উপন্যাস : বৌপ্রিয়া
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ০৭)
উচ্ছ্বাস সবেমাত্র হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেছে। গায়ের সফেদ রঙা এপ্রোন ঘামে জুবজুব। টিশার্টটাও ঘেমে গায়ের সঙ্গে মিশে গেছে। দ্রুত গোসল করতে পারলে হয়ত ভালো লাগবে। উচ্ছ্বাস ঘরে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ শিউলির ঘর থেকে কুসুমের হাসির শব্দ শুনে উচ্ছ্বাস কেমন ঝিম ধরে গেল। কুসুম এত শব্দ করে হাসতেও পারে? কই, তার সামনে তো কুসুমের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না এই অবস্থা হয়ে যায়। পরপরই উচ্ছ্বাসের মনে হয়, কুসুমের সঙ্গে সবে বিয়ে হয়েছে তার। বয়সে ছোট একটা মেয়ে তার মত বড়সর এক ছেলের সঙ্গে কথা বলতে অস্বস্থি হতেই পারে। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। উচ্ছ্বাস মাথা ঝাড়া দেয়। নিজের ঘরে যেতে যেতে ডাকে,
' শিউলি? আমার ঘরে আয় একটু। '
উচ্ছ্বাস ঘরে গিয়ে কাপড় ছাড়ছিল। এপ্রোন আর টিশার্ট খুলে বালতিতে ভিজিয়ে রাখল। নিজেও টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে যাবে তখন শিউলি ঘরে এল।
' ডেকেছিলে ভাইয়া? '
উচ্ছ্বাস উদোম ঘাড়ে টাওয়াল ঝুলিয়ে বলল,
' গোসলে যাচ্ছি। এক কাপ কফি দিয়ে যা। বড্ড মাথা ধরেছে। '
শিউলি মাথা দুলাল। কিছু একটা ভেবে মৃদু স্বরে বলল,
' আচ্ছা, দিচ্ছি। তুমি গোসল শেষ করে আসো। '
উচ্ছ্বাস গোসলে চলে যায়। উচ্ছ্বাস বাথরুমে যেতেই শিউলি দৌঁড়ে নিজের ঘরে আসে। কুসুম তখন বিছানায় গোল হয়ে বসে সায়মাদের সঙ্গে গল্পে মজে ছিল। তাদের যে কতরকম গল্প। কিশোরী বয়সের গল্প কার না শুনতে ভালো লাগে? সায়মার বয়ফ্রেন্ড আছে, মাত্র জানল কুসুম। সায়মা তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ভয় পাচ্ছে ইদানিং। উচ্ছ্বাস শুনলে সায়মাকে প্রাণে মেরে ফেলতে দ্বিধা করবে না, এটা সায়মার মনে হয়। একটামাত্র ভাই তাদের পরিবারে। ভাইকে কষ্ট দিলে বোনদের সবার মন পুড়ে। তাই সায়মা চিন্তা করছে, সে ব্রেকআপ করে নিবে। অথচ অন্যান্য বোনরা তাকে বারবার মানা করছে। সায়মার বয়ফ্রেন্ড বেশ ভালো এবং ভদ্র একটা ছেলে। তাকে রিজেক্ট করা মানে, সায়মার কপাল পুড়বে। উচ্ছ্বাসের প্রেম ভালোবাসার বিরুদ্ধে এসব কঠোরতা শুনে কুসুম খানিক আশ্চর্য্য হল। উচ্ছ্বাস ভাই কি প্রেম সহ্য করতে পারে না? তার জীবনেও কি কখনো প্রেম আসে নি? কুসুম এসব অবাস্তব চিন্তা করতে মশগুল হয়ে গেল! শিউলি কুসুমের পাশে এসে বসল। কুসুমকে ডাক দিল,
' কুসুম আপা! ভাইয়া ডাকছে তোমায়। '
কুসুম উচ্ছ্বাসের নাম শুনেই কেমন ভরকে গেল। কেন যেন উচ্ছ্বাসের নাম তার কানে এলে কুসুমের সারা গা ঝিম ধরে যায়। পেটের মধ্যে অদ্ভুত জিনিস মোচড় দিয়ে উঠে। মনের মধ্যে সুড়সুড়ি অনুভব হয়।
উচ্ছ্বাসের সামনে গেলে কুসুম ভয়ে সিটিয়ে যায়। গায়ে কাপন ধরে। সে কাপনে অস্থির হয়ে যায় কুসুম। এসব কেন হয় তার সঙ্গে? অদ্ভুত অনুভূতি! কুসুম বলল,
' আমাকে কেন ডাকছেন? '
শিউলি কাধ ঝাঁকিয়ে বলল,
' আমি কি জানি। বলল কফি দিতে তাকে। '
কুসুম কি আর করবে? সে বলেছে এখন কফি করে দিতেই হবে। নাহলে অন্য কথা উঠবে। তাই কুসুম গল্পের এই মজাদার আসর ছেড়ে উঠে পরল। শাড়ির আঁচল সামলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল খালা পেঁয়াজ কাটছেন। কুসুমকে দেখে কাজের খালা গদগদ হয়ে বললেন,
' আপা, আপনি এইখানে কি করেন? কি দরকার আমারে কন। বানাই দিতাসি। '
কি অমায়িক খালার কথা। খালাকে ভীষন ভালো লাগল কুসুমের। কুসুম মৃদু হেসে বললেন,
' কফি করব খালা। '
' কার লাইগা? আপনি খাইবেন? আমি বানাই দিতাসি। '
' না আমার জন্যে নয়। তার জন্যে। '
' তা…? '
কথা সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন হয়না খালার। তিনি বুঝে ফেলেন কুসুম কার কথা বলছে। বুঝতে পেরেই হেসে উঠে বললেন,
' ভাইজানের লাইগা? আচ্ছা আপনি বানান। ওই তাকে চিনি আর কপি পাউডার আছে। কিছু লাগলে কইয়েন। '
কুসুম লজ্জা পেয়ে গেল। বাড়িতে এত মানুষ থাকতে কফি বানানোর জন্যে তার কুসুমকে প্রয়োজন পরল? ইশ! কেমন লজ্জায় জড়িয়ে গেল কুসুম। কুসুম চুলোয় গরম পানি বসাল। খানিক পর কাপে কফি বানিয়ে চামচ নাড়ল। এক ফোঁটা খেয়ে দেখল সব ঠিক আছে কি না। চিনি ঠিক আছে দেখে কফির কাপ নিয়ে চলল উচ্ছ্বাসের ঘরের দিকে।
উচ্ছ্বাস তখন গোসল থেকে বেরিয়েছে। উদোম গায়ে শুধু ট্রাউজার পরা। মোবাইলে কথা বলছে। আগামীকালের ফ্লাইট সংক্রান্ত কথাবার্তা। কুসুম দরজার টোকা দিল। উচ্ছ্বাস ভেতর থেকে বলল,
' আয়। '
কুসুম গুটিগুটি পায়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। উদোম গায়ে এই প্রথম উচ্ছ্বাসকে দেখেই কুসুম রীতিমত চমকে উঠল। সারা গা বেয়ে শীতল স্রোত বইয়ে গেল। কুসুম নত শিরে মৃদু স্বরে বলল,
' আপনার কফি। '
কুসুমের কন্ঠ শোনামাত্রই উচ্ছ্বাস চমকে উঠল। দ্রুত মোবাইল রেখে পেছনে ফিরে গেল। লজ্জায় আবৃত কুসুমকে দেখে উচ্ছ্বাস খানিক অপ্রস্তুত হল। বিছানা থেকে টিশার্ট নিয়ে দ্রুত গায়ে জড়াতে জড়াতে বলল,
' তুমি কফি বানাতে গেলে কেন? আমি তো শিউলিকে বলেছিলাম। '
উচ্ছ্বাস ততক্ষণে টিশার্ট পরে নিয়েছে। কুসুম এবার মাথা তুলে চাইল। ডাগর ডাগর চোখে অবাক হয়ে বলল,
' কিন্তু শিউলি তো বলল আপনি আমাকে বলেছেন কফি দিতে। '
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুঁচকাল। হয়ত শিউলির কারসাজি সে বুঝতে পেরেছে। ভাবনার ফলস্বরূপ উচ্ছ্বাসের ভ্রু দুটো আঁকাবাঁকা হয়ে সুন্দর এক খাঁজ তৈরি করল কপালে। কুসুম দেখল সেটা দুই চোখ ভরে। উচ্ছ্বাস অত্যন্ত সুন্দর একজন পুরুষ। গৌড় বর্নের এ পুরুষকে কুসুমের ন্যায় শ্যামলা রঙের মেয়ের সঙ্গে কি কখনো মানাবে? কখনোই না! কুসুমের ভয় হয়। এমন যদি হয়,কুসুমের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে উচ্ছ্বাসের আফসোস হয়। কুসুমকে ছেড়ে দিতে চায় না শুধুমাত্র এই গায়ের রঙের জন্যে? এমন কি কখনো হবে? কুসুম মনেপ্রাণে দোয়া করল, এমন যেন কখনো না হয়। যেই বিয়ে নিয়ে কুসুম ইতিমধ্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, সেই বিয়ের বন্ধন যেন কখনো না ভাঙে।
উচ্ছ্বাস এগিয়ে এক কুসুমের দিকে। কুসুমের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,
' শিউলি মজা করেছে তোমার সঙ্গে। কফি খাওয়া দরকার, একজন বানালেই হল। কফি দাও। '
কুসুম কফির কাপ এগিয়ে দিল। উচ্ছ্বাস কফির কাপে চুমুক দিয়ে বিছানায় এসে বসল। কুসুম এখনো দাড়িয়ে আছে। উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল না কুসুমের ভাবনা। কুসুম উৎসুক চোখে চেয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে। এবার উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল, কুসুম কেন এখনও দাড়িয়ে আছে তার ঘরে। উচ্ছ্বাস মৃদু হাসল। কাপে আরেকবার চুমুক দিয়ে বলল,
' কফিটা ভালো হয়েছে। '
কুসুম যেন নেচে উঠল এ কথা শুনে। কুসুম সবসময়ই নিজের জন্যে কফি বানায়। কফি বানাতে বানাতে অভ্যস্ত হলেও আজ উচ্ছ্বাসের জন্যে কফি বানাতে গিয়ে কুসুমের হাত কেপেছে। বারবার মনে হয়েছে, কফিটা বাজে হবে। উচ্ছ্বাস পছন্দ করবে না। যাই হোক। কুসুমের বানানো কফি উচ্ছ্বাসের পছন্দ হয়েছে, সেই বিশাল ব্যাপার। কুসুমের যা শোনার ইচ্ছে ছিল, শোনা হয়ে গেছে। এবার কুসুম দ্রুত উচ্ছ্বাসের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি কমেন্ট বক্সে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে.....
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন