।টাকার বিছানায় শোয় আর টাকার বালিশে ঘুমায়।এই ছেলেকে হাতে রাখতেই হবে।আর আজকে রুপাকে জানাবে ছেলেটার কথা।রুপা একটা পার্সেল নিয়ে আসবে সেটাও ওর পাঠানো।পার্সেলে খুব সম্ভবত চকলেট আছে।কারণ কাল রাতে হিমানী কথার ছলে বলেছিলো পিরিয়ডের সময় চকলেট খেতে ইচ্ছে করে।তাই হয়তো পাঠিয়েছে।এভাবেই কথার জালে বিভিন্ন ছেলেকে ফাঁসিয়েছে হিমানী।ওর প্রেম টেকে না বেশিদিন।বলা ভালো ওই রাখে না।তবে ছয়মাস আগে নিজের অজান্তে একজনের সাথে একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়েছিলো।সেই ছেলে এতটাই পাগল ছিলো ওর জন্য যে ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে হাত কেটে সুইসাইডও করতে চেয়েছিলো কিন্তু ক্ষত গভীর না হওয়ায় বেঁচে যায় সে-ই যাত্রায়।এখনও প্রতিদিন ফোন,মেসেজ আসে কিন্তু হিমানী পাত্তা দেয় না।

রুপা বাসায় এসেই হিমানীর ঘরে গেলো।পার্সেলটা ওর বিছানায় ফেলে ক্লান্তস্বরে বলল,'এটা আবার কে পাঠালো তোকে?'
হিমানী ফোনটা পাশে রেখে উৎসাহী হয়ে বলল,'সবই বলব।চা খাবি না কোক খাবি?'
'কোক।'
'ফ্রীজে আছে নিয়ে আয়।'
রুপা ব্যাগটা সোফায় রেখে চলে গেলো কোক আনতে।আর হিমানী পার্সেলটা খুলতে বসল।ওর ধারণাই সঠিক চকলেট পাঠিয়েছে।পাঁচ রকমের চকলেট আছে।সাথে একটা লাভ শেপ কার্ড।সেখানে লেখা আছে 'শুধুই তোমার জন্য'।হিমানী দেখে হাসলো।এরমধ্যেই হাতে দুই লিটারের কোকের বোতল'টা নিয়ে ফিরে এলো রুপা।এই কোক'টা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা দোকান থেকে কাল ফ্রী দিয়েছে হিমানীকে।তেমন কিছুনা দোকানদার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে আবেদনময়ী হাসি দিতেই কেল্লাফতে।হিমানী জানে ছেলেদের ঘায়েল করতে বেশি কিছু লাগে না।দু'টো মিষ্টি কথা আর হাসিতেই কাবু হয়ে যায় ওরা।
রুপা এসে কোক গ্লাসে ঢেলে হিমামীর দিকে এগিয়ে দিতেই ও বলল,'আমার খেতে ইচ্ছে করছে না তুই খা।আমি এখন চকলেট খাবো।'
চকলেটের বক্স গুলোর দিকে চেয়ে রুপা বলল,'ও আচ্ছা পার্সেলে চকলেট ছিলো!এত চকলেট পাঠালো কে রে?'
হিমানী চোখ মেরে বলল,'আরেকটা মা'ল পটিয়ে ফেলেছি।ও ই পাঠিয়েছে আমার পিরিয়ড হয়েছে শুনে।'
রুপা উৎসাহী হয়ে জানতে চাইলো,'কবে পটালি?আমাকে তো বলিস নি!'
'এই তো দু'দিন হলো।'
'ওরে বাবা!দু'দিনেই এত ভালোবাসা যে চকলেট পাঠিয়ে দিলো।'
'ভালোবাসা না ছাই।দু'দিন পরই রুমডেটের জন্য অফার করবে।'
'সবাই একরকম না মানী।শামীম ভাই তো তোকে কত ভালোবাসতো!'
'বেশি ভালোবাসা আমার সহ্য হয় না।দমবন্ধ লাগে।শামীম কথায় কথায় নিজের ক্ষতি করতো,আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতো।আমার ওর এই স্বভাব গুলো ভাল্লাগে না।'
'উনি তো তোর জন্যই এমন করতো।তুই কোনো ছেলের সাথে কথা বললে রেগে যেতো।এটাই তো!এমন পসেসিভ তো হবেই।উনি তো তোকে ভালোবাসে।'
'আমার অতিরিক্ত কিছুই ভালো লাগে না।আমার যে ছেলে ফ্রেন্ড আছে সেটা জেনেই তো সে প্রেম করেছিলো তাহলে মানতে পারে নি কেন?'
'তবুও তোর ওনাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয় নি।এখনও তোকে কতোটা চায় উনি।'
'চুপ কর।তোর মায়া লাগলে তুই ই প্রেম কর না।'
'না থাক ভাই আমি প্রেম পিরিতিতে নাই।'
'হ্যাঁ তুই তো সন্ন্যাসী হয়েছিস।'
হিমানীর কথায় রুপা হাসলো কেবল কথা বাড়ালো না।বাকিসব ভালো হলেও হিমানীর ছেলেদের এই নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো স্বভাবটা মোটেই ভালো লাগে না ওর।এছাড়াও মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা তো আছেই ছেলেরা সহজেই আকর্ষিত হয়ে যায়।যেটা ওর ক্ষেত্রে হয়ই না।

সাত সকালে শামীম দাঁড়িয়ে আছে রুপাদের গলিতে।আর মিনিট দশের মধ্যেই রুপা বের হবে।এই সময়ে দুইটা টিউশনি করায় ও।হিমানীদের মত এত স্বচ্ছল পরিবার নয় ওদের।বাবার পেনশনের টাকায় সংসার আর ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে আর কিছু থাকে না হাতে তাই নিজের পড়ার খরচ নিজেরই টানতে হয়।মাঝেমধ্যে হিমানীও কিছুটা সাহায্য করে।এভাবেই চলছে।

শামীমকে দেখে রুপা দাঁড়িয়ে পড়লো।সালাম দিয়ে বলল,'শামীম ভাই,আপনি এখানে কি করেন?'
'আরেকটা কাজ আছে।একটু করে দিতে হবে।'
'কি কাজ?'
'এই মাদুলি'টা হিমানীর শরীরে যেকোনো জায়গায় বেঁধে দিতে হবে।'
'এটা তো অনেক রিস্ক হয়ে যায়।বাঁধতে গেলেই অনেক কিছু প্রশ্ন করবে।'
'তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও রুপা।'
'শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না শামীম ভাই।'
'কত চাই?'
'পাঁচ হাজার।'
'কি!এত টাকা!দুহাজার না দিলাম গতকাল।'
'ওটা তো দিয়েছেন প্যাড এনে দেওয়ার জন্য।আজকের কাজের জন্য পাঁচ হাজার দিতে হবে।'
শামীম মানিব্যাগ বের করে হাজার টাকার পাঁচটা নোট রুপার মুখের সামনে ধরলো।খুশিতে চকচক করে উঠলো রুপার চোখজোড়া।হাত দিয়ে ছুঁতে নিলেই শামীম টাকা গুলো সরিয়ে নিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল,'কাজটা যেন হয় ঠিকঠাক।'
'সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না হয়ে যাবে।এবার টাকাগুলো হাতে দিন।'
শামীম টাকাগুলো দিয়ে দিলো।পাঁচটা কচকচে হাজার টাকার নোট পেয়ে রুপা খুশিতে ডগমগ করে উঠলো।ব্যাগের গুপ্ত পকেটে টাকাগুলো যত্ন করে রেখে টিউশনিতে চলে গেলো আর শামীম অন্য গলি ধরলো।

হিমানী আজও কলেজে আসে নি।কলেজের নাম করে বেরিয়েছে নতুন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে।ছেলেটার নাম রবিন।আজকে দেখা করতে এসে কতকিছু গিফট করেছে হিমানীকে।দেখে তো মুখ 'হা' হয়ে গেছে ওর।তখনই মনে মনে ঠিক করলো এই ছেলেকে হাতছাড়া করবে না সহজে।রবিনের সাথে ঘুরে বাড়ি ফিরছিলো হিমানী।রিকশায় ওর পাশে রবিনও বসেছিলো ওকে এগিয়ে দিতে।হঠাৎ কথা বলতে বলতেই হিমানীর চোখ গেলো রাস্তার ধারে শামীম ক্রুর দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।একমুহূর্তের জন্য ভয় পেলো ও।এত ভয়নাক লাগছে কেন ওকে?
বাসায় এসে হিমানী রুপাকে ফোন করলো।রুপা জানালো ও বিকেলে আসবে।রুপা বিকেলে আসতেই হিমানী সবকিছু বলল।রুপা স্বান্তনার স্বরে বলল,'তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না।আমি তোকে একটা জিনিস দিচ্ছি তুই এটা তোর শরীরে রাখলেই তোকে এসব নজর কিচ্ছু করতে পারবে না।'
রুপা ব্যাগের ভেতর হতে মাদুলি'টা বের হিমানীর হাত পরাতে গেলেই হিমানী বলল,'এটা কিসের তাবিজ?'
'বদনজরের।এটা পরলে কারো নজর পরবে না তোর ওপর।'
হিমানী আর না করলো না পরে নিলো তাবিজটা।রুপা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ওর কাজ শেষ!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 
লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন