উপন্যাস       :        তাজমহল প্রথম খন্ড
লেখিকা        :         প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১লা অক্টোবর, ২০২৫ ইং

লেখিকা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর “তাজমহল - ১ম খন্ড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।

তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী


তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || প্রথম খন্ড (পর্ব - ১৯)

শাইনার হাতের কাঁটাছেড়া দেখে আনোয়ারা বেগম কপাল কুঁচকে ফেললেন। মুখ গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করলেন, "হাতে কী হয়েছে?"

শাইনা মাথা নিচু করে ধরা গলায় বলল "কাল চুড়ি পরছিলাম... ভেঙে গিয়ে কাঁচ বিঁধে গেছে।"

আনোয়ারা বেগম সহজেই বিশ্বাস করে ফেললেন। মুখ নরম করে জানতে চাইলেন,"তাজ কিছু দেয়নি রাতে?"

"চেইন দিয়েছে।"

চেইন আর লকেটটা আনোয়ারা বেগমকে দেখাল সে। তিনি লকেটটা ছুঁয়ে বললেন,"নিশানের সময় বৌমা নিজের চেইনটা দিয়েছিল তোমায়। এটা যখন পেয়ে গিয়েছ তখন তোমার শ্বাশুড়ির চেইন শ্বাশুড়িকে দিয়ে দিও।"

হঠাৎ তাজদার ঘরে ঢুকল। চোখে চোখ রেখে না তাকিয়ে, আঁড়চোখে দেখে নিল শাইনাকে। আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল দাদীমার দিকে। ঠান্ডা গলায় বলল,"চা দিতে আজ এত দেরি কেন?"

দাদীমা মুখ টিপে হেসে বললেন,"চা তো এবার তোমার বউ বানাবে।"

কাবার্ড খুলতে খুলতে তাজদার জবাব দিল,
"বউয়ের হাতে চা খাওয়ার জন্য সবাই বসে আছে?"

"নতুন বউয়ের হাতের চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে ক্ষতি কি? তুমি কি অবস্থা করেছ ওর?"

তাজদার তখনই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। কপাল ভাঁজ করে বলল," কী করেছি?"

"তোমার বউয়ের হাত কেটেছে।"

তাজদার ঠোঁট গোল করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,"ওহ্‌।"

"শোনো তোমার বউ কিন্তু আজ নাইওর যাবে।"

তাজদার কপাল কুঁচকে তাকালো শাইনার দিকে। কৌতুকমাখা কণ্ঠে বলল, "বিয়ে হতে না হতেই নাইওর?"

"ওমা! বউ বাপের বাড়ি যাবে না?"

তাজদার কাঠকাঠ উত্তর দিল, "উঁকি দিলেই বাপের বাড়ি দেখা যায়। আবার কীসের নাইওর?"

দাদীমা শাইনার দিকে তাকিয়ে বললেন, "দেখো কী বলে তোমার বর!"

শাইনা চুপচাপ বসে রইল।

দাদীমা তাজদারকে জিজ্ঞেস করলেন,
"তোমার বউ তোমার সাথে কথা বলে?"

তাজদার বলল,"আল্লাহর রহমতে এখন বলে।"

দাদীমা হেসে বললেন,"আল্লাহর রহমতে?"

"সে অনেক কথা।"

"আজ সন্ধ্যায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে। তুমি আবার কোথাও যেও না। রাতে শ্বশুরবাড়িতে যাবে। জামাই আদর খাবে।"

তাজদার হঠাৎ অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,"আদর! এত আদর কে করবে?"

শাইনা মুখ ফিরিয়ে বসে রইল। দাদীমা হাসতে হাসতে বলল,"তুমি খাবে। শাইনা চলে আসো।"

শাইনাকে নিজের পেছন পেছন আসতে বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।

তাজদার চুপ করে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল দরজার দিকে। তারপর হঠাৎ একটা তুড়ি বাজাল শাইনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। শাইনা ধীরে তাকাতেই তাজদার আঙুল তুলে বলল, "বিকেলে যাবে। কাল সকালে চলে আসবে।"

শাইনা শুধু তাকিয়ে রইল তার দিকে। চোখের চাহনি স্থির। সেই চাহনি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল তাজদার সিদ্দিকী। এড়িয়ে গেল কি?

__

শাইনাকে নাইওর দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছিল রান্নাঘরে। রীতি অনুযায়ী বউকে নাইওর দেয়ার সময় ভাতও দিতে হয় সাথে। সাথে গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, ডিম ইত্যাদি ইত্যাদি। সেগুলো আবার প্রতিবেশীদের ঘরেও বিলি করে।
বউ দুই তিনদিন বাপের বাড়িতে থাকবে। ওই বাড়িতে জামাই আদর হবে।

তিতলির সামনে শাইনা রান্নাঘরে চলে এল। এসে দেখলো আসর জমেছে সেখানে। তাকে দেখামাত্রই রওশনআরা বলল,

"সবাইকে চা করে দাও। পানি গরম হয়েছে।"

শাইনা গ্যাসের চুলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ফুটন্ত গরম পানিতে চা পাতা দিল। দুধ চিনি নিয়ে শেষে লিকার ঢেলে দিল। সবাই আঁড়চোখে তার কাজ দেখছে।

তৌসিফের মা হঠাৎ বলে উঠলো,"তোমার হাতে আরেকটা আংটি কোথা থেকে এল?"

শাইনা লিকার ঢালছিল দুধ চিনির মধ্যে। হাতের উপর অল্প করে লিকার পড়ে গেল হাত ফস্কে। রওশনআরাও কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শাইনা হাত মুছে নিয়ে কিছু বলার আগেই ফুপু বলল,"মনে হয় তাজদারেরটা ওকে দিয়ে দিয়েছে। ও তো আর স্বর্ণ পড়বেনা।"

শাইনাকে আর কিছু বলতে হলো না।
কাপে চা ঢেলে সবাইকে খেতে দিল সে। রওশনআরা বলেছে চিনি আন্দাজ করে দিতে। শাইনা চিনি কম দেয়নি। বেশিও দেয়নি। তবুও ভয়ে ভয়ে ছিল। কিন্তু কেউ ভালো খারাপ কিছু বললো না। তাসনুভা চা খায় না। সে নাশতার ট্রে রেখে যাওয়ার সময় শাইনার দিকে তাকালো একপলক। তারপর আবারও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। রওশনআরা কাজ করতে করতে শাইনার উদ্দেশ্যে বলল,

"তাজদার বোধহয় তোমার পাসপোর্টের ব্যাপারে কথাটথা বলবে আজ বাদে কাল। যদি বলে তাহলে বলে দিও তোমার ভাইয়ারা তোমাকে মাস্টার্স কমপ্লিট করতে বলেছে।"

শাইনা ব্যাপারটা সহজে বুঝলো না। যখন বুঝলো তখন বলল,"এখনও তো দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হইনি।"

"সেটাই তো বলছি। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট ভালো হলে মাস্টার্সে ভর্তি হবে। বলবে তোমার ভাইয়েরা এটাই বলেছে। বুঝেছ কি বলেছি?"

"হ্যাঁ।"

"এবার ঘরে যাও। কাপড়চোপড় স্যুটকেসে নিয়ে নাও।"

____

শাইনা ঘরে আসামাত্রই দেখলো শাহিদা বেগম ফোন করেছে। সে ফোন রিসিভ করে বলল,
"তোকে নাইওর দেওয়ার কথাবার্তা বলছেনা?"

শাইনা বলল,"বিকেলে দেবে।"

শাহিদা বেগম জানতে চাইল,"রাতে তাজদার আসবেনা?"

"জানিনা সেটা।"

"সবাইকে চা করে খাইয়েছিস?"

"হ্যাঁ।"

"তোর নাকি সেকেন্ড ইয়ারের ভর্তি কালকে। একেবারে ভর্তি হয়ে তারপর ওই বাড়ি যাস।"

শাইনা বলল,"কে বলেছে?"

"শাওন বললো কলেজে নাকি নোটিশ দিয়েছিল। তোকে জানাইনি। তুই দেখিসনি?"

"না।"

"সমস্যা নেই। ডেট তো পিছিয়ে যায়নি।"

"আর কিছু বলবে?"

"তোকে ওখানে কেউ কিছু বলেছে?"

শাইনা এবার রেগে গেল।

"বলবে জেনেও বিয়ে দিয়েছ। এখন এতসব জেনে কি হবে? মরে গেলেও আমি তোমাদের বলবো না কিছু। যখন তখন ফোন দেবেনা। রাখো।"

"রাগ করছিস কেন? আচ্ছা রাখ।"

শাইনা ফোন কেটে দিয়ে বসে রইলো। তাজদার ঘরে এসে গলা ঝাড়লো। শাইনা তাকাতেই তার দিকে তাকিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে তাজদার বলল,"জন্মসনদ, এনআইডি কার্ড লাগবে। নিয়ে আসবে কাল।"

শাইনা মৃদুস্বরে বলল,"কাল আমার এডমিশন। সেকেন্ড ইয়ারের। পরশু আসব।"

তাজদারের কপাল কুঁচকে গেল। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হঠাৎ বলল,"এত পড়ে কি হবে?"

শাইনা তার সাথে তর্কে গেল না। তাজদার তার উত্তর না পেয়ে তুড়ি বাজালো,"ও হ্যালো!"

শাইনা স্যুটকেস গোছাতে গোছাতে বলল,"মাস্টার্স করার ইচ্ছে আছে আমার।"

তাজদার ভয়ংকর রেগে গিয়ে বলল,

"সেটা বিয়ের সময় বলা হয়নি কেন? আর কোনো পড়াশোনার দরকার নেই।"

শাইনা অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল,"বিয়ের সময় আমাকে বলা হয়েছে পড়াশোনা করতে দেয়া হবে।"

তাজদার রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে বসে মেঝের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল,"আর পড়াশোনার দরকার নেই। আমি আমার সাথে নিয়ে যাব। কথা না শুনলে নাইওর যাওয়ারও দরকার নেই। মাসে একবার ওই বাড়ি যাবে। কথা ফাইনাল।"

শাইনা স্যুটকেস গোছাতে গোছাতে বলল,"আমি আজ যাব। কাল এডমিশন নেব। পরশু এখানে আসব। আপনি আপনার কাজ করুন। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।"

তাজদার তার দিকে তাকালো। চেয়ে রইলো একদৃষ্টে। শাইনা স্যুটকেস গোছাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তার দিকে তাকালো। তাজদার তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

"আমি তোমাকে এডমিশন নিতে দেব না প্রমিজ।"

শাইনাও কড়াভাবে বলল,"এডমিশন নিতে না পারলে আমি এই বাড়িতে জীবনেও পা রাখব না প্রমিজ।"

তাজদার সিদ্দিকী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। শাইনা তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে রাগ, ক্ষোভ। শাইনার দিকে এগিয়ে এল সে। স্যুটকেস টেনে নিল। ফেলে দিল মেঝেতে। শাইনা একটু পেছনে হেলে বসলো। বিছানায় একহাতের ভর রেখে তার দিকে ঝুঁকে এসে তাজদার বলল,

"তোমার বাপ দাদার চৌদ্দ গুষ্টির সামর্থ্য আছে লন্ডনে যাওয়ার? বেশি পেয়ে গেছ বলে উগলে দিচ্ছ? কুত্তার পেটে ঘি সয় না কথাটা এমনি এমনি বলেনি দেখছি।"

শাইনা তার মুখের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,"কুত্তা কখনো ঘি খেতে যায় না। যদি ঘি কুত্তাকে গিলতে বাধ্য করা হয় তখন সে উগলে দেবেই। গায়ের উপর ঝুঁকে পড়া ছাড়া কথা বলতে পারেন না? আপনার সাথে কোথাও যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। এবার সরে যান।"

তাজদার সরলো না। শাইনা কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো। আজব তো! তাজদার বলল,"রাজী হয়ে যাও। আর কোনো পড়াশোনার দরকার নেই। ন্যাশনালে পড়ে তুমি করবেটা কি?"

"আমার জীবনের ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে। আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন, কিনে নেননি। আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই ভাই।"

তাজদারের কপাল আরও কুঁচকে গেল।

"ভাই! এতদিন পর সম্বোধন তাও ভাই?"

শাইনা বিরক্ত হয়ে বলল,"সামনে থেকে সরুন।"

"তোমার সাধ্য থাকলে সরাও।"

শাইনা একটানে তার শার্টের একটা বোতাম ছিঁড়ে নিল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News



চলবে ...

২০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা প্রিয়া ফারনাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। কল্পনার ভূবনকে শব্দে রুপ দিতে লেখালেখির জগতে তার পদচারণা শুরু হয়েছে ২০২১ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রিমা পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ‘প্রিয় বেগম’ উপন্যাসের মাধ্যমে তার পরিচিতি বেড়েছে। ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। শব্দের জগতে তার পথচলা এখনো চলমান। ভবিষ্যতে আরও পরিপক্ক, আরও বৈচিত্রময় লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চান তিনি।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন