উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান 

২৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২৮)

নবনি রাগ করে বেরতো হয়ে গেল। কিন্তু একটু হেটেই হাপিয়ে গেলো। ৬ মাস চলছে নবনির। পেটটাও ফুলে গেছে। এই পেট নিয়ে হাটতে পারছেনা। তারপর একটা কালো গাড়ি পিছু নিয়েছে। কিছুক্ষন পর গাড়িটা নবনির সামনে এসে থামলো। নবনি রেগে লোকটাকে কিছু বলতে যাবে ওইভাবে লোকটা হাত ধরে টান দিলো। নবনি গাড়ির ভিতর থাকা লোকটার উপর যেয়ে পরলো।
নবনিঃআপনি!!
আরাফঃহ্যাঁ আমি।আমি না তো কে হবে!হ্যাঁ? কার এতো বড় সাহস আরাফ চৌধুরির বউ এর হাত ধরবে?
নবনিঃকেন আসছেন।আপনার এত ইম্পটেন্ট মিটিং রেখে কেন এসেছেন?
আরাফঃনা এসে উপায় আসে।আর আমি মিটিং ফেলে আসি নাই।৪০ মিনিট ডিলেই করেছি।তোমাকে ড্রোপ করে আবার যাবো।
নবনিঃআসলেন কেন!নাই আসলেই পারতেন!
আরাফঃহা হা হা।
নবনিঃহাসছেন কেন?হাসার মতো কিছু বলেছি?
আরাফঃনবনি পাখি গো।মনে পরে সে দিন যখন আমি তোমার থেকে সময় চেয়ে নিতাম আর তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে?আজকের মতো অন্য এক দিন ও এভাবেই কিডন্যাপ করে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর এখন তুমি মুখ ফুলাও সময় দিতে পারি না বলে।যে নবনি আরাফকে সব সময় দূরে ঢেলতো আজ সেই নবনিই আরাফ এর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অভিমান করে ভাবা যায়?
নবনি হেসে দিলো।
নবনিঃ আমারও মনে আছে যে আপনিও একদিন নিলয় ভাইয়াকে বলেছিলেন যে আরাফাত চৌধুরী কখনো কারো প্রেমে পরবে না।আর আপনি এখন আমার অভিমান ভাংগানের জন্য ৩০ মিনিট এর রাস্তা ১০ মিনিটে পাড়ি দিয়ে এসেছেন।
আরাফঃহা হা হা।এতো ভালো কি করে বুঝো আমাকে?
নবনিঃকারন আমার পুরো দুনিয়াটাই এখন তোমায় ঘিরে Mr Arafat Chowdhury. 
আরাফঃতুমি ডাকটা ভালো লেগেছে Mrs Nobonita Chowdhury. ☺️
নবনিঃহি হি হি।
আরাফঃএসে পরেছি।সাবধানে যেও।আর আজকে সব পড়া দাগিয়ে জেনে এসো।আর যেতে হবে না।একবারে ডিলেভারির পর যাবা।
নবনিঃমিটিং ৪০ মিনিট পিছিয়েছেন।১০ মিনিট এ বাসায় গেলেন।১০ মিনিট এ ভার্সিটিতে আনলেন।এখান থেকে অফিস উল্টো পথে।২০ মিনিট এ কি করে যাবেন?
আরাফ নবনির কপালে চুমু দিলো। 


আরাফঃTake care পাখি।তোমার জামাই এক্স আর্মি অফিসার।এমন কিছু নেই যা আমি পারবো না।😁
বলে নবনিকে নামিয়েই গাড়ি হাওয়ার মতো চোখের পলকে নিয়ে চলে গেল।
নবনিঃআল্লাহ হেফাজত কইরো।
ওয়ারদা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
ওয়ারদাঃমিস ইউ বান্ধুবি। 
নবনিঃমিস ইউ টু।দোস্ত।
ওয়ারদাঃকেমন আছিস?
নবনিঃআমি তো ভালোই আছি।তুই বল তুই কেমন আছিস?
ওয়ারদাঃকেমন আর থাকি।নিলয়তো কালকে চলে যাবে বিদেশে এক বছরের জন্য।আমার কি হবে বল?!!
নবনিঃকি আর হবে তুই আমার কাছে থাকবি।😊
ওয়ারদাঃসত্যিই দোস্ত।
নবনিঃতিন সত্যিই।আরাফ এমনেই সারাদিন ব্যস্ত থাকে।তুই থাকলে আমার সময়টা ও কাটবে।
ওয়ারদাঃআচ্ছা চল।আজকে ক্লাস করে ছুটি নিয়ে নেই।তোর ডিলেভরির পর আসবো।
নবনিঃহুম। চল।
রাত ১০ টা~
নবনিঃ১০ টা বাজে। স্যারের আসার নাম গন্ধই নেই।উনি কাজ করতে ঢুকলে ভুলেই যায় যে সে বিবাহিত। তার একটা বউ আসে।
নবনি হাটছে আর চিপস একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে।সেই সময় আরাফ আসে।নবনি দেখেও না দেখার ভান করে।আরাফ এর খুব ক্লান্ত লাগছে।সে এসেই ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরে।
নবনিঃরাতের খাবার খাবেন না?
আরাফঃইচ্ছে করছে না।
নবনিঃআমি খাওয়ায় দেই?
আরাফ মলিন হাসলো।
খাওয়া শেষে আরাফ শুয়ে পরে।নবনির চোখে এক ফোটা ঘুম নেই। সারাদিন ঘুমালে রাতে কি করে ঘুম আসবে।নবনি ফোনে মুভি দেখছে হেডফোন লাগিয়ে।রাত ২ টা বাজে।নবনির ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।আরাফ বেঘোর ঘুম।
নবনিঃআরাফ।আরায়ায়ায়াফ।
আরাফ এর কোনো হেলদোল নেই।বোঝাই যাচ্ছে গভীর ঘুমে আছে।নবনি আরাফকে ধাক্কা দিলো।আরাফ ঠাস করে মাটিতে পরে গেল।সাথে সাথে চেচিয়ে উঠলো।
আরাফঃআল্লাহ গো। কে রে!!!!
নবনিঃহা হা হা।হা হা হা।নবনি হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আরাফ চোখ কচলে বোঝার চেষ্টা করছে তার সাথে হইসেটা কি।কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।আরাফ অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলো সে মাটিতে পরে আসে।আর তার গুনবতী বউই তাকে মাটিতে ফেলে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।
আরাফ এবার ভীষণ রেগে গেলো।
আরাফঃএই মেয়ে।তোমার খায়া দায় কাম নাই?এভাবে কেউ কারো ঘুম নষ্ট করে!!!😡
নবনিঃআমিই করি। 😂😂
আরাফঃ😒একতো আমার বাপে অফিস ফালায়া রাইখা রাজনীতি নিয়া ব্যস্ত।তার উপরে তোমার বাপে ও নিজের কাম কাজ ফালায়া আমার বাপের সাথে যোগ দিয়েছে।সব আমাকে দিয়া কামলা খাটায়।আর  তুমি রাতে একটু ঘুমাতেও দাও না।😡
নবনিঃ🥺সরি।


আরাফঃOh no.বেশি বলে ফেলেছি।Shet.
আরাফ উঠে নবনির কাছে গেলো।নবনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।আরাফ নবনিকে কোলে বসালো। 
আরাফঃসরি বউ।কি হয়েছে বলো।খারাপ লাগছে?
নবনিঃফুচকা খাবো।
আরাফ বিনা বাক্যে শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো।
নবনি অবাক হলো। 
নবনিঃমানুষটা এমন কেন। একবার ও বললো না রাতের ২ টা বাজে ফুচকা কই পাবো।😐
আরাফ বেরতো হয়ে গেলো। কিন্তু কোথাও কোনো কিছু খোলা নেই।সব দোকান পাঠ বন্ধ।আরাফ নবনির ভার্সিটির পাশে দোকানটাতে গেলো।এই ফুচকাওয়ালা মামাটার বাসা  রাস্তার পাশেই।আরাফ উনার বাসায়ই যায়।আরাফ কলিং বেল বাজাচ্ছে কিন্তু লোকটা খুলছে না।বাসাটার জানালা দিয়ে লোকটাকে দেখা যাচ্ছে।আরাফ রাস্তা থেকে লম্বা একটা গাছের ডাল নিলো। তারপর জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে মামাটাকে খোচা দিতে লাগলো।
আরাফঃমামা।ওই মামা।উঠেন না।
মামাঃচোর চোর চোর!!
আরাফঃ😒কি এক অবস্থা।নবনির জন্য এখন আরাফ চৌধুরি চোর হিসেবে পরিচয় পেলো।(মনে মনে)এই মামা আমি চোর নই।আমি আপনার দোকানে ফুচকা নিতে এসেছিলাম।
মামাঃঅই মিয়া।এডি আপনি কিতা কন?এতো রাইতে কেউ ফুচকা লইবার আহে?!!মজা লন মিয়া!!
আরাফঃঘরে প্রেগন্যান্ট বউ থাকলে রাত দিন সবই সমান।এখন আপনি আমাকে গরম গরম ফুচকা বানিয়ে দেন দেখি।
মামাঃআমি অহন পারুম না।সকালে আহেন।
আরাফঃমামা।এমন কইরেন না।দেন না প্লিজ। 
মামার বউঃওই বেডা। দিবিনা কেল্লেগা?ঝন্টু যখন পেটে আসিলো আমার ও রাইতের বেলা তেতুল খাইবার মন চাইছিল।তুই আমারে ঘুম দাও কইয়া ঘুমায়া গেসিলি।সবাইরে তোর মতো পাইসোস।দেখ পোলাটা বউরে কত ভালোবাসে দেখছস!!এত রাইতে আইয়া পরসে। আর তুই মানা করতাসোত।ওখন দিবি নাইলে আমি এই রাইতেই তরে বাইত থেকে বাইর কইরা দিমু।
বেচারা মামা আরাফ এর দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।তারপর বের হয়া ফুচকা বানানো শুরু করে।


আরাফঃসরি মামা।রাগ কইরেন না।আরাফ পকেট থেকে ২ হাজার টাকার নোট বের করে মামার পকেটে ঘুচে দিলো।
মামাঃকি করছো ভাইগ্না।২০০ টাকার ফুচকার জন্য ২০০০ টাকা দিয়ে দিলে?!!
আরাফঃএইটা ফুচকার মূল্য না মামা।এটা আমার বউয়ের মুখে যে হাসিটা আসবে সেটার বকশিস।
মামিঃএতো ভালোবাসিস বউকে।
আরাফ মুচকি হাসলো।
আরাফঃমামি। ঝন্টুকে কাল থেকে স্কুলে পাঠাবা।ওকে দিয়ে ফুচকা বিক্রি করাবা না।
মামাঃএতো টাকা কই।ভাইগ্না।নিজেরা খাইয়া বাচি তাই অনেক আবার ছেলেরে পরামু।
আরাফঃটাকা আমি দিয়ে যাবো প্রত্যেক মাসে।কাল থেকে স্কুলে পাঠাবা।
আরাফ ফুচকা গুলো হাতে নিয়ে যেতে নিলে মামাটা ডাকেন।
আরাফঃজ্বি মামা।কিছু বলবেন?
মামাঃআল্লাহ আপনার বউ বাচ্চাকে ভালো রাখবো মামা।আন্নেরে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আরাফ হেটে চলে আসলো।
গরিবেরা আসলেই অল্পতে খুব খুশি হয়ে যায়।আমরা দামি দামি রেষ্টুরেন্ট এ তো ভালোই বিল দেই।আবার টিপসও দেই।কিন্তু রাস্তার পাশে বসা এই লোকগুলার সাথে দর কষাকষি করে নিজের অনেক টাকা বাচিয়ে ফেলি।🙂অথচ আমরা যদি এদেরকে এদের প্রাপ্যটুকুও দেই এরা মহা খুশি হয়ে যায়।
আরাফ ৩ টা বাজে ফুচকা নিয়ে আসলো।নবনি এতক্ষন চাতক পাখির মতো দরজার দিকে তাকিয়ে ছিল।আরাফ আসতেই তার মনে শান্তি আসলো।
আরাফ ফুচকা গুলো বের করে সাজাচ্ছে।
নবনি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে।
আরাফঃনবনি ২ প্লেট হয়ে গিয়েছে। আর না।
নবনিঃআর এক প্লেট।প্লিজ।
আরাফঃকোনো প্লিজ না।
নবনিঃআর একটাই। 
আরাফঃআচ্ছা।
খাওয়া শেষে আরাফ নবনিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।নবনিও আরাফ এর বুকে আরামে ঘুমিয়ে পরলো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


২৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন