গল্প               :         তোমার অজিন মাস্টার
গল্পকার        :         নাঈমা হোসেন রোদসী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

তরুণ লেখিকা নাঈমা হোসেন রোদসীর “তোমার অজিন মাস্টার” শিরোনামের এই ছোট গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে নেয়া হয়েছে। 
তোমার অজিন মাস্টার || নাঈমা হোসেন রোদসী
তোমার অজিন মাস্টার || নাঈমা হোসেন রোদসী

তোমার অজিন মাস্টার || নাঈমা হোসেন রোদসী


'আচ্ছা মা তুমি কোনোদিন প্রেমে পড়নি? '

বিশ বছর বয়সী মেয়ে ওয়াজীহের প্রশ্নে রুম্মান ভড়কে গেলেন। 'প্রেম' শব্দটা শুনে বুকের ভেতরটা উথলে উঠলো। বয়স তার পয়তাল্লিশ। হাতে পায়ে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। মাথার চুলে পাক ধরেছে। মুখের স্নিগ্ধতা ফুরিয়েছে। বিয়ের তেইশ বছর পর বোধ হয় কেউ জিজ্ঞেস করলো। এখনো মনে পড়ে যেদিন তার বিয়ে হয়  সেদিন তার বিষ কিনে আনার কথা। 

'ও মা, কী ভাবছো?'

রুম্মান ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিজের সদ্য যৌবনে পা দেয়া মেয়ের দিকে তাকালেন। দেখতে অবিকল পুরোনো রুম্মান। স্মিত হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-'পড়েছিলাম তো '

ওয়াজীহ অতি উৎসাহিত হয়ে বললো-'কার?  বাবার?'

রুম্মান নিজের পায়ের ব্যাথায় চেয়ার টেনে বসলেন। তারপর মেয়ের দিকে মুখ উঁচু করে বললেন-
'নাহ'
ওয়াজীহ হতাশ হলো। তার মানে কী তার মায়ের প্রেম ব্যর্থ হয়েছিলো? মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করলো-'কে ছিলো সে মা? খুব সুদর্শন কেউ?'

রুম্মান ঠাট্টা স্বরে বললেন-'হঠাৎ এসব কেনো জিজ্ঞেস করছিস? জানিস কত রান্না বাকি আছে আমার? তুই আবার প্রেমে পড়িসনি তো?'

ওয়াজীহের এমন কৌতুক পছন্দ হলো না। বিরক্তি নিয়ে বললো- 'উফ মা! প্লিজ বলোনা কে ছিলো? '

রুম্মান নিজের পুরোনো সেই কতগুলো বছর আগের কথা মনে করলেন -

"সকাল বেলায় বাবার বেতের ভয়ে আমরা চার ভাই বোন ভোরে উঠে পড়তে বসতাম। বাবা ইয়াশফার আলী ছিলেন গ্রামের চেয়ারম্যান। বাবার ভয়ে সর্বদাই তটস্ত হয়ে থাকতাম। তখন সবে মাত্র ক্লাস নাইনে। স্কুলে থেকে পরীক্ষার খাতা দিলো, রেজাল্ট আউট হলো ১০০ তে ৪৫ পেয়েছি। সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এলাম। বাসায় গেলেই বাবা গায়ে বেত ভাঙবে। মন চাইছিলো দূর কোথায় পালিয়ে যাই। বাসায় যেতেই বাবা খাতা দেখতে চাইলো। খাতাটা ব্যাগেই ছিলো, বাবাই বের করলেন। খাতা দেখে সেটাকে মুখের উপর ছুড়ে মারলেন৷ ভয়ে তখন আমি ঘেমে নেয়ে একাকার! 

আমি অবাক হলাম,বাবা টু শব্দ করলেন না। বেত তো দূরের কথা। ভেবে নিলাম এই যাত্রায় রক্ষে হয়েছে। কিন্তু আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে পরের দিন এক কান্ড ঘটিয়ে ফেললেন৷ সকাল বেলাই আমাদের বাড়িতে আয়োজন হলো গরম ভোজের৷ বাবা মাকে বললেন গরুর মাংস দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে। আমরা পাটি বিছিয়ে মায়ের রান্না ঘরে বসলাম তিন বোন। মেঝো ভাইকে পাঠালাম  রান্নার রহস্য উদঘাটনে। কেউ কিছুই বললো না, দুপুর বেলা হুট করে দেখলাম ঢোলাঢালা পোশাকের এক যুবক উঠানে উঁকি ঝুঁকি পাড়ছে। আমি ছিলাম ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, চঞ্চল, ছটফটে, সন্দেহবাতিক। সব কিছুর উপর বেশি আগ্রহ ছিলো আমার। এক দৌড়ে উঠানের কোণায় গিয়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়ালাম৷ ছেলেটা আমায় দেখে ভয় ভয় নজরে তাকাচ্ছিলো। সাইডে শীতি কেটে চুল আঁচড়িয়েছে, সরু নাকটায় মোটা ফ্রেমের চশমা। আমি গম্ভীর গলায় বললাম-
'এই যে ঢোলাম্যান '

ছেলেটা চশমা হাত দিয়ে আরেকটু সেঁটে বললো-
'আমায় বলছেন?'

'ঢোলা ফাটা জামার আশেপাশে তো কাউকে দেখছিনা'

ছেলেটা বোধ হয় কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো। জামার কলারটা টেনে খাপানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু জামাটা এতই ঢোলা যে সেটার ভিতর তার মতো আরও তিনজন আরামে ঢুকতে পারবে। সেটা আর খাপাবে  না।

' চেয়ারম্যান কাকা কী বাসায় আছেন?'

'কেনো তাকে দিয়ে কী কাজ? '

'না মানে, তিনিই আমায় ডেকেছিলেন। তার মেয়েকে পড়ানোর জন্য '

কথা শুনে আমার মাথায় কেউ যেনো ঠাডা ফেলে দিলো৷ আমি বুঝতে পারলাম যে, এই ঢোলা জামার মগা লোকটাকে আমায় পড়ানোর জন্য ঠিক করা হয়েছে। লোকটাকে বাড়ির ভিতর নিয়ে আসতেই বাবা পরিচয় করিয়ে দিলেন। নাম অজিন, ঢাকায় গেছিলো পড়াশোনা করতে কিন্তু কয়েক দিন আগেই তার বাবা মারা যায়। আয় রোজগারের সুযোগ বন্ধ হওয়ায় এখানে আসতে হলো। শহরে থাকতে টাকার প্রয়োজন। একটা মাত্র বোন আছে বাড়িতে, দুই ভাই বোন সম্পূর্ণ এতিম বর্তমানে। কিছুক্ষণ পরই তাকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাকে পড়ানোর জন্য বলা হলো। 

প্রথম দিনই আমি বুঝতে পারলাম যে লোকটা শুধু ব্রিলিয়ান্ট নয় দারুণ বুদ্ধিমাণও। কিন্তু কথায় আছে না, শক্তর ভক্ত নরমের জম!  ব্যাস, আমিও নরম পেয়ে জালানো শুরু করলাম। প্রতিদিনই তাকে হেনস্তা করা আমার প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে উঠলো। একটা জিনিস আমায় অবাক করতো। সে কখনো আমার উপর বিরক্ত হতোনা। আমি ইচ্ছে করেই বার বার এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম। যখন জ্বালানোর পরিমাণ বাড়তো তখন সে তার বাকা প্রি মোলার দাঁতের এক চমৎকার হাসি দিয়ে বলতো 'সায়না, পড়ো '

এমন শান্ত কন্ঠের পর আমি আর এক বাক্যও উচ্চারণ করতে পারতাম না। আমার পুরো নাম সায়না রুম্মান। ডাকনাম রুম্মান থাকায় কেউ সায়না ডাকতো না। কিন্ত, আমার পড়ার বইয়ে সায়না নামটা দেখার পর সে আমায় সায়না বলেই ডাকতো। 
এভাবেই দুই বছর কাটলো৷ আমি  অজিন মাস্টারকে ভালোবেসে ফেলি ততোদিনে। সুদর্শন মুখ, লম্বা, স্বাস্থ্যবান দেহ কিছুই অজিন মাস্টারের ছিলোনা। তবুও আমি তার প্রেমে পড়ি। সে যখন তার প্রিমোলার দাঁত বের করে শান্ত হাসতো আমি মুগ্ধ হতাম। সে যখন নিজের তেলে ভরা চুলগুলো পিছনে সড়াতো আমি মায়া চোখে তাকিয়ে থাকতাম। আগের পুরাতন ঢিলেঢালা শার্ট পড়ে সে যখন আমার হাসিতে লজ্জা পেতো। সেই লজ্জা বাড়াতে আমি আরও হাসতাম। আমি ততদিনে এটা বুঝেছি সেও আমাকে ভালোবাসে৷ একদিন সে আমার কাছে আবদার করলো আমায় শাড়িতে দেখতে চায়। আমার জন্য সে নাকি গিফট আনবে।  আমি মিটমিট করে হেঁসেছিলাম। পরেরদিনই দুই ডজন চুড়ি, সবুজ রঙের শাড়ি পড়ে পা দুটোকে আলতায় রাঙিয়ে নিলাম। হঠাৎ মা ঘরে এলো, আমায় দেখে অবাক হয়ে হাসলো। আমি হাসির কারণ  বুঝলাম না। আমার মাথায় ঘোমটা টেনে বললো -
'ভালো হয়েছে, আগেই তৈরি হয়েছিস। এখন চল '

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম ' কোথায় যাবো মা? '

মা কিঞ্চিত হেসে বললো -'হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না!  তোকে দেখতে এসেছে । পছন্দ হলে আংটি পড়িয়ে যাবে। ছেলে শহরে থাকে। '

আমি আর কিছুই অনুভব করতে পারলাম না। আমাকে মূর্তির মতো করে তাদের সামনে বসানো হলো। আমায় আংটিও পড়ালো। তার কিছুক্ষণ পরই অজিন মাস্টারের দেখা পেলাম। সে আসার সাথে সাথেই মা তাকে পাত্রপক্ষের আনা মিষ্টি খাওয়ালো। সে নির্বিকার চাহনি দিয়ে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি রোজকার মতো তাকে আর জ্বালাইনি। চুপচাপ পড়া শেষ করে উঠে পড়লাম। সে পিছু ডেকে বললো -' তুমি কী এই বিয়ে করবে সায়না?'

আমি তৎক্ষনাৎ তার হাত ধরে বললাম -' নাহ, অজিন মাস্টার। আমি আপনাকে বিয়ে করবো। আপনি বাবাকে বলেন না! '

সে তখন বেদনাময় এক হাসি দিয়ে বলেছিলো-'ভরসা রেখো সায়না, আমি আসবো '

তার দুইদিন পরই বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। আমায় পিরীতে বসিয়ে দেয়া হলো। আমিতো ভরসায় ছিলাম অজিন মাস্টার আসবে। তাই হাসিখুশি ভাবেই সবকিছুতে সায় দিয়ে গেলাম। কিন্তু কাজী আসার পরও যখন সে এলোনা তখন আমার পিলে চমকালো। তিন বারের সময়ও কাজীর কথায় আমি কবুল বললাম না। আমি এক ধ্যানে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দশ বারের সময় কবুল বলে বেহুশ হয়ে পড়লাম। এলোনা আমার অজিন মাস্টার। চলে গেলাম আমার স্বামীর সাথে শহর। সবার জন্য স্বপ্নের শহর আর আমার বিষাদময়। অজিন মাস্টারের চেয়ে স্বামী দশ গুণ সুন্দর। উঁচু লম্বা দেহ, খাড়া নাক। তবুও আমি তার প্রেমে পড়লাম না। এক মাসের সময় যখন আমি মোটামুটি স্বামীকে মেনে নিয়েছি, ভাগ্যের কাছে হেরে নতুন স্বপ্ন সাজাচ্ছি তখনই এলো অজিন মাস্টারের চিঠি। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খুললাম। '

প্রেশার কুকারে শো শো করে সিটির আওয়াজ বাজতেই রুম্মান উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন৷ মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেলেন। প্রেশার কুকার নামিয়ে আবার আসলেন। ওয়াজীহ আগেরমতোই ধীর স্থির। রুম্মান মেয়ের প্লেটে ভাত বেড়ে বললেন-' এসব অনেক আগের কথা রে মা, এখন খেয়ে ভার্সিটি যা। ওইসব প্রেম ভালোবাসা কবেই শেষ হয়ে গেছে। এখন কী আর ওসব মানায়! সংসারের মায়া বড় মায়া '

ওয়াজীহ মায়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর ভাতের প্লেটটা সরিয়ে উঠে পড়লো। মাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷ সিড়ি বেয়ে নেমে চোখটা মুছে নিলো। গ্যারেজের এক সাইডে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে পুরোনো একটা চিঠি বের করলো৷ এই চিঠিটা কাল রাতে মায়ের আলমারির লুকানো একটা বাক্সে পেয়েছে। চশমাটা নাকের ডগা থেকে আরেকটু উপরে উঠিয়ে পড়া শুরু করলো  চতুর্থ বারের মতো -

আমার কথারাণী,

ভাবছো কাকে বললাম? তোমাকেই বলেছি। তবে কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি বা বলতে পারো অধিকার পাইনি। 
ছোটবেলা থেকেই বাবার বড় আদরের ছেলে ছিলাম। বাবার শখ হলো আমাকে শহরের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বানাবেন। শহরে গেলাম, সেখান বেশ ভালোভাবেই সময় যাচ্ছিলো। একদিন চিঠি পেলাম বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে। আমি দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হলাম। গিয়ে দেখি বাবাকে সাদা কাপড়ে উঠানে শোয়ানো হয়েছে। বুঝে গেলাম, আমার বাবা আর নেই। সে মাস্টার ছিলো। টাকায় মোটামুটি সংসার চলে যেত। শহরে থাকা খাওয়ার ভাড়াটা বাবাই পাঠাতো। আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। শহরের আধুনিকতার ছোয়া তখন আমায় নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। শহরে থাকা দায় হয়ে পড়লো৷ কী খাবো? কী পড়বো? কোথায় থাকবো? একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকলাম। বুঝতে পারলাম এই শহর গরীবের জন্য নয়। 

চলে এলাম গ্রামে একেবারের জন্য। চেয়ারম্যান কাকা আমার ব্যাপারে শুনে বললেন তোমায় পড়ানোর কথা। আমিও টাকার কথা শুনে রাজি হলাম। বোনটা প্রায়ই বলতো 'ভাইয়া কতদিন হলো মাংস খাইনা! '। ভাবলাম এবার টাকা দিয়ে বোনকে মাংস খাওয়াবো। অভাব অনটনে না খেতে পেরে আমার সুস্বাস্থ্য একেবারে মিইয়ে গেলো। শার্টের সাইজ হয়ে গেলো আমার শরীরের চেয়ে তিনগুণ বড়। আমি নিজের দিকে আর অত খেয়াল না করে চলে গেলাম আহারের খোঁজে৷ কিন্তু তুমি যখন আমার শার্টটাকে ঢোলা ফাটা বললে তখন আমি লক্ষ্য করলাম। প্রথম দিনই তোমার দুষ্টু কথা আমায় মুগ্ধ করলো৷ প্রতিদিনের একগুচ্ছ গ্লানি নিমিষেই হারিয়ে যেতো তোমার কথার ফাঁদে। যেদিন আমি বুঝতে পারলাম তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি তৎক্ষনাৎ নিজেকে শাসিয়ে নিলাম। কোথায় চেয়ারম্যান আর কোথায় আমি এতিম ছেলে! তাছাড়া দেখতেও তেমন কিছু বিশেষ নেই আমার মাঝে। 

কিন্তু আমি উপলব্ধি করলাম তুমিও আমায় ভালোবাসো৷ আমি আচমকা লোভী হয়ে উঠলাম। আমার কথারাণীর ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাইলাম। তারপর দিনই ঠিক করলাম তোমায় জানাবো। কিন্তু পরদিনই আমি বাস্তবতা চিনতে পারলাম। তোমায় যখন শাড়ি পড়া দেখলাম মনে হলো সকল সুখ আমার বুকে ঠাই নিয়েছে। তোমার মা যখন কিছুক্ষণ পরই জানালো এই সাজগোছ আমার জন্য নয় তখনই আমার সুখ ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। তোমায় জিজ্ঞেস পর যখন বললে তুমি বিয়ে করতে চাওনা আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।

কিন্তু তুমি যে আমার ভাগ্যে ছিলে না। কিভাবে যেনো তোমার বাবা এই কথা জেনে গেলো৷ তারপরের দিনই আমার বাড়ি এসে দলবল সহ আমায় পিটিয়ে নিচে ফেলে রাখলো আর আমার বোনকে তুলে নিয়ে গেলো৷ আমি তোমার বাবার পায়ে পড়ে চিৎকার করে কেঁদে  আমার বোনের প্রাণ ভিক্ষা চাইলাম। সে রাজি হলো, কিন্তু বিনিময়ে আমার সুখ শান্তি কেড়ে নিলো। শর্ত জুড়ে দিলো, তোমার কবুল বলার আগ পর্যন্ত আমি তোমার সামনে যেতে পারবোনা।  তুমি একদিকে কবুল বলবে আরেক দিকে আমার বোনকে পাঠানো হবে৷ আমি মা বাবা হারিয়ে আগেই নিঃশেষ হয়ে ছিলাম। বোনটাকে হারালো উন্মাদ হয়ে যেতাম৷ 

পারলাম না আমার কথারাণীকে দেয়া কথা রাখতে। আমি বাড়ির পাশে লুকিয়ে তোমার বধুঁবেশী রুপ প্রাণ ভরে দেখে নিলাম। তুমি একদিকে অন্য কারো হলে আর অন্য দিকে আমার বোন নিয়ে রাতের আধারে আমায় গ্রাম থেকে বের করা হলো৷ 

আমি বুঝেছি কথারাণী, ভালোবাসা গরীবের জন্য নয়। ভালোবাসা এতিমদের জন্যও নয়। সংসার মায়া বড় নিষ্ঠুর কথারাণী! এই সংসার মায়া আমাদের এক হতে দিলো না। আমার ভালোবাসা কেনো পেলাম না? কেনো আমাকেই নিঃস্ব হতে হলো কথারাণী? তোমার অজিন মাস্টার তোমায় দেয়া কথা রাখতে পারলোনা। 
ক্ষমা করো, 
ভালো থেকো কথারাণী,

ইতি,
তোমার অজিন মাস্টার। 

সমাপ্ত


লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন