উপন্যাস       :        তাজমহল প্রথম খন্ড
লেখিকা        :         প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১লা অক্টোবর, ২০২৫ ইং

লেখিকা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর “তাজমহল - ১ম খন্ড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।

তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী


তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || প্রথম খন্ড (পর্ব - ৩৮)

সকাল থেকে শাওনের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মা কোথাথেকে এইসব আজেবাজে কথা শুনে আসে কে জানে। ভাই শুনলে আম্মাকে এমন বকা বকবে। 
সাবরিনা হাসছে। শাওন সবেমাত্র ভাত খেতে বসেছে। সাবরিনাকে হাসতে দেখে বলল,
"ভাবি হাসছো কেন?"

সাবরিনা বলল,"আম্মা হাইপার হয়ে গেছে। আজকে মেঝ ভাই এলে ঘরে বোমা ফাটবে।"
শাওন গালে ভাত নিয়ে বসে রইলো। ভাতটা চিবিয়ে নিয়ে ডাকল,"আম্মা আম্মা! এদিকে আসো। খবরদার ওকে এইসব বলবে না।"
শাহিদা বেগম এলেন রান্নাঘরে। শাওনকে বলল,"চিল্লাচ্ছিস কেন?"
শাওন বলল,"তুমি এইসব ফালতু কথা ওকে বলবে না খবরদার। পাড়ার কারো সাথে  আর কোনো গল্পগুজব করবেনা। তোমার কানে একেকটা বাজে কথা তুলে দেয় ওরা।"
শাহিদা বেগম বললন,"আমি বলেছি ওদের আমার ছেলেরা এমন না। ওরা বললো গরিবের কথা বাসি হলেও সত্যিই হয়। দেখে নিও আশরাফের মা। সবাই এমনভাবে বলছে আমার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি এমন কিছু আছে। এরকম যদি হয় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।"
দাদীমা বলল,"তোর মায়ের আর শান্তি নেই। বাইরের কথা ঘরে টেনে এনে নিজে অশান্তিতে ভোগে। শুনো তোমার ছেলে পছন্দ করলে বউ করে নিয়া আসবা। এত ভয়ের কি আছে?"
শাহিদা বেগম বললেন,"মাথা খারাপ নাকি আম্মা? আপনি জানেন না ওই মেয়ের স্বভাব চরিত্র কেমন। আমার শানুকে সারাক্ষণ কথা শোনায়। মেয়ে আমার ভালো নইলে তো ননদ ভাইয়ের বৌ লেগে যেত। কি বেয়াদব মেয়ে সেটা তো সবাই জানে। সুন্দর মুখটা ছাড়া আর কি আছে ওই মেয়ের? তওবা তওবা আমার আনিসের সাথে আমি এইসব ভাবতেই পারিনা। আমার ভোলাভালা ছেলেটা। কারো ধারেও নাই, কাছেও নাই। না না আমি ওকে এই মাসের মধ্যে বিয়ে করাবো। মানুষ যা বলার বলুক।"
শাওন বলল,"এই তো লাইনে এসেছ। মামাদের বলো ভালো মেয়ে পেলে খোঁজ দিতে। দেখেশুনে একটা নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি। মানুষের মুখে চুনকালি পড়বে। হুদাই ত্যাড়াব্যাড়া লাগায় দেয়। ভাই ওই মেয়েকে বেয়াদব বলে কথায় কথায়। সে কিনা.. ধুর ধুর মাইনষ্যের আর কাজকাম নাই।"
শাহিদা বেগম শাওনের কথা শুনে একটু থামলেন। ঠিকই তো। আনিস তো বলে ওই মেয়েটা বেয়াদব। জেনেশুনে সে কোনোদিন ওরকম মেয়েকে পছন্দ করবে নাকি? মানুষের কথায় কেন কান দিতে গেল কে জানে।

______________
তাজদার আজ বাজার থেকে দুই জোড়া কোয়েল পাখি নিয়ে ফিরল। ঘরে ঢুকেই গলা ফাটিয়ে শাইনাকে ডাকতে শুরু করল। তার ডাক এত জোরে হচ্ছিল যে বড়আম্মু, মেঝমা সবাই অবাক হয়ে শাইনার দিকে তাকালেন। শাইনা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ছুটে এল নিচে।
ধীরে ধীরে তাজদারের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। তাজদার সঙ্গে সঙ্গে লোহার খাঁচাটা তার সামনে ধরল। খাঁচার ভেতরকার পাখিদের দিকে ইশারা করে বলল,
“এগুলো এনেছি।”
শাইনা কৌতূহলী চোখে তার দিকে তাকাল। তাজদার খাঁচাটা তার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,“তোমার জন্য।”
খাঁচার ভেতর কোয়েলগুলো সেঁধিয়ে বসে আছে। নতুন জায়গায় এসে ভয়ে গুটিয়ে গেছে। শাইনা আঙুল বাড়িয়ে ভেতরে দিল, পাখিগুলো আঁতকে উঠল। শাইনা মৃদু হাসলো। 
তাজদার বলল,“শুনেছি হাঁস-মুরগি পালা তোমার কাছে কোনো ব্যাপার না। তাই এগুলো এনেছি।"
শাইনার খুশি হলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। জিজ্ঞেস করল,“খাবার?”
“সব এনেছি সঙ্গে করে। এদের নিয়ে যাও।”
শাইনা খাঁচাটা সাবধানে তুলে নিয়ে চলে গেল। তাদের বারান্দায় গেল। বারান্দার এক কোণায় পুরনো লোহার কড়িকাঠ বেরিয়ে আছে, সেখানেই আগে থেকে একটা হুক লাগানো। সেই হুকে খাঁচার উপরের গোলাকার রিংটা আটকে দিলো সে। খাঁচাটা দুলতে লাগলো। কোয়েলগুলো আঁতকে উঠে ডানা ঝাপটাতে লাগল, আবার একটু পরেই শান্ত হয়ে গুটিসুটি মেরে বসে রইল।
তাজদার পেছন থেকে গলা ঝেড়ে ব্যস্ত গলায় বলল,"মমতাজ আমার  ওই শার্টটা কোথায়?"
শাইনা তার দিকে ফিরলো। 
"কোন শার্ট?"
"অলিভ গ্রিন।"
শাইনা জিভ কামড়ে বলল,
"ছাদে শুকোতে দিয়েছিলাম।"
"তোমাকে কতবার বলেছি আমার শার্ট আমি কড়া রোদে শুকোতে দেইনা।"
কথাটা রুক্ষ শোনাল। শাইনা কথাটা শুনেই চলে যাচ্ছিল। তাজদার বলল,
"কোথায় যাওয়া হচ্ছে?"
শাইনা বলল,"শার্টটা আনতে যাচ্ছি। আর কোনোদিন যদি আমি আপনার শার্টে হাত দিই আমার নাম শাইনা মমতাজ নয়।"
তাজদার তার হাত ধরে ফেলে বলল,"আমার শার্টে হাত দেবেনা মানে? ধরবে না বলতে চাইছো?"
শাইনা বলল," হ্যাঁ, ধরবো না।"
"ধরবে না? সত্যি?"
"হ্যাঁ সত্যি।"
তাজদার তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ঘরে।  তারপর দরজা বন্ধ করে তার সব শার্ট, টিশার্ট, কোট এনে শাইনার দুই কাঁধে রাখলো, গলায় ঝুলিয়ে দিল। তারপর ছোটবেলার সেই তাজদার সিদ্দিকীর মতো গলা বাঁকিয়ে বলল,
"তুমি ধরবে না ভালো কথা। কিন্তু আমার সব শার্ট কোট এসে তোমাকে এসে ধরবে। তখন তুমি না ধরে কোথায় যাও আমি দেখবো।"
শাইনা সব বিছানায় ফেলে দিয়ে বলল,"আমি জীবনেও আপনার শার্ট ধুবো না, শুকোতে দেব না।কাজও করবো আবার ধমকানিও শুনবো। মগের মুল্লুক নাকি?"
তাজদার বলল,"তুমি আমাকে ইচ্ছে করে রাগাচ্ছ?"
শাইনা পাল্টা প্রশ্ন করলো,"আপনাকে চাইলেই রাগানো যায়? তাহলে তো বলতে হবে আমি আপনাকে কন্ট্রোল করতে পারছি।"
"কন্ট্রোল মাইফুট! তুমি একশোবার আমার শার্ট ধুয়ে যাবে। তুমি না ধুলে তোমার ঘাড় ধুয়ে দেবে।"
শাইনা বলল,"ধুবো না মানে ধুবো না। কে আমাকে দিয়ে কাজ করাই আমি দেখবো।"
তাজদার আদেশ করলো, "যাও, ওই শার্টটা নিয়ে এসো। তুমি শুকোতো দিয়েছ তাই নিয়ে আসার দায়িত্বও তোমার।"
শাইনা কোনো প্রতিবাদ না করে চুপচাপ শুনল। কয়েক মুহূর্ত পরে সে ফিরে এলো ঝরা কাঠের মাথায় শার্টটা ঝুলিয়ে।  তাজদারের সামনে তুলে ধরে চোখের ইশারায় বলল,"শার্ট!"
তাজদারের চোখ মুহূর্তেই বিস্ফারিত! শক্ত হাতে কাঠটা ধরতেই কড়াৎ শব্দে সেটা মোচড়ে দু’টুকরো হয়ে গেল। ভয়ে শাইনা আঁতকে উঠে পিছিয়ে যাওয়ার আগেই তাজদার ঝড়ের মতো তেড়ে এসে তার দুই বাহু চেপে ধরল। পরক্ষণেই নিজের গাল দিয়ে শাইনার গালে এমন হিংস্রভাবে ধাক্কা দিল যে শাইনা ভারসাম্য হারিয়ে কাত হয়ে ছিটকে পড়ল বিছানায়। গালে হাত চেপে তবুও বলল,
"ধুবো না আপনার শার্ট। ধোয়া তো দূর। ছুঁবোও না আমার হাত দিয়ে।"
তাজদার ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,"শার্ট ছুঁইয়ো না। শার্টের মালিককে ছুঁলেই যথেষ্ট।"
শাইনা বলল,"আমার গালে ব্যাথা দিয়েছেন। আমি সবাইকে বলে দেব।"
তাজদার রসিকতা করে তার দিকে ঝুঁকে এসে বলল,"এসো তোমাকে আরেকটু ব্যাথা দিই।"
শাইনা লজ্জা পেয়ে বিছানা থেকে নেমে একদৌড়ে দরজার কাছে ছুটে গেল। দরজা খুলে দৌড় দেবে তক্ষুণি তাজদার বলল,
"ওকে ফাইন। রাতে কথা হচ্ছে"
শাইনা তার দিকে ফিরে বলল,"আপনি আমার সাথে আর কোনো কথা বলবেন না। একটা শব্দও না।"
তাজদার বলল,"ওকে, কথা ছাড়াও কাজ করা যায়।"
_______
রওশনআরার কানে এসেছে কথাগুলো। তিনি সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। মুন্নীর মা রসিয়ে রসিয়ে বলল, আশরাফের মা তো কাল থেকে ভালো করে খাওয়াদাওয়াও করেনি টেনশনে। আমাকে বললো আমার ছেলের কীসের ঠেকা পড়েছে ওদের মেয়ের পেছনে ঘুরতে? কত মেয়ের বাপ ঘুরছে ওর পেছনে। আমার আনিস ও মেয়েকে একদম পছন্দ করে না। এককথায় বেয়াদব বলে দেয়। ওই মেয়ের তো বিয়ে ভেঙেছে। দেখবে আরও ভাঙবে। ওই ধরণের মেয়েরা জামাইয়ের ঘর করতে পারেনা। সারাক্ষণ আমার শানুটার পেছনে লেগে থাকে কিভাবে কথা শোনানো যায়। আমার মেয়েটার মুখভার নয়তো অনেক কিছু হতো এতদিনে।
রওশনআরার খুব খারাপ লেগেছে কথাগুলো। আশরাফের মা এইসব ভাবে তার মেয়েকে নিয়ে? মুন্নীর মা আরও বলল,
"আনিসের একটা স্যার নাকি তাসনুভা মণির মামা শ্বশুর ছিল। গত বছর তো আসছিল ওদের বাড়িতে ঈদের সময়। দেখছিলাম আমরাও। আপনারা বোধহয় খেয়াল করেননাই।  বিউটির মা, সনিয়ার মায়োরা সবাই বলতেছে ওর বিয়েটা আনিসই ভাঙছে। মানে কানপড়া দিয়েছে। ওই স্যার তো আনিসকে নিজের ছেলের মতো আদর মহব্বত করে। যদি আনিস বলে ওই মেয়ে বেয়াদব, উচ্ছৃঙ্খল তাহলে তো ওর স্যার ওর কথা সহজেই বিশ্বাস করে নেবেই। উনিই তো নাকি আসল ঝামেলাটা লাগাইছে।"
রওশনআরা চমকে গেল। আনিস বিয়ে ভেঙেছে? না ওকে এরকম ছেলে মনে হয় না। কিন্তু ও নুভার ছবির তুলেটুলে দিয়েছে এইসব সত্যি?
রওশনআরা কথাটা তাজউদ্দীন সিদ্দিকীকে বলেছে। উনি কথাটা শোনামাত্র হাইপার হয়ে গেলেন।
"আশরাফের মায়ের সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।
আমাদের সাথে আত্মীয় করতে পেরে যা তা বলা শুরু করেছে দেখছি। আমার মেয়ের নামে এইভাবে বলে কোন সাহসে? আমার মেয়ের জন্য হাজারটা সম্বন্ধ এসেছে। এখনো আসছে। ও বিয়ে করবেনা বলেছে তাই আমি আগাচ্ছি না।"
রওশনআরা বলল,"আহা চেঁচাবেন না। আনিস নাকি নুভার ছবিটবি তুলে দিয়েছে। এইসব মানুষ বলাবলি করছে। আনিস নাকি কোনো মেয়েটেয়ে পছন্দ করছেনা। সবাই তাই বলছে ও নুভাকে.. এইসব আর কি। আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।"
আর বেশিকিছু বলতে হলো না তাজউদ্দীন সিদ্দিকীকে। তিনি সব বুঝে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। বললেন,
"ওরা কথা তো ভুল বলেনি। ওর স্যারটার জন্যই তো বিয়েটা ভেঙেছে।"
তিনি পরদিন আনিসকে হাতেনাতে ধরলেন বাজারের মোড়ে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News



চলবে ...

৩৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা প্রিয়া ফারনাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। কল্পনার ভূবনকে শব্দে রুপ দিতে লেখালেখির জগতে তার পদচারণা শুরু হয়েছে ২০২১ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রিমা পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ‘প্রিয় বেগম’ উপন্যাসের মাধ্যমে তার পরিচিতি বেড়েছে। ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। শব্দের জগতে তার পথচলা এখনো চলমান। ভবিষ্যতে আরও পরিপক্ক, আরও বৈচিত্রময় লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চান তিনি।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন