উপন্যাস        :          শিমুল ফুল
লেখিকা         :          জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর
গ্রন্থ              :         
প্রকাশকাল      :         
রচনাকাল       :         

লেখিকা জাকিয়া সুলতানা ঝুমুরের “শিমুল ফুল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর
শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন

শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর (পর্ব - ০৯)

বসন্তের বাতাসে চারদিকে প্রেমের আলোড়ন তুলে।কোকিলের কুহু কুহু ডাকে মন করে আনচান।এই আনচান মন নিয়ে পুষ্প দাঁড়িয়ে আছে হিজল গাছের নিচে।রাত বারোটা।ওই বৃষ্টির দিন যে দেখা হয়েছিলো আর দেখা হয়নি। নির্বাচনে কাজে শিমুল ঢাকা গিয়েছিলো, চারদিকে কাজ আর কাজ এবার বিরোধী দল বেশ শক্তিশালী। প্রায় পনেরো দিন পরে আজকে দেখা হচ্ছে। শিলার কাছে খবর পাঠিয়ে বলেছে, রাতে এখানে আসতে। পুষ্প আজকে লাল টুকটুকে একটা জামা পড়ে এসেছে। হালকা সেজেও এসেছে। আজকাল শিমুলের সামনে নিজেকে পরিপাটি করে উপস্থাপন করতেই বেশি ভালো লাগে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে যখন আকাশ পাতাল ভাবছিলো তখনি শিমুল এলো। বসন্তের রাজা হয়ে, তিরতিরানো পাগলা বাতাস গায়ে মেখে পুষ্পকে সেই বাতাসে দুলাতে এসে উপস্থিত হলো। লাল রঙ্গা জামায় পুষ্পকে খুব সুন্দর লাগছে। চাঁদের আলোয় চারিপাশ ফকফক করছে। নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতায় এমন লাল পরী দেখে শিমুল হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আশেপাশে দল বেধে জোনাকি পোকা উড়ে যাচ্ছে,ক্ষনে ক্ষনে ঝি ঝি পোকা ডাকছে।শিমুল কিছুক্ষণ ফাকা রাস্তায় তাকিয়ে থাকে।আজকের রাতটা বড্ড বেশী স্পেশাল হতে যাচ্ছে।এই এতো বড় শিমুলও মনে মনে নার্ভাস হয়।

পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রত্যেকের শরীরে আলাদা একটা ঘ্রান থাকে,শিমুলের শরীরের ঘ্রানটা ভিন্ন,যেন এটা শুধুমাত্র পুষ্প ফুসফুস ভরে দিতেই তৈরি।শিমুলের হাতে কি জানো দেখা যাচ্ছে।পুষ্প সেদিকে তাকাতেই শিমুল এগিয়ে তার কাছে আসে।
শিমুলের হাতে পাঁচটা শিমুল ফুল।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
"পুষ্প "

পুষ্প শিমুল ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।তরতাজা পাঁচটা ফুল।শিমুলের ডাক শুনে তাকায়।

"তুই কি শিমুলের ফুল হবি?"

শিমুলের হঠাৎ এমন কথায়
পুষ্প ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।শিমুল তাকে প্রেম নিবেদন করছে?শিমুল হাতের ফুলগুলো দেখিয়ে আবার বললো,
"দেখ শিমুল ফুল কেমন লাল টকটকে।এই শিমুলও তোকে ভালোবেসে এমন লাল টকটকে করেই রাখবে।নরম তুলোর খোঁজ নিতে হলেও একবার শিমুল ফুল হয়ে যা প্লিজ।"

পুষ্পের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দঅস্রু।শিমুল সেদিকে তাকিয়ে বললো,
"আমি আর পারছিনা,আমার তোকে লাগবে খুব আপন করে।তুই বুঝতে পারছিস তো ফুল?"

পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। ❝ফুল শিমুল ফুল,শিমুলের ফুল❞।বুকটা কাঁপছে।
শিমুল ফুলগুলো পুষ্পর হাতে দিয়ে তাকায়।লাল জামায় লাল ফুল হাতে খুব স্নিগ্ধ লাগছে সে হাত ধরে আরেকটু কাছে আসে।অন্তরে দাগ লাগানোর মতো করে ফিসফিস করে বললো,
"শিমুল ফুল হবি না?"

পুষ্প ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে মাথা দুলায়।শিমুল মাথা নেড়ে বললো , "মুখে বল।"

পুষ্প খুব আস্তে করে বললো, "হবো।"
"সত্যি?"
"হুম।"

শিমুল চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।হাত দিয়ে পুষ্পর চোখের পানি মুছে দু'গালে হাত রেখে বললো, "দেখি! আল্লাহ কেঁদে কেঁটে কি অবস্থা করে ফেলেছে। আমার ভয়ে?"

"না।"
"তাহলে?"
"এমনি।"

শিমুল নিজেও নার্ভাস।এই প্রথমবারের মতো নিজের বলিষ্ঠ দুই হাত পুষ্পর কোমড়ে রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো।জীবনের এই প্রথম কোন পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে,পুষ্প কেঁপে ওঠে।মাথা তুলে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুল মাথাটা নিচু করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।পুষ্প তাকালে বললো, "কি?"

পুষ্পের শরীর যে মৃদু তালে কাঁপছে এটা শিমুল বুঝতে পারে।নিজের সাথে আরেকটু চেপে বললো, "এতো কাঁপা-কাঁপির কি আছে?"

শিমুল তার কাঁপা-কাঁপির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গেছে এটা ভেবে পুষ্প লজ্জা পায়।শিমুল আরো কাছে টানাতে দুজনের নিঃশ্বাসের আলিঙ্গন হয়।পুষ্পর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।তার দুহাত শিমুলের শক্ত বুকের উপরে।মুখে লাজুক হাসি ঝুলিয়ে বলে, "কিছুনা।"

শিমুল এক নজরে তাকিয়ে থাকে পুষ্পর মুখের দিকে। আজকে বেশামাল ইচ্ছেরা পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটোছুটি করছে তাদের কি আজকে একটু ছেড়ে দেওয়া উচিৎ? পুষ্পর শরীরটা নরম তুলতুলে। শিমুলের মনে হচ্ছে আস্ত একটা তুলোর বস্তা। শিমুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চুপ করে থাকে। কি বলবে?পুষ্পই কথা বলে,
"ছাড়েন।"

শিমুল পুষ্পর লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
"কেন?"

"কেমন জানি লাগে।"

শিমুল আস্তে করে বললো,
"কেমন লাগে?"

পুষ্প উশখুশ করে বললো,
"যন্ত্রনা।"

শিমুল হাসে।মাথাটা আরেকটু নিচু করে বললো,
"যন্ত্রনার ছোঁয়া না লাগাতেই যন্ত্রণা?"

পুষ্প কথাটা পুরোপুরি বুঝতে পারে না।শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।পুষ্পর চেহারা দেখেই শিমুল বুঝে।মাথা নেড়ে হেসে বললো,
"বোকারানী সময় হলে বুঝে যাবি।"

দুজনে চোখ আজ দুজনে'তে মজে আছে।শিমুল পুষ্পর ডান হাতে ছোট করে একটা চুমু খায়।পুষ্প চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।শরীরে অজানা শিহরণ ছুটোছুটি করছে।শিমুল কি তাকে মেরে ফেলবে?এতো ভালোবাসতে হবে কেন?পুষ্প যে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে শিমুল কি দেখে না?

শিমুল মাথাটা নিচু করে জড়ানো গলায় বললো,
"পুষ্প রে....।"

এমন ডাকে যেন পুষ্পর নরম অন্তর খুচিয়ে খুচিয়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।অস্পষ্ট স্বরে বললো,
"হুম"

শিমুল তার খোচাখোচা দাড়িওয়ালা গাল পুষ্পর নরম মোলায়েম গালে ঘষে বললো,
"এতো ভালোবাসবো যে তুই কল্পনাও করতে পারবি না।"

এটা কি সুখের পরশ নাকি অন্যকিছু পুষ্প বুঝতে পারে না।নরম গালে শিমুলের গালের খোচাখোচা দাড়ির ছোঁয়া পেয়ে পুষ্প ছটফট করে উঠে।শিমুল ফিসফিস করে বললো,
"কি হয়েছে?"

পুষ্প বললো,
"ছাড়েন।"

শিমুল পুষ্পর লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দাঁড়ায়।অন্যপাশে মুখ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,মেয়েটাকে ছোঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে,বেশামাল ভাবে পাগল করতে ইচ্ছে করছে,নিজেকে স্বাভাবিক রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।হঠাৎ করেই শিমুলের এমন চুপ থাকা পুষ্পর ভালো লাগে না।মন খারাপ করে বললো,
"আমি কি চলে যাবো?"

পুষ্পর চলে যাবার কথা শুনে শিমুল রাগী দৃষ্টিতে পুষ্পর দিকে তাকায়।পুষ্প এমন দৃষ্টি দেখে বললো,
"চুপ করে আছেন তাই বললাম।"

শিমুল মাথা নিচু করেই বললো,
"পুষ্প একটা কথা বলি?"

পুষ্প মাথা নাড়ায়।
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো"
"খুব ভালোবাসি আমার শিমুল ফুলটাকে।"

পুষ্প লজ্জা পেলেও মিনমিন করে বললো,
"আমিও খুব ভালোবাসি।"

শিমুল শুনতে পেয়েও আরেকবার শোনার জন্য বললো,
"কি?শুনতে পেলাম না।"

পুষ্প লজ্জা পায়।মাথাটা নিচু করে বললো,
"ভালোবাসি।"

শিমুল চোখে হেসে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তমার দিকে যার জন্য এতো অপেক্ষা।পুষ্পর মুখ থেকে ভালোবাসি শুনার জন্য এতো তৃষ্ণা।আজকে কি মনটা শান্তি লাগছে না?লাগছে খুব শান্তি লাগছে।শিমুল গাছের মোটা শিকড়ে বসে পুষ্পর হাত ধরে টেনে কাছে বসায়।চোখে চোখ রেখে বললো,
"পুষ্প"

ভালোবাসি শব্দটা শুনার পর থেকে পুষ্প অন্য জগতে চলে গেছে,যে জগতে সুখের আনাগোনা।শিমুলের কথা শুনে ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে।শিমুলই বলে,
"আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে কিন্তু।"

পুষ্প লাজুক হেসে মাথা নামিয়ে নেয়।
"হাসলে চলবে না।"

পুষ্প হেসে হেসে বললো,
"আচ্ছা।"

শিমুল পুষ্পর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
"আমি কিন্তু খুব ভালোবাসবো।সামলাতে হবে কিন্তু।"

পুষ্প লজ্জায় পারেনা হিজল গাছের আগায় উঠে যায়।এতো লজ্জা দিচ্ছে কেন শিমুল?না!না!এখানে আর বসে থাকা যাবে না,পুষ্প উঠে দাঁড়ালে শিমুল কিছু বলার আগেই সে বললো,
"আর একটা কথাও বলবেন না।আমি বাড়ি যাচ্ছি।"

পুষ্প হনহন করে সামনে এগিয়ে যায়।শিমুল হেসে দৌড়ে কাছে গিয়ে বলে,
"তোর নাম পুষ্প না রেখে লাজুকলতা রাখা উচিত ছিলো।কথায় কথায় লজ্জা পায়,এতো লজ্জা পেলে আমি বাবা হবো কিভাবে ভাই?"

পুষ্প হাটার মধ্যেই দু'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো, "ছিহ ছিহ। অসভ্য কথাবার্তা।"

শিমুল দাঁড়িয়ে বললো, "এজন্যই মানুষ বলে বাচ্চাদের সাথে প্রেম করতে নেই। রোমান্টিক মূহুর্তে এসে বলে ছিহ!"

পুষ্প দৌড়ে চলে যায়। শিমুল দাঁড়িয়ে হাসে তৃপ্তির হাসি। এতোদিন না বলে মনে মনে প্রেম হলেও আজকে হিজল গাছ সাক্ষী রেখে তাদের প্রেমের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে। 


চলবে.....

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ :
তরুণ লেখিকা জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন