মুক্তমত : জীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জিম মরিসন
লেখক : উপল বড়ুয়া
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল : ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
রচনাকাল :
কবি, লেখক ও সাংবাদিক উপল বড়ুয়ার লেখা “জীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জিম মরিসন” শিরোনামের এই মুক্তমতটি ২০২৫ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলানিউজ২৪ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এই লেখায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার অকৃত্রিম বন্ধু ‘জিম মরিসন’কে নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তার এই লেখাটি কবিয়াল পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
জীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জিম মরিসন || উপল বড়ুয়া
পুরো নাম ছিল জেমস ডগলাস মরিসন। সেই নাম সংক্ষিপ্ত হয়ে জিম মরিসন। এই নামেই পরিচিত বিশ্বজুড়ে। জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ ডিসেম্বর, ফ্লোরিডায। জীবন নিয়ে যেন জুয়ার টেবিলে বাজি ধরার জুড়ি ছিল না তাঁর। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো লিখেছিলেন, "She dances in a ring of fire and throws off the challenge with a shrug"। মরিসনই যেন সেই সার্কাসের রিংমাস্টার, যিনি দর্শকদের সামনে বাঘ-সিংহের খেলা দেখাতে দেখাতে কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন, জীবন এমনই এক রঙ্গমঞ্চ। তাঁর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বৈষয়িক জীবন নিয়ে খুব বেশি ভাবতেন না। কখনো তাঁকে দেখে মনে হতো, ফিওদর দস্তয়েভস্কির উপন্যাস থেকে উঠে আসা কোনো মাতাল জুয়াড়ি, কখনো বা ফ্রেডরিখ নিৎশের ভাবশিষ্য।
হ্যাঁ, নিৎশের বিশাল বড় ফ্যান ছিলেন মরিসন। প্রভাবিত হয়েছিলেন নিৎশে পাঠে। তাঁর জীবনের ভাঙচুরের বিষয়টি দেখলে বোঝা যায়, ‘জরথুস্ত্র বললেন’-এর সেই মহত্তম ব্যক্তির সন্ধানে থাকা ব্যক্তিটির মতোন মরিসনও জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন যাযাবরের মতোন। হয়তো নিজেই হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন নিৎশের সেই ‘হাইয়ার ম্যান’ বা ‘মহামানব’।
মরিসনের ওপর নিৎশের কেমন প্রভাব ছিল সেটির সামান্য উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৬৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্কের সারাতোগা স্প্রিংসের সারাতোগা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারের ব্যাকস্টেজে পিয়ানো বাজাতে বাজাতে গান ধরলেন মরিসন। গান তো নয়, যেন কবিতা। কবিতা তো নয়, যেন চিৎকার। নিৎশের ‘ম্যাডনেস’কে গলায় তুলে ধরলেন মরিসন। ‘ওড টু ফ্রেডরিখ নিৎশে’ (Ode To Friedrich Nietzsche) নামে লেখা সেই গানের ভিডিও ইউটিউবে আছে। মরিসনের ম্যাডনেস বোঝার সুবিধার্তে গানের মাঝখান থেকে কিয়দংশও তুলে দেওয়া যাক এখানে—"Play the piano madly/Mnd sing madly like/Ooooooh.....i'm crucified and/Inspected and/Resurrected and/If you don't believe that/I'll give you my latest/Philanthropic sonata"।
মরিসন ছিলেন আদতে কবি। কবিতার জন্যই ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। জীবনের ক্লেদকে ফুলের রেণুর মতো মেখে ঘুরে বেড়ানো দুই ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়্যার ও আর্তুর র্যাঁবো দ্বারাও প্রভাবিত ছিলেন মরিসন। বিট জেনারেশনের সাহিত্যিক জ্যাক কেরুয়াক ছাড়াও দার্শনিক আলবেয়ার কাম্যুর কাজকর্মেরও বেশ প্রভাব আছে তাঁর জীবনে। নিৎশের নিহিলিজম ও কাম্যুর অস্তিত্ববাদকে ধারণ করেই মরিসন হয়ে উঠেছিলেন নিজের সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্র। দর্শনের এই দুই ধারা তাঁর লিরিক ও কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর বিখ্যাত ‘এল.এ. ওম্যান’ (L.A. Woman) গানের কথায় বলা যাক। যেখানে তিনি হলিউডে আসা এক ছোট বালিকাকে প্রশ্ন করছেন, আলো জ্বলমলে শহরে সে সুখি কিনা। আবার জানতে চাইছেন, সে-ও কি হারিয়ে যাওয়া আরেকজন ‘অ্যাঞ্জেল’? এই গানের ভেতর দিয়ে মরিসন সামাজিক বিধিনিষেধে ভরা ও আশাহত এক দুনিয়ার কথা বলেছেন, যেটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নিৎশের কাজকে। সেই সঙ্গে এক মুক্ত কামনার কথাও বুঝিয়ে দেন এই লিরিকে। মরিসনের এল.এ. ওম্যান গানের ভেতর যে প্রশ্ন সেটির আরেকটি ভার্সন বলা যেতে পারে 'You're lost little girl' লিরিকটি। সেখানেও মাতাল ভয়েসে তিনি জানতে চান, "You're lost little girl/You're lost little girl/You're lost, tell me who/Are you?" আপাত চোখে সরল এই প্রশ্নের ভেতর মরিসন খুঁজেছেন অনেক প্রশ্ন। ফ্রক ছেড়ে বেড়ে ওঠা বালিকারা একদিন নারী হয়ে ওঠে। আমেরিকার সেসব লাখো তরুণীরা স্বপ্ন দেখে একদিন হলিউড মাতাবে। এরপর তারা কোথায় যায়? তারকা হওয়ার আশা নিয়ে আসা সেসব নারীরা কেন নিভে যায় অন্তরালে?
মরিসনের কবিতা, লিরিক, গান সব অ্যাবসার্ডিটিতে ভরা। তাঁর আরেক মাস্টারপিস ‘দ্য এন্ড’। গানটির মুখ এমন, "This is the end/Beautiful friend/This is the end/My only friend, the end." স্যুদিং এক শুরুর পর পর গানটি যে কত পথ ধরে হেঁটেছে! তারপর যখন কথোপকথনের ভঙ্গিতে গানের মাঝপথে মরিসন গেয়ে ওঠেন, "Father?/Yes, son?/I want to kill you/Mother, I want to..." তখন আপনাকে থামতে হবে। পরের অংশটুকু বুঝে নিতে হবে নিজ থেকে। কারণ, সেই অংশটুকুতে রয়েছে মরিসনের চিৎকার। সেই এক চিৎকার থেকে বহুরৈখিক অর্থ তৈরি হয়। বাবাকে খুন করতে চাওয়ার ইচ্ছেটুকু আপনাকে মনে করিয়ে দেবে দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ব্রাদার্স কারামাজভের চরিত্র দিমিত্রি ব্রাদার্স কারামাজভকে, বাবার প্রতি যার ছিল অসীম ঘৃণা। ভালোবাসার অভাবে মানুষের শয়তান হয়ে ওঠার ব্যাপারটাকে দস্তয়েভস্কির চেয়ে আর বেশি কে ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন? বাবাকে এই খুন করতে চাওয়ার ডাক শুনে ‘ওডিপাস কমপ্লেক্সের’ কথাও মনে পড়ে না?
বাবার প্রতি মরিসনের কি ঘৃণা ছিল? থাকতে পারে। তাঁর বাবা জর্জ মরিসন ছিলেন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল। দুজনের মধ্যে ছিল টানাপোড়েনের সম্পর্ক। বিশেষ কর জর্জ সন্তানের রক অ্যান্ড রোল ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে দেখাকে ভালো চোখে নেননি। এমনকি মরিসনের সঙ্গীত প্রতিভার ঘাটতি আছে বলেও মনে করতেন তিনি। স্কুলে ভালো ছাত্র মরিসনের ভেতরে ছিল এক বিদ্রোহী স্বভাব। ছেলের এসব কর্মকাণ্ড দেখে হতাশ হয়েছিলেন তাঁর বাবা। কথাবার্তাও খুব একটা হতো না দুজনের মধ্যে। দূরত্ব বেড়ে ওঠেছিল বিষবৃক্ষের মতোন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মরিসনের মা-বাবার প্রতি অভিমান এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, ভেনিসে একবার তাঁর দ্য ডোরস সতীর্থ রে মাঞ্জারেককে বলেছিলেন, ‘আমার মা-বাবা মারা গেছেন’। অবশ্য মরিসনের বাবা-মা দুজনেই লম্বা জীবন পেয়েছিলেন।
জর্জ মরিসনের সঙ্গে ক্লারা মরিসনের পরিচয় হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দায়িত্ব পালনের সময়। দুজনেই ছিলেন ইউএস নেভিতে, ভিন্ন পোস্টে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে যে হামলা হয় সেটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাঁরা। ১৯৪৩ সালে দুজনে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় জিম। জর্জ মরিসন ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়েছিলেন। পরোক্ষভাবে বাবার রক্তরঞ্জিত হাত হয়তো কখনো সহ্য করতে পারেননি সংবেদনশীল হৃদয়ের জিম। বাবার সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল সেটি জানা যায় মরিসনের সঙ্গে মাঞ্জারেকের কথোপকথন থেকে। মরিসনের পরিবার সম্পর্কে জানতে গিযে মাঞ্জারেক জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'What does your father do?' মরিসনের উত্তর ছিল, "He’s in the Navy...." He shuffled his feet, embarrassed. "They just made him an admiral. He’s in Vietnam." And there it was. Death. Vietnam. Military. Professional killers. Admiral! No wonder Jim was conflicted.
হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকে কবিতা লিখতেন মরিসন। এরপর কবিতা আবৃত্তিতেও দেখান প্রতিভা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিল্ম নিয়ে পড়তে আসার পর পরিচয় হয় কি-বোর্ডিস্ট রে মাঞ্জারেক, গিটারিস্ট রবি ক্রিগার ও ড্রামার জন ডেন্সমোরের সঙ্গে। তাঁরা নিজেদের ব্যান্ডটাকে ‘ডোরস’ বলে ডাকতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। নামটি নেওয়া হয় ব্রিটিশ লেখক আলদুস হাক্সলির আত্মজীবনী ‘দ্য ডোরস অব পারসেপশন’ থেকে। হাক্সলি অবশ্য তাঁর বইয়ের জন্য এই নাম ধার করেছিলেন উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা থেকে। ১৯৬৫ সালে এভাবেই জন্ম ষাট ও সত্তর দশক কাঁপানো দ্য ডোরসের।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রণক্ষেত্র। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়ছে মুক্তিবাহিনী। সে বছরের কোনো এক মেঘলা দিনে নিজের মুক্তি ও শান্তির জন্য মরিসন এসে পৌঁছান প্যারিসে। দ্য ডোরস ফ্রন্টম্যান অবশ্য বাধ্য হয়েছিলেন জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে। অপরাধ বলতে, মিয়ামিতে এক কনসার্টে অভব্যতার অভিযোগ। যার কারণে দ্য ডোরসের হাতে থাকা সব কনসার্ট বাতিল হয়ে যায়। মরিসন তখন প্যারিসে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সে কথা জানান ব্যান্ডমেটদের। ইচ্ছে ইউরোপে কিছুদিন ঘোরাঘুরি। আর প্রিয় কবি বোদলেয়্যার-র্যাঁবোর দেশে কবিতাকে আরেকটু সময় দেওয়া। ওই সময় দ্য ডোরস তাদের বিখ্যাত এল.এ. ওম্যান গানটির রেকর্ডিং শেষ করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের এক নারীকে নিয়ে লেখা গান। ব্যান্ডমেটরাও মরিসনকে যেতে দিলেন। এক সপ্তাহ পর, প্যারিসের উদ্দেশে রওনা দেন ‘দ্য লিজার্ড কিং’। এই নামেই ভক্ত ও বন্ধুদের কাছে পরিচিত মরিসন। ‘সেলিব্রেশন অব দ্য লিজার্ড’ গানে গানে অবশ্য নিজে নিজেই এই নাম ঘোষণা দেন মরিসন, "I am the Lizard King/Retire now to your tents and to your dreams/Tomorrow we enter the town of my birth/I want to be ready."
প্যারিসে গার্লফ্রেন্ড পামেলা সুসান কার্সনের সঙ্গে এক ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন মরিসন। অ্যালকোহল ও হেরোইনের প্রতি আগে থেকে আসক্ত ছিলেন, নতুন শহরে সেটি যেন আরও বেড়ে গেল তাঁর, সঙ্গে ওজনও। মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। তাঁর দীর্ঘদিনের বান্ধবী কার্সনও বেশিদিন বাঁচেননি। মারা যান মাত্র ২৮ বছর বয়সে। তিনিও ছিলেন দ্য ডোরসের মেম্বার, গায়িকা। সবার আগে মরিসনের শরীর বাথটাবে ভাসতে দেখেছিলেন তিনিই।
প্যারিস শিল্পের শহর। ছবি ও কবিতার দেশ। তবে বোদলেয়্যার, র্যাঁবোদের ভূমিতে নিজের কাব্য প্রতিভা আরও বেশি বিস্তৃত করা হয়নি মরিসনের। তাঁর বিশ্বাস ছিল, প্যারিসেই সেই জায়গা যেখানে শান্তিতে শেষ নিশ্বাসটুকু ত্যাগ করতে পারবেন। সেটিই হয়েছে। অকালমৃত্যু হলেও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের আইকনিক ক্যারেক্টার হয়ে আছেন মরিসন। কবি, গায়ক ও গীতিকার—শিল্প জগতে এমন বিরলপ্রজ প্রতিভাবান ব্যক্তি অনেক আছেন। লিওনার্ড কোহেন ও বব ডিলান তাঁদের কবিতা ও গানে সুবাসিত করেছেন চারপাশ। তবে মরিসনের মতো আর কেউ এমন উত্তুঙ্গ ও প্রভাববিস্তারি জীবন কাটাতে পারেননি।
শিল্পীর জীবন ও শিল্প কোনো আলাদা বিষয় নয়। মরিসন তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মতোন তাঁর কবিতা ও সংগীত জীবনও ছিল অপ্রথাগত। মঞ্চে তাঁর ব্যারিটোনের সঙ্গে শামান ড্যান্স দর্শকদের দিত সর্বইন্দ্রিয় সুখ। সিড ব্যারেটের সঙ্গে মরিসনের আরেক মিল ছিল, স্টেজ পারফরম্যান্সে। ব্যারেট গাইতে গাইতে হঠাৎ নেশার ঘোরে ঢুকে পড়তেন বেসুরে। ব্যান্ডমেটরা টের পেলেও ব্যাপারটি দর্শকেরা ধরতে পারত না। ধরবে কী করে! তারা যে তখন ব্যারটের গানে বুঁদ! আর মরিসন মাইক্রোফোন হাতে ডলফিনের মতো লাফ মেরে পেছনে কোমর বাঁকিয়ে পড়তেন স্টেজে। সঙ্গে ছিল পাগল করে দেওয়া একেকটি গান। যেন তিনিই সেই ঝড়ের পরিচালক, ‘রাইডার্স অন দ্য স্টর্ম’। যিনি প্রেমিকার থেকে ধার চাইছেন বেঁচে থাকার আলো। অনেক আকুতি নিয়ে বলছেন, 'Come on, baby, light my fire'।
মূলত নিজেকে হনন করে শ্রোতাদের ব্যথা উপশমের কারিগর ছিলেন মরিসন। যেন এই চেতনা থেকেই তাঁর শামান নৃত্য। শামানবাদ মূলত এক প্রকার ধর্ম চর্চা। শামান হলো এমন এক ব্যক্তি যিনি ভালো ও মন্দ আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। বিশেষ করে উত্তর এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার লোকজনের কাছে তারা বিশেষ ক্ষমতাধারী হিসেবে পরিচিত। তারা ভবিষ্যদ্বাণী এবং ব্যথা উপশমও করতে পারেন। আমাদের দেশেও এমন ব্যক্তির দেখা পাওয়া যায়। মরিসনও যেন সেই শামান ব্যক্তি। যাঁর প্রভাব রয়েছে ভালো ও মন্দ আত্মার ওপর এবং গানে-নাচে মানুষের অবচেতনে উপশম করেন যত দুঃখ-ব্যথা।
মরিসনের গান অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে। তবে তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা ও এলভিস প্রিসলি। দ্য ডোরসের দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘স্ট্রেঞ্জ ডেজ’ রেকর্ডের সময় অদ্ভুত এক কাণ্ড করেছিলেন মরিসন। তাঁর সবচেয়ে পছন্দের গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা স্টুডিওতে যে মাইক্রোফোন ব্যবহার করতেন, হুবহু তেমন এক মাইক্রোফোন নিয়ে গান রেকর্ড করেছিলেন।
জিম মরিসন বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে খামখেয়ালি রাগী এক রকস্টারের মুখ। তীক্ষ্ণ চোখ। মরিসন যেন এক অপ্রচলতার গান ও কবিতা। প্রবল আত্মবিশ্বাসে নিজেকে ভেঙে ভেঙে দেখা। অকালে ঝরে যাওয়া এই মানুষটির জন্মদিন আজ। বেঁচেছিলেন মাত্র ২৭ বছর। এই স্বল্পায়ু জীবন নিয়েই পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। মরিসন মারা যান ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই। এখন ক্লাব ‘টুয়েন্টি সেভেনে’র মধ্যমণি হয়ে আছেন তিনি। তাঁকে কবর দেওয়া হয় ৭ জুলাই। খ্যাতির মধ্যগগণে থাকার সময় প্যারিসে শেষনিশ্বাস ছাড়েন মরিসন। সেটিই যেন চেয়েছিলেন। মরিসন হয়তো আগে থেকে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, অমরত্ব তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান ‘শামান ড্যান্স’ দিতে দিতে।
মুক্তমত বিভাগে লেখা পাঠাতে আমাদের ইমেইল করুন। ইমেইল ঠিকানা- kobiyal.com@gmail.com
Follow Now Our Google News
লেখক সংক্ষেপ:
কবি, লেখক ও সাংবাদিক উপল বড়ুয়ার জন্ম ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে, কক্সবাজারের রামুতে। তিনি কবি, কাহিনিকার ও অনুবাদক। পড়াশোনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ কানা রাজার সুড়ঙ্গ [২০১৫], উইডের তালে তালে কয়েকজন সন্ধ্যা [২০১৮] ও তুমুল সাইকেডেলিক দুপুরে [২০২০]। ছোটগল্প সংকলন ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল [২০২০] ও উপন্যাস মহাথের [২০২২]। বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন