উপন্যাস : তাজমহল প্রথম খন্ড
লেখিকা : প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১লা অক্টোবর, ২০২৫ ইং
লেখিকা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর “তাজমহল - ১ম খন্ড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
| তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী |
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || প্রথম খন্ড (পর্ব - ১৭)
শাইনা লজ্জায়, অস্বস্তিতে ধাতস্থ হতে পারছিল না। দুইদিনের বিয়ের সম্পর্কে খাতিরে একটা পুরুষ লোকের কোলে হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করে তার শরীরের প্রতিটি স্নায়ু টান টান হয়ে উঠলো। সে সরে যেতে চাইছিল, কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর শক্ত হাত তার কোমর আঁকড়ে ধরে রাখলো।
শাইনা ধীরে নিঃশ্বাস ফেলছে। তাজদার সিদ্দিকীও যেন না শোনে। তাজদার তার সাথে হাতের মুঠো নিয়ে এল শাইনার সামনে। শাইনা তার হাতের মুঠোর দিকে তাকালো। কৌতূহল হলেও মুখ ফুটে কিছু বললো না। তাজদার ধীরেধীরে মুঠো খুললো। চমৎকার ডিজাইনের একটা চেইন লকেট। শাইনার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তাজদার বলল,
"তোমার উপহার নাও।"
শাইনা নিল না। যদি পরে বলে বসে তোমার উপহার দাও তখন? সে তো কোনো উপহার রাখেনি। তখন সে লজ্জায় পড়ে যাবে। তাকে লজ্জায় পেলে পৈশাচিক আনন্দ পাবে তাজদার সিদ্দিকী।
শাইনা চুপচাপ বসে রইলো। তাজদার তার চোখের সামনে লকেটটা তুলে ধরলো। শাইনা বললো তাকে ছেড়ে দিতে। তাজদার শুনলোই না। চেইনের হুকটা খোলার চেষ্টা করছে সে। শাইনাকে বলল,"খবরদার উঠবেনা।"
চেইনের হুকটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। শাইনার মাথা থেকে আঁচল পড়ে গেছে অনেক আগে। তাজদার হুক খুলে শাইনার বেণীটা সামনে ফিরিয়ে দিয়ে চেইনটা পরিয়ে দিল। তারপর তাকে টেনে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে শাইনার গলায় জ্বলজ্বল করতে থাকা চেইনটি দেখে বলল,
"নাইস!"
শাইনা আয়নার দিকে তাকায়নি। চোখ নিচে নামিয়ে রেখেছে। কাঁধের কাছে উত্তপ্ত কিছু টের পেল হঠাৎ। চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো তাজদার সিদ্দিকীর নিঃশ্বাস। তার কাঁধে আলতোভাবে থুঁতনি রেখে তাজদার সিদ্দিকী বলল,"সবাই আমাকে নিশ্চিত করেছে ফিউচারে এই ধরণের ঘটনা আর হবেনা। এটা একপ্রকার ভুল বোঝাবুঝি। মহিলারা টেনে টেনে কচুর লতির মতো কথা লম্বা করে। ডিজগাস্টিং! ইউ ক্যান ট্রাস্ট দিস ওয়োন্ট রিপিট।"
শাইনা জানে এরা জুতো মেরে গরু দানে ওস্তাদ। তাই নতুন করে কিছু বললো না। ক্লান্ত সে। বিছানায় শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। নিজের ঘরটাতে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে যেখানে সে নিজের ইচ্ছেমতো হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাতে পারে। কিন্তু সেটা অসম্ভব! সে লকেটটা ছুঁয়ে বলল,"এটা সুন্দর কিন্তু আমি কোনো উপহার আনিনি কারো জন্য। এভাবে উপহার নিতে আমার লজ্জা হচ্ছে।"
তাজদার তার কাঁধে থুঁতনি আরও গেঁথে দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলো। শাইনা শিউরে উঠলো। তখুনি বাইরে কারো চেঁচামেচি শোনা গেল। চ বর্গীয় শব্দ করে তাজদার জানালার কাছে চলে এল। শক্ত হাতে জানালা খুলে দিয়ে বাইরে কান পাতলো বিরক্তির সাথে। প্রতিবেশীদের কারো বাড়িতে ঝগড়া লেগেছে। কান পাততেই শোনা গেল,
"আর মতো বেডিদে এতল্লেই তোরলেই সংসার গরের। অন্য বেডি অইলে ঠ্যাং দেহেয় যেইতুগুই ওডা। যেদ্দুর হেডাম নেই এদ্দুর ঠ্যাং টানোস।"
মহিলার উচ্চবাচ্যর পর পুরুষ লোকের গলার আওয়াজ শোনা গেল।
"এনগরি ক্যা চিল্লেতে লেগগু? ওতোরো ঘরোত বিয়েবাড়ির মানুষ আছে হইদ্দি-ননি? এদ্দুর লাতিয়ে চিল্লেইলি কি কিছু সমাধান অইবুনা?"
তাজদার বিরক্তির সাথে জানালার কাঁচ টেনে দিতে দিতে বলল,"এতরাতেও এদের শান্তি নেই। মেজাজ খারাপ করে দেয়। ফালতু লোকজন!"
আয়নার সামনে শাইনা নেই। সে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। প্রতিবেশীদের ঝগড়া শুনে সে হাসছিল মনে মনে। তাদের ধন্যবাদও জানালো। উচিত কাজ হয়েছে।
তাজদার সিদ্দিকীর গলার আওয়াজ শোনা গেল।
ফোনে তৌসিফকে বলছে,
"বউ জামাই দুটোর মাথা ফাটিয়ে দিয়ে আয়। এটা ভদ্রলোকদের বাড়ি। রাতবিরেতে এভাবে চিল্লাপাল্লা করছে কেন?"
তৌসিফ কি বললো কে জানে। তাজদার সিদ্দিকী বলল,"শাওনকে নিয়ে যা। দরকার পড়লে আমাকেও ডাকিস। কিন্তু এদের মুখবন্ধ করা চাই। মুডটাই খারাপ দিল শালার। লাঠি নিয়ে যা। চিল্লাচিল্লি বন্ধ না হলে ধামাধাম দিয়ে দিবি।"
শাইনা চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। ধামধাম দিয়ে দিবি মানে? ওরা কি তাদের সমবয়সী নাকি? চাচা চাচীর বয়সী মানুষদের ধামাধাম দিয়ে বসা কি মুখের কথা? কতবড় বেয়াদব, গোঁয়ার! বেশ কিছুক্ষণ পর গালিগালাজ থামলো। তাজদার সিদ্দিকী ঘরময় পায়চারি করতে করতে তৌসিফের সাথে কথাবার্তা বলছে মেসেজে।
কিছুক্ষণ পর বিছানায় ধপ করে উঠলো। শাইনা চমকে উঠে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই দেখলো তার সামনে একটা বাক্স। তাজদার বুক উপুড় করে শুয়ে বাক্সটা খুলছে মনোযোগ দিয়ে। খুলতে খুলতে শাইনার দিকে তাকালো। শাইনা চোখ সরিয়ে নিল। বাক্স থেকে সবগুলো চুড়ি বিছানায় ফেললো তাজদার। শাইনা কাঁচের চুড়ি পছন্দ করে। তাজদার সিদ্দিকী চুড়ি হাতে নিয়ে বলল,"হাত বাড়িয়ে দেয়া হোক।"
মুখটা তখনো বিরক্তিতে থেঁতে আছে। যেন আদেশ না মানলে শাইনাকেও চিবিয়ে খাবে।
শাইনার হাতটা তার সামনেই রাখা। সে পাশ ফিরে যাচ্ছিল। তাজদার সিদ্দিকী শক্ত হাতে ধরে ফেলে একটা একটা চুড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো। হাতটাতে পরানো শেষ হতেই তাজদার সিদ্দিকী বলল,"ওই হাত!"
হাতটা না দিলে গায়ের উপরে উঠে আসতে পারে। তাই শাইনা এই পাশে ফিরে হাতটা রাখলো তার সামনে। তাজদার একটা একটা চুরি তার হাতের পরাতে লাগলো। শাইনা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষ চুড়িটা পরিয়ে তাজদার সিদ্দিকী তাকে একঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে বলল,
"এবার আমার উপহার।"
শাইনা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
"আগেই বলেছি আমার কাছে কোনো গিফট নেই এমুহূর্তে।"
"আমি আমার গিফট আদায় করে নিতে জানি।"
বলেই তাজদার তার হাতটা নিজের কাঁধের উপর তুলে নিতে নিতে গলদেশে মুখ ডুবিয়ে আদর করলো। শাইনার নিঃশ্বাস ফেঁপে উঠেছে। সে একঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে নিচে বসে পড়লো। তাজদারের দিকে তাকিয়ে নিজের বুকটাকে শক্ত করে খামচে ধরে কেঁদে উঠলো শব্দ করে।
তাজদার তার দিকে এক পা এগোতেই শাইনা বাম হাতটা জোরে আঘাত করলো পালঙ্কের পায়ার সাথে। কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়ার মতো শব্দ হলো। তাজদার সিদ্দিকী পিছিয়ে গেল। শাইনাকে দেখতে ভয়ংকর লাগছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
চলবে ...
১৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা প্রিয়া ফারনাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। কল্পনার ভূবনকে শব্দে রুপ দিতে লেখালেখির জগতে তার পদচারণা শুরু হয়েছে ২০২১ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রিমা পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ‘প্রিয় বেগম’ উপন্যাসের মাধ্যমে তার পরিচিতি বেড়েছে। ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। শব্দের জগতে তার পথচলা এখনো চলমান। ভবিষ্যতে আরও পরিপক্ক, আরও বৈচিত্রময় লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চান তিনি।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন